somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

কামাল আতাতুর্ক: ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও স্বকীয়তা ধ্বংসকারী এক বিতর্কিত শাসক

১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কামাল আতাতুর্ক: ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও স্বকীয়তা ধ্বংসকারী এক বিতর্কিত শাসক

তুরষ্কের বিখ্যাত আয়া সোফিয়া মসজিদের ছবিটি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক (১৮৮১-১৯৩৮) তুরস্কের ইতিহাসে এক প্রভাবশালী ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তিনি তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং আধুনিক তুরস্কের স্থপতি হিসেবে পরিচিত। তবে তার নীতি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। কেউ তাকে আধুনিকায়নের পথিকৃৎ হিসেবে দেখেন, আবার কেউ তাকে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও তুর্কি স্বকীয়তা ধ্বংসকারী স্বৈরশাসক হিসেবে বিবেচনা করেন।

আতাতুর্কের পরিচয় ও তার আদর্শ

কামাল আতাতুর্কের জন্ম এক সামরিক পরিবারে হলেও, তার পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু সূত্র তাকে স্পেন থেকে বিতাড়িত ইহুদি বংশোদ্ভূত সাবাতাই সম্প্রদায়ের বলে দাবি করে। তার মা ছিলেন আলবেনীয় বংশোদ্ভূত। জাতিগতভাবে তিনি পুরোপুরি তুর্কি নন, তথাপি তিনি নিজেকে তুর্কি জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

তিনি ছিলেন একজন ফ্রী-মেসন এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি, যিনি অটোমান খিলাফত ধ্বংসে বড় ভূমিকা রাখেন। ইসলামী চিন্তাবিদ নাসিরুদ্দীন আলবানী তাকে ইসলাম ত্যাগকারী বা মুরতাদ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তুরস্কে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি

কামাল আতাতুর্কের শাসনামলে তুরস্কের হাজার বছরের ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তাহযীব-তামাদ্দুন ধ্বংস করা হয়। তার অপশাসনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:

মসজিদ ও মাদ্রাসা বন্ধ ও ধ্বংস করা।

কুরআন পাঠ, শিক্ষা ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা।

আরবি লিপির পরিবর্তে ল্যাটিন লিপি প্রবর্তন।

ইসলামি পোশাক, বিশেষ করে হিজাব ও দাড়ি নিষিদ্ধ করা।

হাজার হাজার আলেমকে হত্যা, গুম ও কারাবন্দি করা।

আজানকে তুর্কি ভাষায় পরিবর্তন করা এবং ইসলামি রীতিনীতি কঠোরভাবে দমন করা।

তার এই পদক্ষেপের ফলে তুরস্কের হাজার বছরের ইসলামী ঐতিহ্য বিপর্যস্ত হয় এবং বহু ধর্মপ্রাণ মুসলিম দেশত্যাগে বাধ্য হন। কারাগারগুলো দ্বীনদার মুসলিমদের জন্য এক ভয়াবহ নির্যাতনকেন্দ্রে পরিণত হয়।

এমনকি, মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের সভাপতিত্বে তুর্কি সরকার ১৯৩৪ সালে তুরষ্কের বিখ্যাত হাজিয়া সোফিয়া বা আয়া সোফিয়া মসজিদকে ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেয়, যেটি ১৪৫৩ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্তু মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছিল। কিন্তু কামাল পাশার হাতে অপহৃত আয়া সোফিয়া মসজিদকে অবশেষে পুনরুদ্ধার করেন তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান। ২০২০ সালে তিনি এটিকে আবারও মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করেন।

আধুনিকায়নের নামে ধর্মহীনতা প্রতিষ্ঠা

কামাল আতাতুর্ক নিজেকে আধুনিকতার প্রবক্তা হিসেবে তুলে ধরলেও তার নীতি ছিল পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণের মাধ্যমে তুরস্ককে সম্পূর্ণরূপে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন করা। তার শাসনামলে:

শরীয়াহ আইন বাতিল করে পাশ্চাত্য আইন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।

ইসলামী পোশাকের পরিবর্তে পাশ্চাত্য পোশাক বাধ্যতামূলক করা হয়।

ধর্মীয় শিক্ষাকে নিষিদ্ধ করে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়।

তুর্কি ভাষায় আজান বাধ্যতামূলক করা হয়, যা পরবর্তীতে ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে বাতিল করা হয়।

আতাতুর্কের পরিণতি ও ইসলামের পুনরুত্থান

ইতিহাস সাক্ষী, আতাতুর্ক চেয়েছিলেন ইসলামের চিহ্ন তুরস্ক থেকে মুছে ফেলতে, কিন্তু তিনি সফল হতে পারেননি। সময়ের পরিক্রমায় তুরস্কে ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটে। আজ তুরস্কে পুনরায় মসজিদগুলোতে আজান ধ্বনিত হচ্ছে, কুরআনের শিক্ষা চালু হয়েছে এবং ইসলামী চেতনা নতুন করে প্রসারিত হচ্ছে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন:

"তারা (কাফের-মুশরিকরা) চায় তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে, কিন্তু আল্লাহ তাঁর আলোকে সম্পূর্ণ করবেন, যদিও তারা তা অপছন্দ করে।" (সূরা আস-সাফ)

এককথায় বলতে গেলে, আধুনিক তুরস্কের জনক বলে পরিচিত, কামাল পাশা গোটা বিস্তীর্ন তুর্কী ভূখন্ডকে একটি বৃহত কারাগারে পরিনত করেছিলেন। জুলূম, অত্যাচার, অবিচার আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন ঘোর কৃষ্ণ অমা রাত তুরস্কের আকাশ আগে কল্পনা করেনি! আর গোয়েবলসের এমন নজিরবিহীন তান্ডব তুরস্কের মাটি ইতিপূর্বে কখনও প্রত্যক্ষ করেনি!

কামাল পাশা! হায়রে কামাল পাশা!! এই কামাল পাশা সেই জালিম অত্যাচারী ব্যক্তিটির নাম, যিনি তুরস্কের মাটি থেকে মহান আল্লাহর নামের উচ্চকিত আওয়াজকে চির দিনের জন্য মিটিয়ে দিতে চেয়েছিলেন! আযানের মহিমাময় শব্দগুলোও তিনি সহ্য করেননি! এশিয়া ইউরোপ আর আফ্রিকা মহাদেশের মিলনস্থলে গর্ব আর গৌরবের মিনার মহান তুরস্ক সাম্রাজ্যের আকাশ বাতাস মুখরিত করে দিত যে আজান, তিনি তা বন্ধ করে দেন! একদা ইথারে ভেসে ভেসে যে আজানের মধুর সুরলহরী ছড়িয়ে পরতো তুরস্কের গোটা প্রান্তরে প্রান্তরে, তিনি তা স্তব্দ করে দেন। ইতিহাস বড়ই নির্মম, তুরষ্কে পাশা আজ বেঁচে নেই। কিন্তু, আবার আজানের সুমধুর ধ্বনি ফিরে এসেছে তুরস্কের আকাশে বাতাসে। পাষন্ড পাশার পাশা খেলার অবসান হয়েছে। আবার তুরস্কে ফিরে এসেছে ঐশি বানী আল কুরআন। কুরআনের তা'লীম তাআ'ল্লুমে মুখরিত আজ তুরষ্কের নগর প্রান্তর। সেখানে তৈরি হচ্ছে হাজারও হাফেজে কুরআন। তৈরি হচ্ছে কুরআনের হাজারো লাখো খাদেম। আলহামদুলিল্লাহ।

উপসংহার

আজ মুসলিম উম্মাহ বিশ্বজুড়ে অপমানিত, নিপীড়িত ও লাঞ্ছিত। এর মূল কারণ আমাদের দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া। আমরা যদি কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে আসি, তাহলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। ইতিহাস সাক্ষী, যে জাতি কুরআনের আদর্শ গ্রহণ করেছে, তারা বিশ্ব নেতৃত্বে এসেছে। আর যে জাতি তা ছেড়ে দিয়েছে, তারা পতনের শিকার হয়েছে।

আল্লাহ আমাদের সঠিক পথের দিশা দিন এবং ইসলামের আলোতে আমাদের জীবন পরিচালিত করার তৌফিক দিন। আমীন।

তথ্যসূত্র

১. Mango, Andrew. Atatürk: The Biography of the Founder of Modern Turkey. Overlook Press, 1999.
২. Zürcher, Erik J. Turkey: A Modern History. I.B. Tauris, 2004.
৩. Kinzer, Stephen. Crescent and Star: Turkey Between Two Worlds. Farrar, Straus and Giroux, 2001.
৪. Ahmad, Feroz. The Making of Modern Turkey. Routledge, 1993.
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×