
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এ জীবনব্যবস্থায় ব্যক্তি যেমন নিজের আত্মার পরিশুদ্ধির দিকে মনোযোগ দেয়, তেমনি সমাজের কল্যাণেও ভূমিকা রাখে। ইসলামে গীবত বা পরনিন্দা এমন একটি ঘৃণিত গুনাহ, যার কারণে ব্যক্তিগত আমল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এবং সামাজিক সম্পর্কগুলো বিষিয়ে উঠতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে স্পষ্টভাবে গীবতকে হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন—
"يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ
أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ"
অর্থ: "হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক সন্দান থেকে দূরে থাকো, কিছু কিছু সন্দেহ পাপ। এবং গুপ্তচরবৃত্তি করো না এবং তোমরা একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে যে, সে তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা করো। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।" -সূরা হুজুরাত: ১২
এই আয়াতে গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো ভয়ংকর ও জঘন্য অপরাধ বলে চিত্রিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ গীবতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন—
"الْغِيبَةُ: ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ."
"তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু বলা যা সে অপছন্দ করে— সেটাই গীবত।" -মুসলিম, হাদীস: ২৫৮৯
তাহলে, গীবত এমন একটি গুনাহ, যা সমাজে হিংসা, বিদ্বেষ, অবিশ্বাস ও বিবাদ সৃষ্টি করে। একজন মু’মিনকে চাই, সে যেন নিজেকে গীবত থেকে দূরে রাখে এবং অন্যকেও এই মারাত্মক গোনাহ থেকে বাঁচায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো— আমি কীভাবে নিজেকে গীবত থেকে রক্ষা করব এবং অন্যকেও এই পাপ কাজ থেকে বিরত রাখব, বিশেষত যখন কেউ আমার সামনে গীবত শুরু করে?
এর উত্তম কৌশল হলো— কৌশলে, সদ্ব্যবহারে তাকে গীবত থেকে বিরত রাখা। যেমন ধরুন, কেউ যখন আপনার সামনে গীবত করছে, তখন আপনি তাকে সরাসরি থামাতে গেলে সে লজ্জা পেতে পারে বা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। তাই আপনি সহজ ও হিকমতপূর্ণভাবে যদি বলেন:
"ভাই, আমি নিয়ত করেছি, আমি কারো গীবত করব না। দয়া করে আপনি আমার জন্য দুআ করবেন— যেন আমি এই অভ্যাস থেকে বাঁচতে পারি। আমি চেষ্টা করছি নিজেকে সংশোধন করার, আপনি আমার পাশে থাকুন। যদি আমার মুখ দিয়ে কখনো গীবতের মতো কিছু বের হয়, তাহলে আমাকে সতর্ক করবেন।"
এইভাবে আপনি নিজেকে অসম্মানিত না করে, অপরকেও অপমান না করে তাকে বুঝিয়ে দিলেন যে, গীবত করা ঠিক নয়। এতে সে আপনাকে গীবত করতে উৎসাহিত তো করবেই না, বরং নিজেও লজ্জা পাবে এবং আশা করা যায়, সে যে গীবত করছিল তার সেই কাজটি অবশ্যই থেমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
এটি নবীজি ﷺ-র হাদীসের আলোকে একান্ত গুরুত্বপূর্ণ হিকমত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন—
"مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ، رَدَّ اللَّهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ"
"যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্মান রক্ষা করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুখকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।" -তিরমিযি, হাদীস: ১৯৩১
অতএব, গীবত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যেমন জরুরি, তেমনি অন্যকে এই গোনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও একটি ঈমানী কর্তব্য। হিকমত ও কৌশলের সাথে, সম্মান বজায় রেখে— আপনি নিজেও নিরাপদ থাকুন, সমাজকেও নিরাপদ রাখুন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে গীবতের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে, তা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন এবং অন্যকে রক্ষা করার ঈমানি শক্তি দিন। আল্লাহুম্মা আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




