মৃতঃ বন্ধু
----------
বাঙালীর নাকি এক সমস্যা আছে। তারা দাত থাকতে দাতের মর্যাদা দিতে জানেনা। এটা অবশ্য শোনা কথা। কে কবে কিসের ভিত্তিতে এমন রিপোর্ট প্রদান করেছিলেন আমার জানা নেই। তবে কথাটা যে একেবারে ফেলে দেবার মত নয় তা মোটামুটি নিশ্চিৎ। নিশ্চিৎ হবার জন্য অবশ্য ধার করা কোন রিপোটের উপর নির্ভর করিনি। আমার নিজেকে দিয়েই তা অনুভব করতে পারছি। আমার কিছু সমস্যা আছে তা হলো সময় থাকতে কোন কাজের প্রতিই আমি গুরুত্ব দেই না। গুরুত্ব দেই না বললে ভুল হবে। গুরুত্ব দেয়ার অনের চেষ্টা করি। কিন্তু মনকে কোন ভাবেই সে কাজে লাগাতে পারি না। একদম শেষ মুহুর্ত যখন চলে আসে তখন মন নিজেই তৈরি হয় সে কাজ করার জন্য । কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারনে যতটা সুন্দরভাবে কাজ করার কথা ছিলো অথবা যতটা পরিপাটি হওয়ার কথা ছিলো তা আর হয় না। প্রায় প্রতিটি কা্জই আমার হাফ ডান। কেউ পিছন থেকে খোচা না দিলে ফুল ডান হয় না। ছোট বেলা থেকেই বই পড়তে গেলে শেষের পৃষ্ঠা থেকে পড়া শুরু করি। প্রথম দিককার পৃষ্ঠাগুলো আমার কাছে গম গুরুত্বের মনে হয়। মনে হয় খামখাই প্রথম দিকের পৃষ্ঠাগুলোতে প্যাচাল পাড়া হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখেছিও তা্ই। মানুষের সাথে আমি মিশতে পারি কম। কথাও বলতে বেশিএকটা ভাললাগেনা। এ জন্য প্রতিনিয়ত অনেক বেশি কথা শুনতে হয়। কেউ বলে আনসোসাল, কেউ বলে অনকে অহংকারী, কেউ বলে ভ্যাদা মাছ ইত্যাদি। আমিও বুঝি এ বদ অভ্যাস আমার ত্যাগ করা উচিৎ। চেষ্টাও করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। ঘাম ছুটছে রিতিমতো আয়নার সামনে কসরত করতে করতে। কিন্তু ঐ সমস্যা মন! মন বেটা কোন ভাবেই কথা শুনছে না। শুনবেও না। আমার অফিসে খান ভাই অথবা বোরহান ভাইকে দেখে অনেক সময় হিংসা হয়। কেমনে তারা মানুষের সাথে এত সুন্দর করে মিশতে পারে! এত অল্প সময়ে বন্ধুত্ব গড়তে পারে! আর আমি পারি না। আমার কি এমন কমতি আছে তাদের চেয়ে? বন্ধুত্ব যে আমার কারো সাথে হয় না তা না। দুই ধরনের লোকের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়। কেউ যদি যেচে এসে আমার সাথে কথা বলে। সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। তবে তার মুখায়বব, ব্যাক্তিত্ব, সব কিছু বিবেচনা করে মন যদি রাজি হয় তবে ঐ শ্রেনীর লোকের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়। আর আমর তরফ তেকেও বন্ধুত্ব হয় তবে সেটা কোন জীবিত মানুষের সাথে নয়। আমার বন্ধুত্ব হয় মৃত মানুষের সাথে। ছোট বেলায় প্রচুর সিনেমা দেখতাম। বাংলা সিনেমার মধ্যে রুবেল, মান্না, ইলিয়াস কাঞ্চন ইত্যাদি নায়কের ছবি দেখতাম। সে সময়ে নতুন একজন নায়ক আসলেন সালমান শাহ। দুই চোখের কাটা বলতে যা বোঝায় আরকি। তাকে দেখতেই পারতাম না। এমনকি তার জীবদ্দশায় আমি তার একটি সিনেমাও দেখিনি। সালমানশাহ মারা যাওয়ার পর তার একটি সিনেমা দেখলাম। তার অভিনয়, আর ফ্যাশান দেখে কষ্টে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। এমন একজন সম্ভাবনাময় নায়ককে আমরা হারালাম! শুরু হলো তার সাথে আমর বন্ধুত্ব। এমন আরো অনেক আছে যারা মারা যাওয়ার পরে আমার অত্যান্ত কাছের বন্ধু হয়েছে। সর্বশেষ সেদিন একটি বই পড়লাম বিজ্ঞান মনষ্ক লেখন ডঃ অভিজিৎ রায়ের। তার লেখনি আর বিজ্ঞানের উপর দখল দেখে আমি মুগ্ধ। যদিও তার বিশ্বাসের সাথে আমার বিশ্বাস আকাশ পাতাল ব্যাবধান । তবুও আমার মনে হয় আমি তার লেখার প্রেমে পড়ে গেছি। আর আফসোস হচ্ছে এমন একজন সম্ভাবনাময় লেখককে আমরা হারালাম্!বন্ধুত্বের খাতায় হয়তো আরো একজনের নাম উঠলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



