somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)
নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার 'কলম'।

শ্রেষ্ঠত্বের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টির অন্তরায়

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৃষ্টির নেশা স্রষ্টাকে সৃষ্টির আনন্দে মাতায়।।সৃষ্টির আনন্দ থেকেই স্রষ্টা সৃষ্টি করে অনিন্দ্য সুন্দর যা কিছু। পৃথিবীতে সুন্দর যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, যে সুন্দর সৃষ্টির আলোয় ধরণী আলোকিত হয়েছে,সেই প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে ছিল স্রষ্টার আত্মতৃপ্তির প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা।

শিল্প, সংস্কৃতি, রাজনীতি, দর্শন, অর্থনীতি,বিজ্ঞান, সমাজ, রাষ্ট্র, সংগঠন সহ যা কিছু পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য উদ্ভব হয়েছে এর প্রতিটি উদ্ভাবনের পেছনেই ছিল কোন মহৎ আলোকোজ্জ্বল হৃদয়ের সৃষ্টির আনন্দে ভেসে বেড়ানোর তাড়া ।আত্ম তৃপ্তির তাড়া থেকে সৃষ্টি যেমন স্রষ্টাকে আনন্দে ভাসায়,সেই আনন্দের আকাঙ্ক্ষা থেকে যে সৃষ্টি, সেই সৃষ্টির আলোয় মানুষ প্রশান্তি লাভ করে।কারো সৃষ্টি যখন অন্যকে প্রশান্তি দেয়, মানুষ তখন সেই সৃষ্টির স্রষ্টাকে খুঁজে বের করে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেন।

একজন সমাজ সংস্কারক একটি স্থিতিশীল সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যক্তি জীবনের ভোগ বিলাসিতা ত্যাগ করে সুবিধাবাদী শ্রেণীর বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেন।এই কাজটি বাস্তবায়নের সংগ্রাম করতে গিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হন, তবুও তিনি পিছু পা হন না।আমাদের সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে মনে হয় এই কাজটি করতে গিয়ে তিনি কতইনা কষ্টে নিমজ্জিত আছেন।প্রকৃত পক্ষে তিনি এই কষ্টের পথ বেছেই নিয়েছেন আনন্দের আশায়।এই কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে যে দিন তার স্বপ্নের স্থিতিশীল ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সমাজ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হবে, সে দিনই তিনি আনন্দের সাগরে তরী ভাসিয়ে তার মানব জনমের সার্থকতার স্বাদ নেবেন।তার আনন্দের নেশায় যে সুন্দর সমাজ সৃষ্টি হবে, সেই সমাজের সুফলতার বাতাস ভোগ করবে ওই গোষ্ঠীর মানুষ যুগের পর যুগ।বিনিময়ে নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি লাভ করা সমাজের মানুষ তাদের মুক্তির বিনিময়ে ওই স্বপ্ন তাড়িত মহান মানুষকে দেবেন সমাজের শ্রেষ্ঠত্বের সম্মানের মর্যাদা।কারো লড়াইয়ের লক্ষ্য যদি হয় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা তাহলে তার ব্যক্তিগত প্রশান্তির কোন এক পর্যায়ে লড়াই থেমে যাবে।ফলে সামগ্রিক মানুষের কল্যাণকর কিছু সৃষ্টি হবেনা, আর জাতিও এমন মানুষের নাম এবং কর্ম মনে রাখে না।

মূলত সৃষ্টির আনন্দের মধ্যে লুকিয়ে থাকে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব।

মানুষ মূলত নিজেকে জোর খাটিয়ে কোন কিছু করাতে চায়না।যা কিছুর মধ্যে তৃপ্তি ও আনন্দ লুকিয়ে থাকে সে দিকেই মূলত ধাবিত হতে চায়।অনেক সময় পরিবেশ পরিস্থিতি সামাজিক নিয়ম কানুন তার ইচ্ছের প্রতিকুলে অবস্থান নিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।কিন্তু অদম্য মানুষেরা সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে তার মনের ভেতরে লালিত ইচ্ছেকে বাস্তবে রূপ দেয়।
ভোগবাদী মানুষ ভোগের মধ্যে সুখ খোঁজে, কারণ তার অন্তর দৃষ্টির সীমারেখা সুদূর প্রসারী নয়।পৃথিবীর বৃহত্তর ভোগবাদী মানুষের দৃষ্টিতে ত্যাগী মানুষের ত্যাগকে জীবনের অর্থহীনতা মনে হলেও, ত্যাগী মানুষ ভোগের চেয়ে ত্যাগের মধ্যেই জীবনে মাহাত্ম্য খুঁজে পায় তার অর্জিত জ্ঞান সাধনার মধ্য দিয়ে।নিজের মধ্যে জীবন ও জগতকে আবিষ্কার করা পথিক কবি রাস্তার ধারে বসে কবিতা লিখে জীবনের স্বাদ আবিষ্কার করতে পারলেও, জ্ঞানহীন ভোগবাদী দশ তোলা বাড়ী বানিয়েও ন্যূনতম ঘুমের প্রশান্তি আনতে অক্ষম হয় ।

একজন কবি যখন একটি কবিতা লিখেন,প্রথমত নিজের সৃষ্টির আনন্দের তাড়া থেকেই তিনি লিখেন এবং কবিই তার কবিতার সৌন্দর্যের আলোয় নিজেই প্রথমে স্নান করেন।এমন সৃষ্টির সৌন্দর্য ও আনন্দের ধারা যখন অন্যের হৃদয়কেও আন্দোলিত করে তখন কবির সৃষ্টি শুধু কবির সম্পদ না থেকে সমগ্র মানুষের সম্পদ হয়ে যায়।এক্ষেত্রে নজরুল রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে অনায়াসেই উল্লেখ করা যেতে পারে।যার মধ্যদিয়ে তারা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু কোন কবি যখন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অথবা অন্যকে খুশী করে কোন কিছু প্রাপ্তির জন্য ফরমায়েশি কবিতা লিখেন।তখন এমন কবিতার মধ্যে কবির আনন্দের সংস্পর্শ থাকেনা ফলে,কবিতা সৃষ্টি না হয়ে তৈরি হয় কবিতা নামক পণ্য।

শ্রেষ্ঠত্বের আকাঙ্ক্ষা মানুষকে সর্বদা অশান্তিতে নিপতিত করে, আর অশান্ত হৃদয় কখনো সুন্দর কিছু সৃষ্টি করতে পারেনা।পৃথিবীর যা কিছু অসুন্দর তা সুন্দর হৃদয়ের মানুষকে আকৃষ্ট করে না।

শিল্পকলার বহুবিধ মাধ্যম। প্রতিটি মাধ্যমেই মানুষ আকৃষ্ট হয় শিল্পের সৌন্দর্যের আলোয়।শিল্পের সাধনা সেই করে,যে অন্তরে সৌন্দর্য ধারণ ও লালন করেন।
একজন শিল্পী (সংগীত শিল্পী,নৃত্যশিল্পী, আবৃত্তিকার,আলোকচিত্র, নাট্যশিল্পী)যখন তার শিল্প মাধ্যমকে ভালোবেসে শিল্পের ভেতর দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করার পথ খোঁজেন তখনি শিল্পের সৌন্দর্য তার দেহ ও মনে প্রকাশ ঘটে।কিন্তু শিল্পকে মাধ্যম করে একজন শিল্পী যখন একটি মেটালিক ক্রেস্ট, কাগজের সার্টিফিকেট অর্জনের ভেতর দিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের নেশায় ধাবিত হয় তখন শিল্পের প্রকৃত সৌন্দর্য তার মধ্যে থেকে দূরে সরতে থাকে। যে সৃষ্টির মধ্যে আবেগ ও ভালোবাসার অনুপস্থিত থাকে সেই সৃষ্টির সৌন্দর্যের রঙ ফিকে হয়।

সুন্দর কিছু সৃষ্টি করতে হলে প্রাপ্তির আশা না করে শুধু সৃষ্টির নেশায় মগ্ন থাকাই শ্রেয়। মানুষের আকৃষ্ট করার মত বা কল্যাণকর কিছু যদি কর্মের মধ্যদিয়ে সৃষ্টি হয়েই যায় তাহলে শ্রেষ্ঠত্বই আপনা আপনি স্রষ্টার পিছে ধাবিত হবে।ধরা দেবে আজ অথবা হাজার বছর পরে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ লেখায় স্রষ্টা শব্দটি ব্যাকরণের বিশেষ্য পদের ব্রহ্ম, ঈশ্বর, আল্লাহ বা মহাদেব অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। এখানে বিশেষণ পদের নির্মাতা বা সৃজনকর্তা রূপে ব্যবহৃত হয়েছে।অর্থাৎ কোন কিছু যিনি সৃষ্টি করেন তিনিই ওই সৃষ্টির স্রষ্টা, নির্মাতা, উদ্ভাবক বা সৃষ্টিকর্তা। যেমন কোন গানের সুরকারকে বলা হয় সুরস্রষ্টা ......।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×