somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-(৪)

১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃতীয় পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-(৩)

মদিনা শরীফ থেকে বিদায়ের দিনক্ষণ এগিয়ে আসার সাথে সাথে মনের বিক্ষিপ্ততা ও বিষণ্ণতা বৃ্দ্ধিঃ

মদিনা শরীফ থেকে বিদায় নেয়ার দিন ক্ষণ যতই অগ্রসর হচ্ছিল, আমার মনের বিক্ষিপ্ততা ও বিষণ্ণতাও ততই বাড়ছিল। শেষের দিন ফজরের নামাযের পর মাসজিদে আরও কিছুক্ষণ অবস্থান করে আমি একা একাই গিয়েছিলাম ‘জান্নাতুল বাকি’ জিয়ারাতে। নানারকমের পুলিশি নির্দেশ মেনে চলতে হচ্ছিল বলে সেখানেও বেশিক্ষণ অবস্থানের অবকাশ ছিল না। এলাকাটি বেশ বড়, তাই বিভিন্ন জায়গায় স্বল্পক্ষণ অবস্থান করে দেখতে দেখতেও প্রায় ঘণ্টা খানিক সময় লেগে যায়। হোটেলে ফিরে শুনি যে আমাদের মদিনা ত্যাগের সময়সূচী কিছুটা এগিয়ে এসেছে, ফলে মাসজিদে নবুবীতে আসরের জামাতের ওয়াক্ত হবার আগেই হয়তো মদীনা ত্যাগ করতে হবে। হলোও তাই। যেমন আদেশ, তেমন কাজ। লাগেজ গুছিয়ে নিতে নিতেই রওনা হবার সময় হয়ে এলো। মদীনা শরীফে থাকাকালীন যে সকল জায়গায় দলবদ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, সেগুলোর সামষ্টিক খরচের আনুপাতিক অংশ এজেন্সীর হিসেব অনুযায়ী মদীনায় থাকতে থাকতেই পরিশোধ করে দায়মুক্ত হ’লাম।  

মদীনায় গ্রুপ সফরে ভ্রমণকৃত কিছু এলাকা ও ঐতিহাসিক স্থানের অতি সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

জিয়ারার প্রস্তুতি হিসেবে নিম্নলিখিত সামগ্রী সাথে রাখতে পারলে খুবই উপকার হবেঃ

১. সানগ্লাস
২. ১/২ বোতল পানি।
৩. কিছু অতিরিক্ত রিয়াল অবশ্যই (কোন কারণে দলছুট হয়ে গেলে Taxi ভাড়া করে ফিরার জন্য)।
৪. হোটেলের কার্ড।
৫. ছাতা
৬. সান-স্ক্রিন লোশন /ক্রিম।
৭। সাথে একটা ছোট নোটবই ও কলম।

মদীনা শরীফে মাসজিদে নবুবী, রিয়াজুল জান্নাত এবং জান্নাত আল-বাকী কবরস্থান ছাড়াও আমরা নিকটস্থ নিম্নলিখিত স্থান/স্থাপনাগুলো দেখতে গিয়েছিলামঃ

১। মাসজিদে কুবা। মাসজিদে নবুবী থেকে অনতিদূরে অবস্থিত। মাসজিদে নবুবীতে ফজর ও চাশত এর সালাত আদায় করে অনেকেই এখানে পদব্রজে এসেও নফল সালাত আদায় করে আবার হোটেলে ফিরে যান। আমরা এক রাতে শুধুমাত্র পরিবারের তিনজন মিলেই ট্যাক্সি ভাড়া করে সেখানে গিয়ে নফল সালাত পড়ে ফিরে এসেছিলাম। ব্যবস্থাপনা উত্তম মানের ছিল। সেবাদানকারী স্টাফের আচরণ সৌহার্দ্যমূলক ছিল।  

২। ওহুদ পাহাড়। ওহুদ পাহাড় সংলগ্ন হামজা (রদ্বিয়াল্ল-হু আনহু) সহ ৭০ জন বীর সাহাবীর কবর যিয়ারত করার সময় ছোটবেলায় পড়া মুসলমানদের ঐতিহাসিক ভুলত্রুটিগুলোর কথা এবং হামজা (রাঃ) উপর করা ভয়াবহ নৃশংসতার কথা বারবার মনে পড়ছিল।
 
৩। মাসজিদে কিবলাতাইন। এই মাসজিদে রাসুল (সাঃ) সালাতরত অবস্থায় অহী মারফত নির্দেশ পান ক্বিবলা পরিবর্তনের; আল আকসা থেকে ক্বাবা শরীফের দিকে। কি অটল প্রশ্নহীন আনুগত্য, কি অপূর্ব শৃঙ্খ্লা! ইমামের সাথে সাথে পেছনে দাঁড়ানো মুসল্লীগণও বিনা সন্দেহে, বিনা বাক্যব্যয়ে ক্বিবলা বদলে নিলেন নীরবে, নিঃশব্দে! ‘মসজিদ আল কিবলাতাইন কথাটার মানে “দুই ক্বিবলার মাসজিদ”। আজও মাসজিদটি দুটি ক্বিবলাই ধারণ করে দন্ডায়মান।

৪। মাসজিদ আল ফাতাহ্ (মাসজিদ আল সাবাহ্)। খন্দকের যুদ্ধের স্থান।

৫। বদরের যুদ্ধক্ষেত্র

৬। ফেরেশতাগণের অবতরণস্থল।    

৮.হজরত সালমান ফারসী (রাঃ) এর খেজুর বাগান। 

৯.হজরত আবু বকর (রাঃ)বাড়ি।

১০.মসজিদে গামামা (যেখানে রাসূল (সাঃ) সাহাবাদের কে নিয়ে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন।

অবশেষে ০১ জুন ২০২৫ তারিখ অপরাহ্নে আমরা প্রদত্ত সময়ানুযায়ী নির্ধারিত বাসে আসন গ্রহণ করলাম। অগত্যা বাসে বসেই আসরের সালাত পড়ে নিয়েছিলাম। বাস রওনা দিল, আমরা চললাম আজিজিয়ার উদ্দেশ্যে। আমাদের দলে নারী পুরুষ মিলিয়ে আমাকে সহ প্রায় দশজনের মত বয়স্ক (গালভরা নাম ‘সিনিয়র সিটিজেন’) ছিলাম। দু’চারজন প্রৌঢ় ব্যক্তিও ছিলেন। বাকিরা সবাই ছিলেন মধ্যবয়স্ক নারী পুরুষ। কিন্তু সব মিলিয়ে বিভিন্ন বয়সীদের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ছিল আমাদের দলটি। কম বয়সীরা সবাই সদা তৎপর থাকতেন তাদের নিজেদের মুরুব্বীদের দেখভাল করা ছাড়াও অপরাপর বয়স্কদেরকে কিভাবে সাহায্য করা যায় তা নিশ্চিত করতে। অনেক সময়েই আমি মুখ ফুটে কিছু চাওয়ার আগেই আমার কাছে সাহায্যের অফার চলে এসেছে। অবশ্য এর পেছনে আমাদের এজেন্সী তথা দেশি দলনেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন শাহীন সাহেবের অমূল্য অবদান রয়েছে। যার ফলে, নানারকমের শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা সবাই, বিশেষ করে বয়স্করা নির্বিঘ্নে হজ্জ্বব্রত পালন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। অচিরেই আমরা অলিখিত এক আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলাম। এ  বন্ধন এখনও অটুট রয়েছে; আরও বহুদিন থাকবে ইন শা আল্লাহ।

অন্যান্য সফরের তুলনায় হজ্জ্ব সফরের উদ্দেশ্য, প্রস্তুতি, প্রণালী এবং অভিজ্ঞতা অনেক ভিন্ন প্রকৃ্তির। অন্যান্য সফরের মত এ সফরে আমি কোন ট্যুর নোটস রাখিনি। তাই এখানে যা কিছু লিখলাম, তা স্মৃতি খুঁড়ে খুঁড়ে বের করে এনে প্রকাশ করলাম, যদিও মাস পাঁচেকের মত আগের কথা মাত্র। আর কে না জানে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিসম্ভার সাম্প্রতিক কালেরটা দিয়েই দ্রুত ঝাপসা হওয়া শুরু করে, যদিও সুদূর অতীতেরটা প্রায় আমৃত্যু অক্ষত, অটুট থাকে। এটা যেন মানব মনের এক খেয়ালি আচরণ! উপরে উল্লেখিত দর্শনীয় স্থানগুলোর বিশদ বিবরণ জানতে কেউ যদি আগ্রহী হয়ে থাকেন, দয়া করে গুগল করে দেখে নেবেন বিস্তারিত তথ্যের জন্য।  
 
ঢাকা
১০ অক্টোবর ২০২৫
শব্দ সংখ্যাঃ ৬৭৩
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×