somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে যুগ-যুগান্তর সময় লাগতে পারে !

০২ রা জুন, ২০২৫ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কথায় আছে মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়- এই প্রবাদ পতিত স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। উহাদের সাধারণ ছাত্র জনতা জীবন হাতে নিয়ে পালাতে দিয়েছে কিন্তু এর কোনো শুকরিয়া নাই। বরং সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক সমস্যা নিয়ে মশকরা , জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ফাজলামি ও মিডিয়ার মাধ্যমে ডিজ ইনফরমেশন ছড়িয়ে উহারা নিজেদের আরো পচাচ্ছে। এই যেমন ধরেন ওবায়দুল কাদেরের কথা। উহা আগস্ট মাসের ৫ তারিখ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় বাথরুমে প্রায় পাচ ঘন্টার মতো লুকিয়ে ছিলেন। কতিপয় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি উহাকে সাধারণ ছাত্র-জনতার আক্রোশ থেকে সেইভ করেছে। ঘটনাটি বড়োই রহস্যজনক। সাধারণ সেন্সে ছাত্র-জনতা আগস্ট মাসের ৫ তারিখ ওবায়দুল কাদের কে সামনে পেলে পিটিয়ে ইনকিলাব জিন্দাবাদ করে দিতো। উহাকে যারা সেইভ করেছে তারা নাকি যখনই ওবায়দুল কাদের কে সামনাসামনি দেখেছে তাদের রাগ পানি হয়ে গেছে। তারা কাদের মিয়া কে বাচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। এসব অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই কোনো লেনদেনের বিনিময়ে উক্ত কাজ করেছে অথবা ওবায়দুল কাদের মিথ্যা বলছেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যখন উহার ইন্টারভিউ নিয়েছে কাদের সাহেবের মধ্যে অনুশোচনার কোনো লেশমাত্র ছিলো না। শেখ হাসিনার পর সবচেয়ে বেশি কটাক্ষ করে কথা বলতেন ওবায়দুল কাদের।

যখন আমেরিকা বাংলাদেশের নির্বাচনের পূর্বে বারবার তাদের রাষ্ট্রদূত ও ডেলিগেটস দের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মিটিং করছিলো তখন ওবায়দুল কাদের প্রচন্ড আক্রমণাত্নক কথা বলেছিলেন। আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন। বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষ কে কটাক্ষ করে তিনি বলেছিলেন, " দিল্লী আছে আমরা আছি। তলে তলে সমঝোতা হয়ে গেছে"। অর্থাৎ জনগণের চেয়ে ভারতের উপর উহার অগাধ বিশ্বাস ছিলো। যখন কোটা আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে তখন কাউয়া কাদের বলেছিলেন, " এদের থামাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট "। ওবায়দুল কাদেরের অহমিকা এখনো কমেনি। উহারা নাকি বাংলাদেশ আসবে তারপর আবার দেশ চালাবে। কোনো আত্নসমালোচনা নেই। হাজার হাজার টাকা লুটপাট করেছে তা নিয়ে শরম অথবা লজ্জা কিছুই লাগে না। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ তৃণমূল কর্মী সকাল বিকাল মা-মাসী তুলে ওবায়দুল কাদের কে গালি দেয়া উচিত ছিলো দেখামাত্রই। কিন্তু তারা সবাই ওবায়দুল কাদেরের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখছেন কারণ নেত্রী এখনো উহার উপর ভরসা রাখে। অথচ পার্টির সভানেত্রী ও সেক্রেটারির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ !

ওবায়দুল কাদেরের যেমন লজ্জা নেই উহার নেতা কর্মীদেরও কোনো লজ্জা নেই। এরা এখন মাঠে নেমেছে জুলাই অভ্যুত্থান নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার মিশনে। এর সবচাইতে বড়ো উদাহরণ হচ্ছে জামায়াত নেতার মুক্তিকে কেন্দ্র করে বাম সংগঠনের শিক্ষার্থীদের উপর জা-শির হামলার ঘটনায় উহাদের উল্লাস ছিলো দেখার মতো। কারণ উহারা খুশি যে জুলাই মাসে বিপরীত ধারার সংগঠনগুলোর মধ্যে এক দফা বাস্তবায়নের জন্য যে ঐক্য ছিলো তা ভেঙে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আম্লিক নেতা-কর্মীরা খুশি কারণ বামেরা মার খাচ্ছে। আম্লিক বামদের বিরুদ্ধে 'লাল বদর ' ট্যাগ দিয়ে মনে মনে শান্তি খুজে। তারা ভুলে যায় ছাত্রলীগ বিগত ষোল বছরে কত সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীদের উপর স্টীম রোলার চালিয়েছে। উহারা নিজেরা পতনের চূড়ান্ত সীমায় পৌছে গেছে সে ব্যাপারে হুশ নেই কিন্তু তাদের তথাকথিত শত্রুদের একে অপরের মধ্যে সংঘাত উহাদের একমাত্র বিনোদনের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের জামায়াত নেতার মুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তির বার্তা দেয়। তরুণ প্রজন্ম নিজেরাই তাদের স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট হবে কোনো রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ছাড়া ইহাই সবার চাওয়া। কিন্তু আম্লিকের চাওয়া ভিন্ন। উহারা মনে করে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা তাদের বাপের তালুকদারি। তাই এসব নিয়ে কেবল তারা প্রতিবাদ করলে মানায়। বাকিরা কে কি করলো তাতে কিছু যায় আসে না। শেখ হাসিনা বারবার বলতেন, " এইটা আমার বাবার দেশ। আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছে "। একই ভাবনা আম্লিকের টপ টু বোটমের মধ্যেও কাজ করে, "একমাত্র তারাই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক " । স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাকিরা কিছু বললে উহার কোনো গুরুত্ব নেই।

ইন্টেরিম সরকার সংঘাত এড়াতে আম্লিকের নিবন্ধন ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে রেখেছে বিচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। অফলাইনে এই নিষেধাজ্ঞা কিছুটা কাজে দিলেও অনলাইনে কোনো কাজে দেয় নাই। আম্লিক নেতা কর্মীরা ফেইসবুকে তাদের পেইজের নাম চেঞ্জ করে বাংলা এম্পায়ার ৭১, লিটল মুজিব সহ মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত নাম ব্যবহার করে ডিজইনফরমেশন ছড়াচ্ছে। আগস্ট মাসের ৫ তারিখের পরপর তাদের প্রধান কাজ ছিলো সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার করা 'আগেই ভালো ছিলাম' । সময় যত গড়িয়েছে ইন্টেরিম সরকারের দূর্বলতা ও জুলাই ঐক্যের মধ্যে যে ফাটল ধরেছে তার ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে জনগণ কে তারা প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। ইন্টেরিম সরকার, রাজনৈতিক দল বা অরাজনৈতিক সংগঠনের কারণে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার কারণে জনদূর্ভোগ হলেই আম্লিকের বট বাহিনী উহা নিয়ে সাধারণ ছাত্র-জনতা কে উপহাস করে। ইন্টেরিমের বিরুদ্ধে যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আন্দোলনের হুমকি দেয় তখন আম্লিকের বটবাহিনী প্রচার করে ড. ইউনূসের সরকার না পারলেও উহাদের নেত্রী বিগত ১৬ বছর বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন কে দমন-পীড়ন করেছেন সফলভাবে। জনগণ কে তারা বোঝাতে চাচ্ছে এসবের কারণে শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার। এসব আন্দোলন জনগণের উপকারে আসে না বিধায় শেখ হাসিনা তাদের দমন করতেন। স্বৈরাচারী চিন্তাভাবনা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে আম্লিকের নেতাকর্মীদের জাস্ট একবার চিন্তা করেন !

বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক জটিল। অনেক সময় জনসাধারণ ক্ষমতাসীনদের কারণে সাফার করে। জনগণের এই সাফার করা শেখ হাসিনার আমলেও ছিলো এখন ইন্টেরিমের আমলেও কিছুটা হচ্ছে। কিন্তু আম্লিকের নেতাকর্মীদের কাজ হচ্ছে ইন্টেরিম সরকারের যে কোনো ব্যর্থতা কে ইস্যু করে প্রচার প্রচারণা চালানো। এইজন্য তারা ' July Cdi ' নামে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। দেশে কোনো সমস্যা হইলে সব জুলাইয়ের দোষ। নিজেদের আওয়ামী অর্থনৈতিক মডেলের কারণে ইন্টেরিম সাফার করলে জুলাইয়ের দোষ। নিজেদের করে যাওয়া অপকর্মের কারণে জনগণ সাফার করলেও তা অবশ্যই জুলাই আন্দোলনের দোষ । এভাবে যারা নিজেদের আত্নসমালোচনা না করে সবকিছুর দায় অন্য কারো উপরে দেওয়ার যে মানসিকতা উহাই তাদের রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ দীর্ঘায়িত করবে। আমরা তো কিছু করিনি তা পরিশুদ্ধ হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা এমন মনোভাব যতক্ষণ পরিহার না করবে কোনো গতি তাদের হবে না। জনসাধারণ কে উপহাস, ঠাট্টা-ম্‌শকরা করলে বা জনগণের দূর্ভোগের প্রতি সহমর্মিতা না দেখালে বিএনপির মতো অবস্থা হবে আম্লিকের !

বি:দ্র : আম্লিকের ফিরে আসার প্রবল সম্ভাবনা আছে যদি চরমপন্থীদের উত্থানে দেশে অস্থির অবস্থা বিরাজ করে। দূর্নীতি বা লুটপাট করে যদি আম্লিক ১৬ বছর টিকে থাকতে পারে বাকিরাও পারবে। আম্লিকের অধিকাংশ বড়ো নেতাদের রাজনীতির কবর রচনা হয়ে গেছে। বাকি যারা আছে এরা আমাদের 'গাজী সাহেবের প্রশ্নফাঁস '। প্রশ্নফাঁসদের পক্ষে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা গাজী সাহেব দেখেন না। এই প্রশ্নফাঁসদের মধ্যে যেমন এন্টি-আওয়ামী লিগ আছে ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের প্রশ্নফাঁসও আছে। উহাদের উপর নিশ্চয়ই ভরসা রাখবেন না তিনি !
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২৫ রাত ১১:১৭
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×