somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন নারীবাদী নারীর অসহায়ত্বের গল্প।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি মফস্বল থেকে ঢাকা এসেছে উচ্চশিক্ষার জন্য। পড়ে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েকজন পড়ুয়া মেয়ে মিলে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে। ইন্টারমিডিয়েটে থাকতে টুকটাক বই পুস্তক পড়তো। তার মধ্যে বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল, তসলিমা নাসরিন, আহমদ ছফা, বদরউদ্দীন উমর, জাফর ইকবাল, হুমায়ুন আজাদের বই বেশি। ঢাকায় আসার পর থেকা তার বই পড়ার অভ্যাস বেড়েছে। ঢাকায় পড়ুয়াদের জন্য সুযোগ বেশি। মফস্বলে বই কালেকশন তার জন্য কষ্টকর হলেও ঢাকাতে চাইলেই তার ইচ্ছা অনুযায়ী সকল বই সে সংগ্রহ করে পড়ে নিতে পারে।

ক্যাম্পাসে যাদের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়েছে তারা প্রায় সকলেই বাম ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত। তাদের এক্টিভিটিস দেখে মেয়েটির মনে হয় দেশ এবং জাতির মুক্তির জন্য আসলে বাম রাজনীতির দরকার। সে আস্তে আস্তে বাম রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করে এবং নারীর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য "নারীবাদ" কায়েমের বিকল্প নাই বলে মনে করতে শুরু করে।

পড়াশোনা, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য প্র‍্যাক্টিস করতে করতে একজন ছেলের সাথে পরিচয় হয় যা পরে প্রেম পর্যন্ত গড়ায়। প্রেমের এক পর্যায়ে গিয়ে তারা দুইজনই মনে করে বিয়ে করা দরকার। একসময় তারা বিয়েও করে ফেলে। এদিকে মেয়েটির পড়ালেখা শেষ অপেক্ষা শুধু রেজাল্টের। এর মধ্যে মেয়েটি চাকরি খুঁজতে থাকে। ছেলেটির ফিক্সড কোন কাজ নাই। বাপের টাকায় চলে। চাকরি-বাকরি করার কোন ইচ্ছা নাই। মেয়েটি রিয়েলাইজ করে সংসার তাকেই সামলাইতে হবে।

মেয়েটির একটি চাকরি হয় কিন্তু সেটি ঢাকার বাইরে। মেয়েটি চাকরির জন্য ঢাকা ছেড়ে অন্য আরেকটা বিভাগীয় শহরে ক্যারিয়ার শুরু করে। জামাই পড়ে থাকে ঢাকায়। মাস দুয়েক যাওয়ার পর মোটামুটি সব গুজিয়ে উঠলে মেয়েটি তার জামাইকে নিয়ে আসে। মেয়ে সকালে অফিসে চলে যায় জামাই বাসায় থেকে সারাদিন আরাম-আয়েশ করে। সন্ধ্যায় মেয়েটি বাসায় এসে ক্লান্ত হয়ে যায়। একটু শুতে ইচ্ছা করে কিন্তু সে সুযোগ হয়ে উঠেনা। তাকেই বাজার করতে হয়, রান্না করতে হয়, হাঁড়ি-পাতিল ধুতে হয়, ঘর গোছাতে হয়, কাপড় ধুতে হয় !

দিন যায় মেয়েটির বিরক্তির মাত্রাও বাড়তে থাকে। কথা-কাটাকাটি শুরু হয় জামাইয়ের সাথে। জামাই বলে, আমারে দিয়া এইসব রান্না বান্না চাকরি বাকরি হবেনা। আমার বাপের ম্যালা টাকা ম্যালা সম্পদ আমি সারা জীবন কিচ্ছু না করলেও বাপের গুলা খাই শেষ করতে পারবোনা। আর এইসব আমি তোমারে আগেও বলছি, এখন তোমারে বাসায় তোলা সম্ভব না। আমি সিদ্ধান্ত নিছি ডিভোর্স দিবো। এইসব ক্যাচাল-প্যারা, সংসার ভাল্লাগছেনা।

ছেলেটি রাতেই বেরিয়ে যায় বাসা থেকে পরেরদিন সন্ধ্যায়ও ফেরে না। ফোনও বন্ধ। ফেইসবুকে সার্চ দিয়ে দেখে ব্লক। হোয়াটসঅ্যাপেও ব্লক। ইমু মেসেঞ্জারেও ব্লক। মেয়েটি বুঝতে পারে ইস্যু বিকাম বিগ! ভার্চুয়াল জগত থেকে তাকে ব্লক করে দিয়েছে।

মেয়েটি তার মিউচুয়াল বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে কিন্তু কেউই তার জামাইয়ের খোঁজ দিতে পারে না। আর এইদিকে মেয়েটিরও উপায় নাই যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় গিয়ে এইখানে-ওইখানে খুঁজে জামাইরে বের করে আনা! দিন যায় মাস যায় মেয়েটির জামাইয়ের কোন হদিস নাই। বিয়ে করার ছয় মাসের মাথায় সংসার ভেঙে যাবে কল্পনায়ও ছিলোনা মেয়েটির।

একদিন একটা চিঠি আসে মেয়েটির কাছে। খুলে দেখে তালাকের উকিল নোটিশ। মেয়েটির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। মেয়েটি চিঠি গ্রহণ না করে ফেরত দিয়ে দেয়। বাড়ি থেকে ফোন আসে মেয়েটির কাছে। তার নামে একটা চিঠি গেছে চেয়ারম্যান অফিসে। সে চিঠিটি তালাকের উকিল নোটিশ। চেয়ারম্যান অফিস থেকে বলেছে, আইনী কিছু বাধ্যবাধকতা আছে মীমাংসার জন্য যেতে হবে কিন্তু মেয়েটি যায় না।

মেয়েটি অসহায় বোধ করে। একা মনে হয় নিজেকে। সারাক্ষণ কান্না করে। কোথাও বের হয় না। শুধু অফিস আর বাসা। তার শুধু একা একা লাগে, অসহায় লাগে! কাউকেই বলতে পারছেনা তার বিষয়টা। বাড়িতেও জানায় নাই, বন্ধু বান্ধবদেরও জানায় নাই বিয়ের ব্যাপারটা । হাতেগোনা যে কজন জানে তারাও তাকে কোন রকম সাহায্য করতে পারছেনা । মেয়েটা বিষণ্ণতায় ভুগে । মেয়েটা নিজের ভেতর নিজেই গুঁটিয়ে যেতে থাকে । সারাক্ষণ মনে হয় চারপাশে সবাই আছে শুধু সে নাই যাকে আসলেই তার দরকার ।

বছরখানেক কেটে যায় । এই এক বছর সে তেমন কোথাও যায় নাই । তেমন কারো সাথে দেখা করে নাই । ফেইসবুক আইডি বেশির ভাগ সময় ডিএক্টিভ ছিলো । আড্ডা-ফাড্ডা দেয় নাই । সিনেমা দেখে নাই । বই পড়ে নাই । মানষিক বেশ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে কেটেছে তার । কিন্তু মেয়েটি তার জীবন আবার নতুন করে গোছাতে চায় । সে এখন বুঝে গেছে এই সমাজে জামাইয়ের ইনকাম না থাকলে কিংবা পার্টনার যদি রেসপন্সিবল না হয় তাহলে সংসার করা বেশ অশান্তির ।

সে এটাও বুঝতে পারে , পুরুষের উপর ডিপেন্ড হওয়া নারীবাদ সমর্থন করে না । কিন্তু এই সমাজে বাস্তবিক অবস্থায় নারীকে অনেকগুলো বিষয়তেই পুরুষের উপর ডিপেন্ড হতে হয় । সবচাইতে লজ্জার যে বিষয়টা সেটা হচ্ছে, একজন নারীবাদী নারীকে তার পার্টনারের ফিনেন্সিয়াল সিকিউরিটি আছে কি নাই সেটা নিশ্চিত হতে হচ্ছে !

মেয়েটি তার আশেপাশে থাকা চেনা পরিচিত জনদের মধ্যে যারা তাকে নক করে, হাই হ্যালো করে, একটু কথা বলতে চায়, একটু ঘুরতে চায়, একটু আড্ডা ফাড্ডা দিতে চায় তাদেরকে সময় দেওয়া শুরু করছে । মেয়েটি চায় তাদের মধ্য থেকে কে আছে যাকে পার্টনার বানানো যায় ।

একটা ছেলের সঙ তার ভালো লাগে । তার সাথে একটু কথা বলতে মন চায় । অলস দুপুরে কিংবা সন্ধ্যায় কিংবা রাতে বিছানায় শুয়ে তার কথা মনে পড়ে । অফিস ছুটি থাকলে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা হলে মনে হয় , ছেলেটাকে একটা ফোন দিয়ে দেখি ফ্রি আছে কি না ! ছেলেটাও প্রায় ডিরেক্টলি বলে দিয়েছে তার সাথে থাকতে চায় । আর ছেলেটা পলিটিক্যালি কনসাস , বই পুস্তক পড়ে , শিল্প সাহিত্য প্র্যাক্টিস করে, টুকটাক লেখেও, পড়ালেখা শেষ, ভালো বংশের সবই ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ছেলেটার কোন ফিক্সড ইনকাম নাই। ফিক্সড কোন চাকরি নাই । সে চায় তার পার্টনারের এটলিষ্ট একটা ফিক্সড ফিনেন্সিয়াল সোর্স থাকুক । কারণ সে অলরেডি বুঝে গেছে এই সমাজে জামাই বা পার্টনার ফিনেন্সিয়ালি স্ট্যাবল না হলে বউ বা প্রেমিকার অসহায়ত্বের শেষ নাই। সবচাইতে বড় ব্যাপারটা হচ্ছে সে যে কনসেপ্ট নিয়ে নারীবাদ প্র্যাক্টিস করছে সেই কন্সেপ্টের সাথে পার্টনারের ফিনেন্সিয়াল স্ট্যাবিলিটিটা আসেই না অথচ বাস্তবতা ভিন্ন !

ছেলেটি মেয়েটির সাথে লিভ ইন করতে চায় কিন্তু মেয়েটি চায় না । তার ভেতরে কেমন একটা অনিশ্চয়তা কাজ করে । মনে হয় তার, এইসব সম্পর্কের কোন ভ্যালু নাই । সে বিয়ে করবে এবং তা উভয় পরিবার এবং সামাজিক আর ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে । এতে যদি তার নারীবাদ কনসেপ্টের সাথে আপোষ করতেও হয় তা সে একটু করবে !

সমস্যা হচ্ছে সেই টাইপ ছেলে এখন আর পাচ্ছে না । কারণ হিশেবে তার মনে হয় , তার বয়স বাড়ছে । সোসাল নেটওয়ার্কিং-এ তার চেনা পরিচিত যে সব ছেলে মেয়ে জানাশোনা আছে তাদের বলতে গেলে প্রায় সবারই বিয়ে বাচ্চা সংসার হয়ে গেছে । যে কজনের বাকি আছে তারাও কারো না কারো সাথে যুক্ত আছে ।

ছেলেটি বারবার বলে , চলো বিয়ে করে আমি তুমি থাকি । কিন্তু এখন সে পরিবারকে জানাতে পারবে না । তার প্ল্যান, আগে বিয়ে করবে একসাথে থাকবে । চাকরি-বাকরি কিছু একটা হলে তখন বাসায় সবাইকে জানিয়ে ঘরে তুলে নেবে । এই কথাগুলোর একটাতেও মেয়েটি আর ভরসা করতে পারে না ! সারাক্ষণ মনে হয়, যদি কিছু একটা হয় ! তাহলে ?- কোন এক্সেপ্টেড উত্তর তার নিজের কাছ থেকেও আসে না । মাঝেমাঝে যে সব উত্তর আসে সেগুলোকে বাস্তবতায় গ্রহণ করার কোন চান্স নাই !

হতাশা বাড়ে মেয়েটির । তার ভালো চাকরি আছে । সে ওয়েল এডুকেটেড । ভালো ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে । কিন্তু কেমন যেনো একা । কেমন যেনো একটা ফাঁকা ফাঁকা জীবন । কোন পুরুষই তার একার নয় !
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×