বিয়ে। দু’ অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হয়, চুক্তিবদ্ধ হই একসাথে পথ চলার। ভাগাভাগি করে নেই সুখ-দু:খের মুহুর্তগুলো। সাজিয়ে তুলি ছোট্ট বাগান। সংসার নামক এই বাগানটি আগাছা জন্মে জঙ্গলে পরিনত হতে পারে একটু ভুলের কারনে, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে। বিয়ে নামক সুন্দর শব্দটি তালাকের মতো বিষাক্ত পরিনতির স্বীকার হওয়াটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। সুন্দর বাগান তো তখনই হয়, যখন আমরা আগাছা পরিষ্কার রাখি। ঠিক মতো সার, সেচ, যত্ন নিলেই তো ছোট্ট বাগানটি ফুলে ফুলে ভরে উঠে। আমাদের সংসারও তেমনি।
একটি বিষয় লক্ষ করেছেন কি! ছোটবেলা থেকে আমাদের মা-বাবা আমাদেরকে কত বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন! কত আদেশ উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু কখনো কি বিয়ে নিয়ে কিছু বলেছেন? আমি- আপনি আমরা সবাই বিয়ে সম্পর্কে যা কিছু জেনেছি তার উৎস কি বলতে পারবেন? নাটক-সিনেমা, আমাদের চলচিত্র! এসবের মধ্যে জীবন গঠনের জন্য কতটুকু উপাদান আছে? আমরা নাটক সিনেমা দেখতে দেখতে ছেলেরা নিজেদেরকে নায়ক ভেবেছি, আর মেয়েরা নায়িকা। দেখেন তো, কতজন নায়ক-নায়িকা বাস্তব জীবনে সুখী। কতজনে সংসার করতে পেরেছে! তবুও তাদেরকে আইডল বানাবেন?
বিয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র দুটি মানুষ সম্পর্কে আবদ্ধ হন না। দুটি পরিবারের সদস্যরাও আবদ্ধ হন অনুপম এক সম্পর্কে। ছেলে-মেয়ে উভয়ের প্রচেষ্টা না থাকলে সম্পর্কগুলো একসময় বিষাক্ত হয়ে পড়ে। ছেলে বা মেয়ে, কারো চাইতে কারো দায়িত্ব কম নয়। ছেলে হলে তাকে একই সাথে তার পরিবার, স্ত্রী, স্ত্রীর পরিবার সবার খেয়াল রাখতে হয়। সংসার জীবনে বউ-শাশুড়ির ঝগড়া কথাটা যেন চিরন্তন সত্য। আপনার মার কাছে শুনে দেখবেন আপনার দাদীর কথা বলতে, আবার আপনার স্ত্রীর কাছে শুনবেন আপনার মায়ের দোষ ধরতে। এহেন পরিস্থিতিতে বাবাদের উচিত শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া। কিন্তু অধিকাংশ পরিবারের বাবারা চুপ থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। এই তিক্ত মুহুর্তে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। এর জ্ঞান সবার মধ্যে থাকে না। সে ডাক্তার হোক অথবা ইঞ্জিনিয়ার।
উভয়ের মধ্যে ছাড় দেয়ার মানসিকতা না থাকলে সম্পর্কগুলো টিকে না। শাশুড়িকে বুঝতে হবে তিনিও একদিন বউ হয়ে এসেছিলেন। পরিবার ছেড়ে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবেই। একটি চারাগাছ যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে লাগানো হয় তখন সেই গাছটিরও সময় লাগে সেই স্থানের মাটির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে। কোন কোন গাছের পাতা পর্যন্ত ঝরে যায় মানিয়ে নিতে গিয়ে। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে লালিত পালিত হওয়া একটা মেয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এরকমই। তাকে সময় দিতে হবে মানিয়ে নিতে। মেয়েটিকেও বুঝতে হবে এটা তার নিজের পরিবার থেকে আলাদা একটি পরিবার। অচেনা এই পরিবারকেই আপন কেরতে হবে তাকে। বিষয়টি যত সহজ ভাবে বললাম তত সহজ নয়। গাছের উদাহরণ থেকেই বিষয়টি সহজে অনুমেয়।
শাশুড়ি তার ছেলের বউকে যতই বলুক তুমি আমার মেয়ের মতো কিংবা ছেলের বউ শাশুড়িকে যতই বলুক আপনি আমার মায়ের মতো, প্রকৃত পক্ষে সম্পর্কগুলো তেমন হয় না। সত্যি করে বলতে গেলে তেমনটি হওয়াও উচিত নয়। মেয়ের স্বামী যেমন ছেলে হলে সম্পর্কের ভিত্তি ঠিক থাকে না তেমনি ছেলের বউ মেয়ে হলেও আসল সম্পর্কই টিকে না। যখন আপনি একটু ভুল করবেন তখন আপনার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি বলবে পরের ছেলে বা মেয়ে কখনো নিজের ছেলে-মেয়ের মতো হয় না। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে।
বিয়ে সম্পর্কে আপনার যথেষ্ঠ জ্ঞান না থাকলে স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর হতে সময় লাগে না। বরফের একভাগ পানির উপরে ভাসমান থাকে যা দৃশ্যমান আর দশভাগ পানির নিচে। বরফের এই ভাসমান অংশের মতো সংসার জীবন। আনন্দ হলো দৃশ্যমান এক ভাগ। আর বাকি দশভাগ সংগ্রাম। এক ভাগকে বাঁচিয়ে রাখতে নিরন্তর সংগ্রাম করে যেতে হয়। এ জন্যই হয়তো মনীষীরা বলছিলেন, “প্রেম মানে ডুবে ডুবে জল খাওয়া।”
কামনা করি, সবার জীবন সুন্দর হোক। জীবন সংগ্রামে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সহযোগী হলে জীবন নামের অথৈ সাগরে ভালবাসার চর জাগিয়ে তোলা কোন ব্যাপারই না।
ভুল কিছু বললে শোধরে দেবার অনুরোধ রইলো, যাতে সবাই মিলে সঠিক বিষয় জানতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৮