আপনাকে দেখিনি আমি; তবে আপনি
আমার অচেনা নন পুরোপুরি,
কারণ বাঙলার চেয়ারম্যান-মেম্বার তথা
জনপ্রতিনিধিদের আমি মোটামুটি চিনি, জানি।
হয়তো সিনিয়ার নেতার পা চেটে বা
তোষামোদি করে
দলীয় পদ পেয়েছেন ধীরেধীরে;
কিংবা ভোট চুরি করে বা টাকার বিনিময়ে
হয়েছেন নির্বাচিত।
ক্ষমতার রাজনীতিতে কুমড়ো ফুলের
মতো ফুটেছেন ঢলঢল,
এবং ক্ষতিগ্রস্ত ক’রে তুলেছেন দেশ ও জনগনকে।
চোরের কাছে ক্ষমতা ভয়েরই কারণ।
তারপর একদিন সুযোগ বুঝে দিয়েছেন
মেরে, আর তা লুকিয়েছেন পাবলিকের সামনে;
পাবলিককে কিছু দেননি হয়তো,
তবে পবলিকেরটা চুরি করেছেন অনেক।
ঘরের টিন, টিআর-কাবিখার টাকা, ত্রানের চাল,
প্রধানমন্ত্রীর ২৫০০, দরিদ্র পাবলিকের
জন্যে বরাদ্দকৃত সবকিছু চুরি করে
আপনার কেটেছে মেয়াদ।
বঙ্গীয় জনপ্রতিনিধির আবেগে আপনিও চেয়েছেন
মানুষের টাকা যতটা সম্ভব চুরি করতে,
আপনার ইচ্ছা সম্পূর্ন পূরন না হলেও
বছরে বছরে বেড়েছে আপনার সম্পদের পাহাড়,
এবং তাতেই আপনার লোভি মন ভাসিয়ে জেগেছে
আরো সম্পদের তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
এলাকার উন্নয়ন নয়, আমি জানি
আপনাকে মুগ্ধ আলোড়িত বিহ্বল করেছে
চুরি করা সম্পদের মুখ, আর টাকার নোট।
আপনিও চেয়েছেন জানি আপনার কাজে হবে
অসৎ, দূর্নীতিতে ভরপুর।
তাতে কেউ বাধা দিতে আসবে না,
আসবে না সততার জ্ঞ্যান দিতে,
আপনার বাটপারি হবে হবে দৃঢ়,
পীড়নে বা ভয়ে সে কখনো চুরি বন্ধ করবে না।
আপনার এতো সাহস থাকার তো কথা নয়,
আপনি আনন্দিত হতেন খুবই
যদি ফেসবুক না থাকতো, ইউটিউব না থাকতো,
কিংবা ইন্টানেটই এভেলএভেল না থাকতো।
আপনি উপযুক্ত চুরি শিখতে পারেন নি;-
এই অনলাইনের যুগে এটাই তো স্বাভাবিক,
এখানে কিছু করলেই ধরা খাইতে হয়,
ছবিও পর্যন্ত তুলে রাখে।
তবে এতে আপনার কোনো ক্ষতি নেই জানি;
কারণ আপনি এসবের কোন পরোয়াই করেন না,
বা একটুও ডরান না,
কেবল নিলজ্জের মতো চেয়েছেন
আপনার পদটা যেন ঠিক থাকে।
আপনার সমস্ত প্রার্থনা ব্যর্থ ক’রে
একবিশশতকের এই ভার্চুয়াল জগতে
আপনার অবস্থা কী হবে
আপনি কি জানেন তা,
হে অদেখা বাটপার জনপ্রতিনিধি?
কেনো আপনি চুরি করে বেড়ান এই ভার্চুয়াল সময়ে,
যেখানে অজস্র ক্যামেরা ক্ষেপণাস্ত্রের মতো
তাক হয়ে থাকে আপনার দিকে,
এ দেশ তার নদী আর মাঠ অবাক হ’য়ে তা দেখে!
আপনি কি জানেন, জনপ্রতিনিধি, আপনি দেশের
অন্যতম প্রসিদ্ধ চোর আজ?
আপনি এখন আপনাকে চিনতেও ব্যর্থ হবেন,
আপনার দিকে দিকে তাকালে
এখন কোনো মানৃষের রূপ পড়ে না চোখে,
শুধু একটা বিশাল চোরের চেহারা চোখে পড়ে।
দশকে দশকে যত চোরের উৎপত্তি হয়েছে
মুঘলদের এ-নষ্ট দেশে,
আপনি তাদের প্রত্যেকের অনুকরণ করে করে
চেহারা করছেন চোরের মত,
আজ আপনার মুখে সুস্পষ্ট চোরের ছাপ;-
গায়ে তেল মেখে চুরি করা
কিম্ভুত চোরের মতোই এখন দেখায় আপনাকে।
আপনি এখন দেশের বিখ্যাত চোর
মজলিশের বিখ্যাত সদস্য,
চুরি তে আপনি ও আপনার ইয়ারেরা
এতোই দক্ষ যে,
প্রাচীন ঐতিহাসিক চোরদের
গৌরব হরণ ক’রে আপনারা আজ মশহুর
চোর পৃথিবীর।
এখন আপনি আর কাজ করে খেতে পারেন না,
এমনকি ভুলেও গেছে যে
একদা কাজ করেই খেতেন,
এখন এই চুরিকেই আপনি কাজ ব’লে ভাবেন।
খাদ্যগ্রহণের পর স্বাভাবিক পদ্ধতিও
বিস্মৃত হয়েছে আপনার,
চুরি করে খাওয়া ছাড়া
আর কিছুতেই পরিতৃপ্তি পান না আপনি,
একদা কাজ করেই জীবন ধারণ
করতেন বালক বয়সে।
এখন আপনি চোর চালের ও গমের,
গরিবের টাকার,
এমন কি আপনি অসহায়ের ত্রানেরও চোর।
আপনার জন্য দুঃক্ষ করি না,
কতোই তো চোর দেখলাম
এ-বদ্বীপে শতকে শতকে।
কিন্তু শুধু পাবলিকে জন্যে,
এ কৃষক-শ্রমিক, দুঃক্ষী জনতা,
দরিদ্র-জনগনের জন্যে
বড় বেশি দুঃখ পাই;-
আপনার চুরির বার্তা আজ রাষ্ট্র দিকে দিকে,
নিশ্চয়ই তা পৌঁছে গেছে তিতাসের
জলের গভীরে আর কুমড়োর খেতে,
লাউয়ের মাঁচায়,
পাখির বাসা আর চাষীদের উঠানের কোণে।
তিতাসের জল আপনাকে দেখলে ছলছল
ক’রে ওঠে, ‘ওই দ্যাখো চোর’;
মাঠে পাখি ডেকে ওঠে, ‘দ্যাখো চোর’;
আপনার পালিত কুকুর
হাড্ডির উপর হতে মুখ ফিরিয়ে বলে,
‘চোরের প্লেটের হাড্ডি রোচে না আমার জিভে’,
প্রতিবেশী পুরুষ-নারীরা অঙ্গুলি সংকেত
ক’রে কলকণ্ঠে বলে, ‘দ্যাখো চোর।’
এমন কি প্রার্থনার সময়ও আপনি হয়তো বা
শুনতে পান ‘চোর, চোর’ স্বর ঘিরে ফেলছে
চারদিক থেকে।
আপনি যখন অন্তিম বিশ্রাম নেবেন মাটির তলে
তখনো হয়তো মাটি ফুঁড়ে মাথা তুলবে ধুতরাফুল,
বাতাসের কানে কানে ব’লে যাবে,
‘এখানে ঘুমিয়ে আছেন এক চোর।’
লজ্জায় অপমানে লাল হয়ে উঠবে মাটি।
কী দোষ কবরের?
মাটি কি কখনো জানে
তার বুকে যাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে
সে মানুষ না চোর?
বিঃদ্রঃ এটি হুমায়ূন আজাদের "গোলামের গর্ভধারিণী" কবিতার অনুকরনে লেখা। ইতিপূর্বে যারা "গোলামের গর্ভধারিণী" কবিতাটি পড়েন নাই তাদের জন্য মন্তব্যের স্থানে কবিতাটি দেয়া হল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪০