somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: প্রলাপ

১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলামের চাকরির প্রথম দিন আজ। গত বিসিএস পরীক্ষায় সফলভাবে উর্ত্তীণ হওয়ার পর বেশ কিছু দিন প্রশিক্ষণের পর আজ চাকরিতে যোগ দিলেন। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন পুলিশ হবেন। একদম নিরেট ভালো মানুষী স্বপ্ন ছিল তার- পুলিশ হবেন, অপরাধীকে শাস্তি দিবেন, দেশের নিরাপত্তা-শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ধীরে ধীরে বড় হতে হতে তিনি বাস্তবতার ভিন্ন সংজ্ঞা জানতে পারলেন। যে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটি একবেলা খাওয়ার জন্য সামান্য কিছু জিনিস চুরি করলো তাকে কোন ল’ দিয়ে চোর প্রমাণ করবেন তিনি! তার কাছে তাজ্জব লাগতে শুরু করে সব কিছু। ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা জানতে তিনি পড়েন দর্শন, নীতিশাস্ত্র, ধর্মগ্রন্থ, আইনী বইপত্র কিন্তু তবু তিনি বর্তমান রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় আদর্শ এবং ন্যায়-নীতির যথার্থ সংজ্ঞা দিতে পারেন নি। সাজ্জাদ সাহেব আশাবাদী মানুষ। তাই মন দিয়ে পড়াশুনা ক’রে একদম খাঁটি পথে এসেছেন পুলিশের অফিসার হয়ে।
সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হয়ে থানায় আসতে লাগে মাত্র তিরিশ মিনিট। হাবিলদার থেকে শুরু করে অনেকেই আসে নি তখন। একা একা নিজের টেবিলের সামনে বসে কাগজ-পত্র দেখছিলেন। হঠাৎ একজন লোক তার কাছে এসে বললেন-
‘একটা মামলা দায়ের করতে হবে।’
সাজ্জাদুল ইসলাম ব্যাপারটাতে অবাক হয়ে গেলেন। এভাবে থানায় উদ্ধতভাবে মানুষ সাধারণত আসে না। তাও আবার এতো সকালে মামলা নিয়ে এসে কাকে কি বলছে না বুঝেই কথা শুরু করছে! তবু রাগলেন না সাজ্জাদ সাহেব। বললেন-
‘আপনি বসেন এবং বলুন কিসের মামলা।’
লোকটি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললেন, ‘মামলাটা একটু আর্ন্তজাতিক। খুবই স্পর্শকাতর ব্যাপার। আপনাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।’
‘হ্যাঁ বলুন। আমি শুনছি।’
‘মামলাটার আসামি আমি। ফিলিস্তানিদের উপর গণহত্যার দায়ে আমাকে গ্রেফতার করতে হবে।’
সাজ্জাদ সাহেব বিস্মিত হয়ে গেলেন। বড় বড় চোখে চেয়ে রইলেন লোকটির দিকে। মুহূর্ত কয়েক। তারপর বললেন-
‘আপনি কি কোনো ইসরাইলি সংগঠনের সদস্য?’
‘না। মোটেই না। আমি একজন বাংলাদেশি। বাংলাদেশের বাইরে কোথাও কোনো দিন যাই নি। কোনো সংগঠন করি না।’
‘তাহলে আপনি এই মামলার আসামি কীভাবে?’
‘সেটাই তো বিস্তারিত বলতে হবে। এই ধরুন দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের উপরে আঘাত হানছে। গণহত্যা চালাচ্ছে। বোমা ফেলছে। ছোট ছোট শিশুরা মরছে, বৃদ্ধ নারী-পুরুষ মরছে, মা মরছে, মেয়ে মরছে, ছেলে-বাবা-ভাই মরছে। শুধু লাশের পর লাশ পড়ছে। আর আমি কেবল টিভিটা অন করে বিনোদন নিচ্ছি। টিভিতে খবর শুনতে শুনতে পোলাও খাচ্ছি, মাংস খাচ্ছি। আমি কি অপরাধী নই!’
‘এছাড়া আপনার কি বা করার আছে?’
‘অবশ্যই আছে। আমার অনেক কিছু করার আছে। আপনারও আছে। এই রাষ্ট্রের-ও আছে। আমরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারি।’
‘আমাদের পারমানবিক শক্তি নেই, আমাদের অস্ত্র নেই। আমরা ইসরাইল-ফিলিস্তিনির থেকে অনেক দূরে। তবে যুদ্ধ করবো কীভাবে? তাছাড়া আমরা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। আমেরিকা-ভারত-চীন-রাশিয়াকে মেনে চলতে হয় আমাদের। চাইলেই কি যুদ্ধ করা যায়!’
‘আসলে আমাদের অন্তর ছোট। আমাদের সাহস ছোট। আমাদের দূরত্ব মানবতা থেকে। আমরা অসত্য, অন্যায় আর শয়তানের নিকট বাঁধা।’
হঠাৎ থানায় অফিসারদের আগমন শুরু হলো। একে একে অফিসার থেকে শুরু করে হাবিলদাররা আসতে শুরু করলো। একজন হাবিলদার এসেই চিৎকার করে উঠলো-
‘তুই! ত্ইু আবার এসেছিস!’
লোকটাকে টানতে টানতে থানার বাইরে নিয়ে গেলো। সাজ্জাদ সাহেব তার সর্ম্পকে জানতে চাইতেই হাবিলদার বললো, “আর বইলেন না সার, এই বেটার নাম কান্তি চন্দ্র ঘোষ। এই এলাকাতেই থাকেন। একটা স্কুলে পড়ান। মাথায় একটু সিট আছে। মাঝেমধ্যেই থানায় এসে পাগলামি শুরু করেন। নেহাৎ ভদ্র লোক বলে তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আর পাগলামিটা ঘনঘন করে না বলে পাগলাগারোদেও চালান হয় নি। এই ধরণে কয়েক মাস আগে এসে বললেন তিনি যুদ্ধাপরাধী কারণ যে ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং প্রকৃত ইতিহাস জানেন না এবং অন্যকে জানান না তিনিই নাকি যুদ্ধাপরাধী। ইত্যাদি, ইত্যাদি। এর গল্প বলে শেষ হবে না।’
হাবিলদার চলে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ সাজ্জাদ সাহেব চুপচাপ বসে রইলেন। আজ তার চাকরির প্রথমদিন। জীবনের লক্ষ্যের ব্যাপারে তিনি সবসময় দ্বিধাহীন। পুলিশের চাকরিতে যোগ দেয়া শেষ এখন জীবনের স্বপ্নকে পূরণ করতে হবে। কিন্তু তিনি শুধু ভাবতে থাকলেন,‘আসলে আমাদের অন্তর ছোট। আমাদের সাহস ছোট। আমাদের দূরত্ব মানবতা থেকে। আমরা অসত্য, অন্যায় আর শয়তানের নিকট বাঁধা।’

জুলাই ২০, ২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×