ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতীতে আমেরিকা নীতির ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছিল। বিশেষ করে ভারতকে তিনি অনেক বেশি কৌশলগত সুবিধা দিয়েছিলেন, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল। কিন্তু সত্যিই কি নব নির্বাচিত ট্রাম্প বাংলাদেশের ভাগ্য মোদির হাতে তুলে দিয়েছেন? নাকি এটি শুধুই একটি রাজনৈতিক ব্যাখ্যা?
ট্রাম্পের ভারতপ্রেম: কূটনৈতিক বাস্তবতা
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। তার শাসনামলে:
০১। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে উন্নত অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি দিতে আগ্রহী ছিল।
০২ । অর্থনৈতিক সম্পর্ক: আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছিল।
০৩ । চীনবিরোধী অক্ষ: চীনের শক্তি প্রতিহত করতে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রধান অংশীদার হিসেবে দেখেছিল।
এই পরিস্থিতিতে ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক শক্তিশালী হলেও, এর সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছিল কিছু ভিন্ন মাত্রায়।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও ট্রাম্পের প্রভাব
বাংলাদেশের কূটনীতি সবসময় ভারসাম্যমূলক ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের ভারতকেন্দ্রিক নীতির ফলে দেখা গেল যে, বাংলাদেশকে ভারতের ছায়ায় রাখার একটি প্রচেষ্টা চলছে। কিছু লক্ষণ ছিল:
০১। রোহিঙ্গা সংকট: বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন চাইছিল, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের কৌশলগত স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেয়। ভারতও এই ইস্যুতে কার্যকর ভূমিকা নেয়নি।
০২ । বাণিজ্য ও বিনিয়োগ: ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ভারতকেই দক্ষিণ এশিয়ার মূল বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
০৩ । কৌশলগত চাপ: বাংলাদেশ যাতে চীন ও অন্যান্য শক্তির দিকে বেশি ঝুঁকে না পড়ে, সে জন্য ভারতকে দায়িত্ব দিয়ে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণের কৌশল নেয়া হয়েছিল।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ট্রাম্প সরাসরি বাংলাদেশের ভাগ্য মোদির হাতে তুলে দেননি, বরং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকাকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের নতুন ও অদক্ষ নীতি-নির্ধারকদের জন্য এটি এক কঠিন পরীক্ষা, যেখানে ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নাই।
ট্রাম্পের ভারতকেন্দ্রিক নীতির ফলে বাংলাদেশকে এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি মোদির হাতে চলে গিয়েছে। বরং এটি একটি চ্যালেঞ্জ, যা বাংলাদেশ কে কৌশলগতভাবে সামলাতে হবে। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের কূটনৈতিক সমীকরণ কিভাবে বদলায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৩