আপনি কখনো আগারগাঁও শিশুমেলা থেকে মহাখালী হেঁটে গিয়েছেন? আমি গিয়েছিলাম একদিন। রাস্তায় যেতে যেতে একটি বিষয় খেয়াল করলাম, রাস্তার দুই ধারে ১০০ মিটার পরপর ডাস্টবিনের ক্যারিয়ার ঠিকই আছে কিন্তু ডাস্টবিন নাই। কোন এক সাধু ব্যক্তি নিজের মনে করে সরিয়ে ফেলেছেন। এসব সরাতে কি কারো চোখে পরেনি? আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা কারো হাতে দশ টাকার চকচকে একখান নোট গুঁজে দিলেই সব হালাল হয়ে যায়। অবশ্য নোটটি ময়লা যুক্ত হলেও সমস্যা নেই!
গাবতলী মাজার রোডে গাড়ি ঘুরানো নিষেধ থাকলেও সেখানে গাড়ি ইউ টার্ণ নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিনিময়ে গাড়ি প্রতি ১০ টাকা চলে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের হাতে। আর আমরা যানজটে বসে বসে ফ্রিতে ঘুম দিতে পারছি। বিষয়টা দারুণ না?
গাবতলী বাস টার্মিনাল গিয়েছেন কখনো? গাবতলী আন্ডার পাসের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন কখনো? যদি দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় আপনার নাকে দারুণ ঘ্রাণ এসে ধাক্কা মেরেছে! আহ....... বলে সেই ঘ্রাণ উপভোগ করেননি নিশ্চয়! আন্ডারপাসের দুই পাশেই পেশাবের গন্ধে বমি এসে যায়! দিনে দুপুরে প্যন্টের চেন খুলে সবার সামনেই বসে মেশিন চালু করে দিচ্ছে। লজ্জাও করে না ওদের! যদিও টার্মিনালে পাবলিক টয়লেট আছে। পাঁচ টাকার বিনিময়ে ট্যাঙ্ক খালি করার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু তার অবস্থা আরো ভয়াবহ! দাঁড়িয়ে কিংবা বসে কোন ভাবেই কাজ সারার কোন উপায় নেই। ফ্রিতে সুঘ্রাণ(!!) তো আছেই।
আমিন বাজার পার হয়ে সাভার আসার পথে আবর্জনা ল্যান্ডফিলের যে অবস্থা তা কি দেখেছেন কখনো? হায়রে দূর্গন্ধ! ভিতর থেকে ফুসফুস বের হয়ে আসতে চায়! রাস্তায় যদি কোন কারনে যানজট দেখা দেয় তাহলে তো খবরই আছে। সেখান থেকে আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে কয়েকটা মিল-কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া এতো বেশি ভারী করে রেখেছে যে আপনি নাক দিয়ে নি:শ্বাস নিতে পারবেন না। পত্রিকায় খবর বের হয় রাজধানীর বাতাসে বিশ্বের সবচাইতে দূষিত বাতাস! আর আমরা বসে বসে হায় হায় করি! এছাড়া আর উপায় কি আমাদের আছে?
আজকে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের একটা অফিসে গিয়েছিলাম। বের হবার সময় দেখি বাহিরে বক্সে রাখা জুতা নেই! অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম, দেখি কেউ হয়তো নিচে গেছে পায়ে দিয়ে সে আসি নাকি। কিন্তু না, সে আসলো না। সেই অফিস থেকে একটা প্লস্টিকের সেন্ডেল পায়ে দিয়ে চলে আসলাম। মাসের শেষ দিকে এসে হাতও খালি। কয়েকদিন আগে নতুন আরেক জোড়া সেন্ডেলের একটা পাথরের সাথে হুচট লেগে ছিঁড়ে যায়। বাসার বাহিরে রেখেছিলাম যে ঠিক করে নেব। সকালে উঠে দেখি সে জোড়াও নেই। এর আগেও অফিস থেকে আরেক জোড়া কে যেন নিজের মনে করে নিয়ে গেছে। কিন্তু কষ্ট লাগছে না কেন যেন!
উত্তরার আজমপুর থেকে নবীনগরের বাসে উঠেছিলাম আজকে। মাথাটা খুব ব্যাথা করছে বিধায় চোখ বন্ধ করে আছি। বাইপাইল এসে শুনি এক লোকের পকেট থেকে ২০,০০০/- (বিশ হাজার টাকা) নাকি চুরি হয়েছে। লোকটা কিছুক্ষণ আগেই নাকি ব্যাংক থেকে তুলেছে। রেখেছিলো প্যান্টের চোরাই পকেটে। ব্লেড দিয়ে পকেট কেটে তারপর টাকা নিয়েছে। চোরদের কত সাহস! ওরা কয়েকজন একসাথে উঠেছিল। একজন বাসে উঠেই বমি করে দিয়েছিল। লোকটা সেই দিকে মনযোগ দেওয়াতে খুব সহজেই অন্য চোরেরা পকেট কাটতে পেরেছে। বাসের আরেকজন যাত্রী বলতেছে, "ভাই এই রোডে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আমার গায়ের উপর চারদিন বমি করে দিয়েছিল। ওরা গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে নাকি বমি করি।" এই রোডে যারা চলাফেরা করেন সাবধান থাকবেন।
একদিন সাভার বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্য। হঠাৎ এক মহিলা চিৎকার করছে আর দৌঁড়াচ্ছে। গলায় হাত দিয়ে বলছে, "আমার গলার সোনার চেইনটা নিয়ে গেল....." ততক্ষণে চোরটা রোড ডিভাইডার পার হয়ে চলে গেল। চোরদের উৎপাত আজকাল বেড়েই চলছে। এদের শিকার হচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিক। বিশেষ করে নারীরা। এমন ঘটনা নতুন ঘটছে তা নয়। এর আগেও সাভার-বাইপাইল এলাকায় প্রাইভেট কারে উঠিয়ে প্রচুর ছিনতাই হত। এখন সে কৌশল পাল্টেছে ওরা।
নবীনগর স্মৃতি সৌধের পশ্চিম পাশে যে ফুট ওভার ব্রিজ রয়েছে সন্ধ্যার পর সেখান দিয়ে একা একা হেঁটে যাবেন না কখনো। একটু আঁধার নামতেই ভাসমান পতিতাদের হাট বসে এখানে। একদিন আমি না জেনে এর স্বীকার হয়েছিলাম। চিন্তার বিষয় হচ্ছে, স্মৃতি সৌধের মতো একটা জায়গায় এসব কি আইনশৃংখলা বাহিনী দেখে না?
একদিন রাত্রি বেলায় গাবতলি বাস টার্মিনালে বিপদে পরেছিলাম। চট্টগ্রাম থেকে একটা কাজ শেষ করে বিকাল ৩.৪৫ মিনিটের বাসে রওনা হয়েছিলাম। ধারনা ছিল রাত ১১ টা থেকে ১২ টার মধ্যে ঢাকা আসতে পারবো। কিন্তু রাস্তায় জ্যামের কারনে রাত ৩ টা বেজে গেল ঢাকা আসতে আসতে। ফকিরাপুল নেমে একটা সিএনজি নিয়ে গাবতলী আসলাম। গন্তব্য ধামরাই। কিন্তু অত রাতে বাস পাচ্ছিলাম না। একটা লোক বেঞ্চ পেতে বসে দেখি টিকেট বিক্রি করছে। বলতেছে ২০০ টাকা দিলে বাসে উঠিয়ে দিবে। আমিও বোকার মতো দিয়ে দিলাম। কিন্তু বাসে উঠাবে তো দূরের কথা উল্টা আরো টাকা চাচ্ছে। বলেছিলাম ভাই, আমার কাছে আর টাকা নেই। আমি রাত্রে যাবো না। এখানে থেকে সকাল বেলা যাবো। আমার টাকা ফেরত দেন। তাও দিল না। এরই মধ্যে কয়েকটা চট্টগ্রাম-খুলনা বাস আসলো। সেই বাসে উঠিয়ে দিয়েছিলো শেষমেষ। বাস ভাড়া দিয়েছিল ১০০ টাকা। আর দালালরা ১০০ টাকা খেয়েছিল। কথা হচ্ছে যদি আমি দালালকে টাকা না দিতাম তাহলে ১০০ টাকায়ই আসতে পারতাম। যদিও ভাড়া ৪০ টাকা। রাত্রি বেলায় কেউ যদি এরকম পরিস্থিতিতে পড়েন তাহলে দালালদের কাছে অগ্রিম টাকা দিবেন না। ওরা কিন্তু অনেক লোভ দেখাবে। জোরও করতে পারে।
পরিশেষে বলবো, সবাই সতর্ক থাকুন ভাল থাকুন। আপনার একটু অসতর্কতা ডেকে আনতে পারে বড় কোন বিপদ।
ছবি লিংক: আজব শহর ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১৫