ঈশ্বর মাটি দিয়ে আমার শরীরটাকে তৈরি করলেও মনে হয় মনটাকে তৈরি করেছেন কাঁচ দিয়ে।তাইতো এক একটা আকস্মিক আঘাতে মন ভেঙ্গে হয় টুকরো টুকরো। সময় নামক সুপারগ্লুর প্রভাবে যখনই ভাঙ্গা কাঁচগুলো জোড়া লেগে একটা অবয়ব তৈরি হয়, ঠিক তখনই কোথা হতে যেন পাথরের আঘাতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।আমার জীবণের ঘোর অন্ধকারে হঠাৎই পূর্ণিমার চাঁদের আলো হয়ে এসেছিলে তুমি, দিয়েছিলে আমাকে পথের দিশা। জানতাম এ আলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হবার নয়, কিন্ত আমার মনের আকাশের পূর্ণিমার চাঁদে গ্রহন যে এত তাড়াতাড়ি লেগে যাবে তা ভাবিনি। তাইতো সেই আলোয় পথ খুঁজে পাবার আগেই চলে গেলে তুমি। অবশ্য "চলে গেলে" না বলে "চলে যাচ্ছ" বলাই ভাল। একলা আমি ঠায় দাঁড়িয়ে দেখছি আমার জীবনপট থেকে তোমার চলে যাওয়া
জান! খুব কষ্ট হচ্ছে, হৃদয়ের রক্তক্ষরণে রক্তস্নান করছে আমার তনমন, কিন্তু আমার করার কিছুই নেই। অবশ্য কিছু করার ছিলনা কোনদিনই, জেনে শুনেই তো আমি জলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিয়েছি, সেই তপ্ত আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হওয়া যে আমার অনিবার্য।
তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছিলাম তা কি জান? ধুর! আমি সত্যিই পাগল, তুমি জানবে কি করে? তুমি তো কোনদিন বলনি আমাকে ভালবাস। এমনকি কোন আশা/ইঙ্গিত ও দাওনি যে তুমি আমার হতে পার। মিছেমিছিই আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি আমার স্বপ্ন রাজ্যে। তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহুর্তে এক একটি স্বপ্নদৃশ্যের মঞ্চায়ন হয়েছে আমার মনে, প্রতিটি মুহুর্তে মনের ভিতরে এঁকে ফেলেছি এক একটি রঙ্গিন ছবি। সেরকমই কয়েকটি স্বপ্ন/কল্পনার কথা বলব তোমাকে............
স্বপ্নদৃশ্য এক (দুটি মনের প্রথম মিলন):
বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। উদাস মনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই বৃষ্টি দেখছ। চুপটি করে তোমার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম তোমার চোখের কোণে জল। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ঝট করে অশ্রু ফোঁটা মুছে ফেলে নিজের কষ্টগুলোকে আড়াল করতে চাইলে।
আমি:কি হয়েছে তোমার? চেহারায় কেন শ্রাবণের মেঘের ঘনঘটা?
তুমি নিশ্চুপ
আমি: আমাকে বল! দেখি তোমার কষ্ট লাঘব করতে পারি কিনা।
তবুও তুমি নিশ্চুপ
তোমার আরো কাছে গিয়ে তোমার হাতটা ধরলাম আর মজা করে গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনের ভঙ্গিতে বললাম, " প্রতিকূলতা যতই থাক, আছি পাশাপাশি সবসময়!" একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালে কিছুক্ষণ তারপর আমার কাঁধে মাথা রেখে বললে " এই কথাটা বলতে এতদিন লাগল? আরও আগে বললে তো এত কষ্ট পেতে হয়না আমাকে"। ভাললাগায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল হৃদয়, মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হলনা আমার। শুধু ডান হাত দিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। শ্রাবণের জলধারায় মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল দুটি মন।
স্বপ্নদৃশ্য দুই (প্রথম রাত):
নববধুর সাজে বসে আছ তুমি। আমি ঘরে প্রবেশ করতেই সমস্ত লজ্জা ভেঙ্গে স্নিগ্ধ হাসি উপহার দিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলে। আমার সামু আইডি জানার জন্য একদিন অনেক জেদ ধরেছিলে তাই তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে ল্যাপটপে আমার আইডিতে ঢুকলাম। তোমাকে নিয়ে লেখা সকল পোষ্ট ওপেন করলাম। আলমারী থেকে আরও একটা জিনিস বের করলাম, আমার পারসোনাল ডায়েরি যা শুধু তোমাকে নিয়েই লেখা। দুটো জিনিস তোমার হাতে দিতেই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলে আমার দিকে। আমি কিছু না বলেই বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসে একটা সিগারেট ধরালাম। দেখি বাইরে খুব সুন্দর চাঁদ। ঘন্টাদুয়েক পরে তুমি এসে পাশে বসলে, তখন আমার ঠোঁটে ৮ম সিগারেট জ্বলছে আর চোখে তোমাকে চিরদিনের জন্য আপন করে পাওয়ার আনন্দাশ্রু। হঠাৎ ঠোঁট থেকে সিগারেট টা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে...........
তুমি: ভালবাসার বন্যা তো বইয়ে দিয়েছ ব্লগ আর ডায়েরিতে! আমাকে যে এত ভালবাস, আমার জন্য পারবে সিগারেট টা ছাড়তে?
সিগারেটের প্যাকেট টা বাইরে ফেলে......
আমি: তোমার জন্য আমি নিজেকেও ছেড়ে দিতে পারি তা কি জান? আর তুমি সামান্য সিগারেটের কথা বলছ!
তুমি: থাক, নিজেকেই যদি ছেড়ে দাও তাহলে আমি থাকব কি নিয়ে!
বলেই তুমি চাঁদের আলো দেখা শুরু করলে। আর আমি তাকিয়ে আছি অপলক চোখে তোমার দিকে। হঠাৎ আমার দিকে ফিরে.........
তুমি: কি দেখ? মনে হয় প্রথম দেখছ? দেখ বাইরে কি সুন্দর চাঁদ!
চলনা! ছাদে গিয়ে জোছনা দেখি!
আমি: পূর্ণিমার চাঁদ যখন আমার পাশেই বসে আছে তখন ছাদে গিয়ে ঐ কলঙ্কময় চাঁদ দেখে কি হবে!
তুমি: যাও! দুষ্টু ছেলে!
বলেই লজ্জামাখা হাসিতে আমার বুকে মাথা রেখে.......
তুমি: এভাবে ভালবাসবে তো সারাজীবন?
আমি: আমৃত্যু..............................................................
স্বপ্নদৃশ্য তিন (জোছনা রাতে তুমি আমি পাশাপাশি):
জোছনা রাত তোমার খুব প্রিয় আমি জানি। তাইতো তোমাকে নিয়ে মাঝরাতে জোছনা দেখতে বের হয়েছি। তোমার স্বভাবসুলভ চঞ্চলতায় উপভোগ করছ জোছনা, আর আমি উপভোগ করছি তোমাকে। জোছনা রাতের মায়ায় তোমার মায়াবী মুখটাকে আরও বেশী মায়াময় লাগছে, আর সেই মায়াযাদুতে আবিষ্ট আমি একদৃশ্টে দেখছি তোমাকে, কিছুতেই ছোখ ফেরাতে পারছিনা।
তুমি: একটা গান শোনাবে?
আমি গান ধরলাম। আমার প্রিয় গানগুলোর একটা.......
জোছনা ভেজা এই রাত
নয় থাকলে আরো কিছুখন
নয় রাখলে হাতে দুটি হাত
নয় ডাকলে আরও কিছু কাছে
দেখ জোছনা ভেজা এই রাত।
তুমি এসে পাশে দাঁড়ালে, আমার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলাম তোমাকে।তারপর জোছনা রাতকে সাক্ষী রেখে স্বপ্নিল জগতে সুখের অবগাহনে লিপ্ত হলাম তুমি,আমি!
আজ থেকে জানি, এই স্বপ্নগুলো সত্যি হবেনা কোনদিন কিন্ত হয়ত এই স্বপ্ন গুলোই হবে আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। স্বপ্ন গুলোর মাঝেই তোমাকে আমি খুঁজে ফিরব প্রতিটি দিন। ভাল থেকো!আমার সমস্ত ভালবাসা আর শুভকামনা রইল তোমার জন্য।
যাকে নিয়ে লেখা তার উদ্দেশ্যে:
তোমাকে কোনদিন বলা হয়নি; তখনও আমাদের অফিসিয়ালি দেখা হয়নি, প্রথম মার্ষ্টাস ক্লাস করতে বুয়েটে গিয়েছিলাম। তুমি আর তোমার বান্ধবী হেঁটে যাচ্ছিলে। তোমার দিকে চোখ পড়তেই মনে হল তুমি আমার অনেক দিনের চেনা। খুব চেষ্টা করলাম তোমাকে চেনার, পারলাম না।সেদিন বুঝিনি কেন অমন হয়েছিল। আজ বুঝি, সৃষ্টিকর্তা বোধহয় জন্মের সময়ই আমার কপালে তোমাকে হারানোর কষ্ট লিখেছিলেন যাতে তোমার স্মৃতি সারাজীবণ আমার জীবণে অম্লান হয়ে থাকে। তাইতো সেদিন মনে হয়েছিল তুমি যেন কত দিনের চেনা! আমার চির আপনজন!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



