somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

পবিত্র মাহে রমজান: ফজিলত ও আমল পর্ব-০১

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আলহামদুলিল্লাহিল আকরামিল্লাজি খালাক্কাল ইনছানা ওয়া কাররামাহু ওয়া আল্লামাহু মিনাল বাইয়ানি মা- লাম ইয়া'লাম। ফাসুবহানাহু লা ইউহছা ইমতিনানুহূ বিল্লিছানি ওয়ালা- বিল ক্কলাম। নাশহাদু আল্লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা- শারিকা লাহু অনাশহাদু আন্না সাইয়্যিদানা ওয়া হাবিবানা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহু। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত আমাদের প্রতি- পবিত্র রমজান মাসের নিকটে এসে পৌঁছেছি আমরা। এ মাস আল্লাহ তা‘আলার এক বিশেষ নিয়ামাত। এটি সাওয়াব অর্জন করার মাস। সাওয়াবের মওসুম। এ মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন। রহমাত, বরকত ও নাজাতের বারতা নিয়ে আসে রমজান মাস। আল কুরআনে এসেছে:

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না, যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ -সূরা আল বাকারাহ : ১৮৫

রমজানুল মুবারকের ফযিলাত:

রমজানুল মুবারকের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘রমজান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহা কল্যাণ হতে)।’ -সুনান আত-তিরমিযি:৬৮৩

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آخِرَ يَوْمٍ مِنْ شَعْبَانَ فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ «قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ فَرَضَ اللَّهُ صِيَامَهُ وَجَعَلَ قِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا , فَمَنْ تَطَوَّعَ فِيهِ بِخِصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ , وَمَنْ أَدَّى فِيهِ فَرِيضَةً كَانَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً , وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ , وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ الخ

'হযরত সালমান ফারসি রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবানের শেষ দিন আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের উপরে ছায়া বিস্তার করছে একটি মহান, বরকতময় মাস। যাতে রয়েছে এমন একটি রাত- যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআ'লা এর দিনের বেলায় রোযা ফরজ করেছেন আর রাতে কিয়ামকে করেছেন নফল। সুতরাং, এ মাসে যে ব্যক্তি কোন নফল আদায় করবে সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তুরটি ফরজ আদায় করল। এ মাস হল ছবরের মাস। আর ছবরের পুুরস্কার হল জান্নাত।' -মুসনাদুল হারেস, হাদীস নং-৩২১, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৩৩৬, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৮৮৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৭১৪, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-১৯৬৫

এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নৈকট্য অর্জনের পথে ধাবিত হতে পারি, জান্নাতপ্রাপ্তির আশা আর জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রত্যাশা পোষন করতে পারি। রমজান মাসের বিশেষ বিশেষ আমল সম্পর্কে অত্র নিবন্ধে সামান্য আলোকপাতের চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ। তবে সকল প্রকারের নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু বিষয়ের প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয়:

প্রথমত: ইখলাস তথা একনিষ্ঠতাঃ

প্রতিটি আমল একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে করা। সুতরাং, কোনো আমল করার পেছনে উদ্দেশ্য যদি থাকে টাকা উপার্জন কিংবা নেতৃত্ব অর্জন অথবা সুনাম সুখ্যাতি অর্জন; সে আমল হয়ে যাবে ইখলাসশুন্য। এমনসব ইবাদাত বা নেক আমলের দ্বারা আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না, প্রকারান্তরে তা পরিনত হতে পারে শিরকের মত গোনাহে। যেমন মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এসেছে:

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ

'আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে।' -সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫

দ্বিতীয়ত: সুন্নতের অনুসরণঃ

প্রতিটি ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ অনুকরণকে আবশ্যক করে নেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে আমাদের নিকট পৌঁছেছে, হাদিসে উল্লেখিত সেই আমলগুলো পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো হ্রাস বৃদ্ধির এখতিয়ার নেই। মনে রাখতে হবে, ইবাদাত তো কেবলমাত্র তা-ই, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আমলগুলো যেভাবে নিজে করেছেন, তাঁর সঙ্গী সাথী ন্যায়পরায়ন, সত্যের মাপকাঠি আসহাবগন করেছেন ঠিক সেভাবেই অামাদেরও করতে হবে। এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েই কুরআনে হাকিমে ইরশাদ হয়েছে:

مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا

‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ -সূরা হাশর: ৭

কোনো বাড়তি বিষয় ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না। সে কারণেই রাসূলে আরাবি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’। -সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো:

পবিত্র রমজান মাস বিশেষ মাস। ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মাস। মুমিনের সাওয়াবের পুজি অর্জনের মাস। ইবাদতের বসন্ত বলা হয়েছে এই মাসকে। এ মাসের উল্লেখযোগ্য আমল হচ্ছে-

এক. রোজা বা সিয়াম পালন করা:

রোজা বা সিয়াম ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম। আর রমজান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমজান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন:

فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

'সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।' -সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫

সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার জন্য রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ -সহীহ বুখারী : ২০১৪

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ‘যে কেউ আল্লাহ তাআ'লার রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহ তাআ'লাকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাআ'লা তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তী স্থানে রাখবেন’। -সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭

দুই. সময়মত নামাজ আদায় করা:

পবিত্র রমজান মাস নেক আমলের ট্রেইনিং এর মাস। এ মাসে সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময়মত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করার প্রতি মনযোগী হতে হবে। এমনটা যেন না হয় যে, আমার কাজ শেষ করে তবেই আমি নামাজ আদায় করে নেব। বরং, সময়মত নামাজ আদায় করে তবেই আমি আমার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবো। হাদিসে নামাজকে জান্নাতের চাবি বলা হয়েছে। আর নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়ার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে:

إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا

‘নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ -সূরা নিসা : ১০৩

হাদিস শরিফেও এ বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময়মত নামায আদায় করা।' -সহীহ মুসলিম : ২৬৩

তিন. সহীহভাবে কুরআন শেখা:

মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল হয়েছে পবিত্র রমজান মাসে। তাই এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা। তিলাওয়াতে অক্ষম ব্যক্তিবর্গের জন্য সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে- সহিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত শিখে নেয়া। আর আমাদের জন্য কুরআন শিক্ষা করাকে ফরয করা হয়েছে। যেমন, কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে:

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ

‘পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ -সূরা আলাক : ১

হাদিস শরিফে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন: ‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর।’ -মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০

চার. অপরকে কুরআন তিলাওয়াত শেখানো:

রমজান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর জন্যও উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি তিনিই, যিনি নিজে কুরআন শিক্ষা করেন এবং অপরকে শিক্ষা দেন।’ -সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭

‘যিনি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবেন, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব তিনি পাবেন।’ -সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭

পাঁচ. রাত্রির শেষ প্রহরে সাহরী খাওয়া:

সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা, সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন।’ -মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ

ছয়. সালাতুত তারাবীহতে অংশগ্রহন করা:

রমজানের প্রতি রাতে সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম একটি আমল। তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ -সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯

তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে সময় নিয়ে আদায় করতে হবে। তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে: ‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে।’ -সুনান আবূ দাউদ : ১৩৭৭, সহীহ

ইদানিং তারাবীহ নামাজের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে আমাদের সমাজে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক সাধারন মুসল্লিদের ভেতরে মতপার্থক্য ও বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। যদিও বিগত প্রায় দেড় হাজার বছর যাবত পবিত্র মক্কাতুল মুকাররমাহতে অবস্থিত বাইতুল্লাহ শরিফে এবং মদিনাতুল মুনাওওয়ারাহতে অবস্থিত মাসজিদে নববীতে জামাআতের সাথে ২০ রাকাআত তারাবীহর নামাজই চলে আসছে। তথাপি কিছু লোক আট রাকাআত তারাবীহ নামাজের পক্ষে বিভিন্ন অসাড় দলিলপত্র তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়ে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের মধ্যে দলাদলি ও হানাহানি সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বস্তুতঃ তাদের এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য যে অসৎ তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়ে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রচার-প্রচারণা, প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে চলে আসা সাহাবায়ে কেরামের স্বতঃসিদ্ধ আমলকে অস্বীকার করে বিভেদ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াসের অব্যাহত অভিলাষ দর্শনে ধারণা করা খুবই সহজ যে, তারা মূলতঃ তাহাজ্জুদের হাদিসকে তারাবীহর হাদিস বলে চালিয়ে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত। মানুষকে আমলশুন্য করার অসৎ মাকসাদ তাদের মনেপ্রাণে। তাদের উদ্দেশ্য যে অসৎ তার বহু প্রমান লক্ষনীয় হয়ে উঠেছে ইতোমধ্যেই। তাদের উদ্দেশ্য যে অসৎ তার অন্যতম একটি প্রমান, অসংখ্য সাহাবিদের সম্মিলিত আমলকে তারা আদৌ গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনই মনে করেন না। কারণ, সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমগণ জামাআতের সাথে বিশ রাকাআত তারাবীহ নামাজ আদায় করেছেন। এই যুগে এসে এরা কারা, যারা সাহাবিদের চেয়েও বেশি সহিহ হাদিস জানার দাবিদার সেজে সমাজে ফিতনা ফাসাদ ছড়িয়ে যাচ্ছেন?

রমজানের পবিত্র রাতগুলোতে মুসল্লিগণ মসজিদে কিছুটা বেশি সময় অবস্থান করে আল্লাহ তাআ'লার রহমত, বরকত এবং মাগফিরাত কামনা করুন- এটা চাওয়ার পরিবর্তে তারা হয়তো প্রত্যাশা করেন, মসজিদ থেকে মুসল্লিগণ যাতে অতি দ্রুততার সাথে অল্প সময়ের মধ্যেই বেরিয়ে যান; বস্তুতঃ তাদের এহেন চেষ্টা প্রচেষ্টার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তাদের উদ্দেশ্য সহিহ হাদিসের প্রচার কিংবা তার উপরে আমল নয়, বরং মুমিন মুসলমান মুত্তাকি মুসল্লিদেরকে আল্লাহ তাআ'লার রহমতের ছায়া থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া।

তারাবীহ নামাজের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে দলিলসহ বিস্তারিত জানতে আমার এই পোস্ট থেকে ঘুরে আসার আমন্ত্রণ থাকলো:

তারাবীহ নামায বিশ রাকাতঃ একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা

পবিত্র রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ে পুরনো গুরুত্বপূর্ণ এই পোস্টটিও দেখা যেতে পারে -

মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

ইনশাআল্লাহ চলবে-
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×