somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

ইরানে আন্দোলনের ভিতর ও বাইরের রহস্য

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইরানের চলমান আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কয়েকটা দিক আছে- ইরানের ভিতরের আর বাইরের। ভিতর আর বাইরের দিক বুঝতে না পারলে ইরানের আন্দোলনের রহস্য বুঝে উঠা সম্ভব হবে না।

শুধু মাহসা আমিনির মৃত্যুতে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার কোন কারণ নাই। মাহসা আমিনির মৃত্যু নিশ্চয় দুঃখজনক, কিন্তু মাহসা আমিনি যে পুলিশি নির্যাতনে মারা গেছে এর কোন সলিড প্রমাণ কেউ দেখাতে পারিনি। পুলিশ অ্যারেস্ট করা থেকে তাকে পুলিশ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। মাহসা আমিনি এর আগেও কয়েকবার মুর্ছা গিয়েছিলেন।তবে মাহসা আমিনি যে কারণেই মারা যাক পুলিশের অ্যারেস্ট নিশ্চয় তার মৃত্যুতে ভূমিকা রেখেছে।

কিন্তু মাহসা আমিনির চেয়ে জঘন্য ও অত্যন্ত নিষ্ঠুর কায়দায় পুলিশি নির্যাতনে ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, সৌদি আরব, উত্তর কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, পশ্চিমা বিশ্ব এমনকি খোদ আমেরিকায় হত্যা করা হচ্ছে নারী কিংবা শিশুকে। কিন্তু মিডিয়া সবগুলো ঘটনা সামনে আনে না। মিডিয়া তিলকে যেমন তাল করে ঠিক তেমনি তালকেও তিল করে। মিডিয়াই ঠিক করে দেয় কোন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন হবে আর কোন ইস্যুতে হবে না।

প্রথম যে দিকের কথা বলতে চাইছি তা হল ইরান একটি রক্ষণশীল মুসলিম দেশ। তবে ইরানের রক্ষণশীলতা সৌদি আরবের মত অত্যন্ত কঠোর নয়। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর ইরানে যে সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় তা রিপাবলিক এবং ধর্ম দুটোর সংমিশ্রণে গঠিত হয়। ইরানের বিপ্লবটা ছিল সরাসরি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লব। সেই থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নাম্বার ওয়ান শত্রু। এরকম বিপ্লব বিশ্বে খুব কম দেশেই ঘটেছে বা ঘটেনি বলা যায়। কিন্তু বিপ্লবের পর আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে যে শাসনযন্ত্র অধিষ্ঠিত হয় সেইটা রিপাবলিক এবং ধর্মের সংমিশ্রণে গঠিত হওয়ায় ইসলামী শরীয়া আইন পুরো দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় যেমন হিজাব। কিন্তু একটা দেশে তো শুধু একটি মাত্র ধর্মের মানুষ বাস করে না। আর ইরান তো বহু জাতি ও ধর্মের দেশ। আবার মুসলমানদের মধ্যে সবাই যে সেটা স্বতস্ফূর্তভাবে মানবে এমনটা নয়। এরফলে বাধ্য হয়ে মানলেও মনের মধ্যে অনেকের ক্ষোভটা রয়ে যায়। সুযোগ পেলেই সেটার বিষ্ফোরণ ঘটা স্বাভাবিক এবং ইরানে সেটাই ঘটেছে। বিপ্লবের পর দেশটি মার্কিন ও ইউরোপিয় কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরেও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, নারী শিক্ষা, সামরিক, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক মাত্রায় এগিয়ে গেলেও বিপ্লবের পরের শাসন ব্যবস্থায় এই দুর্বলতা রয়ে গেছে। আপনার ধর্ম যে মানে না বা যে আপনার ধর্মের অনুসারী নয় তাকে আপনার ধর্মীয় আইন মানতে বাধ্য করতে পারেন না।

দ্বিতীয়টি হল ইরানি বিপ্লব ছিল মার্কিন ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লব। তাই বিপ্লবের পর থেকে মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব ইরানের ঘোর শত্রু। একই সাথে ইসরায়েলও ইরানের শত্রু।পশ্চিমা বিশ্ব ইরানে সরকার পরিবর্তনের জন্য সেই শুরু থেকেই নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই ইরানে এরকম কিছু একটা ঘটলে বা তুচ্ছ কিছু ঘটলেও পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের মিডিয়া এবং তাদের রাজনীতিবিদগণ সঙ্গে সঙ্গে সেটা লুফে নেয় এবং সত্য ও অসত্যের মিশ্রণ ঘটিয়ে ব্যাপক মাত্রায় প্রোপাগান্ডা করে। ইরানে সরকার পরিবর্তনের জন্য প্রতি বছর তারা বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ ব্যয় করে।পশ্চিমাদের জায়ান্ট সামাজিক মাধ্যম টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক ব্যাপক মাত্রায় তোলপাড় শুরু করে। মনে করে ইরানে সরকার পরিববর্তনের একটা মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেছে। দেখুন মাহসা আমিনি যেদিন মারা যায় ঠিক সেইদিনই ইরাকি তরুণী জয়নব এশাম খাজালি আমেরিকার সেনার গুলিতে মারা যায়। কিন্তু এই নিয়ে কোন মিডিয়া কভারেজ নাই!

তৃতীয় দিকটা হল ইরানে বিপ্লবের পর শাসনযন্ত্রে অংশ নিতে না পারা বিভিন্ন দল ও গ্রুপগুলি বিদ্রোহী হয়ে উঠে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হল এমকেও (MKO)। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় এই গ্রুপটি ইরাকের পক্ষ নিয়ে নিজ দেশ ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এরা সেই সময় আশ্রয় নিয়েছিল সাদ্দামের ইরাকে।এরা আল কায়েদা বা আইএস এর মত মানুষ হত্যা করে। সাদ্দামের পতনের পর ইরাক সরকার এদের বিতাড়িত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে আলবেনিয়া এদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখান থেকে এরা ইরানে নানা ধরণের নাশকতা ও হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল এদেরই সহযোগিতায় ইরানের বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে। ইরানে আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে পুলিশই বেশি। আমি বেশ কয়েকটা ভিডিও দেখেছি।

তাই ইরানে কিছু একটা হলেই এই ত্রয়ীর সমন্বয়ে ইরানের আন্দোলন স্বল্প সময়ে ইরানের ভিতর ও বাইরে ছড়িয়ে পড়ে এবং সহিংসরুপ ধারণ করে। আন্দোলন ইরানের ভিতরের চেয়ে বাইরে ব্যাপক মাত্রায় হয়। ঠিক এই কারণে দেখবেন ইরানে আন্দোলনের কয়েকদিন পরেই যখন ইরান সরকার সামাজিক সাইটগুলো ব্লক করে দেয় তখন আন্দোলনও ভ্যানিশ হয়ে যায়!

ইরানে এরকম আন্দোলন নতুন কিছু নয়। বর্তমান আন্দোলনের চেয়েও ব্যাপক মাত্রায় মাসের পর মাস ধরে চলেছিল ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের ভোট কারচুপির অভিযোগে। তখনও অনেকে মনে করেছিল ইরানে রেজিম চেঞ্জ আসন্ন। কিন্তু হয়নি। তেমনি ১৯৯৯ সাল এবং ২০১৭ সালেও আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের কিছুদিন পরেই ইরানের সরকার ব্যবস্থার সমর্থক গোষ্ঠীও রাস্তায় ব্যাপক শো ডাউন দেয়। নিশ্চিৎভাবেই বলছি সেই শো ডাউনে জনগণের উপস্থিতি বিক্ষোভ বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনের চেয়েও ব্যপক হয়। কিন্তু সেই শো ডাউনের নিউজ পশ্চিমা মিডিয়া প্রকাশ করে না। আজকেও দেখলাম ইরানের শহরে শহরে সরকার সমর্থক জনগণ রাস্তায় নেমে পড়েছে এবং তাদের সংখ্যা আন্দোলনকারীর সংখ্যার চেয়েও বেশি। তাই ইরানের সরকার এবারও আগের মত টিকে যাবে। তবে ইরানে যে আন্দোলন হল সেই আন্দোলনের ফলে সরকার যদি মোরালিটি পুলিশ তুলে দেয় তার সুফল শাসনযন্ত্র এবং জনগণ উভয়ই পাবে। ইরানের সরকারের এই দিকটা ভেবে দেখা উচিৎ।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×