somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য অনু গল্পঃ লুঙ্গি সমাচার (২)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
রম্য অনু গল্পঃ লুঙ্গী সমাচার


আজ দিনটা শুক্রবার। সুলেখা শুক্রবারের দিন দুপুরের একটু আগে নিয়ম করে নিয়াজকে নিয়ে বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যায় এবং দুপুরের খাওয়াটা সেখানেই সারে সেজন্য গুছিয়ে নিতে হয় বলে সকাল সকাল কাজের তাড়া থাকে। সে কিচেনে ময়দা মাখছে লুচি করবে বলে। এমন সময় নিয়াজ ডাকাডাকি শুরু করলো....
-সুলেখা ও সু.... লেখা..
সুলেখা ইষৎ বিরক্ত হয়। লোকটি দিন যত যাচ্ছে তত যেন তাকে চোখে হারাচ্ছে। স্বামীর এমন প্রেম সে উপভোগই করে তবে কাজের সময় যখন তখন প্রেম পেলে কার না বিরক্ত লাগে?
সুলেখা হাতের ময়দাগুলো ছাড়িয়ে হাতটা ভালো করে ধুয়ে আঁচলে মুছতে মুছতে একটু বিরক্ত হয়েই বলল
-আচ্ছা! সকাল সকাল কি হলো কি? কি শুরু করলে।গাই গরুর মত হাম্বা, হাম্বা হাম্বা করেই যাচ্ছো। ডাক এলো না-কি তোমার ?
-কি হচ্ছে কি! এসব কি ভাষা? কি আবোল তাবোল বল তুমি?
-যা বলি ব্যকরণ মেনেই বলি এড়ে গরু তোমাকে বলি কিভাবে?এড়ে গরু তো আর হাম্বা, হাম্বা করে না, করে তো ফোঁস ফোঁস । তাই ডাক এসেছে কি না জানতে চাইলাম।
- তোমার কিন্তু আজকাল কথাবার্তা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে ।
- হলে হচ্ছে, সত্যি কথা সবার সহ্য হয় না সেটা আমি জানি।
- দেখ ভালো হবে না বলছি। আমি কিন্তু আমি কিন্তু.....
- কিছু কি খারাপ বলেছি?মিথ্যে কিছু বলেছি? নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো।
- সকাল সকাল ঝগড়া করার মুডে আছো মনে হচ্ছে।
- আমি কি তোমার কাছে এসেছি? না তুমি আমায় ভ্যা ভ্যা করে ডেকেছো?
- তোমাকে ডেকেছি বলে কি লাগাতে হবে?
- লাগাতে হবে! হাউ ফানি!এখন দেখি তোমার ভাষার অবস্থা খারাপ একটু ভদ্র ভাষায় কথা বলো। ছি! নাকি তোমার কাছ থেকে এটুকু এখন আর আসা করা যায় না।
- আমাকে কেন জানি তুমি আর সহ্য করতে পারো না। সামনে ঘোরো কিন্তু কাছে আসো না।সব সময় কথা বলো চ্যাটাঙ চ্যাটাঙ করে। আমার প্রতি কথায় তোমার কাছে তেতো লাগে।
- অনেক অভিযোগ দেখছি ।
- সত্যি বললে অভিযোগ হয়ে যায়।আমার ধারণা...
-বলো চুপ করলে কেন? কি বলবে বলে ফেলো। যা বলার স্পষ্ট করে বলা ই ভালো।
- তুমি ঠিক অন্য ডালে বাসা বাঁধছো
-তুমি নিশ্চিত?
-হ্যাঁ
-তুমি নিশ্চিত?
-হ্যাঁ
-ঠাঠা পড়ুক সেই ডালে। যাগ গে যাগ গে ওসব বাদ দাও।আমার রাজ্যের কাজ পড়ে আছে।তোমার সাথে বক বক করার টাইম নাই। তুমি সন্দেহের আগুনে পুড়ে নিজেই জ্বলবা আমার কি। ডেকেছো কেন?
- আমার প্যান্টটা খুঁজে পাচ্ছি না।
- প্যান্ট খুঁজে পাচ্ছি না মানে কি? ঘুমানোর সময় তো দেখলাম ঠিক ঠাক পরে আছো। কেউ খুলে নিযে গেল নাকি? এমন আশ্চর‌্য কথা তো জীবনেও শুনিনি।
- আরে ঠিক ঠাক পরে তো ঘুমিয়ে ছিলাম।কিন্তু......
- কিন্তু কি?
- ওই যে ভোর রাতে গরমটা বেশি লাগছিল তাই খুলে টুলে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলাম।
- আ মলো যা! গরম তোমার ই লাগে।
- আস্তে পাশের ফ্ল্যাটের ওই ভাবি কিচেনের জানলায়, শুনছে মনে হয় আমাদের কথা।
- শোনে শুনুক তোমার কীর্তি, কত দিন বলেছি ওসব হাফ ফ্যান্ট পরে শুয়ো না তো ।কে শোনে কার কথা!কত দিন কত সমস্যা হয়েছে তুমিই বলো। ঠিক সময় খোলাখুলি ঝামেলা।যাও বা খোলে অন্ধকারে ঠিক মত খুঁজে পাওয়া যায় না। সেদিন রাতে চোর ধরা পড়লো আর তুমি হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে দিগম্বর অবস্থায় চলে গেলে লোকের মধ্যে।নিশ্চয় প্যান্ট খুঁজে পাওনি ঠিক সময়ে। তুমি চোর চোর বলে দৌড়াচ্ছো আর আমি তোমার পিছন পিছন প্যান্ট পরো প্যান্ট পরো বলে দৌড়াচ্ছি। আচ্ছা আমার সাহায্য ছাড়া কোন কাজটা ঠিক মত পারো বল তো! কত বার বলেছি লুঙ্গি পরো লুঙ্গি পরো। লুঙ্গি পরা প্রাকটিস করো।যদি আমার কথা শুনতে তাহলে অনন্ত এই লজ্জায় পড়তে হতো না।
- লুঙ্গি পরে শুলে তো আমার লুঙ্গি উপরে উঠে যায়।তখন আরেক ঝামেলা।
- আসলে তোমার হুশ বোধ সব সময় কম। কম কথা শুনতে হয় না এজন্য আমার!ঘুমালে সাহেব একেবারে ঘাটের মড়া! না হলে বিয়ের সাত দিনের মাথায় শ্বশুর বাড়িতে কেউ অমন মশারি উদোম করে হেড লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
- আরে সেজন্য তো! ওই ঘটনার পর থেকে লুঙ্গি আমার দুচোখের বিষ।
- রুমকির সাথে সেই থেকে আর আমি মুখ উঁচু করে কথা বলতে পারি না। আগে কত সমীহ করতো আমাকে কোন কিছু বলার আগে দুবার ভাবতো আর এখন আমায় দেখলে শুধু মুখ টিপে হাসে । সব তোমার জন্য। আমার মান সম্মান আর রইলো না কোথাও।
বলেই অকষ্মাৎ সুলেখা কাঁদতে লাগলো।
- আরে আরে কাঁদবার কি হলো। অন্য কেউ তো দেখেনি । শালিকা বলে কথা, না হয় একটু....
সুলেখা চোখ মুখ পাকিয়ে দাঁত মুখ খিচিয়ে বলল
-চুপ একদম চুপ! তোমার বনের রাজার টারজান ইমেজ আজ আমি ভাঙছি। বেহায়া পুরুষমানুষ কোথাকার... বলেই চাদর ধরে দিলো এক টান।....।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক


সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:০৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×