জুম্মার নামাজ শেষে মুসুল্লীগণ বের হয়ে যাচ্ছিলেন। মসজিদের প্রধান দরজার পাশেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে ছিলো। দেখে মনে হলো, মেয়েটির বয়স চোদ্দ-পনেরো বছর হবে। মেয়েটির চেহারায় অসুস্থতার ছাপ। একটু পরপর "আল্লাহ" , "আল্লাহ" বলে সুর করে কাঁদছে। তার হাতে একটি রিপোর্টের কাগজ। কাগজটিকে সে মেলে ধরে আছে। সেখানে বড় করে লেখা 'Hematology Report' ।
মেয়েটির পাশেই এক হুজুর দাঁড়িয়ে ছিলেন। মসজিদ থেকে যারাই বের হচ্ছিলেন তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, "এই মাইয়ার দুইডা কিডনি ড্যামেজ। অনেক ট্যাকা লাগবো ডালোসিস করতে। যে যা পারেন,সাহায্য করেন।" বহু লোকই দেখলাম সাহায্য করছে। দশ টাকার কমে কাওকে দিতে দেখলাম না।
যথারীতি আমাকেও একই কথা বললেন হুজুর। আমি একটু রিপোর্টটা দেখতে চাইলাম।হুজুর অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেয়েটার হাত থেকে রিপোর্টটি নিয়ে আমার হাতে দিলেন। দেখলাম, আসলেই কিডনি ড্যামেজড। কিন্তু ঝামেলা অন্য জায়গায়।
মেয়েটাকে প্রশ্ন করলাম কিছু।
নাম কী?
"নুপুর আক্তার।" ( রিপোর্টে লেখা Aklima khatun. )
বয়স কত?
"ষোলো বছর।" (রিপোর্টে লেখা Age-35 years.)
কিডনি গেছে কতদিন হইছে?
"ছয় মাস।" (রিপোর্টে উল্লেখিত তারিখ, 16-09-2016 .)
ডায়ালাইসিস কতবার করা লাগবো?
"একবার করলেই ঠিক অইবো বাই।"
কত টাকা লাগবে?
"দশ লাক লাগবো বাইইইইইই। ট্যাকার অবাবে চিকিৎসা করতে পারতাছিনা বাইইইইই।মইরা যাইতাছিইইই।" (ক্রন্দন শুরু)।
"চাইর বছরে তো মরলা না।"
এবার অবাক হয় মেয়েটি। কান্না থামিয়ে বলে , "ছয় মাস দইরা নষ্ট কিডনি। চাইর বছর কন ক্যা?"
"রিপোর্টের তারিখ অনুযায়ী তো চাইর বছরই অয়। ২০১৬ সালে তোমার কিডনি গেছে।তোমার বয়স তহন আছিলো ৩৫।এহন অইছে ৩৯। বয়স কমাইলা কোন জাদুতে?" আমি বললাম।
"রিপোর্টে ইট্টু-আট্টু ভুল হইতেই পারে।" এবার এগিয়ে এলেন হুজুর সাহেব। বললাম," ইট্টু কই? সবই তো ভুল।"
এবার হুজুর সাহেব আস্তে করে বললেন, "বাজান গীবত করতে নাই। অন্যের দোষ প্রকাশ করতে নাই। আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন "তোমরা অন্যের দোষ গোপন করো।"
"আল্লাহ পাক এই কথা কুরআনের কোন সূরায় বলেছেন?" হুজুরকে প্রশ্ন করলাম।
জবাব এলো, "আল্লাহ পাকের কথায় সন্দেহ কইরো না। কাফের হইয়া যাইবা বাজান।"
মুসলমানের দেশে কাফেরের খাতায় নাম লেখানোর কোনো ইচ্ছা ছিলো না। তাই চার বছর ধরে নষ্ট কিডনি বয়ে চলা মেয়েটির দোষ গোপন করে বাড়ি ফিরে এলাম।