somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

হাদিস সংকলনের ইতিহাস বিকৃতি এবং ইনিয়ে বিনিয়ে মুসলিম দরদি সেজে হাদিস বর্জনের ডাক; পেছনের উদ্দেশ্য কি?

১১ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
হাদিস সংকলনের ইতিহাস বিকৃতি এবং ইনিয়ে বিনিয়ে মুসলিম দরদি সেজে হাদিস বর্জনের ডাক; পেছনের উদ্দেশ্য কি?

মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহ. মদীনার ইমাম নামে খ্যাত ইমাম মালিক ইবনে আনাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কর্তৃক সংকলিত 'মুয়াত্তা' প্রাচীনতম এবং বিখ্যাত একটি হাদীস গ্রন্থ। হাদীস সংকলনের ইতিহাসে ইমাম বুখারী, মুসলিম প্রমুখ সংকলকের পূর্বেই মুয়াত্তা প্রকাশিত হয়েছিল। ইমাম বুখারীসহ উচ্চ পর্যায়ের হাদীসের হাফেজ ও ইমামগণ এ সংকলনটির ভূয়সী প্রসংসা করেছেন। ছবি কৃতজ্ঞতা: গুগল

পৃথিবীর শত শত কোটি মুসলিম বিগত প্রায় দেড় হাজার বছর যাবত ইসলামী শরীয়াহ প্রণিত মাসয়ালা মাসায়েল, ফতোয়া এবং ফায়সালা অনুসন্ধানে কুরআনুল কারিমের পরপরই সহিহ হাদিস গ্রন্থসমূহকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং সেসবের অনুসরণ করে এসেছেন। যুগ যুগ ধরে শতাব্দির পর শতাব্দি কাল যাবত মুসলিম বিশ্বে সর্বজন গ্রহনযোগ্য, সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সুসাব্যস্ত হাদিস সমগ্র বর্জনের বিষয়ে বর্ণচোরা কোন কোন মহলের নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ইদানিং সামনে চলে আসছে। ধর্মীয় মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সমাজে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য কি না, আমরা ঠিক বোধগম্য নই! জনৈক সম্মানিত ব্লগার সম্প্রতি হাদিস বর্জনের বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন সামু ব্লগে। বিষয়টি আপত্তিকর মনে হয়েছে বলেই মূলতঃ ভেবেছিলাম যে, তার সেই পোস্টটিতে একটি মন্তব্য করবো এবং সেই মন্তব্যটি লিখতেও গিয়েছিলাম সেখানে। কিন্তু মন্তব্যটির কলেবর কিছুটা বড় হয়ে যাওয়ায় মন্তব্যাকারে সেখানে সেটি প্রকাশ করাটা সমিচীন মনে করিনি। পরবর্তীতে সেই মন্তব্যটিই আরেকটু এডিট করে এখানে পোস্ট আকারে দিলাম। মূলতঃ উক্ত ব্লগার নিজেকে হয়তো অতি বুদ্ধিমান শ্রেণির মনে করে থাকেন বলেই প্রায়শ তিনি ইসলাম ধর্মের বিবিধ মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে তার মনগড়া এবং উদ্ভট কল্পকাহিনী ফাঁদার অপচেষ্টা করে থাকেন। তার অতি চালাকির ভাবসাব দেখে এই মুহূর্তে পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসূফ এর ৭৬ নং আয়াতের শেষাংশটি মনে পড়ছে, যেখানে বলা হয়েছে-

وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ

অর্থাৎ, এবং প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছে অধিকতর এক জ্ঞানীজন। -সূরা ইউসূফ এর ৭৬ নং আয়াতের শেষাংশ

উল্লেখিত আয়াতাংশে নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর সাথে তার ভাইদের চাতুরিপূর্ণ নানা ঘটনা বর্ণনা করার এক পর্যায়ে পরবর্তী সময়ে ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর কৌশলের কাছে তারা যেভাবে পরাজিত ও কুপোকাত হয়েছিলেন সে কথা তুলে ধরার জন্যই দারুণ অর্থবোধক এবং চমকপ্রদ এই বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে।

তো আমাদেরও মনে রাখা দরকার যে, আমি যত জ্ঞানীই নিজেকে মনে করে থাকি না কেন, আমার চেয়ে জ্ঞানী কেউ না কেউ নিশ্চয়ই রয়েছেন। এটা ভুলে গেলেই বিপদ। এটা ভুলে গেলেই আমরা কালেভদ্রে কেউ কেউ ফেইক মুসলিম সেজে উম্মতের অতি দরদিজনের ছদ্মাবরণে স্বজাতির আত্মসমালোচনার নামে ইসলাম ধর্মের ভুল তালাশের ছুঁতোয় 'হাদিস বর্জনে মুসলমানদের উপকার নিহিত' -এমনসব আজগুবি থিউরি প্রসব করে থাকি! এই অজ্ঞানতাপ্রসূত মনমানসিকতা আমাদের পিছু ছাড়বে কবে? নিজেকে অতি জ্ঞানী কিংবা অতি চালাক ভাবার এই সর্বনাশা রোগ থেকে আমরা কবে মুক্ত হতে পারবো?

তবে মজার কথা হচ্ছে, যত চালাকি এবং কূটকৌশলের আশ্রয়ই তিনি নিয়ে থাকুন না কেন, ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে তার সূক্ষ্ণ এবং চাতুর্যপূর্ণ বক্তব্যগুলো বিজ্ঞ ব্লগারদের চোখ এড়ায় না। তার প্রমান ইতিপূর্বেকার তার এই জাতীয় বিতর্কিত ও আপত্তিকর অনেক পোস্টে বিজ্ঞ এবং সম্মানিত ব্লগার ভাই বোনদের সুচিন্তিত মতামত এবং কঠোর প্রতিবাদমূলক মন্তব্য। তিনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে 'কুরআন অনলি' বা 'হাদিস অনলি' কিংবা 'কুরআন হাদিস বোথ' ইত্যাদি মনগড়া যেই দলের পরিচয়েই পরিচিত করতে চান নিজেকে, কোন লাভ নেই, মিথ্যে কখনোই সত্য হয়ে যায় না, হাজারটা যুক্তির পরেও মিথ্যে মিথ্যেই থেকে যায়, মিথ্যের দুর্গন্ধ শত অপচেষ্টাতেও দূর হয় না, তার পূর্বোক্ত পোস্টগুলো পাঠ করলে তিনি সত্যিকারার্থে যে কে, তার পরিচয় অতি সহজেই দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আত্মপরিচয় লুকিয়ে অন্য ধর্মের, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের বিধি-বিধান এবং মৌলিক নিয়ম-নীতি তথা কুরআন কিংবা হাদিস বর্জনের মত অতি আপত্তিকর এবং স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এই জাতীয় অপপ্রচার শুধুমাত্র মারাত্মক নিন্দনীয় এবং গর্হিত অপরাধই নয় এগুলো বর্তমানে প্রচলিত যে কোন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় আইনেও নিঃসন্দেহে দন্ডনীয় অপরাধ।

মাননীয় ব্লগ কর্তৃপক্ষ বাক স্বাধীনতার অধিকারের নামে তাকে ছাড় দিলেও দিতে পারেন, সেটা একান্তই তাদের ব্লগ নীতিমালার বিষয়, কিন্তু তিনি এই ব্লগের সম্মানিত পাঠক লেখকসহ ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের অন্তরে বারংবার আঘাত করার যে কাজটি অব্যাহতভাবে একের পর এক করেই যাচ্ছেন, এটা যারপরনাই নিন্দনীয়। এটা আমাদের হতবাক করে। আমরা এর জন্য নিতান্তই ব্যথিত, মর্মাহত এবং দুঃখিত! অন্য ধর্মের মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে এই ধরণের খোচাখুচি এবং চালাকির আশ্রয়ে অনধিকার চর্চা নিতান্ত নৈতিকতা পরিপন্থী এবং সন্দেহাতিতভাবে গর্হিত অন্যায়। এমনটা করার অধিকার কারোরই থাকা উচিত নয় বলেই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সচেতন শান্তিকামী মানুষ মাত্রেরই দাবি।

বাক স্বাধীনতার নামে, স্ব স্ব জাতির উপকার কিংবা অপকার বিবেচনায় নিয়ে তাদের দরদি সেজে আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের গীতা বর্জনের আহবান জানাতে পারি না। বাইবেল বর্জনের উপদেশ দিতে পারি না খৃস্টান ধর্মাবলম্বী বন্ধুগণকে। ত্রিপিটক বাদ দেয়ার পরামর্শ দিতে পারি না বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী আমাদের ভাই বন্ধুদেরকে। এগুলোকে বাক স্বাধীনতা বলা যায় না। তাহলে তিনি যে ইনিয়ে বিনিয়ে কৌশল ও চাতুর্যের আশ্রয়ে প্রকারান্তরে হাদিস বর্জনের আহবান জানালেন, তার এই কাজটিকে কেন আপত্তিকর বলে গণ্য করা হবে না? উল্লেখ্য, তিনি তার পোস্টের নাম প্রথমে দিয়েছিলেন 'হাদিস বর্জন করলে মুসলমানদের কি কি উপকার হবে'। অর্থাৎ, তিনি যে সর্বপ্রকার হাদিস বর্জনের চিন্তা থেকেই পোস্টটি করেছিলেন, তা পোস্টের নাম দেখেই বোঝা যায়। পরে অবশ্য পোস্টটি যাতে বিতর্কিত আখ্যায়িত হয়ে না যায় সে লক্ষ্যে চতুরতার আশ্রয়ে কিছু সমর্থকপ্রাপ্তির প্রত্যাশায় শিরোনামটি সংশোধন করে সেখানে 'শতবর্ষ পরে লিখিত' কথাটিও যুক্ত করেন। অর্থাৎ, এই কথা যুক্ত করার পেছনে এটাও তার উদ্দেশ্য থেকে থাকতে পারে যাতে পাঠকের মনে তার সম্মন্ধে এই ভুল ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া যায় যে, সব হাদিস না হলেও (শতবর্ষ পরে লিখিত নয় এমন) কিছু হাদিস যেহেতু তিনিও মানতে ইচ্ছুক, সেহেতু তিনি অমুসলিম হন কি করে! তিনি বরং শুধুমাত্র সাধারণ একজন মুসলিমই নন, গোটা মুসলিম জাতির ত্রাতা পর্যায়ের অতি উঁচু স্তরের বরেণ্য কেউ হয়ে থাকবেন, যিনি শুধু এই জাতির উপকার ও কল্যানই চিন্তা করে থাকেন!

এই পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় কে কি বলেন এবং সার্বিক অবস্থা কেমন হয়ে ওঠে, ইত্যাদি দেখার পরে অবস্থা জটিলতার দিকে না গেলে, এই শ্রেণির মহান ব্যক্তিগণ ক'দিন পরে 'মুসলমানগণ ১৪০০ বছর পূর্বের কুরআন বর্জন করলে কি কি ফায়দা লাভ করবে' সেসবের চিত্তাকর্ষক বর্ণনা উপস্থাপন করে আরও গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট প্রসব করবেন না, তার গ্যারান্টি কে দিবে?

আগেও তাকে বিভিন্ন সময়ে অনুরোধ করেছি যে, ইতিহাস না জেনে ইসলাম ধর্মের যে কোন বিষয় নিয়ে ইচ্ছে হলেই যাচ্ছেতাই মনগড়া কথাবার্তা প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা দয়া করে তিনি যেন না করেন। এখনও, এই পোস্টেও সেই একই অনুরোধ তার প্রতি আবারও রেখে যাচ্ছি। তিনি অবশ্য হাদিস সংকলনের ইতিহাসটা সঠিকভাবে একটু জেনেশুনে তারপরেই হাদিস বর্জনের ডাক দেয়ার মত এই ধরণের ঐতিহাসিক পোস্ট প্রসব করার পরিকল্পনা করতে পারতেন। তাতে সুবিধা হতো তার নিজেরও। হাদিস সংকলনের সঠিক ইতিহাস যদি সত্যি সত্যিই তার জানা থাকতো, কস্মিনকালেও তিনি এই ধরণের উস্কানিমূলক এবং ধর্ম অবমাননামূলক পোস্ট দিতে পারতেন বলে মনে করি না। কারণ, হাদিসকেও ওহিরই একটি প্রকার সাব্যস্ত করা হয়েছে ইসলামী শরিয়তে। কুরআনুল কারিমকে বলা হয় ওহিয়ে মাতলু, ইহার অপর নাম ওহিয়ে জলি। আর হাদিসকে ওহিয়ে গাইরে মাতলু বলা হয় যার অপর নাম ওহিয়ে খফি। -বিস্তারিত দেখুন, তাফসীরে জালালাইন, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৫৯, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, ৩০/৩২ নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা

কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন স্থানে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ অনুকরণ করার নির্দেশ স্পষ্টভাবে প্রদান করা হয়েছে। তাঁর অনুসরণ অনুকরণ করার জন্য তাঁর কথামালা, তাঁর আদেশ নিষেধ এবং উপদেশাবলী, তাঁর ওঠাবসা, আচার-আচরণ, লেনদেন, স্বভাব চরিত্র, এককথায় তাঁর সামগ্রিক জীবনাচার সম্মন্ধে জানার প্রয়োজন দেখা দেয়। একইভাবে প্রয়োজন দেখা দেয়, তাঁর সহচরবর্গের সামগ্রিক জীবনাচার সম্মন্ধেও অবহিত হওয়ার। এটা সম্ভব হচ্ছে হাদিসের অমূল্য রত্ন বিদ্যমান রয়েছে বলেই। বিশাল হাদিস ভান্ডারের অমূল্য সম্পদ আমাদের সামনে রয়েছে বলেই প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সামগ্রিক জীবনের প্রতিচ্ছবি আমরা চোখের সামনে আজও যেন স্বচ্ছভাবেই দেখে নিতে পারি।

হাদিসের বিশাল ভান্ডারকে মূলতঃ কুরআনুল কারিমের ব্যাখ্যা হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে। কারণ, রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু বলতেন তা ওহি বা প্রত্যাদেশ বৈ কিছু নয়। এই মর্মে কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ

এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। -সূরাহ আন নাজম, আয়াত ০৩

إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ

এটা (কুরআন) ওহী ব্যতিত অন্য কিছু নয়, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। -সূরাহ আন নাজম, আয়াত ০৪, আয়াতদ্বয়ের বিস্তারিত তাফসীর দেখে নিতে পারেন, তাফসীরে জালালাইন, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৫৭ এবং ২৫৯, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, ৩০/৩২ নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা

রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনে বর্ণিত নির্দেশাবলী সর্বপ্রথমে নিজের জীবনে নিজেই বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। আর তিনি যা কিছু করেছেন এবং বলেছেন সেসবের বিবরণ বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে হাজার হাজার হাদিসের বর্ণনায়। উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, নবীজীর চরিত্র কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বলেছেন,

كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْأَنَ

কা-না খুলুকুহুল কুরআন, অর্থাৎ, তাঁর চরিত্র ছিল অবিকল কুরআনের প্রতিচ্ছবি। অর্থাৎ, কুরআন মাজিদে যে সকল উত্তম চরিত্র ও মহান নৈতিকতার উল্লেখ রয়েছে সে সবই তাঁর মাঝে বিদ্যমান ছিল। কুরআনে বর্ণিত চরিত্র অপেক্ষা উত্তম চরিত্র আর কী হতে পারে? তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনি চরিত্রমালার জীবন্ত প্রতীক।

ইসলামী শরিয়ত যে চারটি মূল কাঠামোর উপরে প্রতিষ্ঠিত, সেগুলো হচ্ছে ১. কুরআনুল কারিম, ২. হাদিস, ৩. ইজমা এবং ৪. কিয়াস। ইসলামী শরিয়তের দ্বিতীয় এবং অতিব গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসকে বাদ দেয়ার এই দিবাস্বপ্ন যারা দেখে থাকেন তারা ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিম জাতির প্রকৃত বন্ধু না চরম শত্রু সেই সিদ্ধান্ত সম্মানিত পাঠকের হাতে ছেড়ে দিচ্ছি।

যারা বলেন ১০০ বা ২০০ বছর পরে হাদিস সংকলন করা হয়েছে, তাদের কথা কতটুকু সত্য?

কিছু লোকের দেখা ইদানিং কদাচিৎ পাওয়া যায় যারা বলে থাকেন যে, হাদিস সংকলন করা হয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইনতিকালের ১০০ বা ২০০ বছর পরে। এদেরকে কখনও কখনও ২০০/৩০০ বছরের কথা বলেও অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়তে দেখা যায়। কথা হচ্ছে, তাদের এসব কথা কতটুকু সত্য? হাদিস সংকলনের প্রকৃত ইতিহাস কি তাদের এসব কথার সত্যতার সাক্ষ্য আদৌ দেয়? বস্তুতঃ হাদিস সংকলনের ইতিহাস সঠিকভাবে না জানার কারণে তাদের এই বিভ্রান্তিতে পূর্ণ মরনগড়া এবং অলিক কথাাবার্তা তারা হয়তো প্রচার করে থাকেন। অথবা, তারা জেনেবুঝেই এসব মিথ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বিশেষ কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। এর দ্বারা তারা এটাও প্রত্যাশা করে থাকতে পারেন যে, হাদিস যেহেতু মুসলিম উম্মাহর দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; আস্থা, বিশ্বাস এবং বিশুদ্ধতার নিরিখে পবিত্র কুরআনের পরেই যেহেতু সহিহ হাদিসের অবস্থান, আর হাদিসের নির্দেশনাগুলোকে বিনাবাক্যবয়য়ে যেহেতু সারা পৃথিবীর মুসলমানগণ গ্রহণ করে ও মেনে চলেছেন, সেহেতু হাদিসের সংকলনের ইতিহাসের মধ্যে বিভ্রান্তি ঢুকিয়ে দিয়ে মুসলমানদের অন্তরে হাদিসের প্রতি সংশয় এবং অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারলে মুসলমানদেরকে হাদিস বিমুখ করা সম্ভব হতে পারে। তাদের ধারণায়, মুসলমানদের ভেতরে পারস্পারিক অস্থিরতা, অবিশ্বাস সৃষ্টির পাশাপাশি নিজেদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে এটি পর্যায়ক্রমে বিশাল একটি সফলতা হিসেবে গণ্য হতে পারে। এখানে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাবলী, অন্যান্য জার্নাল এবং মরহুম মাওলানা আব্দুর রহিম. রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রণিত এই সংক্রান্ত কিতাবাদি হতে সংগৃহিত হাদিস সংকলনের সংক্ষিপ্ত কিছু কথা আলোকপাত করছি-

হাদিসের সংকলন ও সংরক্ষনে মুসলিম উম্মাহর নজিরবিহীন ত্যাগঃ

মানুষের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হলো নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন চরিত। তাঁর জীবন চরিত বিবৃত হয়েছে হাদীসের মধ্যে। ইসলামের দৃষ্টিতে কুরআনের পরই হাদীসের স্থান। কুরআন ইসলামী আইনতন্ত্রের প্রধান উৎস এবং হাদীস দ্বিতীয় উৎস। কুরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা হিসেবে হাদীসে নববী সংরক্ষণ ও সংকলনের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহ যে কঠোর ত্যাগ স্বীকার করেছেন বিশ্ব ইতিহাসে তার কোন নজির নেই। ইসলামী শরীয়াহ সংরক্ষণের জন্য শুধুমাত্র কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলনই যথেষ্ট নয়, বরং হাদীসের ভান্ডারও সংরক্ষিত ও সংকলিত হওয়া দরকার। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দীর্ঘ তেইশ বছরের নবুওয়তী জিন্দেগীর সকল কথা এবং কর্ম ও অনুমোদন সংক্রান্ত বাণী অবিকল সংরক্ষণ করা, বিশেষত সেই যুগে, যখন কাগজ, প্রেস কিংবা কম্পিউটার ছিল না, এযে কত কঠিন কাজ তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ এ দুরূহ কাজটি সমাধা করেছেন আশ্চর্যজনক কৃতিত্বের সাথে। তাঁরা নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস অক্ষরে অক্ষরে মুখস্থ রাখেন এবং বিভিন্ন উপকরণে লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেন। সাহাবীদের পর তাবেঈগণও অনুরূপভাবে হাদীস সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন। তাই আল্লাহ তাআ'লার অশেষ রহমতে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন ও মুহাদ্দিসগণের কঠোর পরিশ্রম ও দীর্ঘ সাধনার বদৌলতে হাদীস সংরক্ষিত ও সংকলিত হয়েছে।

হাদীস সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহঃ

হাদীস সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহ দ্বিতীয় পর্বে সামান্য আলোচিত হয়েছে। এই পর্বে এ বিষয়ে আরও কিছু আলোকপাত করার ইচ্ছে। মুসলিম উম্মাহ রাসূলের নবুওয়তী জিন্দেগীর প্রাথমিক পর্যায় হতে আজ অবধি হাদীস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রধানত নিম্নোক্ত পন্থা ও পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে আসছেনঃ

১. হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ ও মুখস্থকরণ

২. হাদীসের শিক্ষাদান

৩. হাদীস মোতাবেক আমল

৪. হাদীস লিপিবদ্ধকরণ

১. হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ ও মুখস্থকরণঃ

হাদীসের প্রথম ধারক ও বাহক ছিলেন নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত সাহাবায়ে কেরাম। তাঁরা প্রিয় নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ নিসৃত বাণীসমূহ যা শুনেছেন এবং কর্ম ও অনুমোদনসমূহ যা প্রত্যক্ষ করেছেন তা সবই সংরক্ষণ করে পরবর্তী উম্মতের কাছে আমানতস্বরূপ রেখে গেছেন। সাহাবীগণ হাদীসের শিক্ষা গ্রহণে সর্বদা নিজেদের নিয়োজিত রাখতেন এবং তা মুখস্থ করতেন। আর অন্যদের কাছে তা যথাযথভাবে পৌঁছানো এবং শিক্ষাদানের লক্ষ্যে প্রাণপণ চেষ্টা চালাতেন। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে সরাসরি অথবা অন্য সাহাবীদের মাধ্যমে হাদীস বর্ণনা করেছেন এমন সাহাবীদের সংখ্যা ইমাম আবু জুরআ রাজীর মতে এক লাখ চৌদ্দ হাজার। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের সময় কেবল মক্কা ও মদীনায় সাহাবীদের সংখ্যা ছিল ইমাম শাফেয়ীর মতে ষাট হাজার। সাহাবায়ে কেরামের অনেকে হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ ও মুখস্থকরণের জন্যে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। যেমন- আসহাবে সুফফা, সুফফার অধিবাসীগণ দিন-রাত নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে পড়ে থাকেন। ফলে মসজিদে নববী একটি আবাসিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছিল। হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন- ‘আমি রাত্রিকে তিন ভাগে ভাগ করে নিই। একভাগে ঘুমাই, একভাগ ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করি, আর একভাগে রাসূলের হাদীস পাঠ ও মুখস্থ করতে থাকি’। -সুনানে দারমী-১/৮২

আর অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম যারা নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারতেন না তারা অন্যের নিকট নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে কখন কি ঘটছে তা জেনে নেয়ার চেষ্টা করতেন। কেউ কেউ রাসূলের দরবারে হাজির হওয়ার জন্য একে অন্যের সাথে পালা ঠিক করে নিতেন। যেমন হযরত ওমর ফারুক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তাঁর এক আনসারী প্রতিবেশীর সাথে পালা ঠিক করে নিয়েছিলেন। একদিন হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত থাকতেন, আরেকদিন উক্ত আনসারী সাহাবী উপস্থিত থাকতেন। -বোখারী শরীফ

সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে রাসূলের দরবারে আসতেন হাদীস শিক্ষার জন্য। অনুরূপভাবে নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের পরেও অনেক সাহাবায়ে কেরাম একে অপরের নিকট হাদীস শেখার জন্য শত শত মাইল সফরের কষ্ট স্বীকার করতেন। হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কেবল একটি মাত্র হাদীস শোনার জন্যে মদীনা থেকে একমাসের পথ সুদূর সিরিয়া সফর করেছিলেন। -সহিহ বোখারী, কিতাবুল ইলম

সাহাবায়ে কেরামের হাদীস সংগ্রহ সংক্রান্ত আরও বহু চমকপ্রদ ঘটনা ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

সাহাবায়ে কেরামের অসাধারণ স্মৃতিশক্তিঃ

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের যে জনসমাজে আত্মপ্রকাশ করেন তাঁদের চরিত্রে অসাধারণ স্মৃতিশক্তি বিদ্যমান ছিল। একথা অস্বীকারের কোন উপায় নেই যে, নবীজীর হাদীস ও জীবনাদর্শ সংরক্ষণ করতে হবে বলেই যেন এ সমাজটিকে পূর্ব থেকে পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল। স্মরণশক্তির আতিশয্য তৎকালীন আরব-মানুষকে আজো ইতিহাস প্রসিদ্ধ বানিয়ে রেখেছে।

একটি সুদীর্ঘ কাব্যগ্রন্থ একবার শোনামাত্র মুখস্থ করে নেয়া কিংবা বিভিন্ন কওমের উর্ধ্বতন বংশ পরম্পরা অতি দূর পর্যন্ত কণ্ঠস্থ রাখা। এমনকি পালের এক একটি বকরি, এক একটি ঘোড়া ও উটের বংশ পরম্পরা কণ্ঠস্থ রাখতে পারা কেবল তৎকালীন আরবদেরই বৈশিষ্ট্য ছিল। -দরসে তিরমিযী, মুকাদ্দমা

পূর্ব পরিকল্পিত হওয়ার প্রমাণ এভাবেও দেখানো হয় যে, চৌদ্দশ বছর পূর্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নামও যখন মানুষ জানতো না, তখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস ও জীবনাদর্শকে যেভাবে অতিশয় নিখুঁত, সর্বাধিক বিশ্বস্ত ও সর্ব ব্যাপকতাসহ সংরক্ষণ করা হয়েছিল বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের শক্তি ও সামর্থ্যকে আরো সহস্রগুণে বৃদ্ধি করে দেয়া সত্ত্বেও কি কোন মানুষের হাদীস ও জীবন চরিত এত ব্যাপক ও বিশ্বস্তভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো? প্রাচীন গ্রন্থাবলীতে তৎকালীন আরবদের অসাধারণ স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তী আছে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত কাতাদা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু স্পষ্টই বলেন, ‘‘আল্লাহ এই জাতিকে স্মরণশক্তির এমন প্রতিভা দান করেছিলেন যা অন্য কোন জাতিকে কখনো দান করা হয়নি।’’ -যুরকানী ৫/৩৯৫

যেমন- প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তিনি বিপুল সংখ্যক হাদীসের ‘হাফিয’ ছিলেন। উমাইয়া খলিফা মারওয়ান বিন হাকাম হযরত আবু হুরায়রার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু স্মৃতিশক্তি পরীক্ষা করার মানসে তাঁকে একবার রাজদরবারে দাওয়াত করলেন। তিনি উপস্থিত হলে খলিফা নিজেই তাঁকে কিছু সংখ্যক হাদীস মুখস্থ শোনানোর অনুরোধ করলেন। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তখন কিছু সংখ্যক হাদীস শোনিয়ে দেন। বাৎসারিককাল পরে একদিন ঠিক এ হাদীসসমূহ শোনাবার জন্যে হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে অনুরোধ করা হলো। তিনি সেই হাদীসগুলো এমনভাবে মুখস্থ শোনালেন যে, পূর্বের শোনানোর সাথে এর কোন পার্থক্য হয়নি। -কিতাবুল কুনা-ইমাম বুখারী, পৃ: ৩৩

২. হাদীসের শিক্ষা দানঃ

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে হাদীস সংরক্ষণে সাহাবায়ে কেরামের হাদীস শিক্ষাদানের ধারাবাহিকতা বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করেছিল। কুরআন-হাদীসের শিক্ষাদানের জন্য সাহাবায়ে কেরাম নিজ নিজ এলাকায় শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশাতেই মদীনা শরীফে নয়টি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতের সাথে পড়া হতো, তেমনি প্রত্যেকটিতে দ্বীনে ইসলাম শিক্ষাদানেরও ব্যবস্থা ছিল। -উলূমুল হাদীস ওয়া মুসতালাহুহু, পৃ: ১৭

তদুপরি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে দ্বীনের প্রতিটি কথা শিক্ষা দিতেন এবং তাঁকে দেখে দেখে শিক্ষা গ্রহণের জন্য সাহাবীগণকে আদেশ করতেন। সাহাবী হযরত ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, '‘রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নামাযের ‘তাশাহুদ’ শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের কোন সূরা শিক্ষা দিতেন'। -সহীহ মুসলিম

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে হাতে-কলমে সকল কিছু শিক্ষা দিতেন। প্রয়োজনীয় কোন ছোট-খাট জিনিসের শিক্ষাদান থেকে তিনি পিছিয়ে থাকতেন না। উদাহরণস্বরূপ ইস্তিঞ্জা করার নিয়ম পদ্ধতির কথা বলা যায়। ফলে শত্রুদের কেউ কেউ উপহাস করে একবার প্রসিদ্ধ সাহাবী সালমান ফারসী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে বলেছিলেন : ‘তোমাদের নবী তোমাদেরকে সব কিছু শিক্ষা দেন এমনকি পেশাব-পায়খানা করার পদ্ধতিও। -তিরমিযী

হযরত সালমান ফারসী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তখন বিজ্ঞচিত ভাষায় উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, হ্যাঁ, আমাদের নবী আমাদেরকে সকল কিছুরই ‘আদর্শ’ শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এ ঘটনা থেকে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষাদান কাজের ব্যাপকতা অনুমান করা যায়। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষাদান ও তত্ত্বাবধান এবং সাহাবায়ে কেরামের একনিষ্ঠতার ফল দাঁড়াল যে, সাহাবীগণের আমলী জীবন ও নবুয়্যাতী শিক্ষা ও আদর্শের শুধু ‘জীবন্ত কপি’ তাই নয় বরং সাহাবীগণ সেই শিক্ষার এমন কপি হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন যা নিখুঁত, ত্রুটিমুক্ত ও যাচাইকৃত। বলাবাহুল্য কোন জীবনাদর্শকে সংরক্ষণ করার জন্য এ অপেক্ষা উচ্চতর আর কোন পদ্ধতি চিন্তা করা যায় না। রাসূলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের পর সাহাবাদের এ উদ্যমী কাফেলা হাদীস শিক্ষাদান কার্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সমগ্র আরব ভূমিকে হাদীসের জ্ঞানে উদ্ভাসিত করে দেন।

৩. হাদীস মোতাবেক আমলঃ

রাসূলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুগে তাঁর হাদীসসমূহ সংরক্ষণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া ছিল সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক হাদীসের বাস্তব অনুসরণ তথা সে অনুযায়ী আমল করে তাঁরা হাদীসে রাসূলকে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন্ত রেখেছেন। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন আক্বীদা ও তত্ত্বমূলক কথা বলতেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম তা মুখস্থ করে মন-মগজে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে নিতেন এবং সে অনুসারে স্বীয় আক্বীদা ও বিশ্বাস গড়ে তুলতেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের নৈমিত্তিক অভ্যাসে পরিণত না করা পর্যন্ত চর্চা ও অভ্যাস করতে সর্বোতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন: ‘‘আমাদের কেউ যখন ১০টি আয়াত শিক্ষা লাভ করতো তখন এর অর্থ ভালরূপে হৃদয়ঙ্গম ও তদনুযায়ী আমল করার পূর্বে সে অন্য কিছু শেখার জন্যে অগ্রসর হতো না। -জামিউ বায়ানিল ইলুম

মূলত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যাবতীয় ইবাদত, মোয়ামালাত, কথাবার্তা, লেবাস-পোশাক, পানাহার, উঠা-বসা, নিদ্রা-জাগরণ এমন কোন বিষয় নেই, যে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম তাঁর পূর্ণ অনুকরণ ও অনুসরণের চেষ্টা করেননি। সাহাবায়ে কেরামের এরূপ নিরবচ্ছিন্ন অনুসরণের মাধ্যমেই রাসূলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি কথা, কাজ ও মৌন সম্মতি কিংবা অনুমোদন এবং যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিবরণসমূহ চিরদিনের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে।

৪. হাদীস লিপিবদ্ধ করণঃ

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় অনেক সাহাবী লিখিতভাবে হাদীস সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। তবে ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে হাদীস লিপিবদ্ধ করার ব্যাপারে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‘‘তোমরা আমার হাদীস লিখবে না। আর যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কুরআন ছাড়া অন্য কিছু লিখে থাকে সে যেন তা মুছে ফেলে।’’ -সহীহ মুসলিম, খ. ২য়, পৃ: ৪১৪

হাদীস লিখনে এ নিষেধাজ্ঞা ছিল মদীনায় হিজরতের পূর্বে মক্কায়। এসময় কোনো কোনো সাহাবী রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ থেকে যা শুনতেন তা একই জায়গায় লিখে রাখতেন। তাতে কুরআন ও হাদীস সংমিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আশংকা ছিল প্রবল। তদুপরি তখনও তাঁরা কুরআনের ভাব-গাম্ভীর্য তথা ভাষা- শৈলী আত্মস্থ করতে সক্ষম হননি। এমতাবস্থায় কুরআনের পাশাপাশি হাদীস লিপিবদ্ধ করা ছিল যুগপৎ কষ্ট কর ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সময় হাদীস লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করেন। তারপর যাদেরকে তিনি লিখন কার্যে পারদর্শী দেখেছেন কিংবা যারা কুরআন ও হাদীসকে যথার্থ উপায়ে লেখার যোগ্যতা অর্জন করেছেন বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন তাঁদেরকে লেখার অনুমতি দিয়ে দেন। সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, আমি প্রিয় নবীর সব হাদীসই লিখে রাখতাম। একবার আমাকে লোকেরা নিষেধ করে বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক কথা মানবীয় ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি নিয়েও বলে থাকেন অথচ তুমি কিনা তার সব হাদীসই লিখে ফেলছ? কথাটি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানানো হলে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমর! তুমি নির্দ্বিধায় সব কিছু লিখতে পার। কারণ আল্লাহর শপথ! আমার এমুখ থেকে প্রকৃত সত্য ছাড়া অন্য কিছুই বের হয় না। (আবু দাউদ) মক্কা থেকে মদীনায় পৌঁছার পর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদীস সমূহ লিখিতভাবে সংরক্ষণের সরাসরি নির্দেশ দিয়ে বলেন; ‘‘তোমরা ইলমকে লিখনীর মাধ্যমে সংরক্ষণ কর।’’ -মুস্তাদরাক, খ: ১, পৃ: ১০৬

তাছাড়া মদীনার সনদ, সাদাকাতের নেসাব, বিভিন্ন গোত্রের উদ্দেশ্যে প্রেরিত ফরমান ইত্যাদির সবই রাসূলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি উদ্যোগে লিখিত বিষয় ছিল। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস লিপিবদ্ধ করার অনুমতি প্রদান করার পর অনেক সাহাবী নিজস্ব নিয়মে ও নিজেদের পছন্দমতে হাদীস লিপিবদ্ধ করে গ্রন্থাকারে সাজিয়ে রাখেন। যদিও এগুলিতে গ্রন্থের রূপ-বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণ বিদ্যমান ছিল না। সাহাবাদের লিখিত সে সব প্রাচীনকালীন লিখিত সম্পদ আজো বিশ্বের বিভিন্ন মিউজিয়ামে বিদ্যমান।

সাহাবায়ে কেরাম সংকলিত কতিপয় হাদীস গ্রন্থঃ

সাহাবায়ে কেরামগণের কেউ কেউ হাদিস সংকলন করেছেন। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

১. আস সহীফাতুস সাদিকাঃ

সাহাবী যুগে সংকলিত সর্বাধিক সংখ্যক হাদীসের গ্রন্থ। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এ সংকলন তৈরি করেন।

২. সহীফাতু আলী

এর রচনাকারী ছিলেন স্বয়ং হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু। এটিকে ভাঁজ করে তিনি নিজ তলোয়ারের খাপের মধ্যে সযত্নে রেখে দেন।

৩. কিতাবুস সাদাকাহ:

এ গ্রন্থটি স্বয়ং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের তত্ত্বাবধানে ওফাতের মাত্র কয়েকদিন পূর্বে লিখিয়ে ছিলেন। এগ্রন্থে যাকাত, সাদাকাত, উশর ইত্যাদি সম্পর্কীয় নির্দেশ ছিল।

৪. সহীফাতু আমর ইবন হাযম :

গ্রন্থটি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় তাঁরই আদেশক্রমে হযরত উবাই ইবন কা’ব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু লিপিবদ্ধ করেুন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশম হিজরীতে হযরত আমর ইবনে হাযমকে রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নাজরানের শাসনকর্তা হিসেবে প্রেরণ করার সময় এ হাদীস গ্রন্থ তার নিকট প্রদান করেন। এতে পবিত্রতা, নামায, যাকাত, হজ্ব, উমরা, জিহাদ ও গণীমত ইত্যাদি বিষয়ে অনেক হাদীস সন্নিবেশিত ছিল।

৫. সহীফাতু ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু

৬. সহীফাতু জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু

৭. সহীফাতু আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু

৮. সুহুফু (অনেক গ্রন্থ) আনস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু।

৯. মুসনাদু আবী হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু

১০. সহীফাতু সাদ ইবন উবাদা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু উল্লেখযোগ্য।

খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে হাদীস সংকলন :

এমনিভাবে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও হাদীস সংকলন করা হয়েছে। যেমন-

ক. হযরত আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু:

হযরত আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নিজে পাঁচ শত হাদীসের একটি সংকলন প্রস্তুত করেছিলেন, তবে শেষ জীবনে তিনি নিজেই তা নষ্ট করে ফেলেন। এর কারণ হিসেবে মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছেন-

১. তিনি বিশেষভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েন যে, তাঁর সংকলিত হাদীসে একটি শব্দও যদি রাসূলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূল বাণীর বিন্দু মাত্র বিপরীত হয়ে পড়ে তবে রাসূলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী অনুযায়ী তাঁকে জাহান্নামের ইন্ধন হতে হবে।

২. তাঁর মনে এ ভয়ও জাগ্রত হয় যে, তাঁর সংকলিত হাদীস গ্রন্থকে মুসলিম জনগণ যদি কুরআনের সমতুল্য মর্যাদা দিয়ে বসে বা অন্য সাহাবীগণের বর্ণিত হাদীস অপেক্ষা অধিক মর্যাদা দিতে শুরু করে, তাহলে ইসলামের বিশেষ ক্ষতি হবে।

খ. হযরত ওমর ফারুক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু:

তিনি অনেক হাদীস সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করে ইসলামী রাজ্যের বিভিন্ন শাসকের নিকট প্রেরণ করেছিলেন এবং সর্বসাধারণ্যে সে সবের ব্যাপক প্রচার করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। ইলমে হাদীসের শিক্ষা ব্যাপকতর করার জন্যে তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেন। হযরত ওমর ফারুক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর সময়ই বিচ্ছিন্ন থাকা হাদীস সম্পদ সংকলন করার প্রশ্ন প্রথম উত্থাপিত হয়। ওমর ফারুক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এবিষয়ে অন্যান্য সাহাবীর সাথে পরামর্শ করেন। মুসলমানরা তাঁর অনুকূলেই পরামর্শ দেন। কিন্তু শেষে তিনি একদিন বললেন-আমি তোমাদের হাদীস লিপিবদ্ধ ও সংকলিত করার কথা বলেছিলাম একথা তোমরা জান। কিন্তু পরে মনে হল তোমাদের পূর্বের আহলে কিতাবরাও এমনিভাবে নবীর কথা সংকলিত করে কিতাব রচনা করেছিল এবং আল্লাহর কিতাব পরিত্যাগ করেছিল। আল্লাহর শপথ, আমি আল্লাহর কিতাবের সাথে কোন কিছুই মিশাবোনা। অত:পর তিনি হাদীস সংকলিত করার সংকল্প ত্যাগ করেন। বস্তুত: সুসংবদ্ধ ও সংকলিত হাদীস গ্রন্থ পেয়ে লোকেরা হয়তো কুরআন থেকে তাকে বেশি গুরুত্ব দিবে এবং কেবল হাদীস অনুযায়ী চলতে শুরু করবে, শুধুমাত্র এভয়েই ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হাদীস সংকলনের সংকল্প পরিত্যাগ করেন। তিনি এটাকে যে নাজায়েয মনে করতেন না, তা তাঁর পূর্বোল্লিখিত কার্যকলাপ থেকে সহজেই অনুমেয়।

গ. হযরত ওসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু:

হযরত ওসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু খুবই কমসংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। কেন না তিনি ভুল হওয়ার আশংকায় হাদীস বর্ণনা করা থেকে এক প্রকার বিরত ছিলেন বলা চলে। এ বিষয়ে তাঁর নিজের বক্তব্য হচ্ছে: ‘রাসূলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের মধ্যে আমি কম হাদীস জানি, এটি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনা থেকে আমার বিরত থাকার কারণ নয়। আসল কারণটি হচ্ছে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি নিজেই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আমি যা বলিনি যদি কেউ তা আমার কথা হিসেবে বর্ণনা করে তবে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’

তাই হযরত উসমানের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করা কয়েকটি মাত্র হাদীস পাওয়া যায়।

ঘ. হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু:

যে কয়জন সাহাবী হাদীস লিপিবদ্ধ করেছিলেন হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তিনি তাঁর লিখিত হাদীস ভাঁজ করে তাঁর তলোয়ারের খাপে রেখে দিয়েছিলেন। -বুখারী, মুসনাদে আহমদ

অবশ্য সাহাবায়ে কেরামের এ সংগ্রহ ও সংকলন ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পর্যায়ে। তবে সামগ্রিকভাবে হাদীস সংকলন হয়েছিল পঞ্চম খলিফা খ্যাত হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীযের শাসনামলে।

হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে হাদীস সংকলন :

প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (জন্ম ৬১ হি:, মৃত্যু ১০১ হিজরি), ৯৯ হিজরী সনে খলিফা নির্বাচিত হন। তাঁর খিলাফতের মেয়াদ ছিল দুই বছর পাঁচ মাস। ঈমান, তাকওয়া ও যোগ্যতার কারণে তিনি ইসলামের পঞ্চম খলিফা হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন যে ইসলামী জীবন যাপন ও খিলাফত পরিচালনার জন্যে হাদীস এক অপরিহার্য সম্পদ। সাহাবায়ে কেরামের প্রায় সকলে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। অধিকাংশ তাবেয়ীও দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। যারা বেঁচে আছেন তারাও আর বেশি দিন থাকবেন বলে মনে হয় না। অতএব, অনতিবিলম্বে এই মহান সম্পদ সংগ্রহ ও সংকলন একান্ত দরকার। এটি ভেবেই তিনি ইসলামী রাজ্যেও বিভিন্ন কেন্দ্রে নিম্নোক্ত ফরমান লিখে পাঠান-‘রাসূলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসের প্রতি দৃষ্টি দাও। তা সংগ্রহ- সংকলন কর।’’

মদীনার শাসনকর্তা ও বিচারপতি আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাযমকেও তিনি নিম্নোক্তভাবে ফরমান লিখে পাঠান- ‘রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীস বা তাঁর সুন্নাত অথবা হযরত ওমরের বাণী কিংবা অনুরূপ যা কিছু পাওয়া যায় তার প্রতি দৃষ্টি দাও এবং আমার জন্যে লিখে নাও। কেননা আমি ইলমে হাদীসের ধারক-বাহকদের অন্তর্ধান ও হাদীস সম্পদের বিলুপ্তির আশংকা করছি।’ (বুখারী-কিতাবুল ইলম)

ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ তাবেয়ী ইমাম জুহরীকে বিশেষভাবে হাদীস সংকলনের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের ফরমান জারি করার পর বেশি দিন জীবিত ছিলেন না (মৃত্যু: ১০১ হিজরি) কিন্তু তাঁর ফরমানের ফলে হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের যে প্রবাহ শুরু হয়েছিল তা পরের কয়েকশ বছর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তাবেয়ীগণ বিভিন্ন শহরে উপস্থিত থাকা সাহাবী বা তাবেয়ীদের নিকট থেকে হাদীস সংগ্রহের জন্যে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতেন। হিজরী ২য় শতকের শুরু থেকে কনিষ্ঠ তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীনদের এক বিশাল কাফেলা সাহাবা ও প্রবীণ তাবেয়ীদের লিখিত হাদীসগুলো ব্যাপকভাবে একত্রিত করতে থাকেন। খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সরকারী ফরমান এব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

হিজরী প্রথম শতকে হাদীস সংকলন :

খলিফা ওমর ইবনে আব্দুল আযীযের আদেশক্রমে ইমাম শাবী, ইমাম যুহরী, ইমাম মাকহুল দামেশকী ও কাযী আবু বকর ইবনে হাযম রহমাতুল্লাহি আলাইহিসহ প্রমুখ হাদীস সংকলনে মনোনিবেশ করেন। এ শতকে হাদীস সংকলনের কাজ সামান্য হলেও এরই ফলে যে হাদীস গ্রন্থকারে সংকলনের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিল তা অনস্বীকার্য।

হিজরী দ্বিতীয় শতকে হাদীস সংকলন :

হিজরী দ্বিতীয় শতকের প্রথম থেকেই হাদীস সংকলনের কাজ শুরু হয়। তবে এ শতকের মাঝামাঝি সময়ে একাজ নিয়মিতভাবে চলতে থাকে। এযুগে সংকলিত গ্রন্থগুলো হলো:

১. কিতাবুল আছার-ইমাম আবু হানিফা,
২. মুয়াত্তা-ইমাম মালেক
৩. আলজামে-সুফিয়ান সাওরী
৪. কিতাবুস সুনান-ইমাম মাকহুল
৫. কিতাবুস সুনান-আবু আমর আওযায়ী।
৬. কিতাবুস সুনান-আবু সাঈদ ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া।
৭. কিতাবুল মাগাযী- আবু বক্র ইবনে হাযম।
৮. কিতাবুস সুনান, কিতাবুযযুহ্দ, কিতাবুল মানাকিব-যায়েদ ইবনে কুদামা।
৯. ইমাম শাবী একই বিষয়ের হাদীস একই স্থানে একত্রিত করে একখানি গ্রন্থে রূপ দিয়ে ছিলেন বটে, কিন্তু তা মাত্র কয়েকটি অধ্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল। এর বেশি তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।

হিজরী তৃতীয় শতকে হাদীস সংকলন :

হিজরী তৃতীয় শতকে মুসলিম জাহানে যাঁরা হাদীস শিক্ষাদান ও গ্রন্থ প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন তাঁরা হলেন, আলী ইবনুল মাদিনী, ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীন, আবু জুযয়া রাযী, আবু হাতেম রাযী, মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী, ইবনে খোযায়মা, ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহে, মুহাম্মদ ইবনে সাদ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ। এসময় ‘মুসনাদ’ নামক গ্রন্থ সংকলন করা হয়। এ শতকের শেষ দিকে প্রসিদ্ধ ‘সিহাহ সিত্তাহ’ও সংকলন করা হয় এবং একে হাদীস সংকলনের সোনালী যুগ বলা হয়। হাদীসের এ গ্রন্থসমূহ সংকলিত হওয়ার পর হাদীস সংরক্ষণ ও প্রচারের প্রথম ও দ্বিতীয় যুগের ধারা পরিবর্তন হয়ে যায়। অর্থাৎ মুখস্থ করার মাধ্যমে সংরক্ষণ এবং বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের ধারা পরিবর্তন হয়ে পুস্তক বা গ্রন্থ আকারে সংরক্ষণ ও পুস্তক পাঠের মাধ্যমে প্রচারের ধারা শুরু হয়ে যায় এবং তা দ্রুত গতিতে প্রসিদ্ধি ও জনপ্রিয়তা লাভ করে।

হিজরী ৫ম শতক থেকে বর্তমান কাল :

এ সুদীর্ঘ সময়ে হাদীস সংরক্ষণ, সংকলন ও প্রচারে যে কাজ হয়েছে তার সারসংক্ষেপ হলো:

১. হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহের ভাষ্যগ্রন্থ, টীকা ও অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ গ্রন্থ রচিত হওয়া।
২. হাদীস শাস্ত্রের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা নিয়ে অসংখ্য গ্রন্থ এবং এসব গ্রন্থের ব্যাখ্যা ও সারসংক্ষেপ রচিত হওয়া।
৩. বিশেষজ্ঞ আলেমগণ কর্তৃক তৃতীয় যুগের গ্রন্থাবলী থেকে নিজেদের আগ্রহ বা প্রয়োজনে হাদীস চয়ন করে গ্রন্থ প্রণয়ন করা। এধরনের কয়েকটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হচ্ছে:

ক. মিশকাতুল মাসাবীহ-সংকলক: ওয়ালী উদ্দিন খতীব তাবরীযী।
খ. বিয়াদুস-সালিহীন-ইমাম আবু যাকারিয়া শরফুদ্দিন নববী।
গ. মুলতাকাল আখবার-
ঘ. মাসাবীহুস সুন্নাহ ইত্যাদি।

কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়ার পর কম্পিউটার ডিস্কের মাধ্যমে হাদীস সংরক্ষণ ও ওয়েব সাইটের মাধ্যমে হাদীস প্রচারের কাজ শুরু হয়েছে এবং বর্তমানে তা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

অতএব বিভ্রান্তি নয় চাই হাদিস সংকলনের ইতিহাস সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞানঃ

অতএব, রাসূল প্রেমিক জ্ঞান সাধকদের নিরন্তর সাধনা ও অধ্যাবসায়ের বদৌলতে সংকলিত হয়েছে রাসূলের অমূল্য হাদীস ভান্ডার। আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এ যুগে হাদীস সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসারে ভবিষ্যতে উদ্ভাবিত হবে অসংখ্য অত্যাধুনিক পন্থা। তবে পাশাপাশি চালু রাখতে হবে হাদীসের বাস্তব অনুসরণের সনাতন ধারা। আল্লাহ পাক আমাদের হাদিস সংকলনের সঠিক ইতিহাস জানার মত সামান্যতম জ্ঞানটুকু দান করুন।

পরিশেষে আসুন, সমাজে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করার পথ থেকে আমরা নিজেদের সযত্নে নিবৃত্ত রাখি। নিজের ধর্ম সাধ্যানুসারে অনুসরণ করি। অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। অন্যের ধর্মের প্রতি এইজাতীয় অবমাননাকর কথাবার্তার প্রচার প্রচারণা থেকে সতর্কতার সাথে দূরত্ব বজায় রাখি।

অবুঝ(!) মুসলিম জাতির প্রতি ভদ্রলোকের উথলে ওঠা দরদ দেখে আশ্চর্য না হয়ে উপায় থাকে নাঃ

এই যুগে নিজের খেয়ে পরের উপকার করতে কে যায়? ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে কে যায়, বলুন! এমন ক'জনই বা পাওয়া যাবে এই সমাজ সংসারে? কিন্তু যার পোস্টের প্রেক্ষিতে এই লেখা তিনি কিন্তু উদারতায় অতুলনীয় এবং অসামান্য। বিশেষ করে মুসলিমদের প্রতি তার যে কি দরদ, কি যে টান, কি যে মমতা, আহ! ভাবতেই গা হিম হয়ে আসে! ঐ যে নিজের পেটের বাচ্চাকে হাটতে দিয়ে সতীনের ছেলেকে সারা দিন কোলে কাঁখে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো অতি মহতী নারীর একটি ঘটনা আছে না? সেই ঘটনাটা বারবার মনে পড়ে যায় আর কি! কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছিল তাকে, নিজের ছেলেকে হাটিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছো আর সতীনের ছেলেকে কোলে পিঠে এমনভাবে রাখছো, যে মাটিতে তার পা পর্যন্ত পড়তে দিচ্ছ না, তুমি আসলেই অতি মহৎ একজন মহিলা! তোমার মত এত বড় মনের মানুষ আমি জীবনে কোথাও দেখিনি!

মহিলা কী বলেছিলেন, জানেন তো! মহিলা কানে কানে তাকে সাফ জানিয়ে দিলেন, আরে ঐসব মহৎ টহৎ কিচ্ছু না, আমি আমার ছেলেকে হাটা শিখাচ্ছি যাতে সে শক্ত সামর্থ্যবান হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। সে দৌঁড়াবে পড়ে যাবে, আবার দৌঁড়াবে, আবার হোচট খাবে- এভাবে ঘাত প্রতিঘাত খেয়ে বড় হলে তাকে সহজে কেউ টলাতে পারবে না! আর বোঝেনই তো সতীনের জ্বালা, ওর ছেলেকে এমনভাবে কোলে পিঠে করে সারাক্ষণ আগলে রাখছি, ও যাতে দৌঁড় তো দূরের কথা, ঠিকমত হাটতেও না শিখতে পারে! মানুষ যেন তাকে ক'দিন পরে হাটাচলা করতে না পারা পঙ্গুদের পর্যায়ে গণ্য করে নেয়।

তো, ভদ্রলোকের দরদখানাও অনেকটা সেইরকমই! সেই মহিলার মত একই পদ্ধতি অবলম্বন করে তিনি মুসলিম জাতিকে অবুঝ এবং অবোধ সাব্যস্ত করে তাদের অতি দরদি সেজে বসেছেন। হাদিসের কারণে মুসলিম জাহান, মুসলিম জাতি কত প্রকারের ক্ষতির মুখে পড়েছেন তা মুসলিম জাতির প্রায় দু'শো কোটি মানুষের কেউই বুঝতে সক্ষম হলেন না, কেবলমাত্র তিনি ছাড়া! স্বীকার না করে উপায় নেই, তার জ্ঞান গরিমা আটলান্টিক আর প্রশান্ত মহাসাগরের অথৈ সলিলের গভীরতাকেও হার মানাতে বাধ্য!

হাদিস সংকলনের ইতিহাস সম্পর্কিত নিম্নোক্ত পোস্টগুলো একনজর দেখে আসার অনুরোধ-

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, পর্ব-০১

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, পর্ব-০২

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, পর্ব-০৩

বিশেষ কিছু কথাঃ পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্ম এবং সেসব ধর্মের অনুসারীদের প্রতিই আমরা শ্রদ্ধা পোষন করি। বস্তুতঃ মানুষ হিসেবেও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই আমার নিকট সম্মানের পাত্র। কাউকে ব্যক্তি আক্রমন করা কিংবা অসম্মান করার উদ্দেশ্যে এই পোস্ট দেয়া হয়নি, সেই দিক বিবেচনায় রেখেই আমি এখানে কোন ব্লগারের নামোল্লেখ করা হতে বিরত থাকার চেষ্টা করেছি। সঙ্গত কারণে এই পোস্টের কোন কথা কারও কাছে কষ্টদায়ক মনে হলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এবং এই লেখায় তথ্যগত বা অন্য কোন ভুল পরিদৃশ্য হলে অবহিত করতে অনুরোধ করছি, যাতে তা সংশোধন করে দিতে পারি। বস্তুতঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা, তাঁর প্রেরিত পুরুষ প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং কুরআন হাদিসের বিষয়ে যখন আপত্তিকর কথাবার্তা ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা প্রত্যক্ষ করি, একজন মুসলিম হিসেবে সাধ্যানুসারে তার প্রতিবাদে সরব হওয়াকে ঈমানের দাবি এবং ঈমানি দায়িত্ব মনে করি বলেই এই সামান্য লেখার অবতারণা। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের প্রত্যেককে বিভ্রান্তির অন্ধকার থেকে বেঁচে থেকে আলোর পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সময় নিয়ে পোস্টটি পাঠ করায় কৃতজ্ঞতা। সকলের কল্যান কামনায়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:০৮
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×