somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধুর্ত শেয়াল আর বুদ্ধিমান কুইরকুঞ্চো (একটি আর্জেন্টিনীয় উপকথা)

২১ শে মে, ২০১৯ সকাল ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে অনেক, অনেক, অনেকদিন আগের কথা এক বনে থাকতো এক শিয়াল আর এক কুইরকুঞ্চো। তোমরা হয়তো ভাবনায় পরে গেছো যে কুইরকুঞ্চোটা আবার কি? তোমাদের মত আমিও ভেবেচিন্তে অস্থির, বাবারে বাবা এ আবার কি জিনিস ! খানিকটা পড়তেই বুঝতে পারলাম এ হলো গিয়ে আমাদের বনরুই যার পিঠের চামড়া কুমিরের মত খাজ কাটা মোটা শক্ত আশওয়ালা । কোন রকম বিপদ দেখলেই ফুটবলের মত গোল হয়ে শক্তভাবে পেচিয়ে যায় পিপড়াভূক এই প্রানীটি, তখন কেউ তার কোনরকম ক্ষতি করতে পারে না। উত্তর আমেরিকার আদিবাসী ইনকারা এদের কুইরকুঞ্চো বলতো । আমরাও এই গল্পে ইনকাদের মতই তাদের দেয়া মজার নাম কুইরকুঞ্চোই বলি কেমন?


এই হলো সেই নিরীহ প্রানী ইনকাদের ভাষায় যার নাম কুইরকুঞ্চো আর আমরা বলি বনরুই


এই কুইরকুঞ্চো আর শেয়ালের মধ্যে ছিল আবার দারুন ভাব। সারাদিন তারা দুজন মিলে বনের ভেতর নানা রকম দুষ্টামী আর খেলাধুলা করে সময় কাটাতো। একদিন কুইরকুঞ্চো একা বসে আছে, শেয়াল বন্ধু তখনো আসেনি হঠাৎ তার মনে হলো এভাবে সারাদিন খেলাধুলা করে কত সময়ই নষ্ট করছে। এটা না করে তার কিছু রোজগারের চেষ্টা করা উচিত। তার বন্ধু শেয়ালের কত টাকা আর সে কি না হদ্দ গরীব। যা ভাবা তাই কাজ সাথে সাথে সে বনের একধারে একটি জায়গায় মাটি কুপিয়ে চারিদিকে বেড়া দিতে শুরু করলো। এখানে সে নানা রকম ফসল ফলাবে আর বিক্রী করে বিশাল ধনী হয়ে যাবে। এমনকি বন্ধু শিয়ালের চেয়েও ধনী ।


পাজী শেয়াল মামা
তাকে বেড়া দিতে দেখে শিয়াল এসে হাজির। “কি ব্যাপার বন্ধু তুমি এটা কি করছো’?
‘দেখতেই তো পাচ্ছো কি করছি’ কুইরকুঞ্চো উত্তর দিলো।
“হু হু তাতো দেখতেই পাচ্ছি, মাটি খুড়েছো এখন আবার চারিদিকে বেড়াও দিচ্ছো”!
কুইরকুঞ্চো তখন শিয়ালকে সব খুলে বল্লো। শিয়াল তাকে অনেক বোঝালো “কি দরকার এসব করার। তার চেয়ে আসো আমরা আগের মত খেলাধুলা করি, দেখেছো কি সুন্দর রোদ উঠেছে, চারিদিকে একেবারে ঝলমল করছে” ।
কুইরকুঞ্চো সাফ জানিয়ে দিল ‘তা হবে না ভায়া, আমি ভাবছি এ জমিতে ফসল ফলিয়ে সেগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রী করবো, তাতে যে টাকা আসবে তাই দিয়ে আমি মস্ত ধনী হয়ে যাবো’ ।

এ কথা শোনার সাথে সাথেই শেয়াল মনে মনে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরতে লাগলো। তৎক্ষনাৎ তার মাথায় একটা চালাকি খেলে গেলো। মুখটা ভেজা বেড়ালের মত করে বল্লো “তাই নাকি বন্ধু! এতো বিরাট খুশীর খবর। তবে তুমি তো জমিতে বেড়া দিয়েই সব পয়সা খরচ করে ফেলেছো, এখন ফসল বুনবে যে তার টাকা পাবে কই” ?

একথা শুনে কুইরকুঞ্চো একটু চিন্তায় পরে গেলো। বন্ধু শেয়ালতো ঠিকই বলেছে। ‘তাইতো এ কথাতো ভাবি নি’।
“না না তুমি একটুও ভেবো না বন্ধু, বীজ কেনার জন্য যত টাকা লাগে আমি দেবো”। শেয়ালের কথা শুনে আশ্বস্ত হয়ে কুইরকুঞ্চো খুশী খুশী হয়ে বল্লো ‘আচ্ছা ঠিক আছে দোস্ত তুমি যখন দিবে বলছো তাহলে আমার আর কোন চিন্তাই রইলো না’ ।

ধুর্ত শেয়াল তখন মুখে ভালোমানুষীর ভাব নিয়ে বল্লো “ কিন্ত বন্ধু কথা হচ্ছে এই যে ফসলটা যখন ফলবে তখন সেটা আমাদের দুজনার মধ্যে কিভাবে ভাগাভাগি করবে বলতো”?
‘তুমি বলো কিভাবে করবো’ বল্লো কুইরকুঞ্চো। শিয়াল চিন্তার ভান করে বল্লো, “শোনো তুমি যাই বুনবে তার উপরের অংশটা আমি নেবো আর নীচের অংশটা তুমি নিবে”।
কুইরকুঞ্চো শেয়ালের চালাকিটা সাথে সাথে ধরে ফেল্লো কিন্ত প্রকাশ করলো না। সেও শেয়ালের চেয়ে তিনগুন ভালোমানুষীর ছাপ মুখে এনে বল্লো ‘আরে দোস্ত এটা একটা কথা হলো নাকি! তুমি এত টাকা দিচ্ছ তুমি যে ভাবে চাইবে সেভাবেই হবে’।


শেয়াল গোফের ফাকে ফ্যাচর ফ্যাচর করে হাসতে হাসতে গর্বে ফুলে ওঠা বুক নিয়ে তার গর্তের দিকে হাটা দিলো। বাসায় গিয়ে গিন্নীকে জানালো সে কুইরকুঞ্চোর সাথে কতবড় এক চালাকী করে এসেছে।


সিংহরা পর্যন্ত অসহায়ের মত বসে আছে বলের মত গোল হয়ে পেচিয়ে থাকা কুইরকুঞ্চো নিয়ে

কুইরকুঞ্চো কি বুনলো জানো তোমরা ? আচ্ছা আচ্ছা বাপু আমিই বলে দিচ্ছি, ধুর্ত্ শেয়ালকে শিক্ষা দেয়ার জন্য সে কিনা বুনলো আলু । সময় হলো ফসল তোলার, কুইরকুঞ্চো শেয়ালের কথা মত নীচের ফসল অর্থাৎ সব আলু বাসায় নিয়ে গেলো আর শেয়াল নিল উপরের অংশ অর্থাৎ পাতা আর ডালপালা, যা খাওয়ার অযোগ্য।

পরের বার শেয়াল বল্লো “বন্ধু আমি কিন্ত এবার ফসলের নীচের অংশটা নিবো আর তুমি উপরেরটা নেবো”। কুইরকুঞ্চো তার থেকে এক কাঠি সরেস। বল্লো আচ্ছা দোস্ত তাই হবে। এবার কুইরকুঞ্চো কি বুনলো বলতো? কি বললে ? আরেকটু জোরে বলো, হু হু এক্কেবারে ঠিক বলেছো, এবার কুইরকুঞ্চো বুনলো গম । শেয়াল নিলো শিকড় বাকর আর কুইরকুঞ্চো নিল গম ।

শেয়াল তো রেগে কাই, বনের অন্যান্য প্রানী থেকে শুরু করে ঘরের বৌ পর্যন্ত তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। শেয়াল বৌকে বলে “রোসো বৌ এবার তাকে এমন শায়েস্তা করবো যে বাছাধন আমার সাথে চালাকি করার মজা টের পাবে” ।
পরদিন সে বন্ধুর জমিতে গিয়ে হাজির। দেখলো বন্ধু মন দিয়ে জমি চাষ করছে। শেয়াল মনের রাগ মনে চেপে মুখে মিষ্টি হাসি এনে বল্লো “দোস্ত শোনো তুমি এবার যা বুনবে তার উপরের অংশ এবং মাটির নিচের অংশ দুটোই আমি নেবো, তুমি নিবে শুধু মাঝখানের অংশ”।

রাজী হলো কুইরকুঞ্চো। মনে মনে ভাবছে দাড়াও বন্ধু এবারো কি ভাবে তোমাকে জব্দ করি তাই দেখো। কি বুনবে কুইরকুঞ্চো তা ভেবে ভেবে তোমরা আবার হতবুদ্ধি হয়ে যাও নি তো? এবার কি তাহলে কুইরকুঞ্চোর ঠকার পালা আসলো। না সে এবারও ঠকে নি, কারন সে এবার বুনলো ভুট্টা । শেয়াল পেলো শেকড় বাকর আর পাতা, কুইরকুঞ্চো পেলো মাঝের অংশে ফলন হওয়া অজস্র ভুট্টা।
এবার শেয়াল এতই রেগে গেলো যে সে কুইরকুঞ্চোর সাথে জন্মের মত আড়ি দিয়ে রেগেমেগে সেখান থেকে চলে গেলো। আর কখনো সে কুইরকুঞ্চোর ত্রিসীমানাও মাড়াতে আসেনি।

তিনদফায় এত ফসল হয়েছিলো যে কুইরকুঞ্চো তা বিক্রী করে এখন মহাধনী। তার আর পাজী শেয়ালের টাকার দরকার নেই। নিজের টাকা দিয়েই সে বীজ কিনে চাষবাস করতে লাগলো ।

গল্পের মরালঃ
ধুর্ত বন্ধুর চেয়ে বন্ধু না থাকাই ভালো।




উৎসর্গ ঃ আমার সহ ব্লগারদের ছোট ছোট ভাই বোন ,ছেলে- মেয়ে আর নাতি নাতনীদের জন্য ঈদুল ফিতরের উপহার :)

অনুবাদ ঃ জুন
.
ছবি সুত্র : নেট
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:০০
৪২টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×