somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

রহমাতুল্লিল আলামীন: নবী মুহাম্মদ ﷺ -এর জীবন এবং আধুনিক যুগে মানবকল্যাণের শিক্ষা

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
রহমাতুল্লিল আলামীন: নবী মুহাম্মদ ﷺ -এর জীবন এবং আধুনিক যুগে মানবকল্যাণের শিক্ষা

The image is collected from AllahsWord.com

ভূমিকা

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ -এর আগমন মানব ইতিহাসের এক অনন্য মাইলফলক, যা শুধুমাত্র ধর্মীয় আলোকবর্তিকা নয়, বরং সামাজিক, নৈতিক, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক কল্যাণের এক সার্বজনীন দর্শন প্রতিষ্ঠা করেছে। পৃথিবীর যেকোনো ব্যক্তি বা মনীষীর জীবনচরিত থেকে রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর জীবনচরিত সম্পূর্ণ ভিন্ন, কেননা তা এমন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা অন্য কারও জীবনে পাওয়া যায় না। নবীজি ﷺ -এর সিরাত বা জীবনচরিত জ্ঞানভিত্তিক, সুবিন্যস্ত, সুপ্রমাণিত, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে পরিপূর্ণ। এটি ঘটনাপ্রবাহের বিবরণ, ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে সংরক্ষিত। মহানবী ﷺ এই নশ্বর পৃথিবীতে এমনভাবে জীবনযাপন করেছেন যার মাধ্যমে ইসলামী ধর্ম জীবন লাভ করেছে, কুরআনের মর্ম স্পষ্ট হয়েছে এবং ইসলামী মূল্যবোধের ব্যাপারে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়েছে। তাঁর জীবনই ছিল কুরআনের নির্ভুল বাস্তবায়ন। এ জন্য আয়েশা (রাঃ)-কে নবীজি ﷺ -এর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কুরআনই ছিল তাঁর স্বভাব।

কুরআন মজীদে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাঁকে "রহমাতুল্লিল আলামীন" হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন, যা কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, বরং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবজাতি, প্রাণীকুল, উদ্ভিদ এবং প্রকৃতির জন্য দয়া ও কল্যাণের প্রতীক।

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ

আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি। -সুরা আল-আম্বিয়া: ১০৭

এই আয়াতটি নবীজি ﷺ -এর শিক্ষার সার্বজনীনতা প্রতিফলিত করে, যা আধ্যাত্মিকতা, সামাজিক ন্যায়, জ্ঞানচর্চা এবং পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে অভিন্নভাবে যুক্ত। বস্তুত মহানবী ﷺ -এর জীবনে রয়েছে মুমিনের জন্য উত্তম আদর্শ। ইরশাদ হয়েছে:

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। -সুরা আহজাব: ২১

নবীজি ﷺ -এর শিক্ষাই মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম শিক্ষা, কেননা স্বয়ং আল্লাহ তাঁকে উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তিনি তাঁকে দান করেছেন কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং তিনি যা জানতেন তা তাঁকে শিখিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন:

لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ

আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসুল প্রেরণ করেছেন, যে তাঁর আয়াতগুলো তাদের কাছে তিলাওয়াত করে, তাদেরকে পরিশোধন করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল। -সুরা আলে ইমরান: ১৬৪

মানব ইতিহাসে এমন বিশ্বস্ত, বিন্যস্ত ও বিস্তৃত জীবন ইতিহাসের দ্বিতীয় কোনো দৃষ্টান্ত নেই। পৃথিবীর অন্য কোনো মানুষের জীবন এভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি, যেভাবে মহানবী ﷺ -এর জীবনচরিত সংরক্ষিত। আর তাতে রয়েছে মানবজীবনের প্রতিটি স্তর ও পর্বের জন্য নববী নির্দেশনা—মানুষের পানাহার, পোশাক ও সাজসজ্জা, ঘুম ও জাগরণ, সফর ও স্থিতি, হাসি ও কান্না, ইচ্ছা ও অনিচ্ছা, ইবাদত ও লেনদেন, পার্থিব ও অপার্থিব জীবন, যুদ্ধ ও সন্ধি, কাছের ও দূরের মানুষের সঙ্গে আচরণ, বন্ধু ও শত্রুর সঙ্গে ব্যবহার, একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সব কিছুতেই তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে।

আজকের বিশ্বে, যেখানে পরিবেশ দূষণ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, জ্ঞানের অভাব, জাতিগত বিদ্বেষ এবং অর্থনৈতিক অসমতা মানবতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, নবীর শিক্ষা আরও প্রাসঙ্গিক। একবিংশ শতাব্দীতে নবী মুহাম্মদ ﷺ -এর শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা অপরিসীম, কেননা এগুলো ১৪০০ বছর আগের মতোই আজকের সমস্যার সমাধান প্রদান করে। এই নিবন্ধে আমরা নবীজি ﷺ -এর শিক্ষার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করব, সাম্প্রতিক তথ্য, গবেষণা এবং ঐতিহাসিক উদাহরণ যুক্ত করে, যাতে বোঝা যায় কীভাবে এই শিক্ষা আধুনিক সমস্যার সমাধান প্রদান করতে পারে।

বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

নবীজি ﷺ -এর জীবনধারায় সহিষ্ণুতা, ক্ষমাশীলতা এবং ভিন্নমতের প্রতি সম্মান স্পষ্ট। সারা জীবন ধরে, নবী তার আশেপাশের অমুসলিমদের সম্মান, পরামর্শ ও সাহায্য চেয়েছেন এবং তাদের সাথে বিশ্বাস ও নৈতিক মানদণ্ডের মতো সাধারণ ধর্মের ভিত্তিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সহজীবী সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির ফলস্বরূপ, তাদের মধ্যে সম্পূর্ণ শান্তি এবং সুরক্ষার সাথে জৈবপক্ষীয় লেনদেন ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামের প্রথম হিজরত আবিসিনিয়ায় (الهجرة إلى الحبشة), যেখানে আকসুম রাজ্যের সম্রাট নাজ্জাশী কুরাইশদের প্রতিনিধিদলের কথা শোনেননি এবং মুসলমানদের প্রতিরক্ষা সহায়তার মাধ্যমে তাদের আশ্রয় এবং নিরাপত্তা দিতে পছন্দ করেছিলেন। নবীজি ﷺ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের প্রতি সহিষ্ণু, ন্যায়পরায়ণ এবং ক্ষমাশীল ছিলেন, যেমন মদিনার সংবিধানে সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে:

لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ

ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই। -সুরা আল-বাকারা: ২৫৬

এবং

لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ

তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আমার জন্য আমার ধর্ম। -সুরা আল-কাফিরুন: ৬

এই শিক্ষা বহুত্ববাদী সমাজে প্রাসঙ্গিক, যেমন বসনিয়ার মতো মাল্টি-এথনিক সমাজে ইসলাম শান্তি ও ন্যায়ের মূল্যবোধ প্রদান করে। বিপরীত পক্ষের বিশ্বাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং আন্তরিকতা নিয়ে তাদের বক্তব্য শোনার এই মনোভাব নবীজি ﷺ -এর শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আধুনিক বৈচিত্র্যময় সমাজে ইন্টারফেইথ ডায়ালগ প্রচার করে। কিন্তু আজকের সমাজে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। Pew Research Center-এর ২০২৩ রিপোর্ট অনুসারে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ৩১টি দেশের মধ্যে অন্তত ১৭টিতে ধর্মীয় অভিযোগে বিচারবহির্ভূত সহিংসতা বিরাজমান, এবং ২০২২ সালে সরকারি ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। হাদিসে বলা হয়েছে:

كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا

মৃত মানুষের হাড় ভাঙা একজন জীবিত মানুষের হাড় ভাঙার সমান। -সুনান আবু দাউদ: ৩২০৭

এটি মৃতদেহের সম্মানের নির্দেশ দেয়। নবীজি ﷺ -এর শিক্ষা অনুসারে, যতই সমালোচনা আসুক, ক্ষমা ও সহিষ্ণুতাই অগ্রাধিকার পাবে। উদাহরণস্বরূপ, তায়েফের ঘটনায় পাহাড়ের দায়িত্বে নিযুক্ত ফেরেশতাকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, "নয়! আমি আশা করি আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন লোক বের করবেন যারা এক সত্য আল্লাহর উপাসনা করবে।" -সহীহ বুখারী, কিতাব বাদ'-আল-খালক

জাতিগত মূল্যবোধ এবং সমতা

আধুনিক যুগে জাতিগত বিদ্বেষ একটি জ্বলন্ত সমস্যা। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (UNDP) অধীনে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (MPI) অনুসারে, নয়টি নির্দিষ্ট জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে ৯০% এরও বেশি দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। নবীজি ﷺ স্পষ্ট করেছেন যে ত্বকের রঙ, ভাষা, জাতীয়তা, জাতি বা উপজাতির পার্থক্যগুলি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা প্রদত্ত পরিচয় ছাড়া কিছুই নয়। তিনি বলেন:

لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَىٰ عَجَمِيٍّ وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَىٰ عَرَبِيٍّ وَلَا لِأَحْمَرَ عَلَىٰ أَسْوَدَ وَلَا أَسْوَدَ عَلَىٰ أَحْمَرَ إِلَّا بِالتَّقْوَىٰ

কোন আরবের উপর অনারবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোন অনারবের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোন সাদার উপর কালোর এবং কোন কালোর উপর সাদার কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তাকওয়া ছাড়া। -শারহুত তাহাবী: ৩৬১

হাদিসটি স্পষ্ট করে যে প্রত্যেকেই আদম এবং হাওয়া থেকে এসেছে, তার জাতি বা বর্ণ নির্বিশেষে, এবং এইভাবে তাকে অন্যদের সাথে আচরণ করার সময় নম্রতা বজায় রাখা উচিত। নবীজি ﷺ কখনই একজনকে অন্যের উপর প্রাধান্য দেননি, এবং সবাই মনে করতেন যে তিনি তাদের চোখে সবচেয়ে প্রিয়। এই শিক্ষা আধুনিক জাতিগত সমতা আন্দোলনের সাথে অনুরণিত, যেমন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। কুরআনে বলা হয়েছে:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ

হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়পরায়ণ হও, আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হও, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে বা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। -সুরা নিসা: ১৩৫

এটি সামাজিক ন্যায়ের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে, যা আধুনিক সোশ্যাল জাস্টিস মুভমেন্টে প্রাসঙ্গিক।

দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সমাজে নিম্নবিত্তের যত্ন

ইসলাম অর্থনৈতিক সমস্যায় ব্যাপক মনোযোগ দিয়েছে। ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক শিক্ষা ও দিকনির্দেশনাগুলি অভাবী ব্যক্তিদের জন্য সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশের দাবি মনোনীত করেছে। হাদিসে বলা হয়েছে:

خَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ غِنًى، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ

সর্বোত্তম সদকা হল যা ধনী ব্যক্তি করে এবং নিজের উপরে নির্ভরশীলদের প্রথমে দেওয়া শুরু করে। -সহীহ বুখারী: ১৪২৬

এই ধারণাটি সমসাময়িক বিশ্বে অনুপস্থিত, ফলস্বরূপ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ২% জনসংখ্যা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক সম্পদের মালিক, এবং বাকি প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা দিনে ২ ডলারেরও কম আয় করে। অভাবী আত্মীয়দের মাধ্যমে দান শুরু করার কৌশলে সমাজে কেউ দরিদ্র থাকবে না। ইসলামে এটি বাধ্যতামূলক, যা বিশ্ব মুদ্রা তহবিল এবং জাতিসংঘের মতো সংস্থাগুলোর টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

সমাজে নিম্নবিত্তের যত্নে নবীজি ﷺ -এর নির্দেশ: "গরীবদের খাওয়ানো"। হাদিসে:

أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَىٰ مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ

কোন ইসলাম ভালো? অর্থাৎ, ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন: তুমি খাবার দাও যাদেরকে চেনো ও যাকে চেনো না এবং তাদেরকে সালাম দাও। -সহীহ আন-নাসাই: ৫০১৫

এমনকি ঝোল রান্নার ক্ষেত্রেও প্রতিবেশীকে ভাগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন নবীজি ﷺ। এটিই আধুনিকতম বিশ্বের সেই ধারণা যেখানে পৃথিবীকে কল্পনা করা যেতে পারে একটি পরিবার হিসেবে, এবং যেখানে প্রতিটি মানুষের সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায় এমনকি, খারাপ সময়ে অপরের যত্ন নেওয়ার দায়িত্বকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, মক্কায় দুর্ভিক্ষের সময় শত্রুদেরও খাদ্য পাঠানোর উদাহরণ আধুনিক দাতব্য প্রচেষ্টায় প্রাসঙ্গিক।

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় নবীর শিক্ষা

নবীজি ﷺ কেবল মানুষের কল্যাণের জন্য নয়, সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে প্রকৃতি সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্যের প্রতি সহানুভূতি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার।

إِنْ قَامَتِ السَّاعَةُ وَفِي يَدِ أَحَدِكُمْ فَسِيلَةٌ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا تَقُومَ حَتَّى يَغْرِسَهَا فَلْيَغْرِسْهَا

যদি কিয়ামত আসন্ন হয়, আর কারও হাতে একটি চারা থাকে, সে যদি তা রোপণ করতে পারে, তবে তা রোপণ করবে। -মুসনাদ আহমাদ: ১২৯০২

এই হাদিসটি প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্বকে চিরন্তন করে তোলে। নবীজি ﷺ প্রকৃতি, এর সম্পদ এবং অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীর প্রতি উচ্চ প্রশংসা এবং সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন, যে ধারণা নিয়ে অগ্রসর হতে ইচ্ছুক আজকালকার পরিবেশবাদীগণ। পানি সংরক্ষণের ধারণায় তিনি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসকে পরিমিত পানি ব্যবহার করে ওযু করতে বলেন। হাদিসে:

كُلْ وَاشْرَبْ وَالْبَسْ وَتَصَدَّقْ فِي غَيْرِ سَرَفٍ وَلَا مَخِيلَةٍ

খাও, পান করো, পোশাক-পরিচ্ছদ করো এবং দান-খয়রাত করো, অযথা বা কল্পনা না করে। কারণ মুমিনকে সবকিছুতে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে আদেশ করা হয়েছে এবং সবকিছুতে, এমনকি পানিতেও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। -আল-আমালি আল-মুতলাকা: ৩২

কুরআনে আরও বলা হয়েছে:

وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ ۚ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللَّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا

তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। -সূরা নিসা: ১১৯

এই আয়াত প্রকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করা এবং জেনেটিক পরিবর্তনের মতো কার্যকলাপকে সতর্ক করে এবং নিরুৎসাহিত করে। বর্তমানে, বাংলাদেশে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ২০০০ সালের তুলনায় প্রায় ১৫০% বেড়েছে, যা মাটি, জলজ জীববৈচিত্র্য এবং কৃষকের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। FAO-এর ২০২৪ রিপোর্ট অনুসারে, পেস্টিসাইডের ব্যবহার ক্রপল্যান্ড প্রতি ৯৪% বেড়েছে, যা বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ। UNESCO এবং IUCN-এর ২০২৪ রিপোর্টগুলো নিশ্চিত করে যে রাসায়নিক এবং জেনেটিক পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করার সমতুল্য। কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত জেনেটিক বীজ কৃষকদের দায়বদ্ধ করে, যা ইসলামী নীতির পরিপন্থী। নবীজি ﷺ -এর শিক্ষা অনুসারে, প্রকৃতি রক্ষা মানবকল্যাণের সঙ্গে যুক্ত, এবং এটি আমাদের দুনিয়ার নৈতিক দায়িত্ব। কুরআনের বৈজ্ঞানিক বর্ণনা, যেমন পানির চক্র এবং পৃথিবীর ভূ-আকৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণে যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে।

জ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রসার

নবীজি ﷺ -এর অন্যতম মৌলিক শিক্ষা জ্ঞানচর্চা। হাদিসে বলা হয়েছে:

طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ

জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ ও নারীর ওপর ফরজ। -সুনান ইবনে মাজাহ: ২২৪

এটি কেবল ধর্মীয় জ্ঞান নয়, সভ্যতার প্রতিটি শাখায় অনুসন্ধানের নির্দেশ। আরেক হাদিসে:

لَا تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمُرِهِ فِيمَ أَفْنَاهُ وَعَنْ عِلْمِهِ فِيمَ فَعَلَ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَعَنْ جِسْمِهِ فِيمَ أَبْلَاهُ

কিয়ামতের দিনে মানুষকে পাঁচ বিষয়ের জন্য জিজ্ঞাসা করা হবে: জীবন কীভাবে কাটিয়েছে, যৌবন কীভাবে ব্যয় করেছে, সম্পদ কোথায় অর্জন করেছে এবং কোথায় খরচ করেছে, জ্ঞান কীভাবে প্রয়োগ করেছে। -জামি আত-তিরমিজী

ইসলামের সোনালি যুগে (৮ম-১৩শ শতাব্দী) মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিশ্বকে অগ্রসর করেছেন। আল-রাজি চিকিৎসায়, ইবনে সিনা দর্শন ও চিকিৎসায়, আল-বিরুনি জ্যোতির্বিজ্ঞানে এবং ইবনে রুশদ যুক্তিবিদ্যায় অবদান রেখেছেন, যা ইউরোপীয় রেনেসাঁকে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু আজ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে R&D ব্যয় জিডিপির মাত্র ০.৮%, যেখানে বিশ্ব গড় ২.২%। Human Development Report ২০২৩ অনুসারে, এই দেশগুলোর অধিকাংশ মানব উন্নয়ন সূচকে পশ্চাদপদ। বাংলাদেশে শিক্ষা বাজেট জিডিপির মাত্র ১.৬৯-২%, যেখানে UNESCO ৪-৬% প্রস্তাব করে। কুরআনে বলা হয়েছে:

وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ ۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا ۖ وَأَحْسِن كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ

আল্লাহ তোমাকে যা-কিছু দিয়েছেন তার মাধ্যমে আখেরাতের নিবাস লাভের চেষ্টা কর, এবং দুনিয়া হতেও নিজ হিস্যা অগ্রাহ্য করো না। আল্লাহ যেমন তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তেমনি তুমিও (অন্যদের প্রতি) অনুগ্রহ কর। আর পৃথিবীতে ফাসাদ বিস্তারের চেষ্টা করো না। জেনে রেখ, আল্লাহ ফাসাদ বিস্তারকারীদের পছন্দ করেন না। -সুরা আল-কাসাস: ৭৭

জ্ঞানচর্চার অভাব কুসংস্কারকে উস্কে দেয়, যা নবীর শিক্ষার বিপরীত।

উপসংহার

নবীজি ﷺ -এর শিক্ষা মানবতার সর্বজনীন নৈতিক ভিত্তি প্রদান করে। আমরা যদি প্রকৃতি রক্ষা, সহিষ্ণুতা, জ্ঞানচর্চা, জাতিগত সমতা এবং অর্থনৈতিক ন্যায়ানুগ পন্থার সঠিক প্রয়োগ বাস্তবায়ন করে চলি, তবে সত্যিকার উম্মত হব। রহমাতুল্লিল আলামীন, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ ﷺ -এর উম্মত, অনুসারী এবং অনুগামী হিসেবে আমাদের অঙ্গীকার: নবীর রহমতের উত্তরাধিকার বহন করা। বিশ্ব মানবতাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দিকে আহবান করে যাওয়া। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদেরকে তাওহিদের বুলন্দ কালিমার মর্মবাণী শেখার এবং বিশ্বময় সর্বত্র তা ছড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন: আমীন।

রেফারেন্স

1. কুরআন মজীদ, সুরা আল-আম্বিয়া: ১০৭।
2. কুরআন মজীদ, সুরা নিসা: ১১৯।
3. কুরআন মজীদ, সুরা আল-কাসাস: ৭৭।
4. কুরআন মজীদ, সুরা আহজাব: ২১।
5. কুরআন মজীদ, সুরা আলে ইমরান: ১৬৪।
6. কুরআন মজীদ, সুরা আল-বাকারা: ২৫৬।
7. কুরআন মজীদ, সুরা আল-কাফিরুন: ৬।
8. কুরআন মজীদ, সুরা নিসা: ১৩৫।
9. মুসনাদ আহমাদ: ১২৯০২।
10. সুনান আবু দাউদ: ৩২০৭।
11. সুনান ইবনে মাজাহ: ২২৪।
12. জামি আত-তিরমিজী (হাদিস পাঁচ প্রশ্ন)।
13. শারহুত তাহাবী: ৩৬১।
14. সহীহ বুখারী: ১৪২৬।
15. সহীহ আন-নাসাই: ৫০১৫।
16. আল-আমালি আল-মুতলাকা: ৩২।
17. FAO. (২০২৪). Statistical Yearbook World Food and Agriculture 2024.
18. FAO. (২০২৪). Pesticides use and trade. 1990–2022.
19. UNESCO. (২০২২). Research and development expenditure in Muslim-majority countries.
20. Pew Research Center. (২০২৩). Government Restrictions on Religion.
21. Human Development Report. (২০২৩). UNDP.
22. IUCN & UNESCO. (২০২৪). Reports on biodiversity loss due to chemicals and genetic modification.
23. CPD. (২০২৪). Education Budget of Bangladesh.
24. Wikipedia & Various Sources. Islamic Golden Age scientists and influence on European Renaissance.
25. Open Doors & CSI. (২০২৪-২০২৫). Reports on religious intolerance in Bangladesh.
26. UNDP. Multidimensional Poverty Index (MPI) Reports.
27. World Bank. Global Poverty Statistics (2024).
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৮
১৯টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×