সংক্ষেপে কিছু বলতে চাই। সংক্ষেপ বলছি কারন তরুন প্রজন্মের কাছে ইউটিউবের লুতুর- পুতুর নাটক, গালফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড বানানো, তাদের সঙ্গে ঘন্টা পর ঘন্টা প্রেমালাপ, ছ্যাকাখেয়ে কয়েকদিনের জন্য বিরহ পালন তারপর আবার নতুন কারো খোঁজ করা, টিকটক, দেখুন অমুক কি করল, পাবজি..... ইত্যাদি ইত্যাদি আনপ্রডাক্টিভ কাজের ব্যাস্তার ফাঁকে সময় কই লম্বা গদ্য পড়ার!
যাইহোক মূল কথায় আসি,
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইতে বঙ্গবন্ধু লেখেন, ভারত উপ-মহাদেশের মুসলমানদের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তির যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ ভাগের আন্দোলন করেছিলাম দেশ ভাগের পর ঠিক তার উল্টাটা হয়। যেসমস্ত জমিদার খান বাহাদুর কিংবা রাজনীতিবিদেরা দেশ ভাগের বিরোধীতা করত দেশ ভাগের পর তারা এবং আমলারাই মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী, এমএলএ হয়ে ক্ষমতার মসনদে বসল। আর দেশ ভাগের আন্দোলনে আত্মত্যাগি নেতারা অবেহেলিত হল। ফলে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও শাসনের কোন পরিবর্তন হয়নি, হয়নি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। বরং শোষনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়।
আবার নব্য স্বাধীন বাংলাদেশে শুরু হল লুটপাট, পুঁজিবাদী শক্তি ক্ষমতার ঘাড়ে বসতে শুরু করল। বঙ্গবন্ধু চেষ্টা করেছিল মুনাফাখোরী পুঁজিবাদী ব্যাবসায়ী মজুদদারদের ঘাড় ঝাড়া দিয়ে নামিয়ে দিতে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস তাকেই চিরতরে নামিয়ে দেওয়া হল। তার মৃত্যুর পর হতে আজ পর্যন্ত ক্ষমতা পালা বদল হয়েছে ঠিকই কিন্তু ক্ষমতাবানদের ঘাড়ে পুঁজিবাদী শক্তি সর্বদাই কনস্ট্যান্ট ছিলো এবং আছে।
কেউ কেউ এখন ছাত্র রাজনীতিকে এক প্রকার ব্যাবসা হিসেবে আখ্যায়িত করে তা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। দেখলাম আমার এক ইয়ারমেট বন্ধু, যে আমাদের ক্যাম্পাসে তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলো সেও এখন ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। যারা রাজনীতি কিংবা ছাত্র রাজনীতিকে ব্যাবসা বলছে আমি তাদের সাথে ভিন্ন মত প্রসন করি। রাজনীতি ব্যাবসা নয় বরং ব্যাবসায়ীরা রাজনীতি করছে। আমি বলতে চাই, শুধু ছাত্র রাজনীতি নয় টোটাল রাজনৈতিক ফিল্ডই দখল করে আছে ব্যাবসায়ী এবং দূর্নীতিবাজেরা। রাজনৈতিক দলকে এরা বানিয়েছে কোম্পানি লিমিটেড। ঝুকি নিচ্ছে, ইনভেস্ট করছে, ব্যাবসা হচ্ছে। রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতার লোভে এদের প্রশ্রয়ও দিচ্ছে। এদেরকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিতারিত করা দরকার। জানি এটা যত সহজে বললাম করাটা অত সহজ নয়। এ জন্য দরকার দলাদলি ভুলে দেশের জনগন এবং পিওর রাজনীতিবিদদের নৈতিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নয়, বরং ছাত্র রাজনীতিতে দলীয়করন বন্ধ করতে হবে। ছাত্র সংগঠন কোন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ হবে না। ছাত্র সংগঠন থাকবে সতন্ত্র সংগঠন হিসেবে। সেখান থেকে উঠে আসবে আগামীর নেতৃত্ব। ছাত্র মানে তরুন, ছাত্রদের মধ্যে রয়েছ প্রাণ শক্তি। দেশ হতে দূর্নীতি, অনিয়ম অত্যাচার বন্ধে ছাত্ররাই পারে বৃহত্তর ভূমিকা রাখতে । বায়ান্নো থেকে শুরু করে দেশের সকল গৌরবময় আন্দোলনের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবেনা, এসকল আন্দোলনে ছাত্রদের বৃহত্তর ভূমিকা রয়েছে।
ছাত্রদের সঠিক পথে আনতে হলে চাই সঠিক শিক্ষক। সেদিন এক রিপোর্ট দেখলাম, ইউজিসির তদন্তে ঢাবি সহ দেশের ১৪ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মের প্রমান পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সরকারি হিসেব মতেই ১৪ ভিসি দূর্নীতিবাজ, তাহলে বেসরকারী হিসেবে কয়জন হতে পারে ভেবে দেখুন! এই যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচাকদের অবস্থা তাহলে অন্য শিক্ষকদের অবস্থা কি ভেবে দেখুন! দূর্নীতিবাজ শিক্ষক কি ভাবে নীতিবান ছাত্র তৈরি করবে! একটা নির্দলীয় ছাত্র সমাজ বিনির্মানে চাই নির্দলীয় শিক্ষক। একটা নৈতিক ছাত্র সমাজ বিনির্মানে চাই নীতিবান শিক্ষক।
কৈশোরের একটা কথা মনে পরে গেল। নবম শ্রেণীতে থাকা কলীন শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন স্যার আমাদের বাংলা ক্লাস নিতেন এবং প্রায় সময় তিনি নীতি নৈতিকতা সম্পর্কে লেকচার দিতেন। আমি মনযোগ সহকরে শুনতাম ভালই লাগত, মাঝে মধ্যে আবার ঘুমও আসত।
শেষমেষ বলতে চাই, আবরারের যে পোষ্টের উপর ভিত্তি করে তাকে হত্যার পর শিবির হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে বরং শিবিরই লাভবান হচ্ছে কারণ এতে করে মূলত শিবির দেশ প্রেমিক হিসেবেই ব্রান্ডিং হচ্ছে। যদিও এটা বোঝার ক্ষমতা বর্তমান ছাত্রলীগের নেই! অন্যদিকে এ হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তরুন প্রজন্মেকে এক প্রকার ভয়ও দেখানো হচ্ছে। বোঝানো হচ্ছে যাই হোক কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না। ভালো কাজের জন্য যেমন রয়েছে বাহবা, ব্যার্থতার জন্য রয়েছে তেমন সমালোচনা। এটাকে অবস্যই মেনে নিতে হবে। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে তো ঠিকই বাহবা পেয়েছে।
কবে আমাদের মধ্যে সমালোচনাকে সহজভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি হবে তা একমাত্র আল্লাই জানে!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:০০