somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মিষ্টি স্বপ্ন ও কিছু বেদনা

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ফাগুনের মিষ্টি মধুর বিকেলে ছেলেটি নদীর ধারে হাঁটছে তার প্রেয়সীর সাথে। বড়ই চঞ্চল এই মেয়েটি, জীবণের ২৬তম বছরে এসেও এখোনো বালিকা সুলভ আচরণ করে। সবসময় মুখে লেগে থাকে প্রানখোলা হাসি আর উচ্ছাস। হাঁটতে হাঁটতে তারা এসে পড়ে সারি বদ্ধ আইল ঘেরা ধান ক্ষেতের সামনে।এটা দেখে মেয়েটা কি খুশি! যেন কোনদিন দেখেনি! হঠাৎ মেয়েটি খালি পা হয়ে হাঁটতে থাকে আইলগুলোর উপর দিয়ে আর দুহাত দিয়ে দোল দিতে থাকে গাঢ় সবুজ ধাণ গাছ গুলোকে। কখনও বা নিচু হয়ে তুলতে থাকে ধাণ ক্ষেতে গজিয়ে উঠা বনফুল।ছেলেটির কাছে এ দৃশ্য নতুন কিছু নয়, সে জানে প্রকৃতি মেয়েটির খুব প্রিয়, তাই প্রকৃতির কাছাকাছি হলেই মেয়েটি এক অনাবিল আনন্দ লাভ করে। মেয়েটির লাফালাফি দুচোখ ভরে উপভোগ করতে থাকে সে।

খানিক পরেই মেয়েটির সেন্ডেল দুখানি কুড়িয়ে নিয়ে ছেলেটি তাকে অনুসরন করে।এক পর্যায়ে মেয়েটার পাশাপাশি এসে পড়ে।
- কি, হাঁটতে খুব ভাল লাগছে?
- অনেক ভাল লাগছে, দেখ কি সুন্দর জায়গা! অনেক সুন্দর।
- হ্যাঁ তোমার কাছে তো সবই সুন্দর শুধু আমি ছাড়া।
- কি যে বলনা! কিসের ভিতর কি কথা নিয়ে আসলা! কিছুটা মন খারাপ করে বলে মেয়েটি।
- আচ্ছা বাবা সরি, জানই তো আমি সবসময় ফাজলামো করি।চল;এখানে অনেক হল, এখন ঐ দিকটাতে যাই।

তারা চলে আসে নদীর জলের কাছে, এবার দুজনেই খালি পায়ে হাঁটতে থাকে হাতে হাত রেখে।তখন সুর্য প্রায় অস্ত যায় যায়।সুর্যের লাল রং ভেসে উঠে সবুজ পানিতে। সেই গোধুলি লগ্নে হঠাৎ মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকে ছেলেটি।আকস্মিক এই কান্ডে কিছুটা হতবিহবল হয় মেয়েটি। সামলে নিয়ে বলে

- কি দেখছ অমন করে!
- না মানে চুলটা ঠিক আছে কিনা তা দেখে নিচ্ছি তোমার চোখের আয়নায়।
- খিলখিল করে হেসে উঠে মেয়েটা। ধুর সব কিছুতেই তোমার ফাজলামো।

ছেলেটিকে পাশে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে মাথা রেখে আবার হাঁটতে থাকে দুজনে।সুর্য ডুবে যায়, ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে, আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে যেতে থাকে দুজন।"


ঠিক এমন মুহুর্তে একজনের ডাকে সম্বিত ফিরে পাই।
-এই ছেলে এখানে কি কর?
এক ঝটকায় বেরিয়ে আসি কল্পনার জগৎ থেকে। তাকিয়ে দেখি আমার স্বপ্নের রাজকন্যা আমার পাশে দাঁড়িয়ে, সোনালী শাড়ী আর নীল রঙা ব্লাউজ পরা।হালকা মেকআপ, চোখে কাজল আর ঠোঁটে লেগে থাকা সেই মিষ্টি হাসি।নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে একটু সময় লাগল।বললাম....
- না কিছুনা। হাঁটতে হাঁটতে এখানে চলে এসেছি।তোমরা তো সকাল বেলা আমাকে ছাড়াই ঘুরলে, তাই বিকেলে একা একাই ঘুরছি।
- কি করব বল!আমি তো আর একা ছিলাম না। বড় আপুরা যেতে বললেন তাই গেলাম। চেয়েছিলাম তোমাকে ফোন দিতে কিন্ত আপুরা আবার কি ভেবে বসেন, তাই ফোন করিনি। এজন্যই কি মন খারাপ করে এখানে দাঁড়িয়ে আছ?
-আরে না! কি যে বল,মন খারাপ করার কি আছে! তুমি ঘুরতে এসেছ, ঘুরে বেড়াচ্ছ। আমাকে তোমার প্রয়োজন নাও হতে পারে।এজন্য তো মন খারাপের কিছু নাই।আছে কি?
"না নেই" একটা শয়তানি হাসি দিয়ে জবাব দিল সে।জানি সে শয়তানি করছে তবুও কেন জানি খুব কষ্ট লাগল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম
- তুমি পারও বটে, তবে তুমি এখন এখানে কেন?
- কেন আবার! নদীর ধারে হাঁটতে আমার ভাললাগে সে তো তুমি জানই।
- হু! কিন্তু এভাবে পিছন থেকে দেখেই তোমার এদিকে আসা উচিৎ হয়নি।যদি আমি না হয়ে অন্য কেউ হত?
-কে বলেছে, আমি তোমাকে দেখে এদিকে আসছি!আমি তো ঘুরতে আসছি, তুমিই না দেবদাস মার্কা ভঙীতে এখানে দাঁড়িয়ে আছ।
- উফ! তোমার সাথে তো আর কথায় পারবোনা! এখন চল যাই, তোমাকে পৌঁছে দিয়ে বাসায় যাব।
-যাও, তোমাকে কি বলেছি আমায় পৌছেঁ দিতে?
- ঠিক আছে, থাকো তাহলে, আমি গেলাম।বলেই দিলাম হাঁটা।
৩০ সেকেন্ড পরে ও দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলল"ভারি ফাজিল ছেলে তো তুমি! একটা মেয়েকে সন্ধা বেলায় একলা রেখে চলে যাচ্ছ!"
- আমি যে ফাজিল ছেলে তা এতদিন পরে বুঝলা। বেশ করেছি, টিট ফর ট্যাট।
আর কোন কথা নেই, নীরবে সমস্ত পথ পেরিয়ে চলে আসলাম তার ঠিকানায়। তারপর রওনা দিলাম নিজ ঠিকানায়। হঠাৎ পিছন থেকে ডাক পড়ল. ফিরে তাকিয়ে বললাম......
-কি হয়েছে?
"ভাল থেক!"ঠোঁটে এক চিলতে রহস্যময় হাসি নিয়ে বলল সে।
কোন উত্তর না দিয়ে, একটু শুষ্ক হাসির সাথে সম্মতিসুচক মাথা নাড়িয়ে ফিরে আসলাম, কিছুটা পরিতৃপ্তি আর কিছুটা না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে!

গল্পটা যদি এভাবেই শেষ হত তাহলেই মনে হয় ভাল হত।

তবে বাস্তবে এর কিছুই হয়নি।আমি কল্পনার জগৎ থেকে ফিরে এসেছিলাম ঠিকই তবে আমার চিরচেনা সেই চঞ্চলা, চপলা, হরিণীর ডাকে নয় বরং পদ্মার চর থেকে ফিরে আসা এক কৃষকের ডাকে।

-ও ভাই একলা বইসা কি করেন এহানে। রাইত হয়া গ্যাছে তো, বাসায় যান।

তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে শুয়ে পড়লাম ভেজা বালিতে, তাকিয়ে রইলাম আকাশের দিকে, সাথে থাকল একবুক শুন্যতা আর হতাশা!!!!!!!!






সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৪৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×