somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের মডেল মসজিদ প্রকল্প: রাজনীতি, প্রতারণা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলামপন্থীদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর পথ বেছে নেয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা সরকারকে ভাবিয়ে তোলে—ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন না পেলে ক্ষমতা টেকানো কঠিন হতে পারে। এরই মধ্যে সৌদি আরবের বৈশ্বিক মডেল মসজিদ প্রকল্পের কথা জানতে পারে সরকারের কিছু উপদেষ্টা। এই তথ্যকে কাজে লাগানো হয়।

২০১৬ সালে শেখ হাসিনার সৌদি সফর একটি টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়। তিনি তৎকালীন বাদশাহর কাছে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য অনুদানের আবেদন করেন। দেশে ফিরে সরকারি প্রচারযন্ত্র শুরু করে—সৌদি আরব বাংলাদেশকে আট হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য। পরিকল্পনামন্ত্রী আ.হ.ম. মুস্তফা কামাল মিডিয়াকে জানান, সৌদি সরকার ৮০০০ কোটি টাকা দেবে, বাকিটা বাংলাদেশের তরফ থেকে আসবে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭-২০২০। কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়া দ্রুত এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে। ফক্স নিউজ, দ্য ওয়াশিংটন টাইমসের মতো সংবাদ মাধ্যম জানায়, সৌদি আরব এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। সৌদি সংস্কৃতি মন্ত্রীও এই দাবি সরাসরি খারিজ করে দেন।

সরকার যখন দেখলো মিথ্যাচার ফাঁস হয়ে গেছে, তখন তারা নিজেদের টাকায় প্রকল্প শুরু করে। মিডিয়ায় অজুহাত দেওয়া হয়—সৌদিতে বাদশাহ পরিবর্তনের কারণে অনুদান বাতিল হয়েছে। প্রকল্পের বাজেট ধরা হয় ৯০০০ কোটি টাকা, যেখানে প্রতিটি মসজিদের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৭ কোটি টাকা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮-৯ কোটি টাকাই যথেষ্ট ছিল। এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। রাজনৈতিকভাবে প্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মসজিদের স্থান পরিবর্তন করা হয়—একজন মন্ত্রী নিজের রিসোর্টের পাশে মসজিদ বানান, যেটি শহরের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল।

বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তিন লাখের বেশি মসজিদ রয়েছে। বেশিরভাগই স্থানীয় উদ্যোগে নির্মিত। ঢাকা শহর থেকে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত মসজিদ নির্মাণে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। এমন একটি দেশে সরকারি অর্থায়নে মডেল মসজিদের প্রকল্প কতটা যৌক্তিক? ইহা ধর্মীয় প্রকল্প কম রাজনৈতিক প্রকল্প বেশি। ধর্মীয় চিন্তাবিদরা এই প্রকল্পকে সতর্কতার সঙ্গে দেখেছিলেন। শেখ হাসিনা ইসলামপন্থীদের কিছু অংশকে নরম করতে পেরেছিলেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু যারা তার স্বৈর শাসনের প্রতিবাদ করেছিলেন, তাদের দমন করা হয়েছে কঠোর হাতে। সমাজের একটি বড় অংশই এই প্রকল্পকে দেখেছে সন্দেহের চোখে।

এই বিপুল অর্থ যদি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হতো, তাহলে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ সম্ভব হতো। চীনের উপর আজ নির্ভর করা লাগতো না । বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়তো না। অন্য দেশের অর্থায়নে দেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজন ছিলো না। দেশের শিক্ষা, গবেষণা ও যোগাযোগ অবকাঠামো—এসব ক্ষেত্রেও এই অর্থ কাজে লাগানো যেত।

মডেল মসজিদ নির্মাণ কোনো ধর্মীয় প্রকল্প ছিলো না , পুরোটাই রাজনৈতিক। জনগণের আবেগকে পুঁজি করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৌশল। সতেরো বছর ধরে এমনই নানা কৌশলে শেখ হাসিনার সরকার টিকে ছিলো । মডেল মসজিদ প্রকল্প তারই একটি অধ্যায়—যেখানে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প- ৯৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৮




দুই ভাইবোন। আপন দুই ভাইবোন।
ভাই-বোন দু'জন আলাদা হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। কথাবার্তা নেই। একজন যেন আরেকজনের শত্রু। বাপের সম্পত্তির কারণে আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১২


এই উষ্ণতায় ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই নদীতে সমুদ্দুরে
বালুচরে হেঁটে বেড়াই,
ঢেউয়ে থাকি বসে, জল এসে ছুঁয়ে দিক আমায়,
হিম হাওয়া এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাক সুখের সপ্ত আসমানে।

এই বৈশাখে ইচ্ছে করে পুকুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২


আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেমিট্যান্সযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

টাকা পাচারকারীদের ধরা খুব মুশকিল বলে উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেছেন, টাকা পাচারকারীদের যদি কোনোভাবে ধরতে পারেন, তাহলে ছাড় দেবেন না। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিশুদের গুড টাচ ব্যাড টাচ শেখানো আপনার দায়িত্ব

লিখেছেন অপলক , ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৩৪

বর্তমানে বাংলাদেশে একক পরিবার বেশি। আগের যুগে যৌথ পরিবারে শিশুরা বয়োজৈষ্ঠ্যদের কাছে অনেক কিছু শিখত, নিরাপত্তা পেত। এখন সে সুযোগ অনেকটাই কম। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ৫ বছরের শিশুও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×