somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পথেঘাটে-২

২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের ঘটনার লিংক
এরপর আরও কয়েকদিন কেটে গেল। দিন যায় রাত আসে নানান কাজ কর্ম বিপদ আপদের মধ্যেও ইয়াসিনের কথা মনে আসে, এখন তো ঐ নামটাই শুধু মনে আছে চেহারা টেহারা তো সব ভুলে বসে আছি।

একদিন মন খারাপ করে সব কাজের সেরা আমার বাসার অলরাউন্ডার হেল্পিং হ্যান্ড যাকে আমার হাসবেন্ড আমার বান্ধবী ও বিবিসির সাংবাদিক বলে থাকে; ওকে বললাম, ইয়ে মানে রুমা; আমি একটা বিপদে পড়েছি, একটা ছেলে আমার কাছে পঞ্চাশ টাকা পাবে , জোর করে একদিন পেয়ারা দিয়েছিল, ওকে আমি এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না, তিন মাসের বেশি হয়ে গিয়েছে, ওর নাম ইয়াসিন , তুমি তো আমাকে চেনো বুঝতেই পারছো আমার মানসিক অবস্থা।

বিশিষ্ট অলরাউন্ডার আমাকে আশ্বাস দিল যে দুদিনের ভেতর ইয়াসিনকে খুঁজে বের করবে, এরপর আঁধা ঘন্টা পর খবর নিয়ে এলো ইয়াসিনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, এখানে কাছেই কোথাও ভাড়া থাকে।
আমি ওকে ১০০ টাকা দিয়ে বললাম ওর বাসা খুঁজে বের করে টাকাটা দিয়ে আসো।
এরপর টানা দুইদিন বৃষ্টি থাকার পরও আমার কথা বিবেচনা করে রুমা ইয়াসিনের বাসার খোঁজে গেল।
আমি আশায় বুক বেঁধে আছি এরকম সময় ও ফিরে এসে জানালো যে, ও যে বাসায় গিয়েছিল সেটা একটা অন্ধকার দুই তলা বাসা, উপরে স্কুল নীচে ওরা ভাড়া থাকতো, একটা গ্যারেজ সম্ভবত ওটা, সেজন্যই ওটা অনেক অন্ধকার কোন জানালা নাই, বাসায় এক মহিলা ছিল সে জানালো যে ইয়াসিন ওরা আগে এখানে ভাড়া থাকতো এখন অন্য বাড়ি ভাড়া চলে গিয়েছে, কোন বাড়ি মহিলা বলতে পারে না।

কথাগুলো বলতে বলতে রুমা ইয়াসিনকে দেয়ার জন্য একশো টাকা বের করে দিলো আমাকে। সেই টাকা আমার ফিরিয়ে নেয়ার মন মানসিকতা হলো না, বললাম ফেরত দিতে হবে না তুমি নিয়ে নাও। ও বললো ইয়াসিনের টাকা আমি নেবনা। টাকা সোফায় পড়ে রইল। ধ্যুর!!

তারপর একদিন দুপুরে নিচে গিয়েছিলাম কিছু কাজে।
ফিরে আসার পথে দেখি একটা ঢালু জায়গায় ফল ভর্তি ভ্যানগাড়ি প্রায় উল্টে যাচ্ছে আর অল্প বয়সী একটা নীল পাঞ্জাবি আর সাদা টুপি পরা ছেলে ভ্যানগাড়িটা প্রানপন সামলানোর চেষ্টা করছে।
মুহূর্তেই আমার মনে হলো এটা সেই ইয়াসিন কিনা!

আমি এগিয়ে গেলাম, ততক্ষণে সে ভ্যান সামলে নিয়েছে।
চেহারা পুরোপুরি মনে করতে পারছিলাম না, বললাম
- তুমি ইয়াসিন?
বলল,
- হ্যাঁ।
বললাম তুমি আমার কাছে পঞ্চাশ টাকা পাও একদিন জোর করে পেয়ারা দিয়েছিলে, একশো টাকার পেয়ারা, আমি পঞ্চাশ দিয়েছিলাম আর পঞ্চাশ বাকি ছিল।
ওর চোখে খুশির ঝলকানি তখন হেসে বলল
- ঐ যে মসজিদের সামনে স্টিলের গামলায় পেয়ারা বেঁচতেছিলাম,
- হ্যাঁ তারপর তুমি গায়েব হয়ে গেলে আর খুঁজে পেলাম না, তোমার এই পঞ্চাশ টাকার জন্য কত খুঁজেছি তোমাকে জানো?
সে বড় মানুষের মত আমাকে শান্তনা দেয়ার ভঙ্গিতে বলল - আরে আপনি আমাকে খুঁজে পাবেন কিভাবে আমি তো এখন আর সেক্টরের ভেতর ফল বেঁচি না, আমি এখন বটতলা বাজারের ঐখানে ফল বিক্রি করি ভালই লাভ হয়, দেখেন না এখন ভ্যান গাড়ি নিয়েছি, ভ্যান গাড়িতে করে এখন ফল বিক্রি করি, এখন আর গামলায় করে ফল বেঁচতে হয় না, আর আপনারে তো আমি চিনি আপনি আমার টাকা তো দেবেনই আমার জানা আছে, সেজন্যই আমি টাকা নিয়ে চিন্তা করি নাই, একদিন না একদিন তো দিতেনই। সেটা আমার বিশ্বাস ছিল।

যাইহোক ফাইনালি ওর টাকা পরিশোধ করতে পারলাম। পঞ্চাশ টাকাই দিলাম। ফিরে আসার পথে পেছন থেকে ইয়াসিন ডাক দিলো, ফল ভর্তি পলিথিন নিয়ে এসেছে দৌড়াতে দৌড়াতে, তাতে দেশি মাল্টা আর আমড়া। টাকা দিতে চাইলাম পিচ্চির বায়না এইটা ওর তরফ থেকে গিফট, এটার টাকা সে নেবেই না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম! আবার!!!

ছবিঃ কিছুক্ষণ আগের তোলা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৪২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×