somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর বাকী আছে যে কটা দিন

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নির্দয় ঝড়ের আঘাতে কেমন যেন নিস্তেজ চারিপাশ, এইতো আজই খবরের কাগজে পড়লাম ,সন্দেশখালী ,দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ২৪ পরগণা ,বকখালি , সুন্দরবন বুলবুলির আঘাতে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে মাটিতে নির্মম ভাবে ,এ চারিপাশে এখন শুধুই হাহাকার। আমাদের এদিকেই তো গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই , তাই দোতলার পশ্চিমের বারান্দায় আরামকেদারায় নিজের জীর্ণ শরীরটি হালকা করে হেলিয়ে দিলাম .....
সন্ধ্যা হয়েছে ...
ঐদিকের এক মসজিদ থেকে সবে শুরু হলো সন্ধ্যার আজান ....
আল্লাহ আকবার.......আল্লাহ আকবার .......
রাঙানো লাল সূর্য অস্ত গিয়েছে বেশ কিছু সময় হলো, হালকা অন্ধকার ধীরে ধীরে নিজেদের আড্ডা জমাতে শুরু করে দিয়েছে আমার চারিপাশে । এই একটু আগেই সব পাখি গুলো এই পথ দিয়েই উড়ে গেলো , সম্ভাবত তারা ফিরেছে তাদের বাসায় ।
তাদের উপর খুব অভিমান হলো ......তারা কোনো কথা শোনেনি আমার ।
চিৎকার করে কতবার জিজ্ঞাসা করলাম ...তারা কোথায় থাকে ?
তারা কেন বাসা বানায়নি আমার জানালার পাশে বেড়ে উঠা আম গাছটিতে ?
আজ কিছুই ভালো লাগছে না আমার, সেই বিকাল থেকেই মনটাতে কেমন যেন ভাটা পড়ে আছে । ভাবতে ভাবতে যেন এক মৃদ কষ্টের চাদর আমার মনকে জড়িয়ে আটকে ধরে আছে সেই পরন্ত বিকাল থেকে ।
-খোকা !
কোথায় রে তুই ?(মায়ের ডাক কানে এলো )
- এইতো মা , আমি এখানে !
-এই অন্ধকারে বসে একা একা কি করছিস আমার পাগল ।
চল.. তোর বাবা তোকে ডাকছে নিচে, সবাই একসাথে গরম গরম চা খাবো।
-আমার চারিপাশে ঠান্ডা বাতাস বয়ছে, এই ঝড়ের জন্য বেশ ঠান্ডা পড়েছে আমাদের গ্রামে এ দুদিন । গরম চায়ের কথা শুনে ক্ষনিকের জন্য যেন মনটা আনন্দে ভরে গেলো , কিন্তু এই অন্ধকার এই একলা চেয়ার এই একাকিত্ব ছেড়ে কিছুতেই উঠে যেতে ইচ্ছা করছে না একদম আমার ।
আদুরে কন্ঠে মা কে বললাম ..
এই সুখ
এই অন্ধকার ছেড়ে এখন একদম যেতে ইচ্ছা করছে না আমার। তুমি যাও না আমার জন্য বড় কাপে এক কাপ গরম চা নিয়ে আসো ।
-ওহ ! এই ব্যাপার ঠিক আছে বস , আমি নিয়ে আসছি।( বলে মা চা আনতে নিচে চলে গেল )
-আর হ্যাঁ বাবার চাদর টাও নিয়ে এসো কিন্তু !( চিৎকার করে বললাম মা কে , কোনো উত্তর দিলো না তো ? শুনতে পায়নি হইতো ,অজান্তেই গুনগুন করে উঠলো আমার মন )
""ওগো প্রিয়
ওগো প্রিয়তমা .....
ভালোবাসীয় মোরে ... আছে যে কটাদিন আর !
মোরে বাসিয়...ভালোবাসিযো যতনে যতনে..."'

গুনগুন করতে করতে মা চলে এলো ...বড় কাপের এক কাপ চা দিয়ে গেলো , সাথে বাবার চাদর এবং একখানি জ্বলন্ত প্রদীপ !
এই চাদর খানি আমার বাবার বাবা মানে আমার দাদু মরার আগে আমার বাবাকে দিয়ে গিয়েছিল, এই চাদরের সাথে উনাদের অনেক কষ্ট অনেক সুখের স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তাই বাবার কাছে এই চাদরটি আমি চেয়ে নিয়েছি , আমার হাতে আর যে কটা দিন আছে সে কটা দিন আমিও এই চাদরটির উপর আমার ছাপ রেখে যেতে চাই । বেশ কয়েক জায়গায় সেলাই পড়েছে দেখলাম কিন্তু হাতে নিতেই শরীরের ভিতর এক অচেনা স্রোত বয়ে গেল , সে যে কি তৃপ্তি বলে বোঝাতে পারবো না , মনে হলো যেন একফালি সুখ জড়িয়েছে আমার সারা দেহ কে !
এই অধমের ঘরে কিছুটা হলেও আলোকিত করেছে ক্ষনিকের জন্য এ জ্বলন্ত প্রদীপ ,চাদরটি গায়ে জড়িয়ে গরম চায়ে চুমুক দিলাম .....
(আবার গুনগুনিয়ে উঠলো আমার মন )
হে স্মৃতিময় পরমপিতা...
যতনে গড়িয় মোর ঘরখানা
তোমার পাশেই কবর হবে মোর
তুমি আমাকে নিয়ে একটুও ভেবোনা!
যত গড়িয়াছি মায়া এ ত্রিভুবনে
সবই রাখিয়া পাড়ি দেবো অচেনা গগনে !
হে প্রভু ...
যেটুকু জ্ঞান দিয়েছো মোর মাঝে
সেটুকু দিয়েই জ্বেলেছি প্রদীপ
ঘুচিয়ে ছিলাম অন্ধকার !

না চাহিলেও যেতে হয়
অশ্রুজলে যেতে হয় ...
কেন কাঁদিতেছো তুমি কেন কাঁদিতেছো ..
না চাহিলেও যে হাত ছাড়িতে হবে !
....................... এ জীর্ণ শরীর যেন আর পেরে উঠছে না ইচ্ছার সাথে, তাই নিজের পুরো শরীর হেলিয়ে দিলাম আরামকেদারায় । তখনও মিটমিট করে জ্বলছে প্রদীপখানা
ঠিক যেন আমার মতো !
সময় নেই.. ওর আলো নিভবে এখুনি ।
আবার ফিরে এসে জমিয়ে বসবে
না দেখা না চাওয়া অন্ধকার গুলো
না চাওয়া না দেখা অন্ধকার গুলো.... ! আহ্হ্হঃ ....( দীর্ঘ এক প্রশ্বাস )
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×