বেশ ছিমছাম উচ্চতার সে ছোট্টবাসায় আমি থাকি
তার ঠিক মাথার উপর বেশ অচেনা একটা পরিচিত পরিবার থাকে।পরিচিত বলছি এ কারনে দিন বা রাতে প্রায়শই তাদের অস্তিত্ব জানান দেয় টুকটাক শব্দ ঝংকারে।লিখতে বসেছি সে নিয়ে নয় কারন এই উপর তলা নীচতলা বিবাদ বেশ জনপ্রিয় এবং পরিচিত।সেই বাসায় কেউ একজন পিয়ানো শিখে, ছুটির দিনে যখন তখন আর এই কর্মদিবস গুলোতে সূর্য যখন মধ্য আকাশে গনগনে তাপ ঢেলে ক্লান্ত হয়ে পশ্চিমে ঢলে গৃহিনী দের মত ভাত ঘুমের আয়োজনে।ঠিক তখন শুরু করে তার নিয়মিত অনুশীলন টুং টাং ডো রে মি ফা সে লো টি ডু থেকে শুরু এরপর তার পছন্দ মত সুর সে বেছে নেয়।কবে থেকে ঠিক মনে নেই আমার পরন্ত বিকেল গুলো’র মতই ক্লান্তহীন সে লক্ষের দিকে এগিয়ে চলে।
বছর দুয়েক হয় প্রথম দিকে ছিল সেই এক ঘেয়ে সারেগামাপা আর মাঝে মাঝে কর্কশ বেজে উঠা শব্দ কেবল।আজকাল বেশ মালা ছেড়া মুক্তর মত আয়েশে গড়ায় সুর,আহলাদি চাঁদের জোছনার মত ঢলে ঢলে পড়ে কানে।বেশির ভাগ গান ই আমার অপরিচিত আমি অত ইংরেজী গানে অভস্ত্য নেই বলে অথবা সে কোন আরবী গানের গুণগুণ কিনা তাও জানি নে।সাউন্ড অফ মিউজিকের সুরগুলো অথবা টপ চার্টের ইংলিশ,আমার ছেলে তখন সেই সুরের সাথে গলা মেলায়,মাঝে মাঝে দেখি এ দেশের জাতীয় সংগীত এর অনুশীলন করছে।
বাচ্চারা স্কুল থেকে ফেরার পরের এই সময় টা আমার ব্যালকনিতে কিছু সবুজ আর খুনসুটি করা জোড়া ঘুঘুর সাথে কাটে ,কখনো সাথে চা বই অথবা মোবাইলে ফেসবুক আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মত বেজে চলা পিয়ানো সুর।অবসরের এই মুহূর্তটুকু শ্রাবনের বৃষ্টির মত অযাচিত ভালোলাগায় ঋদ্ধ করে।
আজকাল অধ্যাবসায়ী সেই পিয়ানো বাদক কে দেখতে ইচ্ছে জাগে;কোন জাতীর সে!আরব দেশীয় !ইউরোপ থেকে আসা কেউ অথবা এশিয়,ভারতীয়,পাকিস্থানী, ফিলিপিনো নাকি আফ্রিকা মহাদেশের কেউ।হয়ত লিফটে উঠা নামায় দেখেছি অথবা সন্ধ্যায় সবুজ চত্তরে।খুব সহজ জেনে নেয়া আমার একলা ঘুঘুর সাথে'র বিকেলে গুলোতে আনন্দ বেদনার সুরে ভেজানো বাদক কে।
পরক্ষনেই ভাবি থাক না কিছু দৃষ্টির অগোচরে নাই বা জানলাম।কেবল সুরধারার সে অনুজ শিক্ষার্থীর জন্য শুধু অন্তর থেকে শুভ কামনা আর আশীর্বাদ একদিন তার অধ্যাবসায় তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য পাক।সব কিছু জেনে ফেলা আমার ভালোলাগে না কেনো যে !!
আজকালের সব রহস্য ভেদ করা বা সব জেনে ফেলা প্রজন্মের চেয়ে আমি যে আমার আধো রহস্যময় স্বপ্ন আঁকা সময় কে বেশী ভালোবাসি।
ছবিঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯