somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নিবর্হণ নির্ঘোষ
আমি এক প্রব্রজ্যা , আয়ু ভ্রমণ শেষে আমাকে পরম সত্যের কাছে ভ্রমণবৃত্তান্ত পেশ করতেই হবে । তাই এই দুর্দশায় পর্যদুস্ত পৃথিবীতে আমি ভ্রমণ করি আমার অহম দিয়ে । পরম সত্যের সৃষ্টি আমি , আমি তাই পরম সত্যের সৃষ্ট সত্য !!

মালা অথবা ম্যারি ক্লেয়র !!

০৬ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পিটার সারস্টেড
একটি মেয়ে , যে কিনা বর্তমানে (মানে সেই ষাটের দশকে) ব্রিটিশ ধনী ও অভিজাত শ্রেণীদের একজন হয়ে ওঠে । যার পরনের পোশাক থেকে শুরু করে অঙ্গশোভাকারী অলংকার সব কিছুতেই হালের অভিজাত ফ্যাশনের আভাস । যার চেনা জানা লোক হলো এমন ব্যক্তি যাদের পুরো দুনিয়া এক নামে চেনে । যাদের সাহচর্য মানেই যেকোন মানুষের জন্য সৌভাগ্যজনক । মেয়েটির জন্মদিন কিংবা বিশেষ কোন দিবসে তেমন মানুষদের থেকে আসে দামি ও সম্মানবৃদ্ধিজনক উপহার । এক কথায় এই মেয়েকে বলা যেতেই পারে এই বস্তুবাদী জগতে একজন সুখী কিংবা বলা যেতে পারে সকলের কাঙ্খিত জীবন উপভোগকারী ভাগ্যবতী কেউ । স্বীকার করাই যায় এমন জীবন চাইবে না এমন মেয়ে পাওয়া দুষ্কর !


হয়তো আরাধ্য যে সুখের হাতছানি নারীদের তাড়া করে বেড়ায় সেই সুখ জয় করে নিয়েছে এমন মেয়ে হিংসার কারণ হতেই পারে সকলের কাছে । কিন্তু তবুও থেকে যায় এমন কিছু যা ভ্রু কুঁচকে দিতে পারে আমাদের কিংবা কপালের ভাঁজে তৈরী করে দিতে পারে একটা প্রশ্নবিদ্ধ চিহ্ন ! আর আমাদের ভাবাতে পারে যে সুখ বলে আসলে কিছু নেই । আর যদি থাকেও তবে সে দুঃখের চাইতেও বড় নয় এবং সেই সুখের পেছনেও দুঃখ ওত পেতে থাকে ! সেই দুঃখের আভাস পায় না তার আশেপাশে থাকা কোন মানুষ কিন্তু দূর থেকে বসে থাকা এক যুবক তা টের পায় হরদম । আর সে জানে কোথায় তার দুঃখের ঠিকানা আর কীভাবেই বা এর অবসান হবে !



এমন মেয়ে আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছে । আরও সোজা করে বললে এই ব্লগেই আছে কিংবা আপনার পাশেরজন ! হ্যাঁ পৃথিবীর প্রতিটি কোনায় আছে এমন মেয়ে । আর তাদের প্রতিনিধিত্ব করে অঞ্জনের মালা কিংবা পিটার সারস্টেডের ম্যারি ক্লেয়র । হ্যাঁ এতক্ষণ যে মেয়েটির কথা বলছি তা হলো পিটার সারস্টেডের ম্যারি ক্লেয়রের কথা যা পশ্চিমবঙ্গে এসে হয়ে গেছে মালা । এখনও অনেক ছন্নছাড়া যুবকের প্রেম-বিরহের সাথী যে গান । আর অনেক যুবতিদের কাছে যা কেবল স্মৃতি হাতড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বর্তমানেই অন্ধের মত ডুবে থাকার সারথি !




১৯৬৯ সালে প্রকাশিত পিটার সারস্টেডের একটি অ্যালবাম যার মধ্যে একটি গানের শিরোনাম হলো Where You Do Go To My Lovely ? প্রকাশিত হবার পর পরই এই গানটি অনেক শ্রোতাপ্রিয় হয়ে ওঠে । সাধারণত সেই সময়ের সব গান ছিল প্রেমিকার কাছে প্রেমিকের প্রেমাবেদন কেমন তা প্রকাশকে ঘিরে কিংবা প্রেমবিরহের বিষয় নিয়ে । সেইসময় এমন একটা গান শ্রোতাদের অন্যরকম স্বাদ এনে দেয় । যদিও সেই সময় ছিল পৃথিবীতে নতুন নতুন গানের ধরনে পরিচিত হবার রেওয়াজ বছর ঘুরতে না ঘুরতে একেক ব্যান্ড একেক ধাঁচের ও শৈলীর গান প্রকাশ করছিল যা আবার একটি অন্যটি থেকে আলাদা । এবং সেসব কেবল প্রেম ঘিরেই ছিল না , আরও অন্য বিষয় নিয়েও তৈরী হত গানগুলো!



তবে পিটারের এই গান সবার কাছে খুব সমাদর পায় । কারণটা খুব সোজা । এখানে একটি গল্প বলা আছে । আর সেই গল্পটাই মানুষকে আপ্লুত করেছে আবার কাঁদিয়েছেও ।


গানটি যেমন শ্রোতাপ্রিয় হয় তেমনি অনেক গালগপ্পও তৈরী হয়ে যায় । সবার মুখে মুখে চলতে থাকে যে আসলে কোন মেয়ের কথা বলা হয়েছে ? সোফিয়া লরেনের না তো ?


হ্যাঁ গানটির মধ্যে যে গল্প বলা আছে তাকে যদি বাস্তবের কারও সাথে মেলাতে হয় তবে প্রথমেই যার নাম আসে তিনি হলেন সোফিয়া লরেন !

বিখ্যাত এই নায়িকার বাবা , যিনি কি না সেই সময়ের বেশ অভিজাত পরিবারের একজন ছিলেন । তিনি তার প্রেমিকা মানে সোফিয়ার মাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন । ফলে সোফিয়া লরেনের জীবন হয়ে পড়ে ভীষণ দূর্বিষহ ।তিনি তার মা আর তার দুই ভাই সমেত বাস করে ন্যাপলসের কাছাকাছি একটি অঞ্চলে । আর পিটারের গানে আমরা দেখতে পাই যে , গানের প্রায় শেষাংশে তিনি বলছেন :

I remember the back streets of Naples
Two children begging in rags
Both touched with a burning ambition
To shake off their lowly-born tags, they tried


এতটুকুতে বোঝাই যায় যে আসলে এটা সোফিয়া লরেনের জীবনের সাথে মিলে যায় । কিন্তু পিটার বললেন অন্য কথা । একবার তিনি বলেছিলেন যে এই গান সোফিয়ার থেকে অনুপ্রাণিত নয় তবে তার ছায়া এই গানে আছে । তবে কার থেকে অনুপ্রাণিত এই গান ?


পিটার তা বলেছেন । পিটারের জন্ম ভারতে , তার বাবা চাবাগানের কর্মকর্তা ছিলেন । পরে তারা বিলেতে পাড়ি জমান । ১৯৬৬ তে প্যারিসে তার পরিচয় হয় আরেক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মেয়ে অনিতা আতকে । এক সময় প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন , প্রণয় থেকে পরিণয় । কিন্তু অনিতা ছিলেন ডেন্টিস্ট , এদিকে পিটার গায়ক । কোন এক অমোঘ কারণে ৫ বছর পর তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায় । এই অনিতাকে উদ্দেশ্য করেই তিনি এই গানটি লিখেন ও সুর করেন । যদিও এই গানে ছায়া রয়ে গেছে অনেক মেয়েদের , যাদের জীবনটা ঝাঁ চকচকে কিন্তু তার নিচেই আছে কষ্ট !



অঞ্জন দত্ত

এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ১৯৯৩ সালে পুরনো গিটার নামে একটি অঞ্জন দত্তের একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় আর তার মধ্যে একটি গান হলো মালা ! এই গানটা পিটারের গানের বাংলা সংস্করণ বলা চলে । বিলেতি গানের বাংলা সংস্করণ পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছিল সেই ৭০-র দশক থেকে (যদি ভুল না করে থাকি তো)। সেই ধারাবাহিকতায় অঞ্জনও এই গান তৈরী করেন । যদিও এই গানে আলাদা এক আবেদন তৈরী হয়ে যায় ।


অঞ্জনের গানে আমরা দেখতে পাই , মালা নামের একজন তরুণী যিনি এখন বেশ ধনী কারও স্ত্রী এবং সেই সুবাদে বেশ বিলাসী জীবনযাপনকারী একজন ! যার সংসারটা সানন্দার পাতায় বর্ণিত সাজানো গোছানো, যার কথা বলা মধুবালার মত , যার চালচলন সোফিয়া লরেনের মত , যার সাথে বিশেষ সখ্যতা আছে ইমরান খানের ! যার জন্মদিন ১২ই মেতে , আর জন্মদিন মানেই বিশাল বিশাল সব উপহার, স্বামীর থেকে পাওয়া বিলাসী জীবন । অনেকটাই বলা যায় সেই পিটারের ম্যারি ক্লেয়রের মত মালা ! কিন্তু এখানে আলাদা এক চমক আছে । পিটার কিন্তু ম্যারি ক্লেয়রের কোন জন্মদিনের তারিখ উল্লেখ করেননি । এবং বলেননি ম্যারি তার জীবনে ছিল কি না বা হারিয়ে গেছে কি না । তবে অঞ্জনের গানে তা পাওয়া যায় । ১২ই মে , যে দিন এন্টালি সিনেমার পেছনের বস্তির মৌললীর মালার জন্মদিন সেইদিন হারিয়ে যায় মালা কোন এক যুবক থেকে !


পিটারের গানে যেমন দেখা যায় এক যুবক জানে কোথায় ম্যারি ক্লেয়রের কষ্টটা ঠিক তেমনি অঞ্জনের গানেও পাওয়া যায় । তবে অঞ্জনের গানে মালা দাঁড়িয়ে যায় অপরাধীর এক মূর্তি হিসেবে । এক যুবার ভালোবাসাকে মাড়িয়ে নিজেকে বিলাসে বিক্রি করে দেবার অপরাধে ! আর মালাকে যে যন্ত্রণা তাড়া করে বেড়ায় তার পেছনে যে এই সে নিজেই দায়ী তাই মনে করিয়ে দেয় অঞ্জন ! আর বুঝিয়ে দেয় তার যন্ত্রণার উপশম আছে তার কাছে !!



দুটো গানই নিজ নিজ জায়গা থেকে আলাদা আবেদন রাখে ও রেখে চলেছে । একটি পুরো বিশ্ব জুড়ে আরেকটি কেবল বাংলা ভাষাভাষিদের কাছে । হয়তো অনেকের জীবনে একবার জরিপ চালালে দেখা যাবে ম্যারি ক্লেয়র বা মালা একজন নয় অগণিত ! আর তারা হয়তো ভুলে থাকতে চায় তাদের পুরনো জীবনকে , আর এই যে জ্বলজ্যান্ত সত্যকে ভুলে থাকবার প্রচেষ্টা এবং এর ফলে যে অনুতাপ ও যাতনা তার উপশম বয়ে নিয়ে বেড়ায় অঞ্জন, পিটার অথবা নাদিম( এই নামটা যুক্ত হবার পেছনে যে কারণ তা অন্য পোস্টে জানা যাবে) !


আসছে ১২ই মে, আপনার কী জানা আছে কোন মালার কথা ? আর আপনার কাছেই কী আছে তার যাতনার উপশম ?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:৫৩
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×