
আবারো পোড়া মরদেহের গন্ধে ভারী হয়ে ওঠেছে বাতাস।গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক এলাকার টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় আজ সকাল ৫টা ৫৫মিনিটে কারখানার নিচতলায় মূলফটকের পাশে স্থাপিত বয়লার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা কারখানায় রক্ষিত ট্যাবলেটের স্ট্রিপ্ট, পটেটো চিপস ও বিস্কুটের ফয়েলপ্যাক তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল ও কেমিক্যালের ড্রামে ছড়িয়ে পড়ে।।বিকট বিস্ফোরণের পর কারখানার ভেতর থেকে দগ্ধ অবস্থায় শ্রমিকরা বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসছিলো। অনেকেই পানির জন্য চিৎকার করছিলো।এসময় অনেকেই ওইস্থানেই মারা যান। কারখানার ৫তলা ভবনের ৪র্থ তলায় বেশ কিছু শ্রমিক জানালা দিয়ে হাত নেড়ে তাদের বাঁচানোর আকুতি জানাতে থাকে। এসময় স্থানীয়রা মই নিয়ে বড় হাতুড়ি দিয়ে দেয়াল ভেঙে শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে ধোঁয়া ও তাপের কারণে তাদের ওই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিছুক্ষণ পরে ওই তলায় থাকা শ্রমিকদের আর কোনো সাড়া মিলেনি। আগুন দ্রুত পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে এবং কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী বের হতে থাকে। এসময় টঙ্গী এলাকার আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ২৯ টি ইউনিট দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করলেও পাঁচ তলা ভবনটি সে সময় পুরোপুরি ধসে পড়ে। কারখানায় ২৫০ জনের মতো শ্রমিক রয়েছে তবে শুক্রবার সেই রাতের পালায় ৮০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছিলেন।বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ও চাপা পড়ে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রত্যক্ষদর্শী , হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ১৯৭৭ সাল ওই কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কারখানার মালিক সিলেট-৬ আসনের বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মকবুল হোসেন।রানা প্লাজা, তাজরীন ,নিমতলী ,বা হামিম এর মতো একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে কোনো ভাবেই আমরা সাবধান হচ্ছি না।আর কতো মানুষের জীবন গেলে আমরা সাবধান হবো কে জানে।সব কিছুই এখন আমাদের গা শোয়া হয়ে গেছে অনুভূতি গুলো এখন আর আগের মতো কাজ করে না। দুঃখ কষ্ট গুলো আমরা খুব সহজে মেনে নেই কোনো প্রতিবাদ করি না কোনো পরিবর্তন চাই না। এমনকি কাছের মানুষ হারানোর বেদনাও এখন আমাদের স্পর্শ করে না। দুর্ঘটনার পর দশ বারো দিন পার হলেই তো আমরা এই বিষয় বাদ দিয়ে অন্যান্ন বিষয় নিয়ে বেস্ত হয়ে উঠি এই বিষয়ে নিয়ে তখন আর আমাদের কোনো আগ্রহ থাকে না। প্রত্যেক বার দুর্ঘটনার পর দুই তিনটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় তারা একটা রিপোর্ট দেয় সেই রিপোর্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর গুলো কি ব্যবস্থা নেয় তা কি আমরা কখনো জানার চেষ্টা করি ?ধরুন কয়েক দিন আগের একটি দুর্ঘটনার কথাই বলি চট্টগ্রাম সার কারখানার গ্যাস ট্যাংক বিধস্ত হয়ে কারখানার ৫০ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরে তাদের কে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস ছরিয়ে পরায় আসে পাশের পুকুর ও খাল থেকে মরা মাছ ভেসে উঠছিলো তা নিয়ে তো খুব হই চৈ হলো কেনো সেই দুর্ঘটনা হয়েছে তা নিয়ে তো তদন্ত কমিটি রিপোর্ট ও জমা দিলো। সন্দেহ আছে হাতে গোনা কয় জন সেই তদন্ত রিপোর্টের দুর্ঘটনার কারণ গুলো জানি বা তা নিয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানার চেষ্টা করেছি। বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা অনেক পুরানো সমস্যা ,কয়েক দিন পর পরই ধানের মিল গুলোতে বয়লার বিস্ফোরণ হয়ে শ্রমিকের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায় যেহেতু সংখ্যায় কম তাই তখন আমরা এক কান দিয়া ঢুকাই আরেক কান দিয়া বাইর করি আর কয়েক দিন পর দুর্ঘটনার কথা সম্পূর্ণ ভুলে যাই। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফ্যাক্টরি বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বয়লার কোথায় স্থাপন করা হবে ফ্যাক্টরি বিল্ডিং থেকে তার দূরত্ব কতো টুকু হবে তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো আইন আছে বলে মনে হয় না আসলে এই বিষয় গুলা নিয়ে যদি আমরা এখনো না ভাবি ভবিষ্যতে আমরা খুব সমস্যা তে পরবো। হৈ চৈ কইরা ধানমন্ডি গুলশান এর এক তালা রেস্টুরেন্ট বুলডোজার দিয়া ভাঙ্গা ভঙ্গি করার চে এই কাজ গুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। ফেক্টরি বিল্ডিং কোড নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে এবং তা ঠিক মতো প্রয়োগ হচ্ছে নাকি সেই দিকে কঠিন নজর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।নিজেরা নিজেদের ফ্যাক্টরি গুলোতে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে ব্যাবসায়ীরা আরো বিপদে পরবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। যেমন শ্রমিক দের নিরাপত্তার স্বার্থে ইউরোপের গার্মেন্টস বায়ারদের সংগঠন একোর্ড বা এলায়েন্স এর কঠিন নিয়মে অনেক কারখানা এর মাঝেই বন্ধ হয়েছে সামনে আরো খারাপ দিন আসছে আর এই সব দুর্ঘটনা তার বেপকতা আরো বাড়িয়ে তুলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।আমি নিজেও অনেক কারখানার কথা জানি যে গুলোর মালিক বছরে এক দিনও কারখানা দেখতে যান না খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই রকম দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা থেকেই যায় সে সব কারখানাতে।মালিক যেই রাজনৈতিক দলের সদস্যই হোক তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে সেটা রানা প্লাজার রানা হোক আর বিএনপির মকবুল হোক। আসলে চাঁদাবাজ রাজনৈতিক নেতারা কারখানা মালিক হলে কারখানার পরিবেশ এরকমই হবে এটাই স্বাভাবিক।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



