মিসর গৃহযুদ্ধ থেকে বর্তমানে এক ধাপ দূরে আছে ! গৃহযুদ্ধ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র । ইতিমধ্যেই মিসরীয় প্রখ্যাত আলেমে ইউসুফ আল কারজাভি ফতোয়া দিয়েছেন অভ্যুত্থান সমর্থনকারীদের হত্যা করা জায়েজ ! সেনাবাহিনী তো পাইকারী হারে হত্যা অলরেডি শুরু করেছেন । এখন শুধু বাকি ব্রাদারহুডের অস্ত্র তুলে নেওয়া । ব্রাদারহুডের অনেকেই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন এরকমও খবর পাওয়া গেছে ।
ব্রাদারহুড দল হিসাবে কেমন, মুরসির সফলতা, ব্যার্থতা নিয়ে বর্তমান মিসরের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার মত নয়। মুরসির ভুল-ত্রুটি যাই থাক মিসরীয় সেনাপ্রধান সিসি যা করেছেন তা গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে গ্রহনযোগ্য তো নয়ই বরং তিনি যা করেছেন তা দেশকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যর অভিপ্রায় থেকেও নয় । মিসরীয় সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিলে মুরসিকে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য করতেন কিন্তু সে পথে হাটেননি। মিসরের নবীন গণতন্ত্রও একটা কারণ বটে তবে মিসরীয়দের দুরদৃষ্টির প্রকট অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে এই ঘটনার মাধ্যমে। মিসরের মূল ক্ষমতা আর সিসির হাতেও নেই । মুরসিকে উৎখাত করার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ক্ষমতা চলে গেছে মিসরের বাইরে । এখন মিসরের সেনাবাহিনী চাইলেও মুরসিকে ক্ষমতা ফেরত দিতে পারবে না বা সম্ভবও নয় । সেই বাইরের শক্তি আর কখনোই চাইবে না মিসর স্থিতিশীল হোক বা গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসুক । সেই শক্তির প্রত্যাশা হল নতুন একটা সিরিয়া ! সিসি সেই ফাঁদেই পা দিয়েছেন মাত্র ।
সেক্যুলার-শরিয়া দ্বন্দ্বও কোন ফ্যাক্ট নয় বরং এগুলো জাস্ট মিসরে গৃহযুদ্ধ শুরুর একেকটা উপাদান ও নিয়ামক মাত্র । কারণ মিসরে এই দুই গ্রুপের জনসমর্থন কারো চেয়ে কম নয়। এই নিয়ামকগুলো ভালভাবেই কাজে লাগাতে পেরেছে বাইরের শক্তি ইসরায়েল. যুক্তরাস্ট্র, ইউরোপ ও মুরসির রাজতান্ত্রিক আরব মিত্র ! এজন্য তারা বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে !
যাইহোক, মিসর দিয়ে শুরু করেছিলাম কিন্তু গৃহযুদ্ধ মিসরেই শেষ নয় । সিরিয়াতে যেমন চলছে , দুদিন পরে শুরু হবে তিউনিসিয়ায়, ইতিমধ্যেই তিউনিসিয়ায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়ে গেছে ! তুরস্কেরও সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না । বাকি আরব দেশগুলিতেও শুরু হবে তবে শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা এই যা ! ইরান শান্তিপূর্ণ ও পূর্বেরকার চেয়ে অধিকমাত্রায় গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করে এ যাত্রায় রেহাই পেয়েছে । ২০০৯ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে ইরানেরও খবর ছিল তবে ইরানিরা আর দশটি জাতির মত নয় বরং তাদের জাতীয়তাবোধ ও দেশ প্রেম অন্যদের চেয়ে একটু বেশি মাত্রায় আছে বৈকি । তাই হয়তো সেখানে শয়তানি শক্তি চান্স পায়নি যদিও তারা চান্স নেওয়ার নিরন্তর আশা কখনোই ত্যাগ করেনি ।
ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা নরেন্দ্রমোদী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ! তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে আপাতত শুধু এটুকুই বলতে পারি ভারতের বিচ্ছিন্নবাদীদের প্রভাব যথেষ্ট পরিমান বেড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভবনা আছে। পাকিস্থান তো তালেবান জ্বরে আক্রান্ত ! এ থেকে পাকিস্থানের মুক্তি পাওয়ার কোন সম্ভবনা নেই বললেই চলে ।
বাংলাদেশেও এ থেকে ব্যতিক্রম নয় । ঈদের পরই তত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ প্রচন্ড উত্তপ্ত হওয়ারই কথা । সামনের নির্বাচনটা আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামাতের অস্তিত্বের লড়াই ! বাইরের শক্তির প্রভাবে আওয়ামীলীগ হয়তো তত্বাবধায়ক সরকার দিবে না তেমনি বিএনপি-জামাতও মনে হয় না তত্বাবধায়ক ইস্যুতে কোন ছাড় দিবে আর বড় ভুলটা হবে এখানেই যেমনটা ভুল করেছেন সিসি । আর সেটাই নিরন্তর চাওয়া আমাদের শত্রুদের ।বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করাই তাদের একমাত্র লক্ষ । গণতন্ত্র যখন ব্যর্থ হয় তখনই চরমপন্থীরা মাথা চারা দিয়ে উঠে আর বাইরের শক্তি তখনই পেয়ে যায় মওকা সুযোগ ।
আশা করা যায়, বড় দুই দল তাদের দুরদৃষ্টির পরিচয় দিবেন । দেশটা শুধু আওয়ামীলীগের নয়, বিএনপিরও নয়, দেশটা আমাদের সকলের, কিন্তু যদি কোন ভুল হয় সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত শুধু আওয়ামীলীগ-বিএনপি নয় আমাদের সকলকেই এর মাশুল দিতে হবে ।