somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কূপমণ্ডূক

৩০ শে মে, ২০২০ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'কূপ' মানে কুয়ো আর 'মণ্ডূক' মানে ব্যাঙ, দুইটা মিলে হয় কূপমণ্ডূক মানে হচ্ছে কুয়োর ব্যাঙ। কুয়োর ব্যাঙের দুনিয়া হচ্ছে কুয়োর ভেতরের সেই অল্প জায়গা, সে ছাড়াও যে কুয়োর বাইরে আরো অনেক প্রানীর অস্তিত্ব বিদ্যমান তা সে জানে না, এই কুয়োর জলের বাইরেও যে অসংখ্য নদী সাগর রয়েছে সে সম্পর্কে তার কোন ধারণা নাই।

আমরা অনেকেই আছি যারা 'যা জানি এবং দেখেছি' সেটার বাইরে কোন ধারণা রাখিনা, এই বিশ্বজগতকে আমরা আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান দ্বারা বিচার করি। আমরা হচ্ছি কুয়োর সেই ব্যাঙের মতো৷ সক্রেটিসের ভাষায় বলা যায়, আমরা যে জানিনা সেটাই আমরা জানিনা, অর্থাৎ নিজের অজ্ঞতা সম্পর্কেও আমাদের ধারণা নাই। এই না জানাদের দল অনেক বড়।

পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ মানুষই চিরকাল তাদেরকে শিখিয়ে দেওয়া চিনিয়ে দেওয়া পৃথিবীর মধ্যে আটকা থেকে মরে যায়, তারা জানেওনা যে তারা অন্যের তৈরী করা পৃথিবীতে অন্যের জন্য অন্যের স্বার্থে বাঁচে।

সাফল্য আর ব্যার্থতার যে সংজ্ঞা আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হচ্ছে খুব অল্প মানুষই সেই সংজ্ঞার বাইরে চিন্তা করতে পারে, জীবনে সফল মানুষ বলতে আমরা যাদের নাম জেনেছি এবং যাদেরকে অনুসরণ করতে বলা হয় তারা প্রায় সবাই আর্থিকভাবে সফল। আমাদেরকে তাদের উদাহরণ দিয়ে বলা হয় "এর মতো হতে পারলেই তুমি জীবনে সফল" স্বাভাবিকভাবেই বেশীরভাগ এইসব আইডলদের মতো হতে পারেনা ফলে নিজেকে অসফল মনে করে তাদের সারাটা জীবন কাটে হতাশা আর গ্লানি আর আক্ষেপে।

বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে সফলতার সংজ্ঞাও ভিন্ন, কোন এলাকায় সরকারি চাকরি পাওয়া, কোথাও আবার বিদেশ যাত্রা, আবার কোথাও বড় ব্যাবসায়ী হতে পারলে সফল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তবে এখানে একটা বিষয় কমন, সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, মানে টাকা।

'মোটিভেশনাল স্পিক' নামে আমাদেরকে শেখানো হয় কিভাবে অন্যের কাঁধে বন্ধুক রেখে শিকার করতে হয়, কিভাবে দশজনের পিঠে পা দিয়ে উপরে উঠতে হয়, কিভাবে গার্মেন্টস খুলে পাঁচ হাজার টাকা করে বেতন দিয়ে আধুনিক দাসদের সকাল সন্ধ্যা খাটিয়ে দিনশেষে কোটিপতি হওয়া যায়। আপনি শ্রমিকদেরকে পাঁচের জায়গায় দশ হাজার টাকা বেতন দিলে আপনার ব্যাবসায় মাস শেষে মুনাফা কম আসবে সেক্ষেত্রে আপনি একজন অসফল ব্যবসায়ী হিসেবে গণ্য হবেন। কিন্তু মুনাফা বৃদ্ধির জন্য বেতন পাঁচ থেকে চার হাজার করলে সমস্যা নাই, বরং সেক্ষেত্রে আপনার অধিক মুনাফা লাভের জন্য আপনি নানা পদক আর ভূষণে ভূষিত হবেন। আপনি তখন একজন সফল ব্যাবসায়ী। মানে হাজার হাজার মানুষের ন্যায্য পাওয়া তাদেরকে না দিয়ে নিজে কুক্ষিগত করতে পারলেই আপনি সফল৷

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা দোষের কিছু না, কিন্তু আপনাকে জানতে হবে কেনো আপনি ধনী হতে চাচ্ছেন? আপনার অর্থ আয়ের কারণটা কি সে সম্পর্কে ধারণা না থাকলে আপনার এই ধনী হওয়ায় কোন কৃতিত্ব নাই। এই বড়লোকিতে কোন সফলতা নাই।

তাহলে আসল সফলতাটা কোথায়? সফল কে/কারা ? আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলবো সফল মানুষ হচ্ছেন নবী মুহাম্মদ (স), গৌতম বুদ্ধ, যিশু, সফল হচ্ছেন কার্ল মার্কস, সফল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সফল হচ্ছেন মহাত্মা গান্ধী, বিদ্যাসাগর, সফল আমাদের জাতির জনক...।

উনারা জগতের চিনিয়ে দেওয়া দেখিয়ে দেওয়া নিয়মের মুখে লাথি মেরেছেন, চিন্তা করেছেন ভিন্নভাবে। যারা নিয়মের শিকল ছিঁড়তে পারে তারাই সফল। যারা বনসাই হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যারা চেয়েছেন মহিরুহ হয়ে সবাইকে ছায়া দিতে তারাই সফল। উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গ বক্সের বাইরে চিন্তা করেছেন, তাই তারা সফল।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই সফলতার মাপকাঠি বলে আমাদের যে বিষ গেলানো হয়েছে বা হচ্ছে সেই বিষ উগলে দিলেই আসল সফলতা আসবে, বক্সের বাইরে চিন্তা করতে হবে, কুয়ো থেকে বের হতে হবে। বিল গেটস ওয়ারেন বাফেটের আর মুকেশ আম্বানির চাইতে নবী মুহাম্মদ (স), গৌতম বুদ্ধ আর কার্ল মার্কসে সময় দিতে হবে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৮
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×