somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

খতমে শেফা, খতমে জালালি, খতমে ইউনুস, খতমে খাজেগান ইত্যাদি খতম পাঠের বিধান নিয়ে কিছু কথা

২০ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

খতমে শেফা, খতমে জালালি, খতমে ইউনুস, খতমে খাজেগান ইত্যাদি খতম পাঠের বিধান নিয়ে কিছু কথা

উপরোক্ত খতমের দোয়াসমুহ কি ইসলামী শরিয়থ সমর্থিত? এসব খতম এবং এতে পঠিত দুআগুলো বিপদাপদে পাঠ করা যাবে কি না, এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত। মূলতঃ এ বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষনে আলেম সমাজের দুই ধরণের অভিমত পরিলক্ষিত হয়। পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করছি ইনশাআল্লাহ-

এক. এতদঞ্চলের অর্থাৎ, বাংলাদেশসহ আমাদের সাব কন্টিনেন্টেলের অধিকাংশ আলেম উলামাগণ পূর্ববর্তী আলেম, মনীষী এবং বুযুর্গানে দ্বীন ও আউলিয়ায়ে কেরামের অভিজ্ঞতার আলোকে এসব খতম পাঠকে বৈধ মনে করেন।

তাদের বক্তব্য হলো- অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত যে, কোন পার্থিব উদ্দেশ্যে কালেমায়ে তাইয়্যেবা অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এক লক্ষ বার বা একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করলে সে উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে থাকে। এটাকে খতমে জালালী বা লাখ কালেমা পাঠ বলা হয়। একে খতমে শেফা বা খতমে তাহলীলও বলা হয়।

এটা যেহেতু কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয় নয় তাই এটাকে সুন্নাত মনে করা যাবে না। সুন্নাত মনে করে পড়লে বিদআত হবে। খতমে ইউনুস ও খতমে খাজেগান সম্পর্কেও একই কথা। বুযুর্গানে দ্বীন ও উলামায়ে কেরামের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে সোয়া লক্ষ বার দুআয়ে ইউনুস পাঠ করে দুআ করা হলে এই ওসীলায় আল্লাহ তাআলা রোগ-ব্যাধি ও বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করেন। তবে বিশেষভাবে জানার বিষয় হচ্ছে, এ পদ্ধতিকে কোন সুন্নাত তরীকা মনে করা যাবে না।

অনুরূপভাবে বুযুর্গানে দ্বীন যে খতম পড়ে দোয়া করতেন সে খতমকে খতমে খাযেগান বলে। 'খাযেগান' শব্দের অর্থ হলো হলো সাহেবগণ। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মনীষী ও বুযুর্গাণে দ্বীন। সুন্নাত মনে না করে খতমে খাযেগানের আমলও করার অবকাশ রয়েছে। এটি বিদআতের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হয় না। বিদআত হবার জন্য সেটিকে ধর্মীয় কাজ মনে করা, সওয়াবের কাজ মনে করতে হয়। আর উপরোক্ত কাজগুলো সওয়াবের কাজ হিসেবে নয় বরং প্রতিষেধক হিসেবে আমল করা হয়। যেমন ডাক্তার রোগের চিকিৎসা স্বরূপ পথ্য প্রদান করে থাকেন। সেই উসিলায় আল্লাহ তাআলা রোগমুক্ত করে থাকেন মর্মে ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত। তাই এসব ব্যবহার করা হয় প্রতিষেধক হিসেবে। সওয়াবপ্রাপ্তির আশায় এসব খতমের আমল কেউ করেন- বিষয়টি এমন নয়।

তেমনি উপরোক্ত কাজগুলো দ্বারা কতিপয় কাঙ্খিত বস্তু অর্জিত হয় মর্মে বুযুর্গানে দ্বীনের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত। তাই কার্যসিদ্ধির আশায় উক্ত আমলগুলো করা হয়ে থাকে। সওয়াবের জন্য নয়। তাই এসব আমল রোগমুক্তিসহ অন্যান্য জায়েজ উদ্দেশ্যে করার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই।

দুই. পক্ষান্তরে আরবপন্থী, নিজেদেরকে নব্য সংস্কারবাদী বলে পরিচয় দেয়া অন্য একটি দল যাদেরকে ইতোপূর্বে আমাদের এতদঞ্চলে তেমন দেখা না গেলেও ইদানিংকালে তাদের পদচারণা লক্ষ্য করা যায়, তারা মনে করে থাকেন, এ সকল খতম ভিত্তিহীন এবং নিছক বিদআতমূলক কাজ। তাদের দাবি, আমাদের দেশসহ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাক্স্তিান, ভারত, মিশর, তুরস্ক, লিবিয়া এবং ইরাকসহ অনেক দেশের মুসলিমগণ এসব খতম যেভাবে পাঠ করে থাকেন, হুবহু এইভাবে খতম পাঠের কোনো পদ্ধতি কুরআন হাদিসে যেহেতু বর্ণিত নেই, তাই এগুলো বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। তারা বলেন, 'রাসূল ﷺ তাঁর জীবনে কখনো সাহাবীদেরকে এরূপ খতম নামের কোনো কথা বলেননি বা শিক্ষা দেননি।'

অবশ্য 'ঠগ বাছতে গা উজার' কিংবা 'লোম বাছতে কম্বলের অস্তিত্ব বিনাশ' এর মত অবস্থা যে হয় না তা নয়। ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনায় চলতে সতর্কতার প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু তারও মাত্রা এবং পরিমিতিবোধ থাকা চাই। মধ্যপন্থা বলে একটা কথা আছে। দ্বীন এবং দুনিয়ার সকল বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে চলাকেই আমার কাছে শ্রেয় মনে হয়। না অতি কঠোর-কট্টর, না একেবারে ঢিলেঢালা- লাগামহীন স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া। এ দু'য়ের মাঝামাঝি থাকা উত্তম। দুঃখজনকভাবে বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে গিয়ে অতি সতর্কতা অবলম্বন করার ফলে আমরা অনেককে বিভিন্ন সুসাব্যস্ত সুন্নাত আমল নিয়ে অর্থহীন মতভিন্নতায় লিপ্ত হতে দেখি এবং এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুন্নত, নফল অনেক আমলকে বিদআতের অপবাদ দিয়ে সেগুলো এড়িয়ে চলতে দেখি। সত্যি কথা বলতে, বিদআত বিদআত বলে যারা সুসাব্যস্ত সুন্নাত এবং নফল অনেক আমলকে বিতর্কিত করার প্রয়াসে লিপ্ত, দুঃখজনকভাবে তাদের অনেকের কাছে বিদআতের সঠিক সংজ্ঞাটা পর্যন্তু স্পষ্ট নয়।

মাযহাব তাকলীদ নিয়েও একই কথা। এই অতি উৎসাহী শ্রেণিটি এই বিষয়টিতেও বেশ সরব। তারা মাযহাব অনুসরণ করাকে শিরক বিদআত বলে থাকেন, অথচ, প্রকৃত কথা হলো, তারা নিজেরাও প্রত্যেকেই কোনো না কোনো পূর্ববর্তী মনীষীকে ফলো করেন। চারম ইমামের কোনো একজনকে অনুসরণ করাকে যদি তারা বিদআত বলেন, তাহলে তারা যে ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানি, ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে অনুসরণ করেন, সেক্ষেত্রে বিদআত, শিরক ইত্যাদি হয় না? না কি বিদআত, শিরক এসব বিষয়ের প্রয়োগ তাদের বেলায় নয়, শুধু চার ইমামের অনুসরণকারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? সকল কিছুকে পাইকারিভাবে বিদআত বলার ধৃষ্টতা তাদের পরিহার করে দ্বীনের ভেতরে ফিতনা উস্কে দেয়ার অপরিনামদর্শী কাজ হতে বিরত হওয়া উচিত।

সর্বোপরি আপনার জন্য পরামর্শ হলো, এগুলো যেহেতু নফল আমল, সে কারণে সুন্নাত না ভেবে ইচ্ছে করলে আমল করতে পারেন, অথবা না-ও করতে পারেন। সমাজে বিতর্ক সৃষ্টির অনেক উপাদান রয়েছে। বিতর্ক উস্কে দেয়ার মত লোকও অনেক। বিতর্ক পরিহার করে চলাই আমাদের কাজ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের সহিহ পথে আমল করার তাওফিক দান করুন।

ব্লগার সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ ইসলামী শরিয়তে খতমে শেফার বৈধতার বিষয়ে জানানোর অনুরোধ করেছিলেন আমার নবী চরিত্রের এক ঝলক; তিনি ছিলেন উত্তম আদর্শের মূর্ত প্রতীক... পোস্টে। মূলতঃ তার জ্ঞানার্জনের ঐকান্তিক আগ্রহ লক্ষ্য করেই এই পোস্ট। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্নটি করায় অসংখ্য শুভকামনা এবং দুআ তার জন্য। লেখাটি উৎসর্গ করছি তাকেই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×