বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন অবিরাম চেঁচিয়ে বেড়াচ্ছেন যে, দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো। যখন দেশে দৈনিক গড় পড়তা প্রায় ১০ জন খুন হচ্ছেন, যখন প্রতিদিন আওয়ামী সোনার ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটাচ্ছে, যখন টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি সর্বকালের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে যখন এসব হত্যাকান্ডের কোনটির কোনো কিনারা করা যাচ্ছে না সে সময় বুক উঁচিয়ে সাহারা খাতুনের এই তত্ত্ব সাধারণ মানুষের কাছে কৌতূহলদ্দীপক ঘটনাবই আর কিছুই নয়। তিনি ঐ আত্মতুষ্টিতেই আছেন যে, দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে ভালো।
নাম না জানা এক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এক ব্যাংকের এমডিকে তুরে আনতে তার গানম্যান পাঠিয়েছিলেন। সাহারা খাতুন এ সম্পর্কে টু-শব্দটি করেননি।
এদিকে ঢাকা কলেজে এখন ভর্তি বাণিজ্য জেঁকে বসেছে। ভর্তি বাণিজ্য এবং নিউমার্কেট ও আশপাশের মার্কেটগুলোতে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজির অধিকার নিয়ে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপের মধ্যে অনেকদিন ধরেই সন্ত্রাস, হাঙ্গামা, গোলাগুলী, হানাহানি চলছে। প্রায়সই তারা প্রতিপক্ষের ওপর রামদা, হকিস্টিক, লাঠিসোটা পিস্তল নিয়ে হামলা চালিয়ে আসছে। পরিস্থিতি বলতে গেলে সম্পূর্ণই কলেজ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কোটা নিয়ে তারা বেশ কয়েকবার কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া নস্যাৎ করে দিয়েছে। এরকম সংঘর্ষের মধ্যে গত ১৬ই মার্চ দিনভর ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষ চলে। তাতে উভয়পক্ষে শতাধিক রাউন্ড গুলী বর্ষিত হয়। গুলী, বোমা, বিস্ফোরণ, হামলা, পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ২০ জন ছাত্র আহত হয়। সেই প্রেক্ষিতে অনেকটা অনন্যোপায় হয়েই কিংবা নির্দেশিত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঢাকা কলেজের পুলিশি অভিযানের অনুমতি দেন। এই অভিযানে পুলিশ সংঘর্ষে জড়িত বহিরাগত ও সন্দেহভাজন ৭১ জনকে আটক করে। শেষে ৫৭ জনকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের পিএস হিসেবে পরিচিত কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবদুল বাসেত গালিবকে সংঘর্ষের সময় ক্যাডারদের মধ্যে অস্ত্র, গুলী ও টাকা বিতরণ করতে দেখা যায়। ভোর বেলায় ঐ গালিবকে ৫২ রাউন্ড গুলী ও নগদ ৩১ হাজার টাকাসহ পুলিশ গ্রেফতার করে। কেউ কেউ বলেছেন এ সময় তার কাছে অস্ত্রও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সরকারের উচ্চ মহলের তদবিরে যাতে গালিবের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা না হয় সেজন্য অস্ত্রটির কথা উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ এই লোক দেখানো অভিযানের শুরুতেই সন্ত্রাস-বন্ধুত্বের প্রমাণ রাখল সরকারের মহল। পরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নিউমার্কেট থানার গেট ভেঙ্গে থানায় প্রবেশ করে এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানাতে থাকে। তারা গালিবকে ছেড়ে দিতে, তার বিরুদ্ধে কোন মামলা না করতে পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপি তার বিরুদ্ধে যাতে অস্ত্র মামলা না হয় সেজন্য পুলিশের কাছে সুপারিশ করতে থাকে।
এসব খবরই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। চোখে ঠুলি পরে, কানে তুলো দিয়ে থাকলেও সাধারণ মানুষ সে খবর জেনে গেছে। সাহারা খাতুন যদি সন্ত্রাসবান্ধব না হয়ে থাকেন তাহলে পুলিশে খোঁজ নিয়ে ঐ তদবিরকারীদের নাম প্রকাশ করুন এবং জনগণকে জানান তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
বাস্তবের দিকে চোখ না দিয়ে কল্পনায় কেবল সকল দোষের জন্য নন্দঘোষ বিরোধী দলের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করবেন না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রলীগ কর্মী খুন হওয়ার পর সারা দেশে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে ওঠে চিরুনি অভিযান করলেন। কয়েক হাজার নিরীহ ছাত্র ও শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করলেন। তাদের মেসে মেসে হানা দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করলেন। দুইজন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করলেন। নিম্ন আদালত পরীক্ষার সময় তাদের জামিন মঞ্জুর করেছিল, চেম্বার জজ দিয়ে সে জামিন নাকচ করলেন। আর ছাত্র লীগ যে দেশব্যাপী তুমুল সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে আপনাদের চিরুনি অভিযান কোথায়।
এর ষোলকলা পূর্ণ করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। গত শুক্রবার তিনি গ্রেফতারকৃত গালিবের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। তিনি শুধু একা যাননি। তার সঙ্গে গিয়েছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। গালিবের আত্মীয়-স্বজন মন্ত্রীর কাছে তার মুক্তি দাবি করলে মন্ত্রী মুক্তির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। বিষয়টি তাহলে কী দাঁড়াল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ভেবে দেখতে পারেন। অর্থাৎ ছাত্রলীগের ছেলেরা যদি সন্ত্রাস করে, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অস্ত্রবাজি করে এবং লোক দেখানোর জন্য যদি তাদের গ্রেফতার করাও হয় তাহলে মন্ত্রী সে অপরাধীর বাসায় গিয়ে মুক্তির আশ্বাস দিয়ে আসেন এবং সেটা স্বারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ক্ষোদ। এরপরও কী সাহারা খাতুনকে ঘাপটি সন্ত্রাসী খুঁজতে হবে- নাকি চোখের ঠুলি খুলে নিজের আশপাশে তাকালেই সেটা যথেষ্ট হবে? প্রকৃতপক্ষে এ থেকে প্রমাণিত হয় সরকার কী যত্নে সন্ত্রাসীদের লালন করছে ও প্রশ্রয় দিচ্ছে। সরকারের এই সন্ত্রাস-বন্ধুত্ব আর মেকি-সন্ত্রাস বিরোধিতার ভারে একসময় জনরোষে অন্ধকারে যে তলিয়ে যাবে তার কোনো হিসেবে নেই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



