যে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা বা সংগঠন মূলত এমন একটি পরিসর যেখানে ভিন্ন ভিন্ন মনোভাব, চিন্তাধারা ও পটভূমির মানুষ একত্রিত হয় একটি সাধারণ লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে। এই মানুষগুলো সমাজ থেকেই আসে, সঙ্গে করে আনে তাদের পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ যদিও তাদের নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালিত করে, তবু ব্যক্তির অন্তর্নিহিত চিন্তা ও মনোভাব থেকে যায়। এই জায়গাটিতেই দেখা দেয় মতের অমিল—আর সেখান থেকেই শুরু হয় কর্মক্ষেত্রের রাজনীতি।
অফিস রাজনীতি আসলে প্রভাব, প্রাধান্য ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা। যখন কেউ নিজের মতামত বা অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, তখনই শুরু হয় দ্বন্দ্ব, যা পরবর্তীতে বিভাজন ও দলাদলিতে রূপ নেয়। অথচ কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠানই বড়—এই নীতিটি যদি সবাই মেনে চলে, তবে এমন সংঘাতের সুযোগ কমে যায়

বাস্তবতা হলো, পৃথিবীর কোনো দেশই অফিস রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। তবে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। কখনো নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকেই রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ব্যক্তিগত প্রভাব প্রাধান্য পায়। আবার অনেক সময় পদ-পদবির প্রতিযোগিতা বা ক্ষমতার দাপটও এ দ্বন্দ্বকে তীব্র করে তোলে। ফলে দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিবর্তে সম্পর্ক ও প্রভাবই হয়ে ওঠে সাফল্যের মানদণ্ড।
অফিস রাজনীতি শুধু কর্মপরিবেশকেই জটিল করে না, এটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা ও টিম স্পিরিটকেও ব্যাহত করে। একজন কর্মীর মানসিক অস্থিরতা গোটা ইউনিটের কর্মক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই একটি প্রতিষ্ঠানের টেকসই অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ন্যায্য আচরণ ও সমন্বিত কর্মপ্রচেষ্টা।
নেতৃত্বের ভূমিকা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একজন দক্ষ নেতা জানেন, কিভাবে মতবিরোধকে পেশাদার আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়, এবং কীভাবে কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।
অতএব, কর্মক্ষেত্রের রাজনীতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও, এর প্রভাব কমানো সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সচেতন নেতৃত্ব, স্বচ্ছ যোগাযোগ এবং দলগত মানসিকতা। কারণ, যখন কর্মক্ষেত্র ব্যক্তিগত স্বার্থের বদলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতীক হয়ে ওঠে— তখনই প্রতিষ্ঠান প্রকৃত অর্থে সফলতার মুখ দেখে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


