somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহফুজুর রহমানের গান আর আমার শিশুকালের অভিনয়

২৮ শে মে, ২০২০ ভোর ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উপমহাদেশ কাঁপানো সঙ্গীতজ্ঞ মাহফুজুর রহমানের গান দেখে ও শুনে যুগ যুগ আগের কথা মনে পড়ে গেল। তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। সেভ দ্য চিলড্রেনের কুরুক্ষেত্র হল আমাদের স্কুল। ছোট ছোট আমাদের দিয়ে হেন কাজ নেই করানো হয় না, সে হোক নৃত্যগীত, অভিনয় অথবা হাত ধৌত করার নিয়ম শেখা।

সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিনিধি রতন ভাই। আমাদের সবার অতিরিক্ত পছন্দের মানুষ তিনি, কারণ একমাত্র তার সাথে থাকলেই পড়ালেখার বেদনা সইতে হয় না। সেকালেও অঞ্চলে বখাটে ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েদের পেছনে পেছনে ওরা ঘুরে মরতো। (এই ভাইগুলির মেয়েরাও আজ বুঝি স্কুলে যায়, আজ এতকাল পর জানতে ইচ্ছে করে ওদের মেয়েদেরও কি একই যাতনা?)

সে যাই হোক, রতন ভাই ওই ভাইয়াগুলির চোখের কাটা হলেন। ভাইয়াগুলির ধারণা পঞ্চম শ্রেণির বাড়ন্ত মেয়েদের সাথে প্রেমের খেলা খেলেন রতন ভাই। জোর করে স্কুলে ঢুকে নায়কের মত রতন ভাইকে ওরা শাসাতে পারে না বিধায়, স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে একদিন লিখে দিল, রতনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে। বদ বড় ভাইগুলি এই লেখা সিলিংয়ের ধার দিয়ে এমনভাবে লিখেছে যে, আমাদের মত বাচ্চাদের পক্ষে তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। বহুদিন সেই লেখা দেখতাম আর ক্লাস করতাম। কক্ষে শিক্ষক থাকা অবস্থায় ওই লেখার দিকে তাকানো বারণ।

একদিন এই রতন ভাই একটা নাটকের দল তৈরি করবেন বলে পণ করলেন। এর মাঝে আমাকে দিলেন একটা চরিত্র। কিন্তু সকলের সামনে অভিনয়ের মহড়া দিতে গেলেই আমি রোবট হয়ে যাই। আমাকে আর নড়ানো যায় না। অধুনা রোবট দিয়ে ঘর মোছানো যেতে পারে, কিন্তু অভিনয়কম্ম ওর কাজ নয়। নিতান্ত বিরক্ত হয়ে রতন ভাই আমাকে বাদ দিলেন। পরে দিলেন মাস্টারের ছোট চরিত্র। একবার মাত্র মঞ্চে উঠতে হবে। আমি স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম। এখনো আছে কিনা জানি না, সেকালে বিটিভি নামক এক বস্তু ছিল, তাতে একবার দেখলাম বুলবুল আহমেদ হাত নেড়ে নেড়ে পুত্র টনি ডায়েসের সাথে কথা বলছে। প্রেক্ষাপট আর সংলাপ কিছুই না বুঝে ধরে নিলাম আমাকেও ঠিক এভাবেই হাত নাড়াতে হবে। সবাই মিলে নাচতে নাচতে গেলাম উপজেলায়। বিরাট মিলনায়তনে অভিনয় করলাম হাত নেড়ে। অভিনয় শেষে রতন ভাই বললেন, অতি জঘণ্য। আমার হৃদয় চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল।

অতীত দিনের এত গীত গাওয়ার কারণ, গানের সময় মাহফুজুর রহমানের অভিনয় দেখে। তিনি যখন গান "ঘুমাতে পারিনা" তখন তিনি পাঁচ তারকা হোটেলের রুমে শুভ্র বিছানায় গড়াগড়ি করতে করতে থাকেন, আবার গান যখন এমন, "পাহাড়ে জমে থাকা বরফের মত", তখন পাহাড়ে না গেলে সমাজে টিকে থাকা যাবে না। বঙ্গদেশের পাহাড়ে গেলে মর্যাদাহানি হয়, তাই ফটোশপে চলে গেলেন আল্পসের চূড়ায়। কতখানি বাস্তববাদী ভাবা যায়! আরো ভাল লাগলো দেখে যে, তিনি যখন গাইতে থাকেন, "দুঃখকে মুঠোয় ভরে", তখন তিনি বাঁ হাত এত জোরে মুঠো করে ঝাঁকতে থাকেন, যেন এক্ষুনি হৃদয়রোগ দেখা দেবে।

সবচেয়ে মুগ্ধ হলাম তাঁর চোখের পানি মোছা দেখে। তিনি গাইলেন, "দুচোখে পানি ঝরে"। যেকোন শিল্পীই এখানে অনুভূতি গাঢ় করতে চোখের দিকে হাতটি নিতে পারেন হালকা করে। রুনা লায়লা যেমন ও মেরা বাবু ছ্যাল ছাবিলা গাওয়ার সময় বলেন "মে শারমাউরে", তখন তিনি ভারী চুমকির কাজ করা শিফন শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখটাই ঢেকে ফেলেন। মাহফুজুর রহমানও চোখে হাত দিলেন, বুঝালেন সেখানে অনেক পানি, তবে তিনি যেন তেন শিল্পী নন, তাই তিনি "দুচোখে পানি ঝরে" বুঝাতে গিয়ে কালি আর ভাঁজ পড়া দুটি চোখেই গুনে গুনে দুইবার হাত দিলেন। এতে কিন্তু প্রমাণ হয় তিনি অঙ্কেও পিছিয়ে নেই। একচোখে হাত দিলে বুঝতে হবে একচোখে পানি পড়ে। কিন্তু এক চোখ দিয়ে পানি পড়া চোখ আবার কেমন চোখ। তাই তাঁকে দুটি চোখেই হাত রাখতে হল।



বার্লিন থেকে
জাহিদ কবীর হিমন
২৮ মে ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×