somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টুডেন্ট!!

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্টুডেন্ট!
সোহাগ তানভীর

প্রচন্ড বাকযুদ্ধের কারণে ঝিমুনি ভাবটা কেটে যায়। সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বাসে চড়েছে শাহাদাত সাহেব। ঢাকা শহরে পাবলিক বাসে চড়ার সাথে সাথে সিট ফাঁকা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। শাহাদাত সাহেবের ভাগ্যেও ফাঁকা সিট মেলেনি। দাঁড়িয়ে কিছু পথ যাওয়ার পর সিটে বসার সুযোগ হয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রীর সাথে আরেক যাত্রীর শরীর এতটা সন্নিবেশিত যে একটা সুচ ঢোকার জায়গাও ফাঁকা নাই। এক যাত্রীর চাপে আরেক যাত্রী চ্যাপ্টা হয়ে গেলেও ওরা যাত্রী ওঠানো বন্ধ করে না। ওদের স্বভাব-ই এটা। সব সময় ওদের দোষ বিষয়টা এমন নয়। যাত্রীদেরও দোষ দেখি। এতো ভীর! এতো চাপাচাপি দেখেও যাত্রীরা ওঠে! একের পর এক বাস তারপরও কেউ অপেক্ষা করতে চায় না। বিনা কারণে দেড়ি ও কাজে গিয়ে তারাহুরা করা বাংলাদেশীদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। অপেক্ষা করার মানুষিকতা এদের নেই। সব সময় যে যাত্রীদের দোষ তাও নয়। জনবহুল এ শহরে ফাঁকা গাড়ি পেলে তো অপেক্ষা করবে!
সিটে বসে এসব ভাবতে ভাবতে ঝিমুনি চলে এসেছিল শাহাদাত সাহেবের। ঝিমুনি ভাব কাটলে শুনতে পায়।
- ভাড়া বিশ ট্যাকা। দশ ট্যাকা দিলেন আর দশ ট্যাকা দ্যান।
- কিয়ের বিশ টাকা! দশ টাকা ভাড়া।
- আপনি কইলেই তো হবে না। গাড়িতে তো আরো যাত্রী আছে, সবারে জিগান; জিগায়ে তারপর ভাড়া দ্যান।
- জিগাইতে অইবো ক্যান? আমি কি আইজ প্রথম যাওয়া আসা করতাছি যে জিগায়ে ভাড়া দেওন লাগবো?
- তাইলে আর দশ টাকা দ্যান।
- অইবো না।
- অইবো না মানে?
- অইবো না মানে অইবো না।
- দ্যান দ্যান ক্যাচাল কইরেন না আরো ভাড়া কাটতে অইবো।
- স্টুডেন্ট।
একথার শোনার পর কন্ডাকটর ভালো করে তাকায়। শাহাদাত সাহেবও ছেলেটির দিকে তাকিয়ে স্টুডেন্টের সত্যতা খুঁজার চেষ্টা করে। বাহ্যিক বেশভূষা দেখে স্টুডেন্টের কোনো নমুনা পাওয়া যায় না। তারপরও স্টুডেন্ট বলে কথা! তাদের তো অসম্মান করা যায় না। কন্ডাকটর নরম গলায় বলে, তে কইবেন না।
কন্ডাকটর যতটা নরম হয় তারচেয়ে দ্বিগুন গরম হয়ে স্টুডেন্ট পরিচয়দানকারী ছেলেটা বলে, বোঝো না তুমি?
কন্ডাকটর স্বাভাবিক ভাবে বলে, না। কার্ড আছে? কার্ড দেখান।
ছেলেটা তাচ্ছিল্য করে জবাব দেয়, কার্ড না থাকলে এমনিই কইলাম স্টুডেন্ট? কার্ড দেখবা? দেখলে পড়তে পারবে তো?
কার্ড বের করে কন্ডাকটরের সামনে ধরে। বলে, এই দ্যাখো।বোঝো কিছু? কিছু বোঝো তুমি?
- বুঝলে কি আর বাসের কন্ডাকটরি করতাম।
- তাইলে চুপ কইরা থাকো আর যেডা ভাড়া দিয়েছি সেইডাই রাখো।
কার্ড দেখার পর কন্ডাকটর আর কিছু বলে না। হাফ ভাড়া নিয়ে চুপ করে।
ততক্ষণে গাড়ি বকসিবাজার অতিক্রম করছে ঢাকা মেডিকেলের ডা.ফজলে রাব্বি হলের ওখানে চলে এসেছে। ঢাকা মেডিলের সামনে বেশকিছু যাত্রী নামলেও তেমন সিট ফাঁকা হয় না। মাত্র দু একটি সিট ফাঁকা হয় তারমধ্যে শাহাদাত সাহেবের পাশের সিট একটি। সিটের পাশে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে বোকা বানিয়ে স্টুডেন্ট ছেলেটি বসে। শাহাদাত সাহেবের দিকে তাকিয়ে এক ধরণের বিরক্তি ভঙ্গি প্রকাশ করে। শাহাদাত সাহেবকে আবার ঝিমুনিতে ধরে। এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে যায়। স্টুডেন্ট ছেলেটি কিছু সময় পর পকেট থেকে ফোন বের করে। বেশ দামি ফোন। কয়েকজন বন্ধুর সাথে কথা বলা বলে। একটা মেয়ে বন্ধুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলে। ইয়ারফোন ব্যবহার করায় মেয়েটার কথা শোনা যায় না। তবে ছেলেটার কথা শোনা যায়। তার কথায় বুঝা যায়, মেয়েটা তার জন্য অপেক্ষা করছে সে যাচ্ছে মেয়েটার সাথে দেখা করতে।
পাশের সিটে বসা সহযাত্রীর ফোনালাপে ঘুম ভেঙ্গে যায় শাহাদাত সাহেবের। এমনিতেই সে ক্লান্ত তারপর পাশে বসা সহযাত্রীর ফোনালাপ খুব বিরক্তিকর লাগে। সবচেয়ে বিরক্তিকর লাগে যখন সিগারেট ধরায়। বেনসন সুইচ। বেশ দামি সিগারেট। সিগারেটের গন্ধ চরম অসহ্য লাগে। কিছুই বলার নেই। পাবলিক বাস বলে কথা। মাস্ক থুতনি থেকে টেনে নাক মুখ ঢেকে চুপচাপ বসে থাকে শাহাদাত সাহেব। ভাবে শিক্ষার হার বৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু মানুষ হওয়ার হার বৃদ্ধি হচ্ছে কই!

-সোহাগ তানভীর
কথাসাহিত্যিক
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:২২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×