শব্দ দূষণ মুক্ত ! সবুজ সিক্ত ! এই স্লোগানে বাস করতে গেলে ;
সবসময়ই একটু অফবিট এলাকা বেছে নিতে হয় বসবাসের জন্য। যেখানে নিজের করে, নিজের মতোই প্রকৃতি প্রাকৃতিক রূপে ধরা দেয়। যদিও মফঃস্বল ঢাকায় তারপর ও প্রায় বসবাস অযোগ্য করে তোলা, অযুত স্মৃতি'র এই যাদুর শহর ! ঢাকায় এ যাত্রা চোখের কোনে একটুকরো সবুজ নিয়ে ঘুমতে যাবার মত একটা ব্যালকনি পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ!!!!!
ঝুম বৃষ্টিতে কিছু শালিকের জুবুথুবু হয়ে ওম নেয়া ও চোখে প্রশান্তি আনে বেশ। যদিও জ্যৈষ্ঠ তাপের দাবদাহ করোনা কালের রুঢ়তা ও ভুলিয়ে দিচ্ছে মাঝে মাঝে। এরপর নিজের রূপে ফিরে একপশলা বৃষ্টি !!! রোদ মেঘের কোলাকুলির এই মৌসুমে অবশ্য বিয়ে দেয়ার মত খেঁকশিয়াল এই নগরে আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু সকল দূষণ ধন্য করে সবুজ যেন শিল্পীর রঙের ডিব্বা খালি করে নেমেছে পথেঘাটে।
রোজ বিকেলে রোদ কমে এলে অথবা বৃষ্টি থামলে -
দলবেঁধে পাশের কলোনির গৃহবধূরা টুকরি হাতে নেমে পরে, পাঁচ মেশালি শাক কুড়াতে সেই শৈশবে গ্রামের ছুটির গল্পের ছবি হয়ে।
কতকত যে নাম তাদের ...
কলমি, সেচি , গিমা , নটে ,ব্রাহ্মী, ঢেঁকি। সবটুকু আঁজলাতে আজাচিত ভাবেই আসে। এইসব সুরমালেপা দিনগুলোতে স্মৃতিতে ফিরে আসে শৈশব / কৈশোর ! সেসব দিনে, সেই আনন্দে, উচ্ছলতায় মেতে উঠা হয় না ! যেখানে আর ফেরা যায় না।
বছরে দু'বার গ্রামে যেতে পারতাম মাত্র ! শীতের স্কুল শেষ হবার পর অথবা বিয়ে শাদীর দাওয়াত থাকলে। নানীবাড়ি চাচাতো বড় বোনের বাড়ি, মাঝে মাঝে খালাদের বাড়ি' আর দাদা বাড়ি। সদরঘাট থেকে লঞ্চ ধরলে দিন যেন ফুরায় না আর।
ফতুল্লা- কাঠপট্টি -তালতলা...
সেবার এমন বৈশাখ/ জ্যৈষ্ঠে জমজমাট নানিবাড়ি !
নতুন মামী বাড়িতে। সব খালা'রা বাপের বাড়ি নাইওর এসেছে। চার বোনের ছেলে মেয়ে ছোট মামা খালা নিয়ে হুলুস্থুল ! মসজিদের পাশে পাড়ার সবচাইতে বড় পুরনো দীঘিতে জাল পরেছে, আশেপাশে মানুষ থৈথৈ। এই দীঘি নিয়ে নানা ধরনের প্রচলিত গল্প তখন কুপি/ হারিকেনের আলোয় আমাদের সন্ধ্যার আড্ডার সবচাইতে গা ছমছমে অনুভূতির তালিকায়। খুব পুরনো মাথায় লাল রঙা এক গজার মাছ ই সেদিনের মধ্যমণি হয়ে রইলো। নতুন মামি সেই মাছ কেটেকুটে সবার জন্য আজ রান্না করবেন। উৎসব মুখর পরিবেশ।
মাঝ দুপুরে ঝড় উঠলো, বড় দের মাঝে হৈহৈ রব সব বাচ্চাদের ঘড়ে বন্দী করার; কিন্তু দুরন্ত কৈশোর সবসময়ই বয়স্কদের চিন্তার আগে ছোটে। আমরা ও হৈহৈ এর আগে রৈরৈ করে ততোক্ষণে ছাড়া বাড়ির ভূতুরে আম গাছের তলায়। এরা হচ্ছি
মাস্টারের নাতিনাতনিদের মাঝের তিন নাম্বার দল (আক্ষরিক অর্থেই ছাগালের তিন নাম্বার বাচ্চা) যাদের কাজ ই হচ্ছে বড়দের পিছু নেয়া কিছুক্ষণ বুঝে আর পুরোটা সময় না বুঝে
সেদিন ভেজার জন্য কাঁকদের ও মধ্যপাড়া গ্রাম ছাড়তে হয়েছিলো আমাদের কিচিরমিচিরে। আর কাঁচা, আধ কাঁচা কিছু গাছ পাকা আমের স্তুপ জমেছিল রান্নাঘরের আঙিনায়। ভেজা বিকেলে'র ঢলে অন্তঃপুরের পুকুরের পাশের নালায় সাঁচরা মাছ ধরার উৎসবে মেতেছিলাম। বিকেলের নাওয়া শেষে গামছায় জল তুলে পায়ে ঢালার মত।
আজ ঠিক মনে করতে পারি না, সব কি একই দিনের গল্প না সেই বৈশাখের গল্প পুরোটা।
সমস্ত টা ছুটি চষে বেড়াতাম আলু ক্ষেতের আল বেয়ে বথুয়া শাক কুড়ানো, কোলা' র পাশের সেচিশাক, পায়ের পাতাভেজা পানিতে হেলেঞ্চা কলমি তোলা। শহিদুল মামা দের ( মায়ের কাজিন ) রোয়াইল গাছের টকমিষ্টিতে, ছাড়া বাড়ির কাউ গাছের পাকাফল তুলে আনাতে। মাঝে মাঝে পালের হাঁসের জন্য শামুক কুড়াতে। ফলাফল ফিরতি পথে লঞ্চ থেকে সদরঘাট নাম্বার আগেই জ্বরে কাইত। আমার মায়ের নাইওর যাবার শখ সেবারের মত ইতি। সন্ধ্যায় আব্বা জিজ্ঞেস করত এই মুখপোড়া বান্দরগুলি কি সব আমার ?
ছবিঃ মনিরা সুলতানা
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:১৩