বাংলাদেশ এমন একটি বিশ্বশ্রেষ্ঠ উর্বর মাটির দেশ, যে দেশে কোনো রোপন ছাড়া – কোনো ‘সার’ প্রয়োগ ছাড়া - কোনো পানি ছাড়া - কোনো প্রকার যত্ন ছাড়া - সারা বাংলাদেশে “দুর্বা ঘাস” (দুলফা ঘাস) অযত্নে অবহেলায় জন্ম হয় বা হোতে পারে - সে দেশের মাটিতে যত্ন নিলে কি না ফলানো যায় ? শুধুমাত্র “দেশপ্রেম” থাকলেই সব কিছু ফলানো সম্ভব । আমার দেশের কৃষকের “নিখাদ দেশপ্রেম” আছে বলে তারা সব কিছু ফলাতে সক্ষম ।
০১. (ক) ফ্রান্সের কিংবা শিতপ্রধান দেশের ‘স্ট্রবেরি’ ফল আমাদের দেশে হবে ? আমরা কোনো দিন ভেবেছি ? স্বপ্ন দেখেছি ?
(খ) ‘মালটা” আমাদের দেশে জন্মাতে পারে ? আমরা কোনো দিন ভেবেছি ? কল্পনা করেছি ? চিন্তা করেছি ? স্বপ্ন দেখেছি ?
(গ) আজ বিভিন্ন জাতের ও বিভিন্ন দেশের “কমলা” আমাদের দেশের কৃষক ফলাচ্ছেন ।
(ঘ) বারো মাস “আম” পাওয়া যেতে পারে ? আমরা কি কোনো দিন এমনটি ভেবেছি ? কল্পনা করেছি ? স্বপ্ন দেখেছি ? যা আজ বাস্তব ।
(ঙ) বারো মাস “কাঁঠাল” বারি-১, ২, ৩, হেক্টর প্রতি ফলন ১৩৩ মেট্রিক টন : কাঁঠাল মৌসুমী ফল, কাঠাল প্রিয় মানুষরা এই ফলটির অপেক্ষায় একটি বছর অপেক্ষায় থাকেন । কিন্তু এখন আর অপেক্ষায় থাকতে হবেনা । এখন কাঁঠাল পাওয়া যাবে সারা বছর । এমনি একটি কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) র একদল বিজ্ঞানি । দীর্ঘদিন ধরে বারি’র বিজ্ঞানিরা নিরলস পরিশ্রম আর গবেষণার মাধ্যমে বারো মাসি কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করে তা অবমুক্ত করেছেন । এই কাঁঠালের আরো বিস্তর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিজ্ঞানিরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । ইতোমধ্যেই গাজিপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর বিজ্ঞানিরা তিনটি নতুন কাঁঠালের জাত বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ উদ্ভাবন করেছেন । এখন উদ্ভাবিত জাত গুলোর সম্প্রসারণে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে । এই নতুন তিনটি কাঁঠালের জাতের সম্প্রসারণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান।
(চ) এ ছাড়া বিভিন্নজনে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে, আবার কেউ কেউ সখের বসে আম, কাঠাল, জাম, আপেল, আতা, কলা, আমড়া, জাম্বুরা, জামরুল, কতবেল, ডাব, ডুমুর, তাল, চেরি, নারকেল, খেজুর, তেতুল, শরিফা, করমচা, চালতা, আঙ্গুর, পেয়ারা, লেবু, লিচু, তরমুজ, সফেদা, লটকন, বাদাম, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, অড়বড়ই(নঈল), পিচ, নাশপাতি, আনারশ, বাঙ্গি, কামরাঙা, বেল, ডেউয়া, জলপাই, বড়ই, পেপে, প্রভৃতি ফলের চাষ করে থাকেন।
(ছ) একই গাছে ফলবে আলু ও বেগুণ –গাছটির নাম হবে ‘ব্রিঞ্জাল’। একই গাছে আলু ও টমাটো – নাম হবে ‘টমালু’। উদ্ভাবন করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মোহাম্মদ ফারিুক ।
(জ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রফেসর ড. এ. কে. এম. আমিনুল ইসলাম বি.ই.ইউ. খাটো সিম ৮ ও বি.ই.ইউ. খাট সিম ৯ নামে সিমের দুটি খাট জাত উদ্ভাবন করেছেন। কোনো প্রকার মাচা ছাড়া মাঠে ফসলের মতো চাষ করা যাবে। ছাদ বাগানে টবে চাষ করা যাবে।
(ঝ) খুলনায় তরমুজের গুড় তৈরি । তরমুজ থেকে গুড় উৎপাদন করে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছেন চাষিরা। পাতা দরমুজ থেকে রস বের করে দুই তিন ঘন্টা চুলার আগুনে জাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হোচ্ছে। এটি বাজারে পাওয়া অন্যান্য গুড়ের মতো মিষ্টি । নতুন এই গুড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘তোগুড়’ । খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের ছোট বন গ্রামের চাষি মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল এই গুড় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। পাঁচ লিটার তরমুজের রস থেকে এক লিটার গুড় পাওয়া যায়।
বায়তুল মোকাররমের দক্ষিনে ফল বিক্রেতাদের কাছে বারো মাস আম সহ নানা জাতের বিদেশি ফল বারো মাস পাওয়া যায়। অথচ তাদের স্থায়ি ভাবে বিক্রির জন্যে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের উচ্ছেধকারিদের ধাওয়ায় দৌড়ের উপর থাকতে হয় সর্বক্ষণ ।
আসন্ন দুর্ভিক্ষ রোধে বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষি গবেষকগণ উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করবে যদি তারা সরকারি সহানুভুতি পান -
(০১) কৃষকদের ১০ -১৫ টাকা কে জি দামের চাল সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি - (০২) বিদ্যুৎ জ্বালানি ও সেচ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে নিশ্চিত করা জরুরি - দেশপ্রেমিক কৃষক তার অভ্যেসবশত: খাদ্য সামগ্রি উৎপাদন করে ১৭ কোটি মানুষকে দুর্ভিক্ষ বা খ্যদ্য সংকট থেকে রক্ষা করবে ইন শা আল্লাহ - সরকারকে দেশপ্রেমিক কৃষক কুলের প্রতি আন্তরিক হতে হবে - কোনো প্রকার অবহেলা অবজ্ঞা হোলে
দেশপ্রেমিক কৃষককুল ব্যর্থ হোতে পারেন - সে বিষয়ে সরকারকে সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে -
এমনি নিত্য নতুন ৪৫ (পয়তাল্লিশ) হাজারের অধিক আবিষ্কারে বাংলাদেশের মেধাবি সন্তানেরা বিশ্বে ও দেশে নন্দিত - কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা, অধিকতর উন্নত গবেষণার ব্যবস্থা করা ও আন্তরিকতার অভাবে (দয়ার অভাবে) তা অংকুরেই মরে যাচ্ছে অনেক । কিংবা বিদেশ কিনে নিচ্ছে বলে, দেশে ব্যাপক উতপাদন, বিপনন, বাজারজাতকরণ ও বিদেশে রপ্তানি করতে পারেনি ।
আমার দেশের মেধাবি সন্তানদের ৪৫ (পয়তাল্লিশ) হাজারের অধিক বিশ্বমানের আবিষ্কার সমুহ ব্যাপক উতপাদন, বিপনন, বাজারজাতকরণ ও বিদেশে রপ্তানির জন্যে রাষ্ট্রিয় স্বিকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত জরুরি । অধিকতর উন্নত গবেষণার ব্যবস্থা করাও আবশ্যক । প্রয়োজনে, বিনা সুদে ব্যাংক ঋণ বা সামান্য সুদে (নাম মাত্র সুদে) ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলেও এসব আবিষ্কারকদের উতসাহ বা প্রেরণা বা প্রনোদনা দেয়া যেতে পারে । ব্যাপক উতপাদনের, বিপনণের ও বাজারজাতকরণের এবং বিদেশে রপ্তানির জন্যে গণভবণে মাননিয় প্রধানমন্ত্রির একান্ত সান্নিধ্যে, কঠোর নির্দেশনায় ও নিবিড় তত্ত্বাবধানে একটি “গবেষণা কর্মসুচি” (Research Program) গ্রহণ একান্ত জরুরি বলে প্রতিয়মান । যে খাত থেকে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আসবে দেশে । লাখ লাখ বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে দেশের । ‘মুজিব শতবর্ষ’ ও ‘স্বাধিনতার পঞ্চাশ বর্ষ’ স্মরণে রেখে এ বিষয়ে একটি “গবেষণা কর্মসুচি” (Research Program) গ্রহণের মাননিয় প্রধানমন্ত্রির বরাবরে বিনত আবেদন জানাচ্ছি ।
বিশ্বমানের আবিষ্কার : গবেষণা কর্মসুচি (বিআগক) । Global Standard Invention : Research Program (GSIRP). এই গবেষণা কর্মসুচির অভিষ্ট লক্ষ্য (Ultimate Goal) হবে দেশের মেধাবি সন্তানদের ৪৫ (পয়তাল্লিশ) হাজারের অধিক বিশ্বমানের আবিষ্কারসমুহকে নিয়ে পানগাও বন্দর (Pangaon Port) সংলগ্ন কোনো স্থানে একটি শিল্প পল্লি/শিল্প নগরি/শিল্পাঞ্চল (Industrial Village/Industrial Town/Industrial Area) কিংবা EPZ (Export Prpmotion Zone) গড়ে তোলা । এ কাজে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করছি –
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১০:১০