রোহিঙ্গাদের ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের থেকে ভিন্ন সেই জন্য রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাসে ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী না ।জাতিসংঘের মানবিক করিডর বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যাওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হবে ।এটা বাংলাদেশের জন্য শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে ভবিষ্যতে পনেরো লক্ষ রোহিঙ্গার দায়িত্ব স্থায়ী ভাবে আমাদের কাধের উপর বর্তাবে ।জাতিসংঘের দেওয়া মানবিক করিডর প্রস্তাবে আগ্রহ না দেখলে সেটা বিশ্ববাসীকে ভুল বার্তা দিবে ।তখন হয়তো বড় দাতা দেশগুলো আর আগের মতো আর্থিক সহায়তা দিতে রাজি হবে না ।
ইতিমধ্যে জান্তা সরকার আরাকান আর্মির দখল করা অঞ্চলের সীমানা ঘিরে ফেলেছে ফলে আরাকান অঞ্চলে খাদ্য ,ঔষুধ ও নিত্য পণ্য সামগ্রীর সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে । জাতিসংঘ ধারণা করছে খুব শীঘ্রই সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিবে। জাতিসংঘের দেওয়া মানবিক করিডোর প্রস্তাবে রাজি হলে আরাকান অঞ্চলের জন্য খাদ্য ও ঔষুধের মতো জরুরি সাহায্য পাঠানো সহজ হবে অন্যদিকে রোহিঙ্গারা তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যেতে পারবে ।
রোহিঙ্গা জনগোষ্টির সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে
গত মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে আরো ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে । এদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১৩ লাখ ১৩ হাজার।আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনী দুই পক্ষই রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণাত্মক তারা রোহিঙ্গাদের বসত বাড়িতে আগুন লাগিয়ে তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে । শুধু গত সপ্তাহেই রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেছে আরো ১ হাজার ৪৪৮ টি পরিবার এছাড়া একক ভাবে এসেছে আরো ৫ হাজার ৯৩০ জন।
বর্তমানে সীতওয়ে অঞ্চল ছাড়া পুরো রাখাইন রাজ্যই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জান্তা সরকার সেখানে খাদ্য, ঔষুধ ও অনান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ।ফলে প্রয়োজনীয় সার ,বীজ ও কীটনাশকের অভাবে এই বার রাখাইন রাজ্যে ফলন খারাপ হয়েছে এতে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল গুলোতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিবে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী তখন বাংলাদেশের আশ্রয়শিবির গুলোতে আরো চার থেকে পাঁচ লাখ নতুন রোহিঙ্গার আগমন ঘটবে।
অন্যদিকে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহ কম সেই জন্য রোহিঙ্গাদের জন্মহার স্থানীয় বাংলাদেশীদের তুলনায় বেশি। আশ্রয়শিবির গুলোতে এখন প্রতিদিন গড়ে ১০০ টি শিশু জন্ম নিচ্ছে। এর ফলে প্রতি বছর আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩০ হাজার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা বাবদ বছরে খরচ হয় ১ বিলিয়ন ডলার
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুলো অষ্টম বছরে এসে এখন আর আগের মতো অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হচ্ছে না গত বছর তহবিল সংকটের কারণে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা বাজেট কাটছাঁট করে সাড়ে ১২ ডলার থেকে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছিলো।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা বাবদ এখন পর্যন্ত ২.৪ বিলিয়ন ডলার অর্থের যোগান দিয়েছে । তাদের দেওয়া অর্থ সহায়তার বেশির ভাগ এসেছে ইউ এস এইডের মাধ্যমে ।তবে এই বছর ট্রাম্প এডমিনিস্ট্রেশন ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট কাট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষে ইউ এস এইডের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ।এই ঘোষণার পর রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় । পরে অবশ্য ইউনুস স্যার এর অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের অর্থ সহায়তা চলমান রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় ।
রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রতি বছর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দাতা দেশগুলোর কাছ থেকে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা সংগ্রহ করে । বাংলাদেশ যদি জাতিসংঘের দেওয়া মানবিক করিডোর এর প্রস্তাব বিবেচনায় না নেয় তেহলে সেটা বিশ্ববাসীকে সেটা ভুল বার্তা দিবে । হয়তো তখন দাতা দেশগুলো আর আগের মতো আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহ দেখাবে না ।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে
সমগ্র বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর সৈন্যের সংখ্যা দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার আর পুলিশের সংখ্যা এক লাখ পঞ্চাশ হাজার। অথচ রোহিঙ্গাশিবির গুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্টির সংখ্যা বিশ লাখ এর দিকে রওনা হয়েছে । বাস্তবতা হচ্ছে সরকার এই সল্প লোকবল দিয়ে কোনো ভাবেই বিশ লক্ষ রোহিঙ্গাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না । আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্টির সাথে যদি আমাদের ভুল বুঝাবুঝি হয় কিংবা কোনো কারণে এরা বিদ্রোহ করে বসে তখন সরকার এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবে কি ভাবে ?
জাতিসংঘের মানবিক করিডোর এর বিষয়ে ভারত উদ্বিগ্ন কেন ?
আরাকান আর্মি খুব শীঘ্রই নিজেদের দখলে থাকা অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করবে ।তখন মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের কোনো সীমান্ত থাকবে না আরাকান রাষ্ট্র হবে আমাদের নতুন প্রতিবেশী দেশ ।ভারত ইতিমধ্যে আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে ।গত মাসে আরাকান আর্মির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দিল্লি সফরে গিয়েছে ।নতুন বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে বাংলাদেশ যতো দ্রুত আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে ততোই মঙ্গল ।ভু - রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে ভারত আমাদের সাথে আরাকান আর্মির সম্পর্ক খারাপ করে রাখার চেষ্টা করবে এতে তাদের ফায়দা ।
মানবিক করিডোর প্রস্তাবে রাজি হলে আরাকান আর্মির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছাবে ।খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওই অঞ্চলে তখন বাংলাদেশের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে ভারতের প্রভাব হ্রাস পাবে । ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার আরেকটি কারণ আরাকান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা হলে সেভেন সিস্টার্স এর রাজ্য গুলো হবে তাদের প্রতিবেশী ।তখন হয়তো সেভেন সিস্টার্স এর নাগরিকরা আরাকানদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেরা ভারতের কাছে স্বাধীনতা চেয়ে বসবে ।বুঝাই যাচ্ছে আরকান আর্মির কাছ থেকে সেভেন সিস্টার্স এর বিদ্রোহীরা ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ এর সরবরাহ পাবে। ভারত তখন কোনোভাবেই এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না সেই জন্য জাতিসংঘের মানবিক করিডোরের বিরুদ্ধে মতবাদ তৈরির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ।
বাম ,ডান ,সুশীল সমাজ ও ইসলামিক দলগুলো মানবিক করিডোর এর বিপক্ষে কেন ?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগ সিনিওর নেতা ভারত পন্থী ।ভারত এর নির্দেশ তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ।ভারতের স্বার্থে আঘাত লাগতে পরে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলেই এরা আপনার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবে ।আগে এরা রাখ ঢাক করে ভারতের গোলামী করতো এখন সবার সামনে নির্লজ্জ ভাবে দালালি করে ।
বাম পন্থী ও ডান পন্থী রাজনৈতিক দল এর সাথে তাল মিলিয়ে ইসলামী দলগুলো না বুঝেই ভারতের দালালি শুরু করে দিয়েছে । কি অদ্ভুত দেখেন কিছু দিন আগে উনারা ফিলিস্তিনের মুসলমান ভাইদের জন্য কতো বড় সমাবেশ করলো অথচ নিজের দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমান ভাইদের বিষয়ে উনারা একেবারেই নিশ্চুপ। এই বিষয়ে উনাদের বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই ।ক্ষমতার লোভে এরা বোবা হয়ে গেছে।
ভারত বুঝতে পরছে বিপদ ধেয়ে আসছে সেই জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ।যে ভাবেই হোক উনারা মানবিক করিডর ও বন্দর এর কার্যক্রম আটকে দিবে । বাংলাদেশে পপাগণ্ডা ছড়ানোর জন্য মিডিয়া বাজেট আগের থেকে অনেক বাড়ানো হয়েছে । ইতিমধ্যে করিডর ও বন্দরের বিরুদ্ধে মতবাদ তৈরির জন্য পত্রিকা ,টেলিভিশন চ্যানেল ,চাটুকার রাজনীতিবিদ ও ইউ টিউব এর এক্টিভিস্টদের ভালো টাকা অফার করতেছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:২২