আমি কি বেঁচে আছি?
এই অবস্থাকে কি বেঁচে থাকা বলে!?
জীবন্মৃত হয়ে শ্বাস নেওয়া, নিত্যকর্ম করাকে
আর যাই হোক বেঁচে থাকা নয় কোন রকমে টিকে থাকার চেষ্টা বলা যেতে পারে ।
আমার ছেলেটি এখন আর কলেজে যেতে চায় না... নানাবিধ কারণ আছে।
তার উপর জুলাই যোদ্ধা বলে কথা!
কত সুযোগ সুবিধা এখন তার!
সে এখন বড় নেতা।
শুনেছি ডিপ ষ্টেটের নেক নজরে আছে।
ভবিষ্যৎ দারুণ উজ্জ্বল!
নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে সম্প্রতি ।
আরও কত কি।
আছে নিজের মত।
মেয়েটি কলেজের চৌকাঠ আর মাড়াতে চায় না ।
সারাদিন ঘরের অন্ধকার কোনে মুখ লুকায়।
আতঙ্ক নাকি অন্য কিছু?
কেউ কেউ ওকে খোঁচা মেরে বলে আর করবি ডিপি লাল?
আর করবি আন্দোলন?
কেমন লাগছে স্বাধীনতা 2.0?
কি হয়েছে ওর সাথে? কোন কারণে আশাভঙ্গ? অনুতপ্ত?
আমি অবশ্য জানি না।
শীত শেষের এক বিকেলে বাড়ি ফিরে
সেই থেকে সে ঘরবন্দী আর তেমন কথা বলেনি কারো সাথেই ।
ভাগ্যকে আমি আর দোষ দেই না।
এসবই হয়তো হবার ছিল।
আমার ব্যবসা দোকান লুট হয়ে গেল ২৩ ডিসেম্বরের ২০২৪ এর ফজরের ওয়াক্তে।
অনেকেই দেখেছে।
কে কে ওখানে ছিল, কে পাথর দিয়ে ধাতব তালাগুলো ভেঙেছে একে একে।
কে কি নিয়েছে। পিক-আপের নম্বরটা কত?
অনেকই দেখেছে নীরব দর্শক হিসাবে
কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেনি।
থানা পুলিশ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না
উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সৎ পরামর্শে তাই আর ও পথ মাড়াইনি সংগতকারণে।
আমার স্ত্রী হাসপাতালে সেই অগ্নি সংযোগ আর লুটপাটের দিন থেকেই।
ভয়াল ৫ই আগস্ট।
বিভীষিকার রাত্রি
হায় স্বাধীনতা 2.0!
স্বাধীন দেশে তথাকথিত নবীন স্বাধীনতা এসেছে নব উদ্যমে কিন্তু শান্তি শৃঙ্খলা?
ঘটনার ঘনঘটায় জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকে নানাবিধ ট্রমা জুলেখার পিছু ছাড়লো না কিছুতেই।
আর তাই হয়তো হাসপাতালের বেডই এখন জুলেখার স্থায়ী ঠিকানা।
আর আমার ঘর?
আমার সংসার?
সেতো কবেই তছনছ..
আমার প্রিয় বইগুলো সব ছাই হয়ে পড়ে আছে
উড়ন্ত ধুলো আর মাটি মিশে।
একবছর দীর্ঘ সময়..
আমার শখের গানগুলো এখন আর বাজে না টেপরেকর্ডারে।
আমার টবের ফুলগাছগুলো অনাদরে অভিমানে শুকিয়ে গেছে কবে কবে।
লুট হয়ে যাওয়া দীঘির বাতাস থমকে গেছে আমার ব্যলকনিতে
আমার প্রিয় ব্যলকনি আজ ধুলায় ধূসর।
ঘর ভর্তি মাকড়সার জাল..
সবচেয়ে অদ্ভুত
আমার কাছের মানুষগুলো এখন ভিন্ন মতাবলম্বী!
আমাদের আত্মমর্যাদা, ইতিহাস, সাহসের ধারা, সব ডুবে গেছে আজ অন্ধকারে।
পাথর সময় বুঝি একে বলে!
কয়েক দশকের পুরনো বন্ধুরাও কেউ কেউ হয়ে গেছে অচেনা।
আবার শত শত নতুন মুখ এসে সেই শূন্যতা পূরণ করেছে!
কবে কবে যে কি করে হলো এসব! বুঝিনি।
আমি সম্ভবত ক্লান্ত!
বুঝিনি কিছুই বুঝিনি
দুটো কথা বলে শান্তি নেই কোথাও
বিভেদ ছিল বিভেদ আরও বেড়েছে...
পরিস্থিতি বলছে আবারও নক্ষত্রের পতন অনিবার্য!
আগুনের দিন শেষ হবে একদিন।
দেশভাগ হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক
বিহারী -পাকিস্তানি প্রেমি।
ভারত প্রেমি।
এই ভীড়ে দেশপ্রেমিক কোথায়?
ধার্মিকতার নামে ধর্ম ব্যবসায়ী
ডান বাম নানাপন্থিদের সদম্ভ উত্থান।
কত যে প্রকার বিভেদ বিভাজন,শেষ কোথায়?
আমার বৃদ্ধ মা এখন আমাদের ভুতুড়ে বাড়িটির একমাত্র বাসিন্দা।
না-কি পাহারাদার?
নিতান্ত সে স্বামীর ভিটা ছাড়বে না তাই তার এই অবস্থান
না-কি এ এক নীরব প্রতিবাদ।
একটা পরিবার
কত শত স্বপ্ন
আশা আকাঙ্খা
কত যত্নে গড়া সৌহার্দপূর্ণ জীবন
অথচ
আজ আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন ... একই দেশে মোটাদাগে মন-মানসিকতা বিভক্ত
ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত
কেউ কাউকে মানি না।
একসাথে বসে খাওয়ার পাঠ চুকেবুকে গেছে বহু আগে
হাসি ঠাট্টা গান লুকিয়েছে কোথায় কে জানে!
ভবিষ্যৎ? সেও জানা নেই।
ছদ্ম বিপ্লবের টান্ডবে আমার স্বাধীন দেশ
আজ পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী।
হায় একাত্তর
তুমি বরাবরই আক্রান্ত!
হায় আমার স্বদেশ
তুমি বারবার রক্তাক্ত।
হায় অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তুমি আর কত হবে ক্ষত- বিক্ষত?
সেই পুরানো শকুন বারবার খামচে ধরে আমার লাল সবুজ পতাকা
বারবার ক্ষত বিক্ষত করে আমার সোনার বাংলাকে।
ভুলে ভরা দুঃশাসনে জর্জরিত আদ্যোপান্ত।
কে নেবে দায়!
কলোনিয়াল পাওয়ার আর কতবার কতভাবে অসন্তোষ ছড়াবে এই ছোট্ট ভূখণ্ডে?
কতবার?
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


