সারদিন টা যেন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলাম একটু ও পড়াশুনার কথা না ভেবে , ঘুম থেকে যখন উঠি তখন ৫ টা বাজে , এখনো দিনের আলো মন্দিরের প্রদীপের মতো টিপটিপ করে আলো দিচ্ছে । সারাদিন ঘুমিয়ে শরীর টা কেমন যেন ম্যাচ ম্যাচ করছে , কোনো কিছু না ভেবেই চোখে মুখে জল দিয়ে ফটাফট প্যান্ট জামা পড়ে নিলাম , এখুনি এক কাপ গরম চা খুবই দরকার ,না হলে যেন ব্যাপার টা ঠিক জমছে না ।
স্যামবাঠির মোড়ে মাসির চায়ের দোকান ,সেকানেই রোজ সন্ধ্যা হলেই চায়ের আড্ডা বসে , মাঝে মাঝে পরিচিত বন্ধুরাও ওখানে চা খেতে আসে ।
রাস্তায় বেড়িয়েই যেটা প্রথমেই উপলব্ধি করলাম একদল মানুষ প্রচন্ড জোরে ডিজে বাঁজিয়ে এদিকেই আসছে , বুঝলুম মায়ের বিসর্জনের জন্য এতো আয়োজন । কিছুটা সামনে যেতেই ব্যাপার টা পুরোটাই পরিস্কার হয়ে গেলো ।
সবার সামনে কিছু তরুণী উন্মাদের মতো নাচছে , সেটা কে নাচ বলা যাই কিনা আমি ঠিক জানি না ,তবে অনেক গুলো দেহ ভঙ্গিমা মিশে যেমন নাচ হয় ঠিক তেমন ভাবেই । দেখে তো মনে হলো কেউ নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই, পাশেই একদল ছোকরা মানে বকাটে ছেলে মনে হলো দেখে বার বার নাচতে নাচতে মেয়েগুলোর দিকে আসার চেষ্টা করছে কিন্তু তাদের মাঝে কিছু দাদা কাকুরা আবার ঠেলে দিতছে , বুঝলাম এই দাদা কাকুরা মেয়ে গুলোকে এদের থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করছে ।
তারপর একটা গাড়িতে মা দুর্গা আর তার সাথে আসা বাকিরা তার পরেই বিশাল মানুষের ভিড় , প্রথমে মেয়ে কাকিমা ,মানে মেয়েদের দল , তাদের পরেই এক উন্মাদ ছেলেদের আর কাকুদের দল । মাঝে অবশ্য একটা বাঁশ দিয়ে দুটো ভাগে ভাগ করে রেখেছে ,যাতে ছেলে কাকুরা মেয়েদের এদিকে না আসতে পারে ।
গানের এতো তেজ যে কানে হাত দিতে বাদ্ধ্য হলাম ,,,মুন্নি বদনাম হুই ও ডার্লিং তেরে লিয়ে ,আমি কলকাতার রসগোল্লা,,আঁখ মারে ,, লে সেলফি লে , বাপরে বাপরে বাপ । কি কলিযুগ এলো রে ।
না কোথাও আছে শ্রদ্ধা না ভক্তি , না ডাকের আওয়াজ শুধু আছে কান ফাটা এইসব গানের আওয়াজ সাথে মেয়ে ছেলেদের উন্মাদ নাচ ।
দেখে মনে হলো এ যেন এক রঙ্গলীলা মা দুর্গা তো শুধু মাত্র দেখানোর জন্য । এই সব দেখতে দেখতে গরম চায়ের কাপে এক চুমুক দিলাম । আহ ! এই অশান্তির মাঝেও যেন একটু শান্তি পেলাম ,কিন্তু ততক্ষণে মনের মর্ধ্যে একটা ভয় বাসা বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে , এইসব দেখে মন আঁতকে উটেছে সব কিছু হারানোর ভয়ে , সব কিছুর ধ্বংসের ভয়ে ।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে যেটুকু বুঝলাম যে , এইভাবে চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই হিন্দু ধর্মের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না । হিন্দু ধর্ম আর ধর্ম থাকবে না , হিন্দু ধর্ম পরিনত হবে এক তামাশা এক উল্লাস এক জঘন্য রঙ্গলিলায় । হঠাৎ করেই মায়ের দিকে চোখ গেলো - মা যেনো আজ অসহায় এদের সামনে , লজ্জায় ঘৃণায় নিজের মুখটাকে হতাশায় ডুবিয়ে রেখেছে । আমার ঘোর কাটলো ওদের প্রচন্ড চিত্কারে ,,
"আসছে বছর আবার হবে ""আসছে বছর আবার হবে"
হ্যাঁ,আসছে বছর আবার হবে
মদ খেয়ে গাঁজা খেয়ে
মা দুর্গার সামনে উন্মাদ নাচ হবে ।
ঘরের মেয়ে লক্ষী সেতো
কুরুচি গানের তালে তাকে নাচতে হবে ।
আসছে বছর আবার হবে
বয়স্ক কাকিমা বৌদিদের
কোমরের দৌলায় রঙ্গলীলা হবে ।
হ্যাঁ,আসছে বছর আবার হবে
মাগো, তোমার প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি বিসর্জন দিয়ে
তোমাকে আবার অপমান করা হবে ।
জামা খুলে মত্ত পাগল
পা যে তার ঠিক চলে না ,
সে যদি হয় ঘন্টা খানেক ভক্ত তোমার
মাগো তুমি কি খুশি হবে না ?
আসছে বছর আবার হবে
মদ খেয়ে গাঁজা খেয়ে
মা দুর্গা তোমার সামনে উন্মাদ নাচ হবে !
আমার কাছে মা মানে
পরম ভক্তি শ্রদ্ধাময়,
তারই সামনে কি করে আমি
অরুচিপুর্ন্য গান চালায় ?
আমার কাছে বিসর্জন মানে
শঙ্খ বাজবে ঢাক বাজবে
ঘন্টা বাজবে তারই উপসনায় ।
আসছে বছর আবার হবে
মদ খেয়ে গাঁজা খেয়ে
মাগো তোমার সামনে উন্মাদ নাচ হবে ,
এদের কথা শুননা মাগো
এরা লালসায় লিপ্ত হবে
আর অজুহাতে শুধু তোমায় নেবে ।
মুখে জয় মা দুর্গা ধ্বনি দিয়ে
পাশে থাকা লক্ষীর দিকে নজর দেবে
আর শুধু অজুহাতে তোমায় নেবে ।
মাগো ছলছলনা কলকলোনা
ভালোবেসে তুমি আর এসো না
এমন অপমানের সময়তরে
আমি যে তোমায় পিষতে দেবো না ।
আসছে বছর আর এসো না !
আসছে বছর আর এসো না ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৫৭