somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে রমরমা ভর্তি বাণিজ্য। শিক্ষা এখন কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। শিক্ষার নামে তৈরি হচ্ছে বিরাট বৈষম্য। এটা দূর হওয়া জরুরী।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিবছর স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় আসার বেশ আগে থেকে এ নিয়ে দেখা দেয় নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, অসঙ্গতি ইত্যাদি। এবারো এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়ে গেছে অবৈধ বাণিজ্য। এতে মারাত্মক সমস্যায় পড়ে গেছে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ উঠেছে, রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানের প্রচুর সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি পরীক্ষা, ভর্তি ফি ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায় করছে নানা কৌশলে।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরীতে ফি হিসেবে নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা। কিন্তু অনেক স্কুলই মানছে না এই আদেশ। বাধ্যতামূলক কোচিং, সেশন ফি, উন্নয়ন ফি ইত্যাদির নাম করে শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বিশ হাজার টাকারও বেশি অর্থ। এতে বেশি সমস্যায় পড়ে গেছে অল্প বা সীমিত আয়ের অভিভাবকদের সন্তানেরা।
অপরদিকে ভর্তি বাণিজ্যের মহড়া বেশি হচ্ছে ঢাকার নামকরা স্কুলগুলোকে কেন্দ্র করে। ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্কুলগুলোর গভর্নিং বডির সদস্য, শিক্ষক, অভিভাবক নেতা, রাজনৈতিক নেতা, এমনকি আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের নামও শোনা যাচ্ছে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, এক্ষেত্রে সরকারপন্থী ও সরকারবিরোধী উভয় রাজনৈতিক দলের নেতারা একাট্টা। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুলের সংশ্লিষ্ট বেনিয়ারা তালিকা প্রণয়ন শুরু করেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের অধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছে, গভর্নিং বডিসহ অধ্যক্ষরা মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং শিক্ষা বোর্ডের সুপারিশের সুযোগ নিয়ে থাকে। ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে নানা সুপারিশে ভর্তি করাতে গিয়েই নিজেদের দুর্নীতি হালাল করে নেয় স্কুল সংশ্লিষ্টরা। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা কোটি কোটি টাকার ভর্তি বাণিজ্য করে থাকে। জানা গেছে, ভর্তির ক্ষেত্রে রাজধানীর আইডিয়াল, মনিপুর ও ভিকারুননিসায় কেবল প্রথম শ্রেণীতেই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষের অফার রয়েছে একশ্রেণীর অভিভাবকের পক্ষ থেকে। ফলে কাঁচা টাকার নেশায় অনেকেই বুঁদ হয়ে আছে।
গত বছরও রাজধানীর আইডিয়াল, ভিকারুননিসা, মনিপুরসহ বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। এরমধ্যে কেবল আইডিয়াল স্কুলেই প্রথম শ্রেণীতে একদিনে ১ হাজার ৫৫০ জন অতিরিক্ত ভর্তি করা হয়।
গত বছর ভিকারুন নিসা স্কুলে লটারির মাধ্যমে এক হাজার ৪৮৪ জন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির কথা থাকলেও এক হাজার ৭০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। অভিভাবকদের প্রশ্ন, বাকিদের কোন পথে ভর্তি করা হল। তাদের অভিযোগ কোটার নাম দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের কর্মকর্তারা এবং অধ্যক্ষ কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে।
অধিকাংশ অভিভাবক অভিযোগ করেছে, ভর্তি প্রতিযোগিতায় লটারি করে কোনোও লাভ নেই। বিজয়ী হলেও দুই-তিন লাখ টাকা, না হলেও টাকা দিয়েই ভর্তি হতে হচ্ছে। বলাবাহুল্য, সব অভিভাবক চান তার সন্তান ভালো স্কুলে ভর্তি হোক। তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জিম্মি হয়েছে এসব শিক্ষ প্রতিষ্ঠানের কাছে। ভর্তি নিয়ে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। কোনোও অভিভাবক এক লাখ টাকা ভর্তি ফি দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আবার কারও পাঁচ লাখ টাকা দিতেও দ্বিধা নেই। এই সুযোগে বাণিজ্য করছে নামিদামি স্কুলগুলো।
উল্লেখ্য, দেশে কালো টাকার বিস্তারের মতো কালো শিক্ষারও বিস্তার লাভ ঘটছে এবং শিক্ষাবঞ্চিত সাধারণ মানুষের ঘাড়ে কালো শিক্ষার অধিকারী একটি সুবিধাভোগী শ্রেণীর আধিপত্য স্থায়ী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্য পেশায় দুর্নীতির চেয়ে শিক্ষায় দুর্নীতি একটা জাতির মেরুদ- ভেঙে দেয়ার সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র। অর্থনৈতিক বৈষম্যের চেয়েও শিক্ষালাভে বৈষম্য একটা জাতির অধঃপতনের রাস্তা বেশি সুগম করে দেয়। বর্তমান সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষালাভ অবৈতনিক করুক বা বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তকদানের যত ব্যবস্থাই করুক, শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতি দূর করতে না পারলে তাদের সব প্রচেষ্টাই অরন্যে রোদন হয়ে দাঁড়াবে।
বলা হয়ে থাকে, শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। সেই মেরুদ-েই যদি ঘুণ ধরে, তাহলে সে জাতির ভবিষ্যৎ কি? এর নাম শিক্ষা বিক্রির কালোবাজারি এবং এর প্রভাব পড়ছে দেশের হাজার হাজার কোমলমতি শিশুর শিক্ষাজীবন গঠনে। এই শিক্ষা বিস্তারকে শিক্ষাবিক্রি বা কালো ব্যবসায়ে পরিণত করার ফলে ঘুষ প্রদানে অক্ষম হাজার হাজার নাগরিকের শিশুসন্তানরা শিক্ষালাভে বঞ্চিত হবে অথবা বৈষম্যের শিকার হবে।
লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে সন্তানের জন্য শিক্ষাক্রয়ে অক্ষম দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সন্তানরা শিক্ষাক্ষেত্রে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হবে এবং মুষ্টিমেয় ধনী ব্যক্তির সন্তানরা শিক্ষালাভের উন্নত ব্যবস্থায় একচ্ছত্র অধিকারী হয়ে একটি প্রিভিলেজের ক্লাস তৈরি করবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে তাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে। উদাহরণত বলতে হয়, ব্রিটেনে ভিক্টোরিয়া যুগে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা স্বল্পসংখ্যক লর্ড ও ব্যারনদের সন্তান-সন্ততির জন্য সীমাবদ্ধ করে একটি রুলিং ক্লাস তৈরি করা হয়েছিল এবং দেশ শাসনের সব ক্ষমতা কার্যত তাদেরই করায়ত্ত ছিল।
বাংলাদেশেও যদি শিক্ষায় একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকেই বর্তমান ঘুষ-দুর্নীতির রাজত্ব বহাল থাকে, তাহলে এ দেশেও একটি পার্মানেন্ট রুলিং ক্লাস তৈরি হতে দেরি হবে না এবং গণতান্ত্রিক ভড়ংয়ের ছদ্মাবরণে তারাই হবে দেশের সব ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার অধিকারী। বাংলাদেশে যদি দিন বদলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয় এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হয়, তাহলে মুখে কেবল কথার তুবড়ি না ছুটিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার, কেবল ধনী ও নব্যধনীদের সন্তানদের জন্যই উন্নত শিক্ষালাভের দুর্নীতিমূলক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা, আধুনিক গণশিক্ষার প্রসারের কাজটিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্যই মূলত একটি দেশে শ্রেণী বৈষম্য ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিভেদমূলক শ্রেণীস্বার্থ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণী গড়ে তোলে এবং সংঘাতের জন্ম দেয়। বাংলাদেশেও যাতে এ অবস্থার উদ্ভব না ঘটে, সেজন্য এদিকে অবিলম্বে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত।
মূলত, সব সমস্যা সমাধানে চাই সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা তথা সততা। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত মুবারক, নেক সংস্পর্শ মুবারক তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
View this link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×