[১]
একটু আগে জোর এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। পথঘাট পানি প্যাঁচ প্যাঁচে না হলেও ভেজা ভাবটা রয়েই গেছে। বৃষ্টি ধরে আসতেই লোকজন হুড়মুড়িয়ে পথে নেমেছে শ শ ব্যাস্ততায়।
নয়না কোচিং থেকে বেরিয়ে চারদিকটা ভালো করে দেখে নিলো। কোচিং এ আজ ছেলে মেয়েরা কম এসেছে, মেয়ে বলতে সে একা বাকী সব ছেলেরা ।
নয়না এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো পথে একটাও খালি রিকশা নেই, রিকশা পেলে ভালো হতো তারপর কি যেন কিছু একটা ভেবে হাঁটতে শুরু করে দিলো।
যে টুকু সময় সে বাড়ির বাইরে থাকে সে টুকু সময় তার বেশ ভালো কাটে।বাড়ি ফিরে শুরু হয় তার দীর্ঘ কষ্টকর নিঃসঙ্গ জীবন।
মায়ের মৃত্যুর পরে তার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। সৎ মায়ের সংসারে যে কী জ্বালা যে না থে্কেছে সে জানবে না। নয়না একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
মেঘ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। আকাশ যথেষ্ট গম্ভীর যে কোন মুহূর্তে আবার বৃষ্টি হয়ে ঝরতে পারে।
এদিকে বেলা গড়িয়েছে বেশ খানিকটা। সন্ধ্যা হতে দেরি নেই। খিদে লেগে গেছে, বাড়ি ফিরে গেলেও খাবার এখন জুটবে না। রিক্সা ভাড়ার টাকা দিয়ে সে কেক কিনলো। এটুকু পথ অনায়াসে সে হেঁটে যেতে পারবে।
কি ভেবে আরেকটা দোকান দেখে সে এক প্যাকেট চিপসও কিনলো।
দোকানদারকে টাকা দিতে গিয়ে সুযোগ পেয়ে দোকানি তার হাতে মৃদু চাপ দিলো।নয়না কটমট করে তাকাতেই দোকানী কিছুই হয়নি এমন ভাব করে দাঁত কেলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- আপা আর কিছু লাগবে?
নয়না কোন কথা বলল না, সন্ধ্যা হয়ে আসছে ,না হলো দোকানীর সাথে সে ঝামেলা বাধাতো। অন্যায় তার একদমই সহ্য হয় না। ফাজিল একটা।
সে হাঁটতে লাগলো,রীতা আর কনা কেন কোচিং এ আসেনি বাসায় পৌঁছে ফোন দিতে হবে। স্কুলে তো ঠিকই এসেছিলো,কি হলো আবার।
যা হোক যেতে যেতে হঠাৎ সে খেয়াল করলো সে অন্য পথে চলে এসেছে। নয়না পথ ঘুরে আবার ফিরতি পথ ধরলো।এই পথটাতে সে পারতপক্ষে আসে না।এই রাস্তায় বখাটে ছেলে ছোকরা উৎপাত খুব বেশি রকমের।
বিশেষ করে ওয়ার্ড কমিশনারের ছেলে সোহাগ খুব বেশি রকমের বেপরোয়া। রীতা যে কী করে ওর মতো লোফার ছেলের প্রেমে পড়েছিলো কে জানে। ভাগ্যিস সে ছিলো তাই তো রীতা সোহাগের সাথে ব্রেক আপ করে নিলো।তবে এতে নয়নাকে সোহাগ হুমকি দিয়ে রেখেছে সময় সুযোগ পেলে সে একদিন না একদিন প্রতিশোধ নেবেই।
তাই ঝামেলা এড়াতে সে এদিকটা এড়িয়ে চলে।
-কি ব্যাপার নয়না জানু কই যাও, একা একা এই গোধূলি বেলায়?
সোহাগকে হঠাৎ দেখে নয়না একটু ঘাবড়ে গেলেও সে মুখ চোখ শক্ত করে উত্তর দিলো,
-কোথাও না।
- কি কও কোথাও না মানে? এই তো যাও, নাকি আমার কাছে আইছো? চল আমার বাসায় চলো।বাসা একেবারে খালি,দারুণ জমাটি আড্ডা দিমুনি শালী তোমার লগে। বউতো ভাগছে আজ শালিকা তুমি সব লেন দেন সুদ আসলে শোধ দিবা। কি কও খারাপ কইছি?
[২]
নয়না আর কোন কথা না বাড়িয়ে জোর পায়ে হাঁটতে লাগলো। সোহাগ দ্রুত এগিয়ে এসে হাত ধরে হ্যাচকা টানে নয়নাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলো।
-সোহাগের হাত থাইক্যা শালী আজ তোরে কেউ বাঁচাইতে পারবো না। খুব তেজ তোর না?
নয়না নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতেই সোহাগ আবার বলে,
-এমন করো কেন জান? তুমি তো আমার দুঃখটা বুঝলা না জান।
- আমি কিন্তু চিৎকার দেবো।
- দে না দে, শালী...... দেহি তোর গলায় কত জোর? খুব দেমাগ না? খুব দেমাগ? দেমাগ তোর আজ ছুটামু। মাগী তোর কারণে রীতা আমারে ছাইড়া গেছে। আমার লগে কথা কয় না। আমার মোবাইল নাম্বার ব্লক করছে। আমার লগে ব্রেক আপ নিছে।ব্রেক আপ। নারী নেত্রী হইছো? আজ নেত্রীর বস্ত্র হরণ হইবো কেউ ঠেকাইতে পারবো না।
নয়না কয়েকবার নিজেকে ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করার পর সে কৌশলে সর্বশক্তি দিয়ে সোহাগের অন্ডকোষ বরাবর সজোরে হাঁটু চালিয়ে দিলো।মুহূর্তে ভয়ানক ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে নয়নাকে ছেড়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগলে সোহাগ ।
নয়না সুযোগ বুঝে দৌড়াতে শুরু করতেই চার পাঁচজন ষন্ডা মার্কা পোলাপান তাকে দাবড়িয়ে ধরে ফেলল।এরা সবাই সোহাগের চামচা, তারপর তাকে টানতে টানতে নির্মাণাধীন একটা তিনতলা বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।
রাস্তায় লোকচলাচল যথেষ্ট হলেও কেউ এগিয়ে এলো না সেই সময় যেন এটা স্বাভাবিক ঘটনা । দু একজন মজা দেখার জন্য কিছু সময় দাঁড়িয়ে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সোহাগ এই এলাকার ওয়ার্ড কমিশনারের ছেলে তাকে ঘাটাবে এমন লোক এ তল্লাটে নেই।
এই সোহাগের সাথে নয়নার বান্ধবী রীতার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।
নয়নার পরামর্শে লোফার সোহাগের সাথে সম্পর্কের ইতি টানে রীতা।সেই থেকেই সোহাগ নয়নার উপর ক্ষিপ্ত।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে নয়নার চিল চিৎকারে কেউ এগিয়ে এলো না।কিছু উৎসাহী লোকজন সন্তপর্ণে উঁকি ঝুঁকি মেরে চলে যায় কিন্তু কাছে কেউ আসে না।
নয়না খুব দ্রুত বুঝতে পারে সাহায্যের আশা ক্ষীণ। বাস্তব জীবন এটা, সিনেমা নয় কেউ সাহায্যের জন্য আসবে না ।যা করার নিজেকেই করতে হবে।
হঠাৎ নয়না খেয়াল করে সোহাগ উঠে তার দিকে এগিয়ে আসছে।নয়নাকে ছেলেগুলো আধলা ইটের স্তুপের দিকে ঠেলে দিয়ে গোল করে ঘিরে ধরেছে। যেন শিকার বাগে আনার শেষ প্রস্তুতি। এখনি ঝাপিয়ে পড়েবে জানোয়ারের দল।
নয়না জানে কিছু বুদ্ধি না খাটালে এদের হাত থেকে তার নিস্তার নেই। সে দ্রুত পেছনে থাকা আধলা ইটের স্তুপ থেকে ইট তুলে সোহাগের মাথা বরাবর ছুড়ে মারে। তারপর মুঠো মুঠো বালু আর ইট নিক্ষেপ করতে থাকে সর্ব শক্তি দিয়ে বিপরীত দিকে।
অকস্মাৎ আক্রমণে সোহাগ রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে । আর তার সাঙ্গ পাঙ্গ সব পিছু হটে খুব দ্রুত। ইতিমধ্যে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘণ হয়ে এসেছে ,নয়না উন্মাদের মত ছুটতে থাকে।.....
সমাপ্ত
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:৪৬