ফ্রান্স আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন
প্রবাস রাজনীতির কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছ
-----------------------------------------------------
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বাঙালি পাড়ায় এখন কিছুটা আলোচিত বিষয় আগামী ৮ মের ফ্রান্স আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। কিংবা অন্যভাবে বলা যায় কেবল কিছু অত্যুৎসাহি আওয়ামীলীগ নামধারী প্রবাসী রাজনীতিবিদেরা আগামী ৮ মের দলীয় কাউন্সিল নিয়ে আছেন দৌড়ের উপর। ঠিক কি প্রক্রিয়ায় বা কার উপস্থিতিতে ফ্রান্স আওয়ামীলীগের এই কাউন্সিল হতে যাচ্ছে বিস্থারিত জানা যায়নি। আওয়ামীলীগের পাশাপাশি ১লা মে এখানে ছাত্রলীগেরও কাউন্সিল হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ফ্রান্সে ছাত্রলীগের কমিঠি! বিষয়টা কিছুটা আশ্চর্য্যেরই বটে। ফ্রান্স বাঙালি কমিউনিটি কি আসলে এতোটা পুরাতন বা বড় হয়ে গেছে যে কমিউনিটি প্রজন্ম এখন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পড়ুয়া ছাত্র হয়ে গেছে যার কারণে তাদের সমন্বয়ে ছাত্রলীগের কমিঠি গঠনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে? যদি পেশাগত ভাবে কেউ ছাত্র না ই হয়ে থাকেন তবে আসলে কি জন্য কার স্বার্থে ছাত্র নয় এমন কিছু মানুষের সমন্বয়ে ছাত্রলীগের কমিঠি গঠন করতে হবে? অবশ্য আমার আজকের লেখার বিষয় আলাদা ভাবে ছাত্রলীগের কমিঠি গঠন বা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল নয়, এদেশে অর্থাৎ ফ্রান্সে আমি নতুন মানুষ, তবে যেহেতু এখানে স্থায়িভাবে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখানেই থিতু হয়ে যাবার ইচ্ছা এখন প্রবল তাই ফ্রান্স বাঙালি কমিউনিটির খোঁজ খবর নিতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হতাশ হতে হয়েছে। দেশিয় রাজনীতির কালো থাবায় এখানেও সেই হিংসাত্মক আবহ, আওয়ামীলীগ বিএনপি বা জামায়াত উপভাগে বাঙালি কমিউনিটিকে বিভক্ত করার কি নিখুঁত প্রচেষ্টা।
একটি বাঙালি সমাজ যেখানে যে সময়ে যে দেশেই অবস্থান করুক মূলত কিন্তু সেই সমাজটা বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করে। কমিউনিটির মধ্যে কেবলমাত্র বাংলাদেশি বা বাঙালির বাহিরে কোনভাবেই অন্য কোন পরিচয় থাকা বাঞ্চনিয় নয়। আমার জানা নেই একমাত্র বাংলাদেশি নাগরিক ছাড়া অন্যকোন উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক জীবনধারনের উদ্দেশ্যে উন্নত দেশে অবস্থান করে এমন প্রাণপণ জাতীয় রাজনীতির চর্চা করে কিনা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ছাড়াও আজকাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের প্রবাসী নেতারা জাতীয় রাজনীতির প্রবলচর্চার মাধ্যমে মূলত বাঙালি সমাজটাকেই বহু ভাগ উপভাগে বিভক্ত করে রেখেছেন। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে রাজনীতির যে সংজ্ঞা শিখে এসেছি আমরা আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা তার কতটা ব্যবহার বা অপব্যবহার করছেন এখানে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। দেশিয় নেতাদের তবু রাজনীতি করার মাধ্যমে ক্ষমতা উপভোগ করার একটা অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিন্তু দেশের বাহিরে দেশিয় রাজনীতির নোংরামি উপাস্থাপন করে আসলে প্রবাসী নেতারা ঠিক কি ভাবে লাভবান হতে চান আমার বোধগম্য নয়। যদি সত্যিকার অর্থে বাঙালি কমিউনিটির মানুষের উপকার করার উদ্দেশ্যে এই রাজনীতি করাটা হয়ে থাকে তবে উনারা তা কতটুকু করছেন বা করতে পারছেন তা দেখার বিষয়। অন্তত ফ্রান্সে যারা বাংলাদেশি জাতীয় রাজনীতির চর্চা করেন তাদের দ্বারা নতুন আসা বা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ফ্রান্সে অবস্থানরত বাংলাদেশের মানুষের উল্লেখযোগ্য কোন উপকার হয়েছে বলে আমি জানতে পারিনি। কমিউনিটির উপকার করতে হলে দেশীয় রাজনীতির আদলে এখানেও রেষারেষির রাজনীতি করতে হবে, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্টানে ভাগ বিভক্ত হয়ে পালন করতে হবে এমন তো কোন কথা নয়।
সাধারণ মানুষকে সহযোগীতার উদ্দেশ্যে ফ্রান্স অবস্থানরত বাংলাদেশের জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো কোন প্লাটফর্ম তৈরি করতে পারেনি। বরং অন্য ভাবে বললে কোন রাজনৈতিক চর্চা না করে কিছু অঞ্চল ভিত্তিক সামাজিক সংঘঠন অনেক ভাবে মানুষের সাহায্য সহযোগীতা করছে দেখা যায়। কোন কোন ব্যবসায়ী রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছাড়াই ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষদের অনেক উপকার করছেন বলে জানা যায়। বিশেষ করে বিভিন্ন আইনি পরামর্শ ও সহযোগীতা দিয়ে লাশাফিলস্থ ফঁসে আভেক রাব্বানি প্রতিষ্ঠান ও তার কর্ণধার খান রাব্বানি এদেশে ভালো ভাবেই বাঙালি মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন।
রাজনৈতিক চর্চা ভালো জিনিষ হয়তোবা, দেশে বা দেশের বাহিরে রাজনীতি করার নিশ্চীত ভাবে কোন নীতিমালা থেকে থাকবে হয়তো, রাজনৈতিক দলগুলো আন্তর্জাতিক ভাবে তাদের সংঘঠন বা অঙ্গসংঘঠনগুলোর কমিঠিগুলোকে হয়তো কোন পরিচ্ছন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুমোদন দিয়ে থাকবে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বিদেশ বিভূইয়ে আমাদের কমিউনিটির একতা ও সামগ্রিক সমন্বয় নিশ্চীত করার মতো একজাতি এক সংঘঠন ধরনের কিছু করে আমাদের দাঁড়াবার একটিমাত্র প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা অতি আবশ্যক। এখানে পয়লা বৈশাখ বিভক্ত হয়ে পালন হয়, জাতীয় দিবসগুলোর অনুষ্ঠান পালনে ঠেলা ধাক্কা উত্তেজনা নৈমিত্তিক বিষয়। আশা করছি অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক চর্চার পরিবর্তে জাতিগত ভাবে ঐক্য নিশ্চীতকরণের চিন্তা থেকে আমাদেরকে একটি সমাজিক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াবার সুযোগ তৈরী করার চেষ্টা করবেন কর্তা ব্যক্তিরা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



