শেষ পর্যন্ত ভাইরাসের হাতেই যদি মানব সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে তবে সেটা মানুষের জন্য অবমাননাকরই হবে। পারমানবিক অস্ত্রের চেয়েও মানুষের বড় শত্রু যে অতিক্ষুদ্র একটি অনুজীব হতে পারে তা পুঁজিবাদের চরম বিকাশ ও বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ ভাবতেও পারেনি। আজ বিশ্ব দুইভাগে বিভক্ত করোনাভাইরাস চীনের গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নাকি প্যাঙ্গোলিন নামে বনরুই জাতের এক প্রাণি থেকে বিবর্তিত হয়ে মানুষের দেহে এসেছে। অধিকাংশ নিরপেক্ষ মত বলছে- এটা প্রাকৃতিক ও বিবর্তিত। অর্থাৎ এটাই হয়তো শেষ নয়, ভাইরাস যদি আরো বিবর্তিত হয়ে, আরো শক্তিশালী হয়ে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায় তবে মানব সভ্যতাকেই হুমকীতে ফেলে দিতে পারবে।
এইডস, জন্ডিস, ডেঙ্গু, বসন্ত, জলাতঙ্ক, হাম, ডায়েরিয়া, সাধারণ ঠান্ডা লাগা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, আমাশয়, মাম্পস, পোলিও, সার্স, কয়েক রকম ক্যান্সারসহ বহু রোগের কারণ এই ভাইরাস। তাহলে ভাইরাস কি? অতি ক্ষুদ্র বলে একে বলে অনুজীব। আয়তন মাত্র গড় পড়তা ১০০ ন্যানোমিটার।ন্যানোমিটার হল এক মিটারের একশো কোটি ভাগের এক ভাগের সমান। মানে হল ১ কোটি ভাইরাস পাশাপাশি রাখলে হবে এক মিটার লম্বা। এই অতি ক্ষুদে অনুজীবটি কি উদ্ভিদ? না প্রাণি? না জড় পদার্থ?
ভাইরাস ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ বিষ। ভাইরাস এক রহস্যময় অস্তিত্ব যাতে জড় ও জীব উভয়েরই গুণ রয়েছে। এদের খালি চোখে দেখা যায় না, এমনকি সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রেও দেখা যায় না। তবে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্রে এদের দেখা যায়। এদের ‘পরজীবী’ বলাই ভালো, উদ্ভিদ বা প্রাণী কোনো শ্রেণিতেই এদের ফেলা যায় না। কি কি লক্ষণ থাকলে তাকে জীব বলা হবে আর কি কি লক্ষণ না থাকলে তাকে জড় বলা হবে না তা আমরা জানি। সে সব লক্ষণ মিলিয়ে একে কোথাও ফেলা কঠিন। একে বলা যায় এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা।আমরা জানি কোষে প্রোটোপ্লাজম থাকবেই। কিন্তু ভাইরাসের প্রোটোপ্লাজম নেই। তাহলে ভাইরাস কি জীব নয়? এ কারণে ভাইরাস কে জীবাণু না বলে 'বস্তু' বলা হয়। কিন্তু ভাইরাস যে বংশবৃদ্ধি করে! অবশ্য ভাইরাস কেবল অন্য উদ্ভিদ বা প্রাণিদেহে প্রবেশ করলেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। অসুস্থ দেহ থেকে সুস্থ দেহে ভাইরাসকে স্থানান্তরিত করা যায়। ভাইরাসের বৃদ্ধি হয়, ভাইরাস কোনো উত্তেজনায় সাড়া দেয়, সজীব কোষে এরা বংশবৃদ্ধি করে, এসব কারণে ভাইরাসকে আবার জীব বলে আখ্যা দিতে হয়। বলা যায় ভাইরাস জীব ও জড়ের মাঝামাঝি অবস্থা। নাকি ভাইরাসই সেই আদি অকোষী প্রাণি যার থেকে কোষের উৎপত্তি হয়েছে?
উদ্ভিদ ও প্রাণীর বহু রোগ সৃষ্টির কারণ হল ভাইরাস। এতো তুচ্ছ, ক্ষুদ্র ভাইরাসের শক্তি যে কতোটা তা দেখছি চিন থেকে উৎপত্তি করোনা ভাইরাসে। করোনা ভাইরাস যে রোগটি ঘটাচ্ছে, তার নাম কোভিড-১৯। এটা আসলে একধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু। সাধারণ ফ্লুর সঙ্গে এর অনেক মিল রয়েছে। একই রকম লক্ষণ। এটা সহজে একজনের থেকে আরেকজনের কাছে চলে যাচ্ছে। এটি পৃথিবীকে ভীষণ বেকায়দায় ফেলেছে। কোন ওষুধ আবিষ্কার হয়নি এখনো। যেহেতু ভাইরাসটি সহজে যাচ্ছে না তাই ওষুধ ঠিকই আবিষ্কার হয়ে যাবে। টিকাও আবিষ্কার হওয়ার পথে। যদি করোনাভাইরাস দুএক বছরের মধ্যে হারিয়েও যায় তবে ফিরতে পারে অন্য কোন শক্তিশালী ফ্লু রূপে। করোনা ভাইরাসে পৃথিবীর অগ্রগতি থমকে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে ছড়িয়েছে। আমেরিকা-অষ্ট্রেলিয়া-ইউরোপ কোন ধনী দেশকেই বাদ দেয়নি। সবাই তটস্থ এক তুচ্ছ, অতিক্ষুদ্র ভাইরাসে। ক্ষুদ্র বলেই কি অবহেলা করা যায়? ক্ষুদ্রর জন্যও সহজ হয়ে যায় বড়কে নাকাল করার। সেই গোলিয়াথ দৈত্যকে শিশু ডেভিড কর্তৃক পরাস্ত করার থিওরি- ওটা বড় বলেই আক্রমণ করা সহজ! ভাইরাস অতি ক্ষুদ্র বলেই তার সাথে লড়াই করা কঠিন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২০ সকাল ১০:২৯