~~~কেদাহ ভ্রমন এবং বিচিত্র আভিজ্ঞতা~~~ (পর্ব-১)
~~~কেদাহ ভ্রমন এবং বিচিত্র আভিজ্ঞতা~~~ (পর্ব-২)
মসজিদে বসে জুমার খুতবা শুনছিলাম যদিও কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কারন খুতবা দেওয়া হচ্ছিল মালায় এবং আরবী ভাষাতে। এই দুটো ভাষার ১টাও আমি বুঝিনা।নামায শেষে সবাই আমাদের কেন্দ্রস্থল সেই স্কুলের কাছে গিয়ে জড়ো হলাম। সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে স্কুলের সামনে। নামাযের আগ পর্যন্ত সবাই মোটামুটি আনেক পরিবারের কাজ করে দিলাম। এখন থেকে অন্য নিয়মে কাজ চলছে। এখন আমরা সকলের বাড়ী-বাড়ী যাচ্ছিনা কাজ করতে। যেসব পরিবারের সাহায্য দরকার তারা নিজে থেকেই এসে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ওদের বাড়ীতে। আনেকটা বাংলাদেশের কামলা নিয়ে যাওয়ার মতোই। অনেকেই বাইকে করে এসে নিয়ে যাচ্ছে, কেউ আবার হেটে এসে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সহ আরো কয়েকজনের ডাক পরলো স্কুলটির পাশের এক বাড়ীতে। এই বাড়ীতে তেমন কাজ নেই। বাড়ীর সামনের বাড়ান্দায় পানি উঠেছে, সেগুলো সড়াতে হবে এবং কিছু আসবাবপ্ত্র পরিষ্কার করতে হবে। শুরু করে দিলাম কাজ করা। মাঝখানে বাড়ীর গৃহকর্তী আসলো ১টা ক্যামেরা নিয়ে। সবাইকে বললো ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে। ছবি তুলতে তুলতে বলতে লাগলো এই ছবিগুলো আমি ফেইসবুক এ দেবো।
২য় বাড়ীতে কাজে ব্যাস্ত
কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম
এই বাড়ীতে কাজ শেষ করে স্কুল এর সামনে বসে বিশ্রাম নিচ্ছি। এমন সময় আমাদের টীম লীডার বললো যেহেতু তেমন কেই আসছেনা তাই আমরা এখন গ্রামের ভেতরে যাবো। সবাই মিলে হাটতে শুরু করলাম গ্রামের পথ ধরে। উদ্দেশ্য ঘুরে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার খুজে বের করা এবং তাদের সাহায্য করা।
কম ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ী
পথে যেতে যেতে পেয়ে গেলাম ১টি পরিবার।দাদীর বয়সী এক মহিলা বসে আছে বাড়ীর সামনে।আমরা সাতজন এগিয়ে গেলাম সেই বাড়ীর দিকে আর বাকিরা সবাই সামনে এগিয়ে চললো।আমাদের গ্রুপ এর ফাহমিদ তাদের লোকাল ভাষাতে মহিলার সাথে কথা বলতে শুরু করলো।কিছুক্ষন পর মহিলা আমাদের সাবাইকে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেলো।বাড়ীর ভেতরে যেয়েতো আমাদের আক্কেলগুরুম।রুমগুলোর যা অবস্থা দেখলাম তাতে আমার মনে কেনো যে এই বাড়িতে এলাম, আগের যে দুটো বাড়ীতে কাজ করেছিলাম সেগুলোর অবস্থা এই বাড়ী থেকে হাজার গুন ভালো ছিলো।ছবি দেখেই বুঝেন কি অবস্থা। কেউ আমাকে টাকা দিবে বললেও তো এই কাজ আমি করতাম না।কিন্তু কোনো উপায় নেই। এসেই যখন পড়েছি কাজ তো করতেই হবে।আর তাছাড়া আমার টীম মেম্বাররা যেকাজ করে তাতে আমি তাদের কাছে কিছুই না। মালায়শিয়া আসার পর থেকে মালায় দের নিরলস কাজ করা দেখে আমি বার বার অনুপ্রানিত হয়েছি।যাই হোক বাড়ী পরিষ্কারের কাজ করে চলেছি আমরা সাত জন।একদিকে ময়লা-দুর্গন্ধ আর একদিকে বড় বড় আসবাবপ্ত্র স্থানান্তর করা সব মিলে আমাদের অবস্থা খুবই করুণ।তারপরো সেই দাদীর বয়সী মহিলা থেকে অনেক ভালো।কাজ শেষে মহিলাকে প্রশ্ন করে জানা গেলো মহিলা তার স্বামীর সাথে এখানে একা থাকে।তাদের একমাত্র মেয়ে থাকে জোহর নামক জায়গায় যা কিনা মালায়শিয়ার অন্যপ্রান্তে অবস্থিত।শুধুমাত্র তাদেরকে সাহায্য করার জন্য মেয়ে সেই দূর থেকে এখানে এসেছে।বুঝতে পারলাম যে আমরা যদি না আসতাম তাহলে তাদের কি অবস্থা হতো।কিছুক্ষন প্র দেখলাম মহিলা এবং তার মেয়ে খোলা আকাশের নিচে রান্না করছে।আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলাম কি রান্না করে দেখার জন্য।কাছে গিয়ে দেখলাম মহিলা এবং তার মেয়ে মিলে কোন মশলা ছাড়াই মুরগীর গোস্ত রান্না করছে সাথে কলমি শাক রান্নার প্রস্তুতি চলছে।শাক কাটাতে সাহায্য করছে আমাদের টীম এর একটি মেয়ে।সু্যোগ পেয়ে মহিলার সাথে মালায় ভাষাতে কথা বলতে লাগলাম যদিও সীমিত কয়েকটি বাক্য ছাড়া আমি তেমন কিছুই পরিনা।মহিলা আমার কথা শুনে ভালোই মজা পেলো,মজা পাওয়াটাই স্বাভাবিক।ভীনদেশী কেউ প্রথম প্রথম বাংলা বললে সাবাই যেমন হাসে আমার কথা শুনে তাদেরও সেই অবস্থা।বুঝলাম যে আর সামনে যাওয়া যাবেনা এই সীমিত জ্ঞান নিয়ে।এবার দোভাষী হিসেবে নিয়োগ করলাম আমাদের ১জন গ্রুপের ১জন কে।মহিলা ওই মেয়েকে মালায় তে বলছে আর সে আমাকে ইংরেজীতে ভাষান্তর করে দিচ্ছে। কথা বলে জানতে পারলাম মহিলার আদিপুরুষ এসেছে থাইল্যান্ড থেকে।মহিলা আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে খুব খুশি হল।রান্না হচ্ছে দেখে আমি বললাম আমার ক্ষুধা লেগেছে।এই কথা শুনে মহিলা আনেক খুশী হল। আসার সময় মহিলা অনেক সাধলো খাওয়ার জন্য।কিন্তু আমাদের কে যথাসময়ে যেতে হবে তাই মহিলাকে ধন্যবাদ দিয়ে আমরা মহিলার সাথে ছবি তুলতে দাড়িয়ে গেলাম।তবে মহিলার শেষ কয়েকটি কথা আমি এখনো ভুলতে পারিনা।না ভুলাটাই স্বাভাবিক।মহিলা মালায় তে বললো তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। এই কথা যখন দোভাষীর দায়িত্ত্ব পালন কারী মেয়েটা ট্রান্সলেট করছিলো তখন সে হাসতে হাসতে শেষ।মহিলার কথা শুনে খুব ই খুশী হলাম। আমি বললাম আপনার চেহারা আমার দাদীর মতো। আপনাকেও আমার ভালো লেগেছে। দোয়া করবেন আমার জন্য।এরপর আমরা সবাই মিলে মহিলার সাথে ছবি তুললাম।ছবি তুলা শেষে আমরা বিদায় নিয়ে আমাদের গন্ত্যব্যের দিকে এগিয়ে চললাম।(চলবে)
বুঝতেই পারছেন
গ্রুপ ফটো
গ্রুপ ফটো
মুরগীর গোস্ত এবং কলমি শাক
রুম পরিষ্কারে ব্যাস্ত
গ্রুপ ফটো
এই সেই বাড়ী
মুরগী রান্নায় ব্যস্ত মহিলা
রুমগুলোর অবস্থা খুবই করুণ
এই সেই মেয়ে যে দোভাষী হিসেবে আমাকে সাহায্য করেছে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




