somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিক ফতেহ ওসমানীর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, খুনিদের গ্রেফতার করে শাস্তি কার্যকর করা হোক

০১ লা মে, ২০১০ রাত ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানাজা এবং দাফন শেষে ফিরতে ফিরতে রিক্সায় বসে আর মেনে নিতে পারছিলাম না লেখক, সাংবাদিক ফতেহ ওসমানীর মৃত্যুর ঘটনা। সিলেট প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী আর আমি এক সাথে ফিরছিলাম চৌকিদেখি থেকে। আমরা দু’জনই প্রথমে নীরব ছিলাম। ইকবাল ভাই প্রথমে নীরবতা ভাঙলেন মম ভাই অর্থাৎ দৈনিক শ্যামল সিলেটের সম্পাদক মম চৌধুরীর কৌতুকের সূত্র ধরে। জানাজা শেষে গোরস্থানে যখন দাফনের কাজ চলছিলো তখন আমি, ইকবাল সিদ্দিকী, সেলিম আউয়াল, বাসিত মুহাম্মদ সহ আরো কয়েকজ দাঁড়িয়ে ফতেহ ওসমানীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে করে আরো আক্রান্ত হচ্ছিলাম। হঠাৎ মম চৌধুরী এসে সবাই কে এই বলে হাসিয়ে দিলেন-‘আমাদের অফিসার চলে গেলেন। এখন আমরা কর্মচারীরা থেকে আর কি করবো।’ এরপর তিনি ফতেহ ওসমানীর কর্ম জীবনের কিছু মজার ঘটনা উপস্থাপন করতে থাকেন। তাঁর কথায় প্রায় ভুলে-ই গেলাম আমরা যে গোরস্থানে দাঁড়িয়ে আছি আমাদের আপনজন কে চিরবিদায় জানাতে। ইকবাল সিদ্দিকী রিক্সায় বসে মম ভাইয়ের এই কথাগুলো স্মরণ করিয়ে বললেন-‘ মমের কথা শোনে আজ তিনদিনে হাসলাম। যদিও তোমাদের মতো ফতেহ ওসমানীর সাথে আমার খুব চলা হয়নি, তবে কিছুদিন এক সাথে কাজ করেছি। প্রকৃত অর্থে সে একটা ভদ্রলোক ছিলো।’ আম্বরখানা পৌঁছার পর ইকবাল সিদ্দিকী রিক্সা থেকে নেমে সুবিদ বাজারের দিকে চলে গেলেন। আমার ইচ্ছে ছিলো বাসায় ফিরবো, কিন্তু ফতেহ ওসমানীর লাশ এসে আমাকে গ্রাস করে ফেলে। মনটা ভারি হয়ে গেলে আর বাসায় যেতে মন চাইলো না। রিক্সার ড্রাইভারকে সামনে চলতে বললাম, উদ্দেশ্যহীন।
সাংবাদিক ফতেহ ওসমানীর সাথে আমার পরিচয় আশির দশকে। তিনির সাথে আমার বয়সের ব্যবধান প্রায় ১১ বছরের। কোন পরিচয়ের যোগসূত্রে আমরা নানা-নাতি, তা জানি না। তিনি আমাকে নাতি ডাকতেন, আমি ডাকতাম নানা। এই নানা-নাতির সম্পর্কের ভেদ আমি কোনদিন ভাঙার চেষ্টা করিনি। সম্ভবত এই সম্পর্কটা গড়ে উঠেছে আমার মামাদের জন্য। ওয়াহিদ খান সম্পাদিত অধুনালুপ্ত দৈনিক জালালাবাদী এবং সাপ্তাহিক সমাচারে কর্মরত থাকাকালে তিনি বড় মামা ফরিদ আহমদ রেজা এবং ছোট মামা আহমদ ময়েজ-এর সহকর্মী ছিলেন। তাতিপাড়াস্থ পত্রিকার অফিসে আমি প্রায়-ই যেতাম ছোট মামার সাথে। আমার বয়স তখন অনুমানিক বারো কিংবা তেরো। অফিসে ডুকেই যে টেবিল ছিলো সেখানে বসতেন ছোট মামা এবং ফতেহ ওসমানী পাশাপাশি। আমি গিয়ে তাদের পাশে বসলে-ই তিনি আমাকে নিয়ে এমন কৌতুক করতেন যে, মাঝেমধ্যে আমি কষ্টে কেঁদে দিতাম। তখন তিনি আবার হেসে হেসে বলতেন-‘নাতি ডং করলাম।’ আমি তখন দরগা মাদ্রাসায় পড়তাম। তিনি এই বিষয়ে খুব-ই কটা করে আমাকে আঘাত করতেন। পরে আমি আবিস্কার করলাম এটা তাঁর বিদ্রোহ। তিনি নিজে এক সময় দরগাহ মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। চিত্রালী পত্রিকা পড়ার অপরাধে তাকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। এরপর তিনি কিছুদিন সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। যতটুকু আমার জানা, তিনি দাখিল না দিয়ে-ই প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া ছেড়ে জ্ঞানের জগতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ফতেহ ওসমানী একজন ভালো পাঠক এবং লেখক ছিলেন।
গত ১৮ এপ্রিল রাতে সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাস্থ টিবি গেট এলাকায় অজ্ঞাত দুবৃত্তদের এলোপাতারি ছুরিকাঘাতে তিনি মারাত্মক আহত হলে তাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে পরে অবস্থার বেগতি দেখে ১৯ এপ্রিল ঢাকার এপোলো হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে তিনি কয়েকদিন ‘ কোমায়’ থাকার পর ২৮ এপ্রিল রাত ১১ টা ১০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।
সিলেটের সাংবাদিক পরিবারে ফতেহ ওসমানী একটি আলোচিত নাম। দীর্ঘদিন তিনি এই শহরে সুনামের সাথে সাংবাদিকতা করেছেন। ওয়াহিদ খান সম্পাদিত অধুনালুপ্ত দৈনিক জালালাবাদীতে যোগদানের মধ্যদিয়ে তিনি নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করে কাজ করেছেন দৈনিক জালালাবাদ, দৈনিক সবুজ সিলেট, দৈনিক বার্তাবাহক সহ বেশকিছু স্থানীয় দৈনিকে। মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ২০০০-এর সিলেট প্রতিনিধি। তা ছাড়া ছড়া, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, ফিচার লিখেছেন। দীর্ঘ চার বছর ছিলেন যুক্তরাজ্যে। ‘লন্ডনের সুখ দুঃখ’ শিরোনামে একটি গবেষণা গ্রন্থ এবং ‘লন্ডন’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছেন প্রবাসের চার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে। ফতেহ ওসমানীর পৈত্রিক বাড়ি সিলেট ওসমানী বিমান বন্দরের কাছাকাছি সালুটিকর বাজার সংলগ্ন নোয়াগাও গ্রামে। তবে তিনি ছোটবেলা থেকেই নগরীর চৌকিদেখির বাসিন্দা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই মেয়ের জনক। মৃত্যুকালে ফতেহ ওসমানীর বয়স ছিলো ৫১ বছর। ২৯ এপ্রিল বাদ জুম্মা চৌকিদেখি মসজিদ সংলগ্ন মাঠে তাঁর জানাজা এবং সিপাহসালার নাসির উদ্দিন মাজার সংলগ্ন গোরস্থানে দাফন করা হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, কাউন্সিলার কয়েস লোদী, কাউন্সিলার ফরহাদ চৌধুরী শামীম, সিলেট প্রেস কাবের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকাগুলোর সাংবাদিক সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সহ সকল শ্রেণীর মানুষের উপস্থিতি ছিলো এই জানাজায়।
ফতেহ ওসমানীর মৃত্যুতে সবাই শোকাহত এবং সরকারের কাছে সকলের দাবী এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদেরকে খুব দ্রুতগতিতে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১০ রাত ১:৩১
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×