ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর নগ্ন হামলার শিকার হয়েছে গণমাধ্যম। আগুন দেয়া হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলে নয়া দিগন্তের প্রধান কার্যালয়ের নিচে প্রেস ও গাড়িতে। জুরাইনে পত্রিকাটির প্রেসেও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে ১৫-১৬ জনের একদল দুর্বৃত্ত জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে পত্রিকা অফিসের সামনে নির্বাহী সম্পাদকের গাড়িতে আগুন দেয়। আগুনে পুড়ে যায় নিচতলার প্রেসে রাখা কাগজ। ইটপাটকেল ছোড়া হয় চারতলার বার্তা কক্ষেও। এর কিছুক্ষণ পর জুরাইনে পত্রিকার প্রধান প্রেসেও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। আগুনে গাড়ি ও ছাপানোর জন্য রাখা কাগজের রোল ভস্মীভূত হয়। পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ পত্রিকা অফিসে ঢুকে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। পুলিশের হাতে সাংবাদিক কর্মচারীরাও নাজেহাল হন। প্রেসকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায় পুুলিশ। এ ঘটনার পর সাংবাদিক-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচি থেকে আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম পত্রিকার বর্জন ও হামলার ফ্যাসিবাদী উসকানি দেয়ার তিন দিনের মাথায় পত্রিকা অফিসে হামলা ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটল।
এদিকে শাসক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় ফ্যাসিস্ট শক্তি আমার দেশ-এর অফিসেও হামলা করার হুমকি দিয়েছে। আমার দেশ-এ সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই পত্রিকাটিতে আগুন দেয়া ও গ্রাহকের কাছে পত্রিকা পৌঁছানোয় বাধা দেয়া হচ্ছে। শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে আমার দেশ-এ অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে। গতকালও রংপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ ও লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমার দেশ-এ অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হকারদের এ পত্রিকা বিক্রিতে বাধা ও হুমকি দেয়া হয়েছে।
তবে সব বাধা, বিপত্তি ও হুমকি উপেক্ষা করে দেশপ্রেমিক জনতা আমার দেশ আগের চেয়েও আগ্রহভরে পড়ছেন। তারা সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে আমার দেশ-এর প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছেন। সাহস জোগাচ্ছেন আমার দেশ-এর অকুতোভয় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। গত কয়েক দিনে আমার দেশ-এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং অনলাইন পাঠক সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনিকভাবে চাপ দিয়ে কেবল অপারেটরদের মাধ্যমে দিগন্ত টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের ওপর এ নগ্ন হামলা ও কণ্ঠরোধের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন আজ প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সকাল ১১টায় প্রেস ক্লাবের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
নয়া দিগন্তে হামলা ও আগুন : প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে নয়া দিগন্ত পত্রিকা অফিসে হামলা চালায় ও পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সালাউদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের গাড়ি ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা পুলিশের কাছ থেকে লাঠি নিয়ে হামলা চালালেও উপস্থিত পুলিশ তাদের বাধা না দিয়ে সহায়তা করেছে। এ ঘটনার পর পত্রিকার সাংবাদিক-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, দুপুর দুইটার দিকে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি নটর ডেম কলেজ অতিক্রম করার সময় মতিঝিল শাপলা চত্বর এবং আরামবাগ পুলিশ বক্সের দিক থেকে পুলিশ মিছিলটি ঘিরে ফেলে। এ সময় উভয় দিক থেকে পুলিশ মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণেরও ঘটনা ঘটে। পুলিশি অ্যাকশনে মিছিলকারীরা একপর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ যুগান্তরের গলি, নয়া দিগন্তের গলি, ইডেন কমপ্লেক্সের গলি এবং ঈগল পরিবহনের ডিপোতে ঢুকে পড়ে। সেখানে নয়া দিগন্তের কার্যালয়ের গেট তখন বন্ধ ছিল। পুলিশ সেসব স্থানে তল্লাশি করে মিছিলকারী সন্দেহে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে আটক করে। পুলিশ এ সময় কয়েক দফা নয়া দিগন্তের সামনে দিয়ে ঘুরে যায়। ঈগলের ডিপোর ভেতরে বাসের নিচে অবস্থান নেয়া বেশ কিছু লোককে পুলিশ মিছিলকারী সন্দেহে গ্রেফতার করে।
ঠিক এমনই সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ১৫-১৬ জনের একদল দুর্বৃত্ত পুলিশের সামনেই নয়া দিগন্ত কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাংচুর শুুরু করে। তারা নয়া দিগন্ত কার্যালয়ের সামনে রাখা গাড়ি ভাংচুর করে এবং একপর্যায়ে গাড়িতে ও প্রেসে অগ্নিসংযোগ করে। মুহূর্তে আগুনের লেলিহান শিখা দাউদাউ করে জ্বলা শুরু করে। এতে আশপাশে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার মানুষ, ব্যবসায়ী এবং পথচারীরা মুহূর্তে ছুটে আসেন নয়া দিগন্ত কার্যালয়ের সামনে। অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে নয়া দিগন্তের সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিচে নেমে এলে দুর্বৃত্তরা কার্যালয়ের পেছনের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যান। সাংবাদিক-কর্মচারীরা স্থানীয় লোকদের সহায়তায় তখন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। নিজস্ব শক্তিশালী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ততক্ষণে আগুনে নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের পরিবহনে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায় এবং নিচতলার প্রেসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে রাখা ১৫-১৬টি কাগজের রোল পুড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বলেছেন, যারা আগুন লাগিয়েছে তারা জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে পালিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও সংবাদপত্রের কর্মীরা আগুন নেভানোর পর পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পোশাক ও সাদা পোশাকের ডিবি পুলিশ অফিসটিতে অভিযান চালায়। এ সময় তারা অফিসের সংবাদকর্মী ও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ ব্যাপারে সংবাদিকরা এডিসি মেহেদী হাসানের কাছে তল্লাশির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তল্লাশি চালানো হয়েছে। আর অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে মেহেদী হাসান আরও জানান, যারা আগুন লাগিয়েছে তাদের শনাক্ত করা যায়নি। তবে জামায়াত-শিবির বা অন্য কেউ এ আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনার রেশ না কাটতেই বিকালে নয়া দিগন্তের জুরাইন প্রেসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সেখানে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা বলেছেন, বিকালে অস্ত্রধারী ১২ যুবক প্রেসে ঢোকার চেষ্টা করে। এ মসময় তারা বাধা দিলে দুর্বৃত্তরা নিরাপত্তাকর্মী শাহীনকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গেট খুলে দেয়ার জন্য বলে। তাদের প্রত্যেকের হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। গেট খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রেসের ভেতরে ঢুকে কাগজের রোলে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এভাবে একের পর এক কাগজের রোলে যখন দুর্বৃত্তরা আগুন লাগাচ্ছিল তখন স্থানীয় লোকজন ছুটে আসেন তাদের প্রতিহত করতে। দুর্বৃত্তরা তখন পালিয়ে যায়।
দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পরে স্থানীয় লোকদের সহায়তায় প্রেসের নিরাপত্তাকর্মীরা আগুন নেভাতে শুরু করেন। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ঘণ্টাখানেক চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। আগুনে প্রেসে পত্রিকা ছাপানোর জন্য রাখা কাগজ পুড়ে গেছে।
এ ব্যাপারে নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক সালাউদ্দীন মো. বাবর জানান, দুপুরে অফিসের এক পিওনের কাছে খবর পাই বাইরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। তখন অফিসের নিরাপত্তা রক্ষীদের বলি তারা যেন নয়া দিগন্তের প্রবেশের প্রধানপথ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু, কে বা কারা এসে অফিসের গাড়ি ও প্রেসে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, দেশের অন্যতম প্রধান দৈনিক নয়া দিগন্ত। পত্রিকাটি সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে দেশ ও জাতির জন্য নিস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের ওপর হামলা একটি লজ্জাজনক ঘটনা। যেসব দুর্বৃত্ত এ কাজ করেছে তারা মুক্ত গণমাধ্যমের শত্রু। এসব গণমাধ্যমের শত্রুদের মোকাবিলা করার জন্য তিনি সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবন্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি অবিলম্বে অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন।
বিএনপি মহাসচিবের নিন্দা : দৈনিক নয়াদিগন্ত কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান আহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পৃথক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সন্ত্রাসনির্ভর বর্তমান আওয়ামী সরকার মানুষের কল্যাণের পথ পরিহার করে কেবলমাত্র নিজেদের দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিরোধী মতামতকে গলা টিপে হত্যা করার জন্য সরকার তার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করছে। নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তারই দৃষ্টান্ত। প্রথম আলো সম্পাদক আহত হওয়ার ঘটনায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অগণতান্ত্রিক ও সন্ত্রাসমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে সমাজে ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি অপরাধীদের শাস্তি দাবি করেন।
রংপুরে আমার দেশ পত্রিকায় আগুন : রংপুরে আবারও আমার দেশ পত্রিকায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে নগরীর প্রেস ক্লাব চত্বরে একদল যুবক পত্রিকার কপিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনরত মিছিল শেষে পত্রিকা পোড়ানো হয়। একটু পরেই তারা সেখান থেকে চলে যায়। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে আমার দেশ পত্রিকায় আগুন দেয়া হয়।
টাঙ্গাইলে পত্রিকা বিক্রিতে বাধা, বিশিষ্টজনদের নিন্দা : টাঙ্গাইল শহরে গতকাল আমার দেশ বিক্রি করতে দেয়নি সরকারদলীয় লোকজন। শহরের প্রাণকেন্দ্র নিরালা মোড়ে অবস্থিত টাঙ্গাইল পেপার হাউস ও পুরাতন বাস টার্মিনালে আবেদীন পেপার হাউসে গত সোমবার রাতে সরকারদলীয় লোকজন আমার দেশ বিক্রি করতে নিষেধ করে দেয়। ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে কয়েকজন যুবক নিষেধ না মানলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও হুমকি দেয়। ফলে এ দুটি পেপার হাউস থেকে শহরে আমার দেশ বিক্রি হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পত্রিকা বিক্রেতা বলেন, জুট ঝামেলার ভয়ে হকাররা আজ আমার দেশ বিক্রি থেকে বিরত থাকে। পত্রিকা এজেন্টরা জানায়, তারা চাপের মুখে পত্রিকা বিক্রি করতে পারেনি।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট কবি বুলবুল খান মাহবুব বলেন বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা গণতন্ত্রকে হত্যার শামিল। এটা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। প্রফেসর মির্জা আবদুল মোমেন বলেন, পত্রিকা বিক্রিতে বাধা দেয়া গণতন্ত্রের অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো পত্রিকা বিক্রি বন্ধ করে দিতে হবে এটা তো ঠিক নয়। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জেলা সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। জোর করে পত্রিকার প্রচারণা বন্ধ করে দেয়া সুষ্ঠু গণতন্ত্রচর্চার পরিপন্থী।
ময়মনসিংহে আমার দেশসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় আগুন : গতকাল সকালে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক সংবাদপত্রের গাড়ি থেকে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা নামানোর পর কয়েকটি পত্রিকার বান্ডিল পুড়িয়ে দেয়। ময়মনসিংহ বুক স্টলের ম্যানেজার অজিজুল হক জানান, ঢাকা থেকে আসা সংবাদপত্রের গাড়ি স্থানীয় রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে এসে পত্রিকা নামনোর পর একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক লাঠিসোটা নিয়ে বুক স্টলের ভিতরে ঢুকে দৈনিক আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, ইনকিলাব, সকালের খবর ও প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার বান্ডিলে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যায়। আগুনে আমার দেশ-এর ৯০০, নয়া দিগন্তের ৬৭৩, সংগ্রামের ২০০, ইনকিলাবের ১০০, প্রথম আলোর ৩০০, সমকালের ১০০, সংবাদের ৬২, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ৬০, যুগান্তরের ৩৫ কপি পত্রিকা পুড়ে যায়। ফলে আমার দেশের জন্য ময়মনসিংহে হাহাকার পড়ে যায়। অনেকে বিকল্প ব্যবস্থায় বেশি দামে পত্রিকা কেনেন।
নেত্রকোনায় পত্রিকায় আগুন, দিগন্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ : নেত্রকোনায় সোমবার রাতে আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ করেছে তরুণ প্রজন্ম সংগঠনের ব্যানারে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি চাই মঞ্চে এসব পত্রিকায় আগুন দেয়া হয়। এ সময় জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সল আহমেদ রনি, সম্পাদক আলম, ছাত্রলীগ নেতা অসীম, সাব্বির খান প্রিন্স, মাহবুব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জেলা শহরের একমাত্র কেবল অপারেটর ‘ফেইথ ক্যাবল’ গত রোববার সন্ধ্যা থেকে পুরো জেলায় দিগন্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে জেলার ১০টি উপজেলায় দিগন্ত টিভির দর্শকরা চ্যানেলটি দেখতে পারছেন না।
মানিকগঞ্জে কয়েকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর : জেলার প্রেস ক্লাব চত্বরে ৩ মিনিটের নীরবতা পালন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে শাসক দলের প্রতিবাদকারীরা ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ, প্রাইম লাইফ ইসলামী ইন্স্যুরেন্স অফিস, বিআরবি কেবল অফিস, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসসহ জেলার বেশ কয়েকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অফিসে ভাংচুর চালায়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
লালমনিরহাটে ক্ষোভ : আমার দেশ পত্রিকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লালমনিরহাটের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের মানুষ। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মাহমুদুর রহমান লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সত্য কথা প্রকাশের কারণে দৈনিক আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বিবৃতিদাতারা হলেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, আদিতমারী কালিগঞ্জের সাবেক এমপি সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ হেলাল, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা, লালমনিরহাট জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার, অ্যাডভোকেট আবুল ফাত্তাহ প্রমুখ। (সুত্র ৈদিনক আমার েদশ)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



