somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডা জার্নালঃ শেষ পর্ব

১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে স্বগৃহে

প্রায় চৌত্রিশ ঘণ্টার উড্ডয়ন ভ্রমণ শেষ করে (ডোর টু ডোর) অবশেষে গত পরশু রাত দেড়টার সময় স্বগৃহে পৌঁছালাম। এতটা দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি ও অবসাদে তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম। বাসায় ফিরে গোসল করার পর কিছুটা ফ্রেশ লাগছিলো। কোনরকমে সামান্য খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম। এর পরের প্রায় দুই দিন ঘুমের কোন টাইম টেবল ছিল না। ঘুমের ফাঁকে ফাঁকে জেগে উঠলে নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু কিছু কাজ সেরে আবার ঘুম। ঘুমের ঘোরে ছিলাম বলেই হয়তো জেগে থাকা সত্ত্বেও গত রাতের ৫.২ মাপের ভূমিকম্পের কাঁপনও অনুভব করতে পারিনি। অথচ এর আগে ৪.২ থেকে ৪.৮ মাত্রার ভূমিকম্পও বেশ ভালো ভাবেই অনুভব করেছিলাম। আজ ভোরে জেগে উঠে মনে হলো ঘুমের ঘোর কেটে গেছে। চিরচেনা স্থানীয় মাসজিদে গেলাম ফজরের নামায পড়তে। নামায শেষে গাড়িতে গ্যাস ভরে আনলাম, সকাল সকাল হওয়াতে লাইনে অপেক্ষা করতে হলো না। কিছু কাঁচাবাজারের ফরমায়েশ ছিল। অত সকালে স্থানীয় কাঁচাবাজার ঠিকমত বসেনি। কেবল দুই একজন বিক্রেতা মাত্র তাদের ঝাঁপি সাজাচ্ছিল। সেখান থেকেই ফরমায়েশি ফর্দের যে কয়টি আইটেম পেলাম, কিনে বাড়ি ফিরে এসে ল্যাপটপ খুলে বসলাম। গত তিনদিনে এটা বন্ধ ছিল। গতরাতে মুঠোফোনে বার্তা পেয়েছি, একজন এলাকাবাসী ইন্তেকাল করেছেন। এখন মাইকিং হচ্ছে, আজ বাদ যোহর আমাদের জামে মাসজিদে তার জানাযা হবে। এ রকম বার্তা পেলে আমি সাধারণতঃ চেনা হোক, অচেনা হোক, কারও জানাযা মিস করি না। আলোচ্য ব্যক্তি আমার অচেনা ছিলেন, তবুও তার জানাযায় আজ উপস্থিত থাকবো বলে মনস্থ করেছি।

চলতি পথের রম্য

১১ অগাস্ট ২০২৩। ভোর চারটার সময় রিজাইনা এয়ারপোর্টে এসে দেখি আমাদের ফ্লাইট দেড় ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে। বাসা থেকে রওনা হবার সময় তাড়াহুড়ার কারণে সেলফোনে ফ্লাইট স্ট্যাটাসটা দেখার কথা খেয়াল ছিল না। যাহোক বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলোনা। আধ ঘণ্টার মধ্যেই চেক-ইন কাউন্টার খুলে গেল এবং স্টাফরা তাদের কাজ শুরু করলো। নির্বিঘ্নেই চেক-ইন সম্পন্ন হলো এবং যথাসময়ে ওয়েস্ট জেট এর ফ্লাইট WS606 এর বিমানটিতে আসন গ্রহণ করলাম। প্লেনে যাত্রীদের আসন গ্রহণের পর সেফটি সিকিউরিটি বিষয়ক যেসব ঘোষণা আসে, এতদিন দেখেছি পর্দার অন্তরাল থেকে কেউ একজন পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্ট ইকুইপমেন্টে (পিএ ইকুইপমেন্ট নামে বহুল পরিচিত, সোজা কথায় 'মাইক';) সেসব ঘোষণা দেন, হয়তো প্রি-রেকর্ডেড, আর যাত্রীদের সামনে কেবিন ক্রুরা তার ডেমনেস্ট্রেশন দেখান। আজকাল অবশ্য আসনের সামনের মনিটর স্ক্রীনেও সেসব ডেমনেস্ট্রেশন দেখানো হয়। এই পর্দার অন্তরালের ঘোষক ঠিক কে, কো-পাইলট নাকি কেবিন ক্রুদের মধ্যে যিনি প্রধান তিনি, সে সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত নই। আজ দেখলাম, হাতে হ্যান্ডসেট নিয়ে হাসিমুখ একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি যাত্রীদের সামনে মূর্তমান হলেন।

তিনি টেকোমাথা ছিলেন, মুখে মাস্ক পরিহিত। প্রথমেই তিনি বললেন, "আমি জানি আপনারা এই হ্যান্ডসাম লোকটির পুরো মুখটা না দেখা পর্যন্ত তৃপ্তি পাচ্ছেন না" - এই বলে তিনি মুখের মাস্কটি সরিয়ে ফেলে একটি আকর্ণবিস্তৃত হাসি দিলেন। যাত্রীরাও সহাস্যে করতালি দিয়ে তাকে সম্ভাষণ জানালেন। তারপর তিনি বললেন, "মাঝে মাঝে যাত্রীদের সাথে কথা বলার সময় দুই একটি জোক পরিবেশন করার অনুমতি আমাকে কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন, এমনকি হাল্কা এডাল্ট জোকও। তাই আমি আজ একটি জোক দিয়ে আমার বক্তব্য শুরু করবো। তবে আমি লক্ষ্য করেছি আজকের ফ্লাইটে বহু স্কুলছাত্র টরন্টো যাচ্ছে, তাই আমি আজ কোন এ্যাডাল্ট জোক বলবো না"। যাত্রীরা আবারও সহাস্যে করতালি দিলেন। তারপর তিনি সেফটি ইভাকুয়েশন নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত জোক বললেন এবং এর পরেই শুরু হলো ঘোষণার সাথে রুটিন ডেমোন্সট্রেশন। এরপর যতবার তিনি সামনে এসেছেন, যাত্রীদের সাথে হাস্যরসের সাথে কথা বলেছেন। তার শেষ কথার পর যাত্রীগণ পুনর্বার সহাস্যে করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। প্লেন ত্যাগ করার সময় অনেক যাত্রী তার হাস্যরসের প্রশংসা করে তাকে ধন্যবাদ জানালেন।

এবারে এমিরেটস এর টরন্টো-দুবাই ফ্লাইট EK242 এর একটি ঘটনা। ফ্লাইট সামান্য পরেই দুবাই বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে অবতরণ শুরু করবে বলে পাইলট জানালেন। ঘোষণাটি শুনে মাঝখানে চার আসনের রো'তে বসা এক তরুণী তার আসনের নীচে এবং চারপাশে কী যেন খোঁজাখুজি শুরু করলেন। তার অভিব্যক্তি দেখে বুঝলাম, তিনি তার কাঙ্খিত বস্তুটি খুঁজে পান নি। খানিক পরে তিনি একজন বিমানবালার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। বিমানবালা কোমর বাঁকিয়ে ঝুঁকে পড়ে খানিকক্ষণ খুঁজলেন, কিন্তু তিনিও কোন কিছু পেলেন না। আসনের সামনের স্ক্রীনে মাঝে মাঝে নির্দেশ আসছিল যে কারও সেলফোন নীচে পড়ে গেলে যাত্রীগণ যেন নিজেরাই সেটা খোঁজার চেষ্টা না করে কেবিন ক্রুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আমি তাই ভেবেছিলাম, হয়তো মেয়েটির সেলফোন নীচে পড়ে গেছে এবং সেটাকে খোঁজা হচ্ছে। সেই বিমানবালা খানিক পরে একজন হ্যান্ডসাম পুরুষ স্টুয়ার্ডকে ডেকে নিয়ে এলেন। সৌভাগ্যক্রমে সে সময়ে মেয়েটির পেছনের সারির চারজনের মধ্যে তিনজন যাত্রীই ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য আসন ত্যাগ করেছিলেন। সেই যুবক তাই একেবারে নীচে হাঁটু গেড়ে বসে জিনিসটি খোঁজার সুযোগ পেয়েছিলেন। মুহূর্তেই তিনি তার হাতে একটি জুতো নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তাকে দেখে আমার সে মুহূর্তে মনে পড়েছিলো শরৎ চন্দ্রের গল্পের সেই বিখ্যাত উক্তি – "আমার আরেক পাটি পাম্প"!

ছেলেটি মিষ্টি হেসে সেই মেয়েটির সামনে গিয়ে হাঁটু ভেঙে জুতো ধরা হাতটি প্রসারিত করে বললেন, "ইওর শ্যু"। মেয়েটি স্মিত হেসে তাকে যখন ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন, সেই আরব যুবক তখন আরও মিষ্টি করে হেসে বললেন, "মাদাম, ইতস এ সিন্দ্রেলা স্তোরি"!


ঢাকা
১৫ অগাস্ট ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ৭৩৭
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:১১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×