পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর ২৪ ঘন্টায় একবার ঘুরছে। এই গতিও কম নয়, প্রতিঘন্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার অর্থাৎ সেকেন্ডে ৪৬৪ মিটার। কিন্তু জেট প্লেনের গতিও তার চেয়ে বেশি। একই সাথে পৃথিবীর কক্ষীয় বেগ ১ লক্ষ ৮ হাজার কিলো মিটার। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার। তারপরেও পৃথিবীর উপরে আমরা টিকে থাকি। আমাদেরও বেগ আছে। একেক প্রাণির একেক রকম-
শামুক: ৫ মিটার/ঘন্টা
কচ্ছপ: ৭০ মিটার/ঘন্টা
মাছ: ৪ কি.মি./ঘন্টা
পদযাত্রী: ৫ কি.মি./ঘন্টা
মাছি ১৮ কি.মি./ঘন্টা
খরগোশ: ৬৫ কি.মি./ঘন্টা
ঈগল: ৮৬ কি.মি./ঘন্টা
বাতাসে শব্দ: ১২০০ কি.মি/ঘন্টা
জেট প্লেন: ২৭০০০ কি.মি./ঘন্টা মানে ঘন্টা দেড়েকে পৃথিবী ঘুরে আসতে পারে। রকেটের বেগ ঘন্টায় ৪০০০০ কিলোমিটারের বেশি। মানে এক ঘন্টায় পৃথিবী ঘুরে আসতে পারে।
এতো গতির মধ্যে বাস করেও পৃথিবী থেকে আমরা কেন ছিটকে পড়ে যাই না? নিউটনের সামনে যখন একটি আপেল পড়ে তখন তার ভাবনা আসে আপেলটি কেন নিচে পড়লো? ফাকা স্থানতো চার দিকেই! তিনি মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করলেন। আমরা এটি গতিশীল ট্রেনের ভিতরে হাঁটাহাঁটি করতে পারি, রেললাইন কিছুটা মসৃণ বলে। ভাঙ্গাচুরা রাস্তায় বাসে বসে থাকাই মুশকিল হয়ে যায়। খুব মসৃণ সড়কে বাসেও হাঁটা যায়। শূন্যে বিমানও ধাক্কা খায় বাতাসে, মেঘের সাথে। অনেক সময় কেঁপে উঠে। সাধারণভাবে বিমানেও হাঁটা যায়। পৃথিবীটা চলছে যে মহাশূন্যের উপর দিয়ে সেখানে রয়েছে কেবলই শূন্যতা। কোন বাঁধা নেই। আমরা টেরও পাইনা, সেই গতির সাথে নিজেরাও ছুটে চলছি। শুধু দেখি চাঁদ, সূর্য, তারকারা আমাদের থেকে দূরে চলে যায়। বাস্তবিক আমরাই যাই, ওরাও যায়। কদিন ফাঁকা পেয়ে ঢাকা-মাওয়া সড়কে মটর সাইকেলে আসছি। মসৃণ ও ফাঁকা সড়ক পেয়ে চালকও চালায় ইচ্ছা মতো দ্রুত গতিতে। আমার চোখে থাকা হালকা চশমাটা উড়ে যাচ্ছে না, কাঁধের ব্যাগটাও লেপ্টে থাকে, মুখের মাস্কটাও নড়ে না, পকেটের টাকাও উড়ে যাচ্ছে না।
এটা হয় গতি জড়তার কারণে।জড়তা বলতে, কোন বস্তু যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা সেই অবস্থা যেমন গতি বা স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তা বোঝানো হয়ে থাকে। গতিশীল বস্তু গতিশীল থাকতে চায়। আমি যখন মটর সাইকেলে উঠে গতি জড়তা লাভ করেছি তখন ওভাবেই আমার শরীর চলতে থাকে। হঠাৎ বাঁধা পেলেই বিপত্তি ঘটে যায়। যেমন চলন্ত ট্রেনে ক্ষুদ্র পাথর নিক্ষেপ করে শিশুরা। আর তাতেই প্রতি বছর বহুলোক মারা যায়। ধরা যাক ১শ মাইল বেগে ট্রেন যাচ্ছে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে। কেউ পাথর নিক্ষেপ করলে পাথরের নিক্ষেপের গতির সাথে ট্রেনের গতি যোগ হয়ে আরো বেশি গতিতে আঘাত হাতে। ফলে মাথায় আঘাত লাগলে তাৎক্ষণিকভাবেই অনেকে মৃত্যুবরণ করে। একটি বাস হঠাৎ করে থেমে গেলে কি হয়? একটি স্থির গাছে ধাক্কা খেলে এতো মানুষ মারা যায় কেন? বাসের ভিতরে থাকা মানুষও চলন্ত বাসের সমান গতি লাভ করে। কঠিন ধাক্কা খেয়ে বাসতো থামলো কিন্তু প্রত্যেকের অর্জিত গতিতে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং ধাক্কা খায়। বাস হঠাৎ থেমে গেলে বাসের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর শরীরের নিচের অংশ স্থির হয় কিন্তু শরীরের ওপরের অংশ জড়তার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এজন্যই ভাল বাস বা বিমানে সিট বেল্ট বাঁধতে হয়। গতিশীল বাস থেকে নামতে গেলেও আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই। কিছুটা দৌড়ে তাল ঠিক রাখি। মেজিশিয়ানরাও এই সূত্র ব্যবহার করে ভেল্কি দেখাতে পারে।
নিউটনের গতির প্রথম সূত্র থেকে আমরা দেখতে পাই যে, প্রত্যেক বস্তুই যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকতে চায়, অর্থাৎ বস্তু স্থির থাকলে স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল থাকলে গতিশীল থাকতে চায়। বস্তুর এ স্থিতিশীল ও গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে বল প্রয়োগ করতে হবে। পদার্থের নিজস্ব অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তার কারণেই এসব ঘটছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৪২