চারদিক অন্ধকার নেমে এসেছে। রিক্সা এত আস্তে চলে কেন?
'তোমার টেনশন হচ্ছে?'
'বাসায় যাওয়া দরকার.....।আজকে দেরী হয়ে গেলো'
'এইতো চলে এসেছি'
বাসস্ট্যান্ডে অনেক মানুষ।
'তুমি দাড়াও তোমার রিক্সা ঠিক করে দেই'
হঠাৎ হাতটা খামচে ধরলাম।
' দেখো জান্তির আব্বু'
'কই?'
'এই যে সামনের রিক্সা ঠিক করছে! দেখলে কি ভাববে?'
'তাতে কি? চিনে তো আমাদের।'
তার কথা বলার আগ্রহ দেখে শার্টের হাতা ধরে টেনে আনি পিছনে দোকানের সামনে। হাতটা ছুটিয়ে বলে 'কথা বলে আসি।'
প্রথমে পিছন ঘুরে থাকলেও পরে ফিরলাম।
আংকেলের কথা কানে আসে আমার 'এইটুকু আসতে পারো আর বাসায় যাও না।?'
আমি তার পিছনে কাঁধের পাশ থেকে মুখটা একটু বের করি অপরাধীর মত।
সে হ্যান্ডসেক করতে করতে হাসিমুখে পরে যাবে কথা দেয়।
এইটা কি হলো! দেখল!
'শুনো?'
'হুম! কি বলো?'
'আমি ব্রীজ দিয়েই পার হই। তুমি চলে যাও। রিক্সা আমি নিয়ে নিবো।'
'আচ্ছা আমি দাড়াই'
আর কথা বলার সময় নেই। ছুটতে ছুটতে ব্রীজ পার হই আমি। বাস এসেছে খালি। মানুষের ভীর.....বাস ধরার জন্য
ভয় আর খারাপ মেজাজ নিয়ে রিক্সা খুজি
'কত্তগুলা জিনিশ ধরিয়ে দিলো!!' হাতে থাকে প্যাকেট গুলো সামাল দিতে দিতে
রিক্সা ঠিক হলো। আমি একাই না, একই রাস্তা বলে আরও একটা মেয়ে উঠলো।
'ভাই এখানে নামান....' তারপর আমার দিকে তাকিয়ে 'তুমি তোমার পা টা একটু সরাবে? আমি নামবো'
আমি পা সরাই
'আপা ঐদিকে নামাই।' জায়গাটা অন্ধকার! নিষেধ অমান্য করে সেখানেই নামিয়ে দিলো।
আমাকে আবার রিক্সা ধরতে হবে। ছিনতাইকারীর ভয় হচ্ছিল। যাহ: ব্যাগটাও ছিড়লো! নিচু হয়ে ব্যাগ তুলতেই এক মহিলাকে দেখি অন্ধকার আমার দিকে চেয়ে আছে। পোকা খাওয়া দাত বের করে
হাসছে 'খিক খিক'!
'ব্যাগ ধরতে টাকা লাগবো'
আমার প্রয়োজনটা সে বুঝে গেছে 'যা লাগে দিবো.....' একটা রিক্সা পর্যন্ত শুধু।
'আরেকটা জিনিশ লাগবো'
'কি?'
'এখানে আসেন'
রাস্তার সাথেই একটা বাসায় ঢুকলাম। আমাকে প্যাকেট বদলে দেয়া হলো। এইবার নিতে সহজ হবে, একাই পারবো।
আমি বাইরে দাড়িয়ে। সে বোধহয় জানত, আমি বলার আগেই ' একটা জিনিশ দেয়া লাগবো'
'কি?'
খপ করে আমার হাতটা ধরে সে, আরেক হাতে চকচক করে সেভিং ব্লেড। ভয় পেয়ে যাই।
উপরের বাসার বারান্দা থেকে এক মহিলা মাথা বাড়িয়ে তিরষ্কার করলো আমাকে 'খুব শখ ব্যাগ ধরবে! দিয়ে আসবে!'
ব্লেডটা আমার হাতে লাগতেই হ্যাচকা টানে হাত ছাড়ালাম এক দৌড়ে ভিতরে আবার।
সে আমার পিছু পিছু......শুধু একটা পোচ দিবে হাতে.....শুধু একটা! রক্ত দেখবো একটু.......একটু!
মাথা খারাপ!!! আমি ছুটে যাই....।
তারপর কি হলো জানি না.......হঠাৎই দেখলাম
তার গায়ের শাড়ি দিয়েই তাকে পেচিয়ে বাঁধছি.....বাড়ীর কাজের মেয়ে ভয়ে ভয়ে আমার ডাক শুনে সামনে এসে দাড়ায়। 'দড়ি নিয়ে আসো। বাঁধবো।'
দৌড়ে দড়ি এনে দিলো আমি বাধলাম। সাইজটা দেখতে একটা পুটলির মত হলো যা আমি হাতেই রাখতে পারি। সেটা আরও ছোট হতে লাগলো লিক হয়ে যাওয়া বেলুনের মতো আর ঐ মেয়ের চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। বিড়বিড় করছে সে 'বের হয়ে গেছে আবার!'
আমিও বুঝেছিলাম.....ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দৌড়াচ্ছি। এইতো সামনেই গেট.....পার হলেই মুক্তি!
পেছনে গলা শুনলাম আমি মেয়েটার 'আপা! আসছে! চলে আসছে!!'
চোখের কোণ দিয়ে নগ্ন বৃদ্ধার শুকনো শরীরের ছায়া দেখতে পেলাম......আমার অন্তর আত্না কেঁপে উঠলো!
আরেকটু গেলেই মুক্তি! আমি ছুটছি......এইতো আরেকটু গেলেই মুক্তি!
-----------------------------
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



